ব্রোকারেজ হাউস মালিক ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারের নেগেটিভ ইকুইটি তথা ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ের বাধ্যবাধকতার সময়সীমা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বৃহস্পতিবার এক জরুরি সভায় সময় বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শেয়ারবাজারে ২০১০ সালের ধসের পর ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের এই সমস্যা তৈরি হয়। এরপর প্রায় দেড় দশক ধরে শেয়ারবাজারে সমস্যাটি জেঁকে বসেছে। এই সময়ে বিএসইসির কোনো নেতৃত্ব সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান করেননি বা করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। বরং সব কমিশনই সমস্যাটির তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে শুধু সময় বাড়িয়ে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড় দেওয়া দিয়েছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানও নিজে থেকে এই সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ক্রমাগতভাবে কমেছে। সেই সঙ্গে একশ্রেণির ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবগুলো অনিয়মের এক হাতিয়ারে পরিণত হয়। তাই শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই সমস্যাকে বাজারের জন্য ‘ক্যানসার’ হিসেবে অভিহিত করেন। তাঁরা বলছেন, সাধারণ ওষুধে (সময় বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্ত) এখন আর এই ক্যানসারের নিরাময় সম্ভব নয়। এই রোগ সারাতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। তার জন্য নিতে হবে কঠোর ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা।

ঋণাত্মক ঋণ হিসাব কী ও কেন তৈরি হয়

২০১০ সালের ধসের আগে দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের বুদ্‌বুদ বা উল্লম্ফন দেখা দেয়। ওই সময় শেয়ারবাজার সম্পর্কে না জেনে না বুঝে হাজার হাজার মানুষ লাভের আশায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাতে শেয়ারের দাম ও লেনদেন ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ফলে শেয়ারসূচক লাগামহীনভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আগ্রহের সুযোগ নিয়ে গ্যাম্বলার তথা কারসাজিকারকেরা তৎপর হয়ে ওঠেন। তাঁরা কারসাজির মাধ্যমে অনেক শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়েছেন। যার অনিবার্য ফল হিসেবে ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধস নামে। এই ধসের আগে অস্বাভাবিক উত্থানপর্বে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোও যথাযথ বাছবিচার ছাড়াই শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ‘মার্জিন লোন’ বা প্রান্তিক ঋণসুবিধা দেয়। কখনো নিয়মের মধ্যে থেকে আবার কখনো নিয়ম ভেঙে কয়েক গুণ বেশি ঋণসুবিধা দেওয়া হয় বিনিয়োগকারীদের। একসময় বাজারে ধস নামতে শুরু করে। তাতে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে কমতে থাকে এবং ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর দেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ আটকে যায়।

এত দিনেও কেন শেয়ারবাজারের ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের স্থায়ী কোনো সমাধান হলো না, সেটি এক বড় প্রশ্ন। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রয়োজনে সময় বেঁধে দিয়ে এসব অনাদায়ি ঋণ অবলোপনের ব্যবস্থা নিতে হবেফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসইসি

এই ধসে পুঁজি হারিয়ে ও নিঃস্ব হয়ে ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই বাজার ছেড়ে চলে যান। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পরে আর এসব বিনিয়োগকারীকে খুঁজে পায়নি। আবার ২০১০ সালের ধসের পর বাজারে পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ফোর্সড সেল’ বা ‘জোরপূর্বক বিক্রি’ বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে অনাদায়ি ঋণ আদায়ে সময়মতো উদ্যোগ নিতে পারেনি।

বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। ধরা যাক, একজন বিনিয়োগকারী ঋণযোগ্য কোনো এক কোম্পানির শেয়ার কিনতে নিজের ১০০ টাকার (ঋণসীমা ১ অনুপাত ২ হারে) বিনিয়োগের বিপরীতে ২০০ টাকা ঋণ নিয়ে মোট ৩০০ টাকা বিনিয়োগ করেন। তখন ওই শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ১০০ টাকা। ফলে ওই বিনিয়োগকারী যেখানে নিজের বিনিয়োগের টাকায় একটি শেয়ার কেনার সামর্থ্য ছিল, সেখানে ২০০ টাকা ঋণসুবিধা পাওয়ায় তিনি তিনটি শেয়ার কিনতে সক্ষম হন। এভাবে ব্যাপক হারে শেয়ারের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পরে যখন বাজারে ধস নামে, তখন শেয়ারের দাম নেমে আসে ৫০ টাকা বা তারও নিচে। তাতে ৩০০ টাকার তিনটি শেয়ারের দাম কমে হয় ১৫০ টাকা বা এর চেয়ে কম। তখন ওই শেয়ার ১৫০ টাকায় বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পুরো ঋণ আদায়ের সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীর নিজের ১০০ টাকার পুঁজির পুরোটাই লোকসানের খাতায় চলে যায়। উল্টো ঋণের আসল ও সুদ মিলিয়ে বড় দেনা তৈরি হয়। এ অবস্থায় অনেক বিনিয়োগকারী নিজের পুঁজি হারিয়ে আর বাজারমুখী হননি। এরই মধ্যে শেয়ারের দাম আরও কমে। তাতে ঋণাদাতা প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ি ঋণের পরিমাণও সুদে–আসলে কাগজে–কলমে বাড়তে থাকে। এভাবে শেয়ারবাজারে বড় অঙ্কের ঋণাত্মক ঋণ বা মন্দ ঋণ বা নেগেটিভ ইকুইটির বোঝা ভারী হয়ে ওঠে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, দেশের শেয়ারবাজারে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মোট অনাদায়ি ঋণাত্মক ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক হিসাবমান নিয়ম অনুযায়ী, ঋণদাতা যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবছর তার অনাদায়ি ঋণের বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করতে হয়। সাধারণত প্রতিষ্ঠানের মুনাফা থেকে এই নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। তাতে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা কমে যায়। ২০১০ সালের পর শেয়ারবাজারে দীর্ঘ সময় ধরে মন্দাবস্থা চলে। তাতে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বড় অংশই মুনাফার দেখা পায়নি। ফলে তাদের পক্ষে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের আর্থিক সামর্থ্যও ছিল না। এই অবস্থায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে দফায় দফায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে সময় বাড়িয়ে ছাড় দেওয়া হয়।

এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। বছর বছর সময় বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। এ ছাড়া ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের অনিয়ম রোধে তদারকি ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। তদারকির দুর্বলতার কারণেই আমরা বাজারে ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের কথা শুনতে পাইসাইফুল ইসলাম, সভাপতি, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)

ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবগুলোকে অবলোপনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করেছি। আমরা মনে করি, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। বছর বছর সময় বাড়িয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। এ ছাড়া ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের অনিয়ম রোধে তদারকি ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। তদারকির দুর্বলতার কারণেই আমরা বাজারে ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের কথা শুনতে পাই।’

ঋণাত্মক ঋণ যেভাবে অনিয়মের হাতিয়ার

এদিকে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিপুল অনাদায়ি ঋণ অনেকের কাছে অনিয়মের হাতিয়ারে পরিণত হয়। লাভের আশায় অনেক প্রতিষ্ঠান এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ না নিয়ে সময় বাড়ানোর চাপ তৈরি করার মাধ্যমে দেড় দশক ধরে সমস্যাটি জিইয়ে রেখেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও তাতে সহায়তা দিয়ে গেছে। অনাদায়ি ঋণ মূলত ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের দায়। তাই যে প্রতিষ্ঠানের এই দায় বেশি, সেটি তত দুর্বল হয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই ঋণের দায় বাড়িয়ে দুর্বল করার পেছনে কিছু কিছু কর্মকর্তারও ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল। তাঁরা এসব ঋণাত্মক ঋণ হিসাবকে নিজেদের স্বার্থে অনিয়মের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। কীভাবে সেটি করলেন তার একটি ধারণাভিত্তিক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

ধরা যাক, কোনো একজন বিনিয়োগকারী ৫০ টাকা দামে একটি কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন। পরে বাজারে সেই শেয়ারের দাম নেমে এসেছে ২০ টাকায়। এ রকম পরিস্থিতিতে ওই বিনিয়োগকারী ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু কর্মকর্তার শরণাপন্ন হলেন। দুজনের মধ্যে একধরনের সমঝোতা হলো। বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে (যেমন ২৫ বা ২৭ টাকা) ওই বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে সেই শেয়ার কিনে নেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব হিসাবে। বিনিময়ে ওই কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে শেয়ারপ্রতি নগদে নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন। তাতে বিনিয়োগকারী বাজারমূল্যের চেয়ে কিছু টাকা বেশি পান। অন্যদিকে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে নিজে নগদ অর্থ কামিয়ে নেন। পরে ওই সব শেয়ার নেগেটিভ ইকুইটি বা ঋণাত্মক ঋণ হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এতে প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায় এবং আর্থিক সক্ষমতা কমে যায়। বেসরকারি মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশেও (আইসিবি) এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ফলে ২০১০ সালের পর থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইকুইটির বোঝা কেবলই বেড়েছে।

