জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন- আগামী এক দশকের মধ্যে উত্তর মেরু বরফশূন্য হয়ে উঠতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সমীক্ষায় এমনটাই দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। উত্তর মেরু বা আর্কটিক অঞ্চলে আগামী কয়েক বছরে কার্যত কোনো সামুদ্রিক বরফ গ্রীষ্মের সময় দেখা যাবে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে এ উষ্ণতা বৃদ্ধির হার যদি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে না পারি, তাহলে বিশ্বে এমন ওলট–পালট শুরু হবে, যা আর সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না।

পৃথিবীর শীতলতম আর্কটিক অঞ্চলে এত দ্রুত পরিবর্তন আসবে, এমনটা কয়েক দশক আগেও কেউ কল্পনা করেননি। সবকিছু বদলাচ্ছে। যেখানে বরফের সুউচ্চ আস্তরণ ছিল, সেখানে সবুজ অঞ্চল ভেসে উঠছে। দেখতে মনোরম হলেও এ এক বিশাল বিপর্যয়ের বার্তা, সতর্কতা সংকেত। উত্তর মেরু বা আর্কটিকে শুধু বরফই থাকার কথা, সেখানে গাছগাছালি, ঘাস, সবুজের বিস্তার হওয়াটাই অস্বাভাবিক। 

আর্কটিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে এর আশপাশের বরফ আচ্ছাদিত এলাকায়ও। গ্রিনল্যান্ডের মতো অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় বরফ গলতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ডেনমার্কের শাসনে থাকা দ্বীপটির দখল নেওয়ার হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাইবেরিয়ার উত্তর তীরে রাশিয়া ও চীনের আগ্রহ বাড়ার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের এ অভিলাষ নতুন করে গ্রিনল্যান্ডকে সবার সামনে এনেছে। পুরো বিষয়টিই ভূরাজনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা থেকে ফিনল্যান্ডের একেবারে উত্তরের ল্যাপল্যান্ড– আর্কটিক অঞ্চলের গন্তব্যগুলো দর্শনার্থীদের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয়। পর্যটক এসব এলাকায় ঘুরে বরফ-পাহাড়ের রোমাঞ্চ উপভোগ করেন। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছে বিভিন্ন পর্যটন কোম্পানি। 

ওশানস্কাই ক্রুজ নামে সুইডেনের এক স্টার্টআপ কোম্পানি উত্তর মেরুতে বিলাসবহুল বিমানযাত্রা চালানোর পরিকল্পনা করছে, যদিও এর কার্যক্রম শুরুর দিন-তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। কিন্তু আমাদের গ্রহের শীর্ষবিন্দু (উত্তর মেরু) বহুকাল ধরে ভ্রমণপিপাসুদের নাগালের বাইরে থাকলেও সম্প্রতি কয়েকটি বিমান সংস্থা অবিশ্বাস্যভাবে এর কাছাকাছি ওড়ার চেষ্টা করছে। এখন আসা যাক আলোচ্য বন্দরটি প্রসঙ্গে। নরওয়ের সোয়ালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের সোয়ালবার্ড বিমানবন্দরটি বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরের বিমানবন্দর, যেখানে নির্ধারিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ব্যবস্থা রয়েছে। দুটি বিমান সংস্থা– এসএএস ও নরওয়েজিয়ানের উড়োজাহাজ দ্বীপপুঞ্জের প্রধান বসতি লংইয়ারবাইন বিমানবন্দর ও দক্ষিণে ৮০০ কিলোমিটারের বেশি দূরে নরওয়ের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সারাবছর চলাচল করে। বিমানবন্দরটি নিয়মিতভাবে চার্টার ফ্লাইট ও ব্যক্তিগত জেট বিমানও স্বাগত জানায়। এটি এর অনন্য ভৌগোলিক অবস্থানের আকর্ষণ। কার্যত আর্কটিক বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশগতভাবে ভঙ্গুর অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। এ অঞ্চলে থাকা সোয়ালবার্ড বিমানবন্দরও এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে শুরু করেছে। 

নেচার রিভিউস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত ফলাফলে বলা হয়েছে, উত্তর মেরু বা আর্কটিকের প্রথম বরফশূন্য দিনটি আগের অনুমানের চেয়ে ১০ বছর আগে পৃথিবীবাসী দেখতে পারে। সেই সময় মেরু অঞ্চলটি এক মাস বা তার বেশি সময়ের জন্য বরফমুক্ত থাকবে। পৃথিবীর কার্বন নির্গমণ পরিস্থিতির কারণে এমনটা দেখা যাবে। এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ আর্কটিক অঞ্চলে সম্ভবত সেপ্টেম্বরে, মানে গ্রীষ্মের সময় ভাসমান বরফ দেখা যাবে না। বিজ্ঞানীরা বরফশূন্য আর্কটিক, মানে পানিতে কোনো বরফ থাকবে না- এমনটা মনে করেন না। গবেষকেরা সমুদ্রে বরফের আকার এক লাখ বর্গকিলোমিটারের কম থাকলে তখন আর্কটিককে বরফমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আর্কটিক মহাসাগরে ৩৩ লাখ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র বরফের ছিল। সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন পরিমাণে বরফ দেখা যায়।

