ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখলদারির স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
Published: 25th, April 2025 GMT
ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে আবারও কিয়েভকে দুষলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছেন। ট্রাম্প জানান, যে কোনো চুক্তির অংশ হিসেবে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখলদারির স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে এবারই প্রথম কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের মাধ্যমে ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার বিষয়টি আবারও পরিষ্কার হলো। ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুদ্ধ শেষ করার একটি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ চুক্তির বিষয়ে মূলত ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ বাস্তবতায় ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা বুধবার লন্ডনে বৈঠক করেন। বৈঠকে ওই চুক্তির বিষয়ে তারা কী পদক্ষেপ নেবেন, সে বিষয়টি অস্পষ্টতার মধ্যেই থেকে যায়। কারণ, এটি মূলত তাদের অনুপস্থিতিতেই তৈরি হয়েছে। জেলেনস্কি পাল্টা প্রস্তাব হিসেবে উভয় পক্ষের জন্য শর্তহীন একটি সাধারণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া মেলেনি।
বৃহস্পতিবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়াকে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় জেলেনস্কিকে আক্রমণ করেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘২০১৪ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ইউক্রেন। এর নিয়ন্ত্রণ আলোচনার বিষয়ই নয়।’ এ কথা বলার মাধ্যমে তিনি সম্ভবত এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর তিন বছরেও কিয়েভ ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।
রাশিয়ার অঞ্চল হিসেবে ক্রিমিয়াকে ওয়াশিংটন স্বীকৃতি দিতে পারে– এমন খবর কয়েক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। এর জবাবে গত মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন কখনও ক্রিমিয়ায় দখলদারি স্বীকৃতি দেবে না। এটি তাঁর দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জেলেনস্কির এ মন্তব্য সম্পর্কে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘এ বক্তব্য রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।’ ইউক্রেনের নেতা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে ট্রাম্প বলেন, এসব বক্তব্যের কারণে যুদ্ধ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়বে। ট্রাম্প লিখেছেন, কেউই জেলেনস্কিকে বলছে না ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অঞ্চল হিসেবে স্বীকার করে নিতে। যদি তিনি (জেলেনস্কি) ক্রিমিয়া ফেরত চান, তবে ১১ বছর আগে যখন একটিও গুলি না ছুড়ে অঞ্চলটি রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা লড়াই করেননি কেন?’ পরে ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন, রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু এখন জেলেনস্কিই মূল বাধা।
এ অবস্থায় বুধবার রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে অন্তত ৯ জন নিহত ও ৭০ জনের বেশি আহত হন। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, আহতদের মধ্যে ছয় শিশুও রয়েছে। বেশ কয়েকজন ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছেন। ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগ বলছে, রাজধানীর ১৩টি স্থানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ৪০টি স্থানে আগুন লেগেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মোবাইল ফোনের রিং শোনা যাচ্ছে।
দ.
আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করলেন জেলেনস্কি
কিয়েভে রাতভর রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তাৎক্ষণিকভাবে ইউক্রেনে ফিরবেন তিনি। ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য জেলেনস্কিকে দায়ী করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় এসব হামলা হয়।
জেলেনস্কি জানান, রাতভর হামলায় ‘গুরুতর ধ্বংসযজ্ঞ’ হয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলছে। মার্চে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রস্তাবিত অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউক্রেন পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি এবং হামলা বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে ৪৪ দিন আগে। এই হামলা অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে বন্ধ করা উচিত।
রাশিয়ার আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টার অংশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় জেলেনস্কির সফর ইউক্রেনীয় নেতার জন্য একটি কূটনৈতিক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই রাষ্ট্রীয় সফর দু’বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল। ওই সময় রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা করতে দক্ষিণ আফ্রিকার অস্বীকৃতি কিয়েভের জন্য হতাশার কারণ হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট রামাফোসা তখন কিয়েভে একটি স্বঘোষিত শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে আফ্রিকান নেতাদের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই বৈঠকের পর ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মৌলিকভাবে বদলে গেছে। উভয় দেশই এখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন য ক তর ষ ট র ইউক র ন র র জন য প রস ত
এছাড়াও পড়ুন:
বিজয় যখন কড়া নাড়ছে
