থামেনি কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী দখল, কাল পর্যবেক্ষণে যাচ্ছেন দুই উপদেষ্টা
Published: 23rd, April 2025 GMT
কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালী এখন দখল-দূষণে মৃতপ্রায়। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও শহরের ময়লা–আবর্জনা ফেলে নদীর তলদেশ ভরাট চলছে। নদীর জায়গা দখল ও প্যারাবন ধ্বংস করে গড়ে তোলা হয়েছে ১ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা। মাঝেমধ্যে জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও পরবর্তী সময়ে তা আবার তৈরি হচ্ছে। এক সময়ের শহরের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র কস্তুরাঘাট এখন বড় এক আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাটসহ বিভিন্ন অংশ সরেজমিন পর্যবেক্ষণে যাচ্ছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আগামীকাল সকাল ১০টার দিকে দুই উপদেষ্টা শহরের বদরমোকাম মসজিদসংলগ্ন বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট পর্যবেক্ষণে যাবেন। বিকেলে দুই উপদেষ্টা জেলা প্রশাসন, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, জেলা পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো.
দখল-দূষণে মরে যাচ্ছে নদী
আজ বুধবার দুপুরে নদীর কস্তুরাঘাট ঘুরে দেখা গেছে, দুই যুগ আগে সৃজিত প্যারাবন ধ্বংস করে প্রায় ৩০০ একর বনভূমিতে তৈরি হয়ে আধা পাকা চার শতাধিক ঘরবাড়ি। সব কটি বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগসহ নাগরিক সুবিধার সবকিছু হয়েছে। বাসাবাড়িতে ভাড়ায় থাকছেন ভাসমান মজুরশ্রেণির মানুষ।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ অভিযান চালিয়ে কস্তুরাঘাটের চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছিল জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিন্তু কিছুদিনের মাথায় উচ্ছেদ করা ভূমিতে আবার নির্মিত হয় ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। অনেকে টিনের বেড়া দিয়ে জলাভূমি ঘিরে রেখেছেন।
এ নিয়ে ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে ‘কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী/উচ্ছেদের পর নদীতীরের প্যারাবন আবারও ভূমিদস্যুদের দখলে’ শিরোনামে সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সেই অবৈধ স্থাপনা আর উচ্ছেদ হয়নি। এখন নদীর পূর্ব দিকে আরও বিপুল অংশ ভরাট করে সেখানে ইটের দেয়াল তুলে প্লট আকারে বিক্রি হচ্ছে। চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ।
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলেন, আড়াই বছর আগে নদীর ওপর প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন থেকে ভূমিদস্যুদের নজর পড়ে সেতুর দুই পাশের প্যারাবনের দিকে। এ পর্যন্ত অন্তত ৬০০ একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে তাতে নির্মিত হয়েছে পাকা-সেমি পাকা ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। অথচ তিন দশক আগেও নদীর কস্তুরাঘাট ছিল শহরের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৩৪ কিলোমিটারের নদীটি রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে শহরের কস্তুরাঘাট-নুনিয়াছটা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নুনিয়াছটা থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে ১ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।
সংকুচিত গতিপথ, ধ্বংস জীববৈচিত্র্য
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, খুরুশকুলে যাতায়াতের জন্য নির্মিত সেতুর কারণেই নদীর মরণদশা যাচ্ছে। দখল-দূষণে নদীটি সংকুচিত হয়ে এখন (সেতুর গোড়ার অংশ) ২০০ ফুটের কাছাকাছি এসে ঠেকেছে। তাতে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর টানা দুই মাস প্যারাবনের উচ্ছেদ করা জায়গায় আবার ঘরবাড়ি নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। কিছুদিন ধরে শহরের টেকপাড়া, মাঝিরঘাট, হাঙরপাড়া, পেশকারপাড়া অংশের ভূমি দখল করে পাকা স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ ভুয়া কাগজ সৃজন করে নদীর জমি প্লট আকারে বিক্রি করছেন। তাতে কেউ বাধা দিচ্ছে না।
পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংগঠন ‘সমৃদ্ধ কক্সবাজার’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, গত ১ বছরে কস্তুরাঘাট এলাকার দুই লাখের বেশি কেওড়াগাছ নিধন করে ৬০০ একরের প্যারাবন ধ্বংস করা হয়েছে। সেখানে রাতারাতি গড়ে উঠে সাত শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। তাতে পাখির আবাসস্থল, মৎস্যসম্পদ-জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে।
গত বছরের ২৩ মে জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভা। তাতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান সারোয়ার মাহমুদ বিএস দাগ অনুসরণ করে নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সীমানা নির্ধারণ এবং দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।
শহরে প্রতিদিন উৎপন্ন হয় ৯৭ টনের বেশি বর্জ্য। এর মধ্যে ৭০ টন বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। অবশিষ্ট বর্জ্য সাগরে চলে যাচ্ছে। বছরের পর বছর বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর বুক এখন ময়লার পাহাড় হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে পৌরসভার কর্তৃপক্ষ এখনো ময়লা আবর্জনা ফেলছে। শহরের কোথাও ময়লা ফেলার নির্ধারিত ভাগাড় নেই।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, নদীর ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় যেসব স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে, তার সবটুকু উচ্ছেদ করা হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ২০১৪ সালের তালিকায় দখলদার ছিল ৫১ জন। ২০২০ সালের দখলদারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩১ জনে।
পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, গত দুই বছরে নদীর কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম থেকে পেশকারপাড়া পর্যন্ত পাঁচটি দাগে নদী, খাল ও বালুচর শ্রেণির কয়েক শ একর সরকারি জমি দখল করে তাতে ১ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, দুই উপদেষ্টার সরেজমিন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাঁকখালী নদী আগের পরিবেশ ফিরে পাবে—এমন নির্দেশনা আশা করছেন কক্সবাজারবাসী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ই উপদ ষ ট পর ব শ বর জ য ঘরব ড় শহর র স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
আরভিনদের আশীর্বাদ মুজারাবানি
ব্লেসিং মানে আশীর্বাদ। জিম্বাবুয়ের জন্য তো আশীর্বাদ হয়েই এসেছেন ব্লেসিং মুজারাবানি। সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন তো এই তরুণ পেসারই। ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার এই বোলার উইকেটের সুবিধা পুরোপুরিই নিয়েছেন।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উইকেটে বাউন্স আছে। এই টেস্টে ছিল ঘাসও। এমন উইকেটে মুজারাবানি বাড়তি সহায়তা পাবেন, এমনটাই ধারণা ছিল। সেই ধারণাই সত্যি প্রমাণ করেছেন মুজারাবানি, নিয়েছেন ৯ উইকেট।
দলকে ৪ বছর পরও টেস্ট জয়ের স্বাদ দেওয়ার সঙ্গে নিজে জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনের মুখে তাই মুজারাবানি নামটাই বেশি এসেছে।
আসাটাই অবশ্য স্বাভাবিক। প্রথম ইনিংসে উইকেট নিয়েছিলেন ৩টি। গতকাল দিনের দ্বিতীয় বলেই আউট করেছেন নাজমুল হোসেনকে। সেটিও মাথার চালে। চতুর্থ দিনের প্রথম বলটা ইয়র্কার দিয়ে নাজমুলকে অপ্রস্তুত করে ফেলেন মুজারাবানি। অপ্রস্তুত নাজমুলকে পরের বলটিতে মুজারাবানি দেন বাউন্সার।
সিলেট টেস্টে ৯ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের জয়ে বড় অবদান রেখেছেন মুজারাবানি