সমুদ্রের বরফ হ্রাস পেলে উপকূলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি বসবাসকারী প্রাণীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হবে। সমুদ্রের বরফ কমে যাওয়ার কারণে সমুদ্রের ঢেউ বড় হবে, ফলে উপকূলীয় এলাকার ক্ষয় হবে। কার্বন নির্গমণের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে, সেই হারে ভবিষ্যতে আর্কটিক এলাকা কখনো না কখনো বরফশূন্য হবেই। এই শতাব্দীর শেষের দিকে উত্তর মেরু অঞ্চল বছরে ৯ মাস পর্যন্ত বরফশূন্য থাকতে পারে। সাদা আর্কটিক অঞ্চলের বদলে আমরা তখন নীল আর্কটিক অঞ্চল দেখতে পাব। খবর- সিএনএন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ম নবন বরফ র র বরফ

এছাড়াও পড়ুন:

ভুয়া খবরে বিব্রত ববিতা, নিতে চাইলেন আইনগত ব্যবস্থা

নিজের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিয়ে আবারও বিব্রত চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ফরিদা আক্তার ববিতা। এবার তাঁর নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হয়েছে অসুস্থতার খবর। ওই পোস্টে হাতে ক্যানোলাসহ ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে ‘এবার দেশে এসে বেশির ভাগ সময় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছি। তাই অসুস্থতা পিছু ছাড়ছে না।’

ফেসবুকে এই শিল্পীর নামে আইডি খুলে কারা এমনটা করছেন, বুঝতে পারছেন না তিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে বেশ বিব্রত ও আতঙ্কিত এ অভিনেত্রী। 

এ প্রসঙ্গে ববিতা বলেন, ‘জীবনে ফেসবুক ব্যবহার করিনি। অথচ প্রায়ই কোনো অনুষ্ঠানে হাজির হলে আমাকে শুনতে হয়, আপনি তো আমার ফেসবুক বন্ধু। আগেও বলেছি, আবারও জোর দিয়ে বলছি আমি কখনো ফেসবুক ব্যবহার করি না, আমার কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। কারা যেন আমার নাম ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি তৈরি করেছে এবং আমার নাম দিয়ে নানা বিষয় পোস্ট করছে। গত সোমবার জানতে পারলাম সেই ফেক ফেসবুক আইডিতে একটি স্যালাইনযুক্ত হাতের ছবি পোস্ট করে লেখা হয়েছে আমি অসুস্থ। খবরটি পুরোপুরি ভুয়া। আপনাদের দোয়ায় ভালো  আছি।’

এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘বছরের বেশির ভাগ সময় ছেলের কাছে কানাডা থাকতে হয়। দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় বেশ আগে মেসেঞ্জারে আমার নামের ভুয়া আইডি দিয়ে অনেকের কাছে টাকাও চাওয়া হয়েছিল। পুরো বিষয়টি আমার জন্য ভীষণ অস্বস্তিকর। শুরুতে বিষয়টা পাত্তা দিইনি, এখন তো খুব ভীতিকর লাগছে। অনেক আগে ফেসবুকে দেওয়া হয়েছিল আমি নাকি মারা গেছি! পয়সা কামানোর জন্য তারা এমনটি করছে বলে মনে হয়। যারা এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ করছে, তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই, এই ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ না করলে শিগগিরই  আইনগত ব্যবস্থা নিব। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর খবরে মোটেও কান দেবেন না।’ 

১৯৬৮ সালে ‘সংসার’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেন ববিতা। এরপর নিয়মিত অভিনয় করেছেন। ক্যারিয়ারে প্রায় তিনশ সিনেমায় অভিনয় করা এই শিল্পী আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা।অভিনয় থেকে বর্তমানে দূরে আছেন ববিতা। সর্বশেষ তিনি অভিনয় করেন ‘পুত্র এখন পয়সাওয়ালা’ সিনেমায়। ভালো গল্প ও চরিত্র না পাওয়ায় অভিনয় করছেন না এ অভিনেত্রী।  
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বরফের দ্বীপে গলছে বিমানের রানওয়ে
  • ভুয়া খবরে বিব্রত ববিতা, নিতে চাইলেন আইনগত ব্যবস্থা
  • ভুয়া খবরে বিব্রত ববিতা
  • ফেসবুকে পোস্ট নিয়ে বিব্রত ববিতা