মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য আরএসএসকে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Published: 20th, April 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপিকে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করলেও ভারতে হিন্দুত্ববাদের মূল সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে (আরএসএস) সাধারণত কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন না। বরং তিনি অতীতে বলেছেন, আরএসএসে ভালো লোক আছেন। কিন্তু ১১-১২ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এক খোলাচিঠিতে মমতা সরাসরি আরএসএসের সমালোচনা করেছেন।
‘শান্তির আবেদন’ শীর্ষক ওই খোলাচিঠি গতকাল শনিবার রাতে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসে।
খোলাচিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘বিজেপি এবং তাদের সঙ্গীরা পশ্চিমবঙ্গে হঠাৎ খুব আক্রমণাত্মক হয়েছে। এই সঙ্গীদের মধ্যে আরএসএসও আছে। আমি আগে আরএসএসের নাম নিইনি, কিন্তু এবার বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে, রাজ্যে যে কুশ্রী মিথ্যার প্রচার চলছে তার মূলে তারাও আছে। প্ররোচনার সূত্রে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা (মুর্শিদাবাদের দাঙ্গা) ঘটে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতটিকে এরা ব্যবহার করছে। ব্যবহার করছে বিভেদের রাজনীতি করার জন্য। এরা “ডিভাইড অ্যান্ড রুল”-এর খেলা খেলতে চায়। এ খেলা বিপজ্জনক।’
আরএসএসকে ভারতে হিন্দুত্ববাদের প্রধান পরিচালক বলা হয়ে থাকে। এই সংগঠনের অধীনে অসংখ্য শাখা, সংগঠন বা অনুসংগঠন আছে। ভারতের জাতীয় স্তরে ক্ষমতাসীন বিজেপি আরএসএসের রাজনৈতিক শাখা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরএসএসের সম্পর্ক খারাপ নয়। অতীতে তিনি আরএসএসের কাজকর্মের প্রশংসাই করেছেন। একসময় বিজেপির সরকারকে সমর্থনও দিয়েছিলেন মমতা। সে সময় বিজেপির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ি, যাঁর প্রতি মমতা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি সরাসরি সমালোচনা করলেন আরএসএসের। এটা তিনি অতীতে করেননি।
মমতা উল্লেখ করেন, ‘আগুনের সঙ্গে খেলা করার জন্য ওরা প্রথমে রামনবমী দিনটিকেই বেছে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রামনবমী উদ্যাপন হয় খুবই শান্তিপূর্ণভাবে। এরপর ওরা ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কিছু বিষয়কে ব্যবহার করতে চায়।’
বিজেপি ও তার সঙ্গীরা মিথ্যা ও সংকীর্ণতার ওপরে ভিত্তি করে রাজনীতি করছে বলে মন্তব্য করে মমতা খোলাচিঠিতে বলেন, ‘তারা যা বলছে তা অসত্যের ঝুড়ি, অপব্যাখ্যায় ভর্তি। দয়া করে ওদের বিশ্বাস করবেন না। ওরা দাঙ্গা বাধাতে চায়। দাঙ্গায় সবার ক্ষতি হয়। আমরা সবাইকে ভালবাসি। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই। আমরা দাঙ্গার নিন্দা করি, আমরা দাঙ্গার বিরুদ্ধে। ওরা সংকীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতির কথা ভেবে আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে চায়।’
মমতা আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে এবং মানুষের প্রাণ ও সম্মান রাখার প্রয়োজনে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশের দুজন অফিসার-ইন-চার্জকে সরানো হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আরও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দয়া করে মনে রাখবেন, দাঙ্গা যারা ঘটায়, তারা হিন্দুও নয়, তারা মুসলমানও নয়, দাঙ্গা বাধায় দুর্বৃত্তরা। সব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘দয়া করে ধীর ও শান্ত থাকুন। আমরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নিন্দা করি এবং তাদের রুখবই। দাঙ্গার পেছনে আছে যে দুর্বৃত্তরা, তাদের কড়া হাতে দমন করা হচ্ছে। কিন্তু সেই সঙ্গে পারস্পরিক অবিশ্বাসের বাতাবরণও আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে, পরস্পরের ব্যাপারে সহমর্মী ও যত্নশীল হতে হবে।’
আরও পড়ুনমুর্শিদাবাদে ওয়াক্ফ আইন ঘিরে সহিংসতায় তিনজন নিহত১২ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আরএসএস র র জন ত র র জন স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
৬১ বছরের ‘চিরকুমার’ বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ‘একরোখা নেতা’ হিসেবে পরিচিত দিলীপ ঘোষ আজ নিজের চিরকুমারের তকমা ঘোচাবেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার সল্টলেকের নিউটাউনের বাসভবনে বিয়ে হবে। এ বিয়ে হবে অনাড়ম্বরভাবে। পাত্রী তাঁর দল বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী রিঙ্কু মজুমদার।
দিলীপ ঘোষের বাড়ি ঝাড়গ্রামে। এখন তিনি থাকছেন কলকাতার সল্টলেকের নিউটাউনের আবাসিক এলাকায়। বিয়ের অনুষ্ঠানে কিছু বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
গ্রামের বাড়ি ঝাড়গ্রাম থেকে সপ্তাহখানেক আগে দিলীপের মা চলে এসেছেন কলকাতায়। ছেলের সংসার গুছিয়ে তিনি পরে ফিরে যাবেন তাঁদের ঝাড়গ্রামের বাড়িতে।
বিজেপির অনেক নেতাই বলছেন, দিলীপ ঘোষ দেখিয়ে দিলেন রাজনৈতিক জীবনের মতো তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও একই রকম ‘কালারফুল’। তিন কাউকে রেয়াত দিয়ে কথা বলেন না। দিলীপ ঘোষ তিন মাস ধরে প্রেমে হাবুডাবু খাচ্ছিলেন।
দিলীপ ঘোষ বহু বছর আগে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএসে নাম লিখিয়েছিলেন। তখন শপথও নিয়েছিলেন তিনি ‘অকৃতদার’ থাকবেন।
আরএসএস অবশ্য ২০১৪ সালে দিলীপ ঘোষকে বিজেপিতে পাঠায়। ২০১৫ সালেই পেয়ে যান পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্য সভাপতির পদ। ২০২১ সালে তাঁর নেতৃত্বেই বিজেপি রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে লড়ে। পেয়ে যান ৭৭টি আসন। নতুন এক রেকর্ড গড়েন দিলীপ ঘোষ। দিলীপ ঘোষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি হয়েছেন, লোকসভার সংসদ সদস্য হয়েছেন। হয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম নেতা।
এই বিয়ে নিয়ে দিলীপ ঘোষ মুখ না খুললেও তাঁর হবু স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দিলীপদাকে বহুদিন ধরে চিনি। ওকে ভালোও লাগে। মনের কথা খুলে বলা যায়। গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে প্রপোজ করেছিলাম। তিনি তিন মাস সময় চেয়েছিলেন। তারপর সেই সময় এসে গেল কিছুটা বিলম্বে।’
বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য শাখার সাবেক সভাপতি সংঘমিত্রা চৌধুরী বলেছেন, ‘দিলীপদাকে অনেক শুভেচ্ছা। ওর দাম্পত্যজীবন অনেক সুখের ও সুন্দর হোক।’