ইস্টার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরপরই ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক হামলা
Published: 21st, April 2025 GMT
ইস্টার সানডে উপলক্ষে স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ান বাহিনী পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনে রাতভর ৯৬টি ড্রোন এবং তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। খবর আল জাজিরার।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী টেলিগ্রামে লিখেছে, রবিবার রাতভর খারকিভ, ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক ও চেরকাসি অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ৪২টি রুশ ড্রোন ধ্বংস করেছে এবং আরো ৪৭টি ড্রোনকে পুনঃনির্দেশিত করেছে।
এসব তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনের দক্ষিণ বন্দর শহর মাইকোলাইভের কর্মকর্তারা রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘মানবিক বিবেচনার’ ভিত্তিতে ‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণা করেছিলেন। রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত ৩০ ঘণ্টা পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি চলবে বলে জানিয়েছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দফা আলোচনা পরও মস্কোকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে হিমশিম খাচ্ছে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকদিন আগে সতর্ক করে বলেছিলেন, শান্তি আলোচনায় মস্কো ও কিয়েভ কয়েক দিনের মধ্যে অগ্রগতি না দেখালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা থেকে সরে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে ‘মানবজীবন নিয়ে খেলার পুতিনের আরেকটি প্রচেষ্টা’ বলে উড়িয়ে দেন এবং পাল্টা জবাব হিসেবে দীর্ঘ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
জেলেনস্কি বলেন, “এটি রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করবে, কারণ ৩০ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা খবরের শিরোনাম সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট, কিন্তু প্রকৃত আস্থা তৈরির ব্যবস্থার জন্য নয়। রাশিয়াকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতে ঘোষণা করতে হবে।”
রবিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, তারা অস্থায়ী বিরতির মেয়াদ বাড়ানোর পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে।
কিন্তু ক্রেমলিন জানায়, এমন কোনো ঘোষণা দেওয়া হবে না। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এই সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি থেকে টেকসই যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার প্রচেষ্টায় মার্কিন প্রশাসন খুব একটা উৎসাহ পাবে না। মস্কো এবং কিয়েভ উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ করেছে।
রাশিয়া ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেও তা ব্যাপকভাবে লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।পোকরোভস্ক ফ্রন্টে রুশ বাহিনী ব্যাপক গোলাবর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, যুদ্ধবিরতি সময়কালে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার অবস্থানগুলোতে ৪৪৪ বার গুলি চালিয়েছে এবং ৯০০টিরও বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রবিবার (২০ এপ্রিল) আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, চলতি সপ্তাহেই একটি শান্তি চুক্তিতে একমত হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন র রব ব র
এছাড়াও পড়ুন:
জীবনের প্রথম উপার্জন, তা–ও আবার বছরের পয়লা দিনে
আমার ছেলেবেলায় পয়লা বৈশাখের বড় একটা অংশজুড়ে ছিল কেনাকাটা। ১০-১৫ দিন আগে থেকেই বাবা আর কাকার সঙ্গে ‘এটা কিনে দাও, সেটা কিনে দাও’ বলে দেনদরবার চলত। এখনো বাড়িতে কেনাকাটার রীতি আছে। তবে এখন আর জোর করার প্রয়োজন হয় না। উল্টো যদি বলি, ‘লাগবে না, সেদিনই না কিনলাম’ বাবা রাগ করেন, শোনেন না। এবারও বিকাশে টাকা পাঠিয়ে বললেন, ‘কিছু কিনে নিও।’
পরপরই ফোনে মা আর বোনের হুমকি, ‘কিনে ছবি পাঠাবি। না কিনলে কিন্তু খবর আছে!’
বাড়ির একেবারে কাছেই বড় বটগাছটার নিচে বেশ কয়েকটা দোকান ছিল। একই পাড়ায় আমরা যাঁরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়তাম, অনেকেই দলবেঁধে বটগাছের নিচে ক্রিকেট, হাডুডুসহ বিভিন্ন খেলা খেলতাম। সংগত কারণেই দোকানি কাকুরা আমাদের চিনতেন। পয়লা বৈশাখের দিন কোনো না কোনো দোকানে হালখাতা থাকতই। দোকানের সামনের দিকটা রঙিন কাগজ আর কাগজের ফুল দিয়ে সাজানোর দায়িত্ব আমাদের ওপর পড়ত। নববর্ষের দিন সকালে দলবেঁধে দোকান সাজানোর কাজ করতাম। বিকেলে বন্ধুরা মিলে মেলায় যেতাম। নাগরদোলা, গানবাজনা, ম্যাজিক শো—কত–কী যে থাকত, গেলেই প্রাণ জুড়িয়ে যেত।
বন্ধুরা মিলে একবার ঠিক করলাম, মেলায় আমরাও দোকান দেব। তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। কিন্তু দোকান দিতে হলে মেলার আয়োজকদের কাছ থেকে জায়গা বরাদ্দ নিতে হবে, তা ছাড়া দোকান নিতে হলে নির্দিষ্ট টাকাও দিতে হবে। শুরুতেই নিজেদের টিফিনের জমানো টাকা থেকে একটা তহবিল তৈরি করা হলো। কিন্তু অনুমতি?
সেবার মেলার মাতব্বর ছিলেন আমাদের বান্ধবী মৌবনী ভদ্রের কাকা। মৌবনীর সঙ্গে পড়ালেখা নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিল। জানতাম, সে আমাকে ঈর্ষা করে। তাই কথাটা তাকে বলব কি বলব না যখন ভাবছি, তখনই বন্ধুরা এসে নিয়ে গেল মৌবনীর কাছে। শুরুতে যদিও বলেছিল, ‘ছোট্ট পোলাপানের আবার দোকান কি রে!’
কিন্তু পরপরই হেসে বলেছিল, ‘চিন্তা করিস না, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তবে আমিও তোদের সঙ্গে থাকব। কাজ তেমন কিছু করতে পারব না। শুধু ভাগের টাকাটা দেব, পরে লাভ যা হবে, ভাগ দিবি।’
অগত্যা রাজি হতে হলো। ৫০ শতাংশ ছাড়ে মৌবনীর তরফে জায়গা বরাদ্দ পেলাম আমরা। দোকানের নাম রাখা হলো, ‘দুই দিনের দোকানি’।
আমার নিয়মিত বাজারে যাতায়াত ছিল। বাবার পরিচিত বড় দোকানও ছিল কয়েকটা। মেলার আগের দিন গিয়ে, বিক্রি না হলে ফেরত নেওয়ার শর্তে মালামাল নিয়ে এলাম। দোকানটাকে সবাই মিলে সাজালাম। ঝড়ের দিনে তালগাছ থেকে বাবুই পাখির বাসা নিচে পড়ত। সুমিতের সংগ্রহে ছিল। সুমিত নিয়ে এল। মৌবনী ভালো আঁকতে পারত। সুন্দর পাটির পরে ‘শুভ নববর্ষ/দুই দিনের দোকানির থেকে শুভেচ্ছা নিন’ লিখে দোকানের সামনে টানিয়ে দিল। মেলার ওই দুই দিন সেবার কি যে হইচই আর আনন্দে কেটেছিল, লিখে প্রকাশ করা কঠিন। আমাদের লাভও হয়েছিল। ৪২১ টাকা।
মৌবনী, সুমিত, রুদ্র সবাই কি খুশি! জীবনের প্রথম উপার্জন, তা–ও আবার বছরের পয়লা দিনে। চোখ বুজে পেছনে ফিরে তাকালে সব স্পষ্ট ভেসে ওঠে। বৃষ্টির প্রথম ফোঁটার মতো প্রবল মায়ায় হৃদয় তখন সিক্ত হয়ে যায়।
আরও পড়ুনগামছা কীভাবে বাঙালি সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হয়ে উঠল১৪ এপ্রিল ২০২৫