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঠিক আগমুহূর্তে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাড়া জাগায়। দেশবাসীসহ বিশ্ব জানতে পারে, জাতিগত গণহত্যার মধ্যেই চলেছিল পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড। এখানে সে সময়ের একটি আলোচিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
আত্মসমর্পণের আগে
ঢাকায় বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণের আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনী শহরের বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করেছে এবং তাঁদের মধ্যে পঞ্চাশের বেশি লোককে গুলি করে হত্যা করেছে। আকস্মিক সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে নিবিড় পরিকল্পনার আওতায় বাঙালি এলিট নিধনের অংশ হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। এটা অবশ্যই কমান্ডিং অফিসার জেনারেল নিয়াজিসহ পাকিস্তান হাই কমান্ডের পূর্ণ জ্ঞাতসারে ঘটেছে।
এসব মৃতদেহের আবিষ্কার ঢাকা শহরে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, পাল্টা হত্যাকাণ্ড ও দাঙ্গার জন্ম দিতে পারে, এমনকি মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যেও সংঘর্ষ সৃষ্টি করতে পারে।
ঢাকার মূল শহরের পাশের রায়েরবাজারে কতগুলো বিচ্ছিন্ন গর্তে নিহত বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়। আমি নিজে ৩৫টি গলিত দেহ দেখেছি। আপাতদৃষ্টে মনে হয়, তাঁরা চার-পাঁচ দিন আগে নিহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি হবে। ঢাকায় অপহরণ করা এ ধরনের লোকের সংখ্যা অন্তত ১৫০ হতে পারে।
ইউপিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রধান হৃদ্রোগ চিকিৎসক ফজলে রাব্বী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী রয়েছেন। ঢাকার মধ্যবিত্ত এলাকা ধানমন্ডির বাইরে একটি ইটখোলাকে বধ্যভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। যদিও কচুরিপানার নীল-সাদা ফুল কর্দমাক্ত জলাশয়ে শোভা পাচ্ছে। স্থানটি লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন। আজ ঢাকার শত শত মানুষ মাটির বাঁধ দিয়ে হেঁটে হেঁটে এখানে এসেছে, তাদের অনেকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে নিরুদ্দিষ্ট স্বজনদের।
বিশিষ্টজনদের অপহরণ করে তুলে নেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার সকালেই। পাঞ্জাবি সেনাদের কয়েকটি স্কোয়াড নির্দিষ্ট ঠিকানায় হাজির হয়ে নির্ধারিত পুরুষ ও নারীকে সশস্ত্র পাহারায় উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। তাঁদের সম্ভবত রায়েরবাজার ইটখোলায় এনে মাটির বাঁধের পাশে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করেছে, যাতে তাঁরা হুমড়ি খেয়ে নিচের জলাশয়ে পড়ে যান।
ড. আমিনুদ্দিন বেঙ্গল রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রধান, অক্সফোর্ডের পিএইচডি। পাকিস্তানি সেনারা যখন তাঁকে তুলে নেয়, সেই মঙ্গলবার সকাল সাতটায় তাঁকে শেষবারের মতো দেখা যায়। নাজিউর রহমান বললেন, ‘আমি দুঃখিত, আমাকেও যেতে হচ্ছে, খুঁজে দেখি।’ ততক্ষণে তিনিও উলের মাফলার দিয়ে নাক-মুখ পেঁচিয়ে নিয়েছেন।
গতকাল আমি কেবল তিন ঘণ্টা ঢাকায় ছিলাম, ততক্ষণে ইটভাটার এই খবর তেমন ছড়ায়নি। জনতা উত্তেজিত, তবে আচরণে অদ্ভুত কোমলতা। ভারতীয় সেনাদের হাত নেড়ে অভিবাদন জানাচ্ছে, গাড়িতে এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে।
সেদিনও অনেক গোলাগুলি হয়েছে, বিশেষ করে রাতের বেলায়। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অবস্থানরত সাংবাদিকেরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি তখনো বিস্ফোরণোন্মুখ। বাঙালিরা অভিযোগ করছে, বিহারি এই বিদেশিরা বহু বছর আগে মুসলমান হিসেবে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে, তারা বাঙালি হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানি সেনাসদস্যদের সাহায্য করেছে। আট মাস আগে আমি যখন যশোরে ছিলাম, এ কারণেই সেখানে বেসামরিক বিহারিদের হত্যা করা হয়। ঢাকায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড যশোরের হত্যাকাণ্ডের চেয়ে শতগুণ বেশি ভয়াবহ একটি ব্যাপার। কাজেই একধরনের প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপার অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।
ইতিমধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাহারায় সেনানিবাসে বন্দী পাকিস্তানি সেনারা এখনো সশস্ত্র, যদি প্রয়োজন পড়ে! ঢাকা যখন জেনে যাবে পাকিস্তানি সেনারা কত পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তখন দেখা দেবে সত্যিকারের সংকট। যা-ই ঘটুক, পরাজিত পাকিস্তানি সেনাদের জন্য সহানুভূতিপ্রবণ হওয়া বাঙালিদের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এ রকম একটি সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী এভাবে খেলাচ্ছলে অপ্রয়োজনে, উন্মত্তের মতো খুন করতে পারে, তা অবিশ্বাস্য।
যদি পাইকারি হত্যাকাণ্ডকে সংবাদপত্র গণহত্যা আখ্যায়িত করে, তা অবশ্যই ভয়ংকর; কিন্তু পরিকল্পিতভাবে বাছাই করে জাতির সবচেয়ে যোগ্য, বুদ্ধিমান ও গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ ও নারী হত্যার মাধ্যমে যদি জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেওয়া হয়, সেই ‘এলিটোসাইড’ এলিট হত্যা যে আরও বেশি ভয়ংকর।
গত মঙ্গলবারের অনেক আগেই পাকিস্তান শেষ হয়ে গেছে। যেসব কর্মকর্তা এই পরিকল্পনা করেছেন, তাঁরাও তা অবশ্যই জানেন। কাজেই হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকেও ধসিয়ে দেওয়া। বহুদিন ধরেই অনুমান করা হচ্ছিল, পাঞ্জাব মরুভূমির রুক্ষ সেনারা বাঙালিদের প্রতি হিংস্র বর্ণবাদী ঘৃণা লালন করে আসছে। এখন দেখা যাচ্ছে, তারা বুদ্ধিভিত্তিক ঈর্ষাও লালন করছে, যার প্রকাশ ঘটেছে এই ব্যাপক হত্যাকাণ্ডে।
ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ: এম এ মোমেন
দ্য সানডে টাইমস, ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১
প্রথম আলো, ২৬ মার্চ ২০১১, পুনর্মুদ্রিত