সমস্যার স্থায়ী সমাধান কী

বাজার–সংশ্লিষ্ট একটি পক্ষ বলছে, এখন আর শুধু নিরাপত্তা সঞ্চিতির সময় বাড়িয়ে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যাটির সমাধান করতে হলে সব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তারপর সেসব হিসাবকে ব্লক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে এসব হিসাবে অনুমোদন ছাড়া শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ রাখতে হবে। এরপর প্রতিষ্ঠানভেদে সুনির্দিষ্ট তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে এসব অনাদায়ি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ধাপে ধাপে প্রভিশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ–ও বলছেন, ব্যাংকে যে পন্থায় খেলাপি ঋণ অবলোপন বা রাইট অফ করা হয়, শেয়ারবাজারেও সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে কিছু কিছু অনাদায়ি ঋণের ক্ষেত্রে। কারণ, এসব ঋণ আদায়ের বাস্তব সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। অনেক বিনিয়োগকারীকে এখন আর খুঁজে পাওয়াও যাবে না। আবার শেয়ারবাজারে ঋণের ক্ষেত্রে শেয়ার ছাড়া আর কোনো জামানতও থাকে না। ফলে হয় শেয়ার বিক্রি করে এসব অনাদায়ি ঋণ সমন্বয় করতে হবে ধাপে ধাপে, অন্যথায় অবলোপনের পথে যেতে হবে। এটি করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নতুন করে আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্য সরকারি কিছু নীতি সহায়তাও দিতে হবে।

সর্বশেষ বিএসইসি সময় বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের প্রভিশনিংয়ের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আলাদা কর্মপরিকল্পনা তৈরির শর্তারোপ করা হয়েছে। সেই শর্ত পরিপালনের মাধ্যমে শেয়ারবাজারের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান যেন হয়, সেটিই প্রত্যাশা বাজার অংশীজনদের। কারণ, এই সমস্যার স্থায়ী নিরাময় চায় বাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। আর সেই নিরাময়ে বিএসইসিকে চিকিৎসকের ভূমিকায় থেকে সুচিন্তিত ও বাস্তবভিত্তিক কার্যকর সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।

জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, এত দিনেও কেন শেয়ারবাজারের ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের স্থায়ী কোনো সমাধান হলো না, সেটি এক বড় প্রশ্ন। যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রয়োজনে সময় বেঁধে দিয়ে এসব অনাদায়ি ঋণ অবলোপনের ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানভেদে ও ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে সমাধান করতে হবে। আর এসব হিসাবে অনিয়ম রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ দরকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই সমস য র স থ য় র শ য় রব জ র শ য় রব জ র র ২০১০ স ল র সময় ব ড় য় ব এসইস র কর মকর ত র পর ম ণ র ব পর ত সমস য ট ব যবস থ দ র বল গ রস ত ন র অন র সময় ধরন র ঋণদ ত

এছাড়াও পড়ুন:

নেগেটিভ ইক্যুইটির প্রভিশনের সময়সীমা বাড়ল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত

পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৫৩তম জরুরি কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

কারণ ছাড়াই বাড়ছে দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর

স্ত্রীকে শেয়ার উপহার দেবেন ওয়ালটনের উদ্যোক্তা পরিচালক

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৫৩তম জরুরি কমিশন সভায় সার্বিক বিবেচনা পূর্বক ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) আবেদনের প্রেক্ষিতে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, শর্ত থাকে যে, এ সুবিধা গ্রহণ করার জন্য যে সকল স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারের নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লস রয়েছে, তাদের প্রত্যেককে নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লসের উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, স্টক ডিলার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকারদের পোর্টফোলিওর মার্জিন ঋণ হিসাবে আদায় না হওয়া লোকসানের বিপরীতে প্রভিশন রাখার মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল, যা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে প্রভিশনিং সংরক্ষণের মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য বিএসইসির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। তবে বিএসইসি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা বর্ধিত করেছে। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বাদে পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের মোট নেগেটিভ ইক্যুইটির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

ঢাকা/এনটি/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অমীমাংসিত ইস্যুর সমাধান করতে গিয়ে নতুন সমস্যা
  • ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের সময় বাড়ল
  • অ-তালিকাভুক্ত-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করের ব্যবধান ১০ শতাংশ চায় বিএসইসি
  • নেগেটিভ ইক্যুইটির প্রভিশনের সময়সীমা বাড়ল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত