ক্রিমিয়া ছাড়তে নারাজ ইউক্রেন, জেলেনস্কির কড়া সমালোচনায় ট্রাম্প
Published: 24th, April 2025 GMT
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর ফলে জেলেনস্কির কড়া সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শান্তি আলোচনাকে ক্ষতি করার জন্য ট্রাম্প জেলেনস্কিকে অভিযুক্তও করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প তার মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে দাবি করেছেন, “যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি চুক্তি ‘খুব কাছাকাছি’ ছিল, কিন্তু জেলেনস্কির মার্কিন শর্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যা সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করা ছাড়া আর কিছুই করবে না।”
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনে শ্রমিকবাহী বাসে রাশিয়ার ড্রোন হামলা, নিহত ৯
ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত পুতিন
ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, তারা ক্রিমিয়া ছেড়ে দেবে না। রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া ভূখণ্ড দখল করে নিজেদের সাথে সংযুক্ত করেছিল।
কিছুদিন আগে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স শান্তিচুক্তি প্রসঙ্গে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেছিলেন, “এই চুক্তির অর্থ হবে ইউক্রেন এবং রাশিয়া উভয়কেই বর্তমানে তাদের মালিকানাধীন কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে।”
তবে হোয়াইট হাউজ প্রশাসন এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো ভৌগোলিক ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিতে চাইছে কিনা, বুধবার (২৩ এপ্রিল) সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি কেবল যুদ্ধের অবসান দেখতে চাই। আমার কোনো পছন্দের লোক নেই। আমি কোনো পছন্দের লোক চাই না। আমি একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে চাই।”
বিবিসি লিখেছে, ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার অবৈধ দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া জেলেনস্কির পক্ষে কেবল রাজনৈতিকভাবেই যে অসম্ভব হবে তা নয়, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনি নিয়মেরও পরিপন্থি হবে।
তিনি দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছেন যে, যে তার দেশ ক্রিমিয়া উপদ্বীপের উপর তার দাবি ছেড়ে দেবে।
মঙ্গলবার জেলেনস্কি তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে জানান, ইউক্রেন রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে স্বীকৃতি দেবে না।
তিনি বলেন, “এখানে কথা বলার কিছু নেই। এটি আমাদের সংবিধানের পরিপন্থি।”
জেলেনস্কি এবং ট্রাম্পের এই পাল্টাপাল্টি মন্তব্য তাদের সর্ম্পকে অবনতির সর্বশেষ ঘটনা। এর আগে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে প্রথম বৈঠকেই তাদের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়েছিল।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) হোয়াইট হাউজের ট্রাম্প ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “ইউক্রেনের তুলনায় রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করা তার কাছে সহজ বলে মনে হয়েছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি মনে করি রাশিয়া চুক্তির জন্য প্রস্তুত।” ট্রাম্প বলেন, “তিনি বিশ্বাস করেন যে, ওয়াশিংটন ক্রেমলিনের সাথে একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে কিন্তু কিয়েভের সঙ্গে নয়।”
ট্রাম্প বলেন, “আমি ভেবেছিলাম জেলেনস্কির সঙ্গে মোকাবিলা করা সহজ হতে পারে। এখন পর্যন্ত, এটি আরো কঠিন।”
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় সময় ট্রাম্প বারবার বলেছিলেন যে, তিনি একদিনের মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। কিন্তু মার্কিন হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাস পরেও ট্রাম্পের কাছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধবিরতি অধরা রয়ে গেছে।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট সাংবাদিকদের বলেন, “প্রেসিডেন্ট হতাশ। তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।”
গত বুধবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সতর্ক করে বলেছিলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন যদি দ্রুত কোনো চুক্তিতে না পৌঁছায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়াবে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একই হুমকি দিয়েছিলেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইউক র ন ট র ম প বল ন ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের থামানোর কি কোনো উপায় নেই
২২ এপ্রিল ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত সাতজন আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবে আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশি। একই সঙ্গে সেদিন সিটি কলেজে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এ রকম ঘটনা এই এলাকায় কিছুদিন পরপরই ঘটে। শিক্ষার্থীদের সংঘাতে মাঝেমধ্যে যুক্ত হয় আইডিয়াল কলেজের নাম। এই তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তো বটেই, এমনকি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও গাড়ির চালক–সহকারীদের সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা ঘটে।
খুব যে বড় কোনো কারণ থেকে এসব সংঘাত-সংঘর্ষের সূচনা হয়, তা কিন্তু নয়। কিন্তু সংঘাতের কারণে প্রায়ই সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে নিউমার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। কলেজ তিনটি কাছাকাছি বলে এসব সংঘাত এড়ানোর উপায় থাকে না। এলাকাটি একটি ব্যবসাকেন্দ্র হওয়ায় সংঘর্ষের সময় এখানে আসা ক্রেতাদের আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। এলাকার আশপাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও অনেক ছোট-বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংঘর্ষের কারণে সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদেরও সমস্যায় পড়তে হয়। একই কারণে এখানকার আবাসিক এলাকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
আমাদের খেয়াল রাখা দরকার, সংঘাত-সংঘর্ষ যদি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হয়, তবে এসব দেখতে দেখতে ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীরাও সংবেদনশীলতা হারাবেএবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে বোঝার চেষ্টা করেছি, কীভাবে এর সুরাহা হতে পারে। কিন্তু কোনো কলেজের শিক্ষকেরাই আশার কথা শোনাতে পারেননি। তাঁদের কথা, এমন ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। মীমাংসার জন্য বিভিন্ন সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসেছে। নানাভাবে প্রতিকারের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ যখন ছাত্রদের হাতে, তখন এসব ঘটনা কোনোভাবেই থামানো সম্ভব হয়নি।
প্রতিবারই দেখা যায়, ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে কলেজগুলো বন্ধ ঘোষণা করার অসংখ্য নজিরও আছে। এভাবে কিছুদিন পরপরই পুরোনো কিংবা নতুন কোনো কারণে তাঁদের মধ্যে আবার সংঘাত বেধে যায়।
শিক্ষকেরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্রুপে একতাবদ্ধ থাকেন। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা এ–জাতীয় কোনো মাধ্যম ব্যবহার করে তাঁরা পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন। যখনই কোনো ঘটনার কথা এসব মাধ্যমে অন্যরা জানতে পারেন, তখনই তাঁরা বিরুদ্ধ পক্ষের ওপর হামলার প্রস্তুতি নেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যার শুরু হয় ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে। সামান্য কথা–কাটাকাটি একপর্যায়ে হাতাহাতি ও মারামারিতে রূপ নেয়। প্রেম, ইভ টিজিং বা এ–জাতীয় সমস্যা থেকেও ঘটনার সূত্রপাত হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে পরস্পরের প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্য বা কমেন্ট তাঁদেরকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। সবচেয়ে বড় কথা, এসব শিক্ষার্থীর বয়সটাই এমন যে তাঁর নিজের পক্ষেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুনকলেজ কর্তৃপক্ষের কি কোনো দায় নেই৬ ঘণ্টা আগেগাড়ির চালক বা সহকারীরা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন, গাড়ির ভাড়া নিয়ে সমস্যা হয় বেশি। শিক্ষার্থীরা ছুটির দিনেও হাফ ভাড়া দেন, এমনকি ছাত্রত্বের প্রমাণ হিসেবে পরিচয়পত্র দেখান না। বিপরীতে শিক্ষার্থীদের কথা, সব সময়ের জন্যই তাঁরা হাফ ভাড়া দিতে চান। আবার, মার্কেটের দোকানদারদের সঙ্গে জিনিসের দরদাম করা থেকে শুরু করে বিচিত্র কারণে সমস্যা হয়। এর জবাবে শিক্ষার্থীরা তাঁদের সঙ্গে দোকানদারদের দুর্ব্যবহার করার কথা বলেন। ছাত্রদের বিরুদ্ধে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।
এখন জিজ্ঞাসা, যে সংঘাত জীবনের জন্য হুমকি তৈরি করে, যে সংঘাত শেষ পর্যন্ত ক্ষতি ও ক্ষয় ছাড়া আর কিছু দেবে না, সে সংঘাত নিরসনের উপায় কী। কলেজের শিক্ষকেরা ছোট ছোট ঘটনা সামাল দিতে সক্ষম হন বলে দাবি করেছেন।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা সংখ্যায় বেড়ে গেলে তাঁদের পক্ষেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। ঢাকা কলেজের ৯টি আবাসিক হোস্টেলে দুই হাজারের মতো শিক্ষার্থী থাকেন। ক্লাস চলাকালে আরও অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। আবার সিটি কলেজে একই সঙ্গে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ক্লাস করেন। ঘটনা শুরু হলে দুই পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দল ভারী করতে তাই সমস্যা হয় না।
তবে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি, তাঁরা কেবল নিজেদের পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরছেন। অর্থাৎ শিক্ষকদের পর্যায়েও পারস্পরিক বিদ্বেষ আছে। প্রকারান্তরে শিক্ষার্থীরা এখান থেকেও সংঘর্ষে উৎসাহিত হচ্ছে। তাই সমস্যার সমাধান চাইলে এখান থেকেই শুরু করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হলে আগে শিক্ষকদের মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত বসতে হবে। নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ ও আচরণ বিষয়ে নিয়মিত তাঁদেরকে কাউন্সেলিং করতে হবে। পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা–সহায়ক কার্যক্রমে যুক্ত রাখতে হবে। তা ছাড়া আন্তকলেজ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কলেজগুলো পরস্পরকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে। কোনো কোনো অনুষ্ঠান একসঙ্গে করা যায় কি না, এটাও ভাবা যায়।
কেবল এই তিন কলেজ নয়, দেশের অন্যান্য কলেজও এ রকম গঠনমূলক ও সৃজনশীল অনুষ্ঠান ও আয়োজনে পরস্পরকে যুক্ত করতে পারে। এরপরও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক নয়। সে ক্ষেত্রে দায়ী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসন থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সংঘাতের কারণ ও সূত্র উদ্ঘাটনের জন্য এই এলাকা নিবিড়ভাবে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা প্রয়োজন। আমাদের খেয়াল রাখা দরকার, সংঘাত-সংঘর্ষ যদি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হয়, তবে এসব দেখতে দেখতে ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীরাও সংবেদনশীলতা হারাবে।
● তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক