শিশুরা চকলেট বা ক্যান্ডি পেলে খুশি হয়। মা–বাবাও জ্বালাতন সহ্য করার চেয়ে চকলেট ধরিয়ে দেওয়া সহজ মনে করেন। চকলেট মুখে পুরলেই শিশুর মুখে হাসি খেলে। কিন্তু এই হাসির আড়ালে শিশুর দাঁতে জেঁকে বসে অদৃশ্য শত্রু—ডেন্টাল ক্যারিজ বা দাঁতের ক্ষয়। শিশুর দাঁত থাকে তুলনামূলক নরম–কোমল, কিন্তু এটাই অনেকে সবচেয়ে অবহেলা করেন। চকলেট, ক্যান্ডি, মিষ্টি, ডেজার্ট—এসব খাবার দাঁতের ফাঁকে আটকে থেকে ব্যাকটেরিয়ার চারণভূমি হয়ে ওঠে। আর সেই চারণভূমিতে বসে ব্যাকটেরিয়া দাঁতে আটকে থাকা চিনিকে ভেঙে তৈরি করে অ্যাসিড, যা ধীরে ধীরে দাঁতের এনামেল গলিয়ে দেয়। শুরু হয় ক্ষয়, গর্ত, ব্যথা এবং শেষে শিশু হারায় দাঁত। তাহলে কী করবেন?

আরও পড়ুনসত্যি কি দাঁতে পোকা ধরে০১ আগস্ট ২০২২যেসব লক্ষণ অবহেলা করা যাবে না

দাঁতে সাদা বা কালো দাগ।

ঠান্ডা বা মিষ্টি খেলে অস্বস্তি বা শিরশির করা।

চিবাতে বা খেতে অনীহা।

দাঁতে গর্ত।

রাতে দাঁতের ব্যথায় কান্নাকাটি।

যা করবেন

প্রথমেই শিশুকে দাঁতের পরিচর্যা শেখান।

দিনে দুবার ছোটদের উপযোগী টুথপেস্ট দিয়ে ব্রাশ করতে শেখান, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দুই মিনিট ধরে।

চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার যথাসম্ভব কমিয়ে আনুন। শিশুকে বোঝান, এসব খাবারের জন্যই এমন কষ্ট হচ্ছে।

বোতলে দুধ খাওয়ানোর পর ব্রাশ বা পানি দিয়ে শিশুর মুখ ধুয়ে দিন।

প্রতি ছয় মাসে শিশুদের ডেন্টাল চেকআপ করান।

প্রয়োজনে ফ্লোরাইড ট্রিটমেন্ট ও সিল্যান্ট ব্যবহার করা লাগতে পারে।

স্বাস্থ্যকর দাঁত চিরস্থায়ী হয়। অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও অবহেলায় শিশুর মুখের হাসি হারিয়ে যেতে পারে। চকলেট–ক্যান্ডির পরিবর্তে শিশুকে আপেল, পেয়ারা, নাশপাতি ইত্যাদি খেতে শেখান। এসব দাঁত মজবুত করে। আজই শুরু হোক দাঁতের সুরক্ষার অভ্যাস।

ডা.

জেবিন জান্নাত, ডেন্টাল ইউনিট বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম

আরও পড়ুনযত্ন নেওয়ার পরও বাচ্চার দাঁতে ক্যাভিটি হচ্ছে ?১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চকল ট

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে সিপিআর ও এইডি প্রশিক্ষণ চালুর পরামর্শ

ধরুন, আপনারা কয়েকজন গাড়িযোগে দূরে কোথাও যাচ্ছেন। হঠাৎ সহযাত্রীদের একজনের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। দ্রুত তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস না ফিরলে মৃত্যু নিশ্চিত। স্বল্প দূরত্বে কোনো হাসপাতালও নেই। এ ক্ষেত্রে আপনি কী করবেন? এ ক্ষেত্রে আপনার সিপিআর বা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশনের মৌলিক প্রশিক্ষণ থাকলে অসুস্থ সহযাত্রীর জীবন বাঁচাতেও পারেন।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ভবিষ্যতের তামিমদের বাঁচান: সিপিআর-প্রস্তুত বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবছর ১,০০,০০০ জীবন বাঁচান’ শীর্ষক এক নীতিনির্ধারণী আলোচনার আয়োজন করা হয়।

এ আলোচনায় জীবনরক্ষাকারী সিপিআর ও এইডি (অটোমেটেড এক্সটারনাল ডিফিব্রিলেটর) যন্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন আলোচকেরা। সম্প্রতি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাকে ক্রিকেটার তামিম ইকবালের জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

ই–টু–ডি ওয়ার্ল্ড স্কুল অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়ালস, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন সিপিআর দিয়ে তামিম ইকবালের হৃৎস্পন্দন ফেরানোর ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ভূমিকা রাখা মোহামেডানের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম। সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন ই-টু-ডি ওয়ার্ল্ড স্কুল অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়ালসের প্রতিষ্ঠাতা চ্যান্সেলর ও পার্টনার অধ্যাপক বারি কাহার।

অধ্যাপক বারি কাহার বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো আম্বুলেন্সে এইডি থাকে না, চালক বা সেবাকর্মীরা সিপিআর জানেন না। সঠিক নিয়মে না জানার জন্য অনেকে সিপিআর দিতে গিয়েও ব্যর্থ হন। আবার দেখা যায়, চিকিৎসকেরাও সিপিআর দেওয়া নিয়ে আইনি ভয় পান। কেননা, অনেকে ভাবেন বুকে চাপ দেওয়ার কারণেই রোগী মারা গেছেন।

এ পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব বলে মনে করেন অধ্যাপক বারি কাহার। তিনি বলেন, মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তকে ‘বেসিক লার্নিং স্কিল’ হিসেবে সিপিআরকে যুক্ত করা গেলে দক্ষ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে।

সভায় অধ্যাপক এম এ রশিদ বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাক মানেই হৃৎপিণ্ডের আচমকা থেমে যাওয়া। তখন হাসপাতালের চেয়ে জরুরি হয় পাশে থাকা মানুষটা। হাসপাতালে আসা অনেক রোগীকে বাঁচানো যেত, যদি পাশে কেউ মাত্র দুই মিনিট আগে সিপিআর দিত।

ইব্রাহিম কার্ডিয়াক অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সালেহা নাসরিন বলেন, শুধু ঢাকায় নয়, প্রতিটি জেলা শহরে স্কুল-কলেজে সিপিআর ও এইডি প্রশিক্ষণ চালু করা এখন সময়ের দাবি। এইডি ব্যবহার করতে চিকিৎসক হতে হয় না। একজন দোকানদারও পারেন জীবন বাঁচাতে, যদি তাঁকে একবার শেখানো হয়।

গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও মেডিকেল অ্যাডভাইজার ব্রিগেডিয়ার (অব.) মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তকে অবশ্যই সিপিআর যুক্ত করা দরকার। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরও কাজ করা দরকার।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক ও ঢাকা বিভাগের প্রধান সালাহ উদ্দিন, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চিকিৎসক নুসরাত দৃষ্টি, কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট প্রদীপ কুমার সরকার, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আনোয়ার হাবিব কাজল, স্কিল জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কে এম হাসান, জাগো ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ইয়ুথ কো-অর্ডিনেটর সাদিয়া জাহান প্রমুখ।

আরও পড়ুনতামিম ইকবালের জীবন রক্ষা করেছে সিপিআর, এটি কেন সবার জেনে রাখা জরুরি, কোথায় শিখবেন ২৬ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