লবণের দাম নিয়ে এমনিতেই হতাশ কক্সবাজার জেলার লবণচাষিরা। তার ওপর বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে মাঠের লবণ। এতে লবণচাষিদের লোকসানের বোঝা আরও বাড়ল।

লবণচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। কিন্তু এ পরিমাণ লবণ উৎপাদনে চাষিদের খরচ হচ্ছে ২৮০ টাকার বেশি। এতে কেজিপ্রতি তিন টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে চাষিদের।

চাষিদের অভিযোগ, লবণ মিলমালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। অথচ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত পরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এর ফলে এই শিল্পের লাভ পুরোটাই যাচ্ছে মিলমালিক ও ব্যবসায়ীদের পকেটে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণের চাষ হচ্ছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত গত ৫ মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন।

তবে আজ শনিবার ভোর থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় লবণ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার একমাত্র টেকনাফে লবণ উৎপাদন চালু থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেখানেও উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন চাষিরা। এর আগের দুদিনের বৃষ্টিতে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর ও বাঁশখালীতে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

আজ সকাল থেকে ৬৮ হাজার ৫০৫ একরের শতভাগ মাঠে লবণ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে জানিয়ে বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো.

ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, একবার বৃষ্টি হলে কমপক্ষে পাঁচ দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকে। মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানি সরিয়ে লবণ উৎপাদনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি, মাঠের পরিচর্যা করতে কয়েক দিন সময় লেগে যায়। তা ছাড়া সূর্যের প্রখর তাপ না থাকলে লবণ উৎপাদন হয় না। ইদ্রিস আলী বলেন, গত মৌসুমে জেলায় দৈনিক সর্বোচ্চ ৪২ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছিল। চলতি মৌসুমে দৈনিক সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদিত হয়েছে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এখন প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকায়, যা অতীতে দেখা যায়নি। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করতে করতে হতাশ চাষিরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। লবণের দাম কেন কমে গেল, তার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

আজ দুপুরে কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের কৈলারপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার ৫০০-৬০০ একরের লবণমাঠ বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। উৎপাদিত লবণ শতাধিক গর্তে সংরক্ষণ করা হলেও বেশ কিছু জায়গায় লবণের স্তূপ পড়ে আছে। তাতে পলিথিন মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।

কৈলারপাড়ার লবণচাষি আবদুল করিম (৫০) বলেন, বৃষ্টিতে তাঁর পাঁচ কানি মাঠের লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে সাত-আট মণ লবণ নষ্ট হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উৎপাদিত লবণ সংরক্ষণ করতে পারেননি তিনি।

একই অবস্থা দেখা গেছে কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও ও টেকনাফ উপজেলায়। বৃষ্টির কারণে ৬০ হাজার একরের বেশি মাঠে লবণ উৎপাদন বন্ধ আছে।

কক্সবাজার লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, এমনিতেই দাম নিয়ে চাষিরা হতাশ। তার ওপর দুর্যোগে লবণ নষ্ট হচ্ছে। সরকার চাইলে লবণের ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন চাষিরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ র ম ট র ক টন লবণ উৎপ দ লবণ ব ক র উৎপ দ ত র লবণ লবণ র

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিতে বাড়ল কক্সবাজারের লবণচাষিদের লোকসানের বোঝা

লবণের দাম নিয়ে এমনিতেই হতাশ কক্সবাজার জেলার লবণচাষিরা। তার ওপর বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে মাঠের লবণ। এতে লবণচাষিদের লোকসানের বোঝা আরও বাড়ল।

লবণচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। কিন্তু এ পরিমাণ লবণ উৎপাদনে চাষিদের খরচ হচ্ছে ২৮০ টাকার বেশি। এতে কেজিপ্রতি তিন টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে চাষিদের।

চাষিদের অভিযোগ, লবণ মিলমালিক ও ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। অথচ খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত পরিশোধিত লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এর ফলে এই শিল্পের লাভ পুরোটাই যাচ্ছে মিলমালিক ও ব্যবসায়ীদের পকেটে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণের চাষ হচ্ছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত গত ৫ মাসে লবণ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন।

তবে আজ শনিবার ভোর থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় লবণ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার একমাত্র টেকনাফে লবণ উৎপাদন চালু থাকলেও বৃষ্টির কারণে সেখানেও উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন চাষিরা। এর আগের দুদিনের বৃষ্টিতে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, কক্সবাজার সদর ও বাঁশখালীতে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

আজ সকাল থেকে ৬৮ হাজার ৫০৫ একরের শতভাগ মাঠে লবণ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে জানিয়ে বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, একবার বৃষ্টি হলে কমপক্ষে পাঁচ দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকে। মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানি সরিয়ে লবণ উৎপাদনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি, মাঠের পরিচর্যা করতে কয়েক দিন সময় লেগে যায়। তা ছাড়া সূর্যের প্রখর তাপ না থাকলে লবণ উৎপাদন হয় না। ইদ্রিস আলী বলেন, গত মৌসুমে জেলায় দৈনিক সর্বোচ্চ ৪২ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছিল। চলতি মৌসুমে দৈনিক সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদিত হয়েছে ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এখন প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকায়, যা অতীতে দেখা যায়নি। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করতে করতে হতাশ চাষিরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। লবণের দাম কেন কমে গেল, তার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

আজ দুপুরে কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের কৈলারপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার ৫০০-৬০০ একরের লবণমাঠ বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। উৎপাদিত লবণ শতাধিক গর্তে সংরক্ষণ করা হলেও বেশ কিছু জায়গায় লবণের স্তূপ পড়ে আছে। তাতে পলিথিন মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।

কৈলারপাড়ার লবণচাষি আবদুল করিম (৫০) বলেন, বৃষ্টিতে তাঁর পাঁচ কানি মাঠের লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে সাত-আট মণ লবণ নষ্ট হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উৎপাদিত লবণ সংরক্ষণ করতে পারেননি তিনি।

একই অবস্থা দেখা গেছে কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও ও টেকনাফ উপজেলায়। বৃষ্টির কারণে ৬০ হাজার একরের বেশি মাঠে লবণ উৎপাদন বন্ধ আছে।

কক্সবাজার লবণচাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, এমনিতেই দাম নিয়ে চাষিরা হতাশ। তার ওপর দুর্যোগে লবণ নষ্ট হচ্ছে। সরকার চাইলে লবণের ন্যায্যমূল্য পেতে পারেন চাষিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