জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত পুতিনের
Published: 22nd, April 2025 GMT
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিন বছর আগে যুদ্ধের শুরুর দিকেই কেবল এই দুই নেতার মধ্যে সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনা ছিল। পরে যুদ্ধের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তা শেষ হয়ে যায়।
গতকাল সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেন, ‘শান্তি আলোচনার যেকোনো পদক্ষেপকে রাশিয়া সব সময় ইতিবাচকভাবে দেখে। আমাদের আশা, ইউক্রেনের প্রতিনিধিরাও একই ধরনের বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন।’
পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, পুতিন যে সরাসরি আলোচনা করতে চান, সেটার অর্থ এই নয় যে দেশটির বেসামরিক নিশানায় হামলা চালানো বন্ধ করা হবে।
পুতিনের মন্তব্য নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি জেলেনস্কি। তবে সোমবার রাতে নিয়মিত ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ইউক্রেন ‘যেকোনো ধরনের আলোচনার জন্য প্রস্তুত’। কিন্তু তাতে বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাসে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে দু-একটি দেশে সরাসরি ও অনলাইনে কয়েক দফা আলোচনা হয়। যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণা করলে তা বন্ধ হয়ে যায়।
পুতিনের মন্তব্যের পর ইন্টারফ্যাক্স সংবাদ সংস্থাকে পেসকভ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বলেছেন বেসামরিক নিশানায় হামলা না চালানোর বিষয়েও আলোচনা সম্ভব। এটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে হতে পারে। এর অর্থ হলো ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে দর-কষাকষিসহ সার্বিক আলোচনার প্রসঙ্গ মাথায় রেখে তিনি কথা বলেছেন।’
ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, বেসামরিক অবকাঠামোয় হামলা চালাতে রাশিয়া রাজি হবে কি না, সে বিষয়ে ‘মস্কোর পক্ষ থেকে স্পষ্ট উত্তর’ চায় ইউক্রেন।
এর আগে ইস্টার সানডেতে ঘোষিত পুতিনের স্বল্প সময়ের যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। এমন যুদ্ধবিরতি, যাতে অন্তত ৩০ দিনের জন্য দূরপাল্লার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে বেসামরিক অবকাঠামোতে সব ধরনের হামলা বন্ধ করা হবে।’
আরও পড়ুনজেলেনস্কি বেসামরিক স্থাপনায় ৩০ দিনের জন্য হামলা বন্ধ চান ২২ ঘণ্টা আগেজেলেনস্কির ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রসঙ্গে পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধারণাটি আমরা “বিশ্লেষণ” করে দেখব। বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা বন্ধ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে.
সাংবাদিকদের কাছে পুতিন চলতি মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব দিকের শহর সুমির মধ্যাঞ্চলের একটি বেসামরিক স্থাপনায় হামলার কথা স্বীকার করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের এ ধরনের স্বীকারোক্তি দুর্লভ। রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৫ জন নিহত এবং ১০০ জনের বেশি আহত হন।
পুতিন বলেন, ‘একটি কংগ্রেস হলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার বিষয়টি সবাই আপনারা জানেন। সুমি অঞ্চলে এ হামলা চালানো হয়েছে। এটি একটি বেসামরিক অবকাঠামো, নয় কি? হ্যাঁ, এটি বেসামরিক অবকাঠামো। কিন্তু সেখানে [রাশিয়ার] কুরস্ক অঞ্চলে যারা অপরাধ করেছিল, তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিল।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে সেনা তত্ত্বাবধানে নদী খনন
যশোরের দুঃখ ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আশপাশের নদী খনন করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শনে এ কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
পরিদর্শনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ সময় রিজওয়ানা বলেন, ‘দুর্গত এলাকার মানুষ ও পানি বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে সবকিছু করা হবে। এবার বর্ষায় জলাবদ্ধতা ঠেকাতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শিগগির ভবদহ এলাকার নদী খনন করা হবে।’
ভবদহের জলাবদ্ধতা প্রায় চার দশকের। ভুক্তভোগীরা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে পাউবো পাম্প দিয়ে পানি বের করতে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও দূর হয়নি দুর্দশা।
তিন উপদেষ্টার আসার খবরে গতকালও ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের কাছে জড়ো হয়ে ভুক্তভোগীরা আবারও টিআরএম চালুর দাবি জানান। এক পর্যায়ে কয়েকজন টিআরএমের বিরোধিতা করে স্লোগান দিলে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। স্থানীয়দের দাবি, ঘের মালিকদের ভাড়া করা লোক বিক্ষোভ করেছেন।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, পাউবো কর্মকর্তারা ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে চান না। তারা সমস্যা জিইয়ে রেখে প্রতি বছর প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করতে চান। টিআরএম ছাড়া জলাবদ্ধতা দূর হবে না জেনেও এমন প্রকল্প মূলত স্থানীয় ঘের মালিকদের সুবিধার জন্য নিচ্ছে পাউবো। তবে এবার আমডাঙ্গা খাল খননের জন্য দরপত্র হয়েছে। এটি টিআরএমের অংশ। তিন উপদেষ্টা আসায় স্থায়ী সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী।
পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে সাংবাদিকদের উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, ভবদহ সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা যাবে না। তবে স্বল্পকালীন সমাধান হিসেবে আমডাঙ্গা খাল খনন করে পানি বের করা হয়েছে। ফলে অনাবাদি ২০ হাজারের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলা সেচপাম্পের ৪৬ শতাংশ বিদ্যুৎ বিল কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ সময় উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান উপস্থিত অর্ধশতাধিক কৃষক। তারা উপদেষ্টাকে বলেন, পাউবো আপনাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মূল বিষয় আড়াল করেছে। পানি নেমে যাওয়া জমির মাত্র ২০ শতাংশে ধান আবাদ হয়েছে।