গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে ‘আপত্তি’ বিডার, পুনর্বিবেচনার আহ্বান
Published: 16th, April 2025 GMT
শিল্প খাতে গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। সংস্থাটি বলেছে, নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। এতে দেশে নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। ফলে নতুন মূল্যবৃদ্ধি সংশোধন করা প্রয়োজন।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে লেখা এক চিঠিতে এ কথাগুলো জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী)।
গত সোমবার দেশে শিল্প খাতে গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তাতে নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৩ শতাংশ। ফলে প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে তাদের। এ ছাড়া পুরোনো শিল্পকারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম।
গ্যাসের এমন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ইতিমধ্যে দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন উদ্বেগ জানিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় গতকাল বিডাও বিইআরসিকে চিঠি লিখে উদ্বেগ জানিয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিইআরসি নতুনভাবে গ্যাসের দাম নির্ধারণের ফলে নতুন বিনিয়োগকারীকে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীর তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি দাম দিতে হবে। এই বৈষম্যমূলক নীতি দেশে নতুন বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থাকে নিরুৎসাহিত করবে। বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে এই সিদ্ধান্তকে ‘অন্যায্য প্রতিযোগিতামূলক’ বলে মনে করছেন এবং এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী চিঠিতে বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এই সিদ্ধান্তে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। বিডা সরকারের ভর্তুকি হ্রাসের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করছে না। তবে ভর্তুকি হ্রাসের বিষয়টি সর্বজনীন করা যেতে পারে।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি বিডার আয়োজনে ঢাকায় চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ৪০টি দেশ থেকে প্রায় ৪৫০ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী অংশ নেন। বাংলাদেশে বিদ্যমান সুযোগ–সুবিধা দেখে সম্মেলনে অংশ নেওয়া অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন। বেশ কয়েকজন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও চুক্তি করেছেন। কিন্তু বিনিয়োগ সম্মেলনের ঠিক পরপর বৈষম্যমূলকভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় তাঁদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গ্যাসের নতুন মূল্যহার পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বিডা। সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, দেশে বিনিয়োগের স্বার্থে ও অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধি সংশোধন করা প্রয়োজন।
বিইআরসি চেয়ারম্যানের কাছে লেখা চিঠিতে আশিক চৌধুরী আরও বলেন, ‘গ্যাসের একটি বিনিয়োগবান্ধব মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নে আপনার সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি। এ বিষয়ে একটি রিভিউ অ্যান্ড ইম্প্যাক্ট অ্যানালাইসিস ওয়ার্কশপ আয়োজন করা যেতে পারে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ য স র নত ন নত ন ব ন য় গ নত ন ম ল ব ইআরস
এছাড়াও পড়ুন:
শিল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগের ঘোষণা
আগে আবেদন করলে আগে ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরীকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সংযোগ প্রদান করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান। গ্যাস পেলেই উৎপাদনে যেতে পারবে এমন শিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই লোডবৃদ্ধি করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে গ্যাসের সিস্টেম লস হ্রাস সংক্রান্ত এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব নির্দেশনা দেন।
বিইআরসি নির্ধারিত ট্যারিফে পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলে অগ্রাধিকার এবং পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলের বাইরের বিষয়ে রপ্তানিমুখী শিল্পে নতুন গ্যাস সংযোগ প্রদানের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন পরিপত্র জারিকরার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ফাওজুল কবির খান বলেন, গ্যাসের প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে গ্রাহকের সংযোগ কার্যকর ও নতুন সংযোগের অনুমোদন দিতে হবে। রাজস্ব বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নতুন গ্যাস সংযোগ ও লোডবৃদ্ধির কার্যকর করতে হবে। এতে কি পরিমাণ রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে তার হিসাব নিরূপণ করারও নির্দেশ দেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, আগামী ৩১ মে তারিখের মধ্যে গ্যাস পাইপলাইনের সকল লিকেজ মেরামত নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় উত্থাপিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সিস্টেম লস ৪ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিইআরসির তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গ্যাসের সামগ্রিক সিস্টেম লস আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেড়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাসের সিস্টেম লস ছিল ৮.৪৩ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে হয়েছে ১৩.৫৩ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে ২ শতাংশের নিচে সিস্টেম লসকে আদর্শ বিবেচনা করা হয়। অনেক আগেই বিইআরসি সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছে।
সভায় আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনে জরিপ পরিচালনা করা হয়। ওই জরিপে ৯ হাজার ৩৮৪টি ছিদ্র পাওয়া গেছে। একই সময়ে জালালাবাদে ১১৮টি, জিটিসিএল’ এ মাত্র ২টি লিকেজ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি মাত্র ১১টি, বাখরাবাদে ৩টি, এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসে ১টি ছিদ্র চিহ্নিত ও মেরামত করা হয়েছে।