রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে নিহত ৩২, আহত ৮৩
Published: 13th, April 2025 GMT
রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮৩ জন। ইউক্রেনের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরে এ হামলা চালানো হয় বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সকাল সোয়া ১০টার দিকে সুমি শহরের প্রাণকেন্দ্রে দুই দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ওই সময় স্থানীয় লোকজন খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উৎসব পাম সানডে উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
সরকারি চ্যানেলগুলোয় ঘটনাস্থলের বেশ কিছু ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সেখানকার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে ধোঁয়া উড়তেও দেখা গেছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইহোর ক্লাইমেঙ্কো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, হামলায় অন্তত ৮৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাতটি শিশু রয়েছে।
হামলা নিয়ে সুমি শহরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আরতেম কোবজার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিবৃতিতে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই উজ্জ্বল পাম সানডেতে আমাদের সম্প্রদায় এক ভয়াবহ বিয়োগান্তক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। দুঃখজনকভাবে আমরা জানতে পেরেছি যে ইতিমধ্যে ৩২ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।’
হামলা নিয়ে কথা বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। তিনি বলেন, মানুষ যখন একটি বিশেষ দিনে গির্জায় যাচ্ছিলেন, তখন ভয়াবহ হামলায় অনেকেই হতাহত হয়েছেন।
রাশিয়ার সর্বশেষ হামলার ঘটনায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে প্রতিক্রিয়া জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা থেমে নেই। রাশিয়ার প্রতি এমন মনোভাব প্রয়োজন যা একজন সন্ত্রাসীর প্রাপ্য।
ইউক্রেনে তিন বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে এই বৈঠক হয়। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এ বৈঠক হয়।
জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি করতে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশ দুটি পাল্টা হামলা অব্যাহত রেখেছে, যা সংঘাত বন্ধের আলোচনাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল শনিবার রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ইউক্রেন দুই দফা হামলা চালিয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের দুটি গ্রাম দখল করেছে।
যুদ্ধবিরতির অগ্রগতি নিয়ে তাৎক্ষণিক কিছু জানানো যাবে না: ক্রেমলিন
এদিকে গতকাল ক্রেমলিন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তবে ট্রাম্পের পূর্ববর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দুই দেশের সম্পর্কের যে ক্ষতি করেছেন, তাতে তাৎক্ষণিক ফলাফল আশা করা যায় না।
মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের কাছে জানতে চেয়েছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বিখ্যাত রিপোর্টার পাভেল জারুবিন। জবাবে পেসকভ বলেন, সবকিছুই ভালোভাবে চলছে। কিন্তু, তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ফলাফল আশা করা অসম্ভব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
ভোক্তার ওপর আর বোঝা নয়
সোমবার প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। অন্যান্য সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে।
দুটো খবরের মর্মার্থে খুব ফারাক নেই। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৩ টাকা বাড়াতে চেয়ে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দেয়। ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ মার্চ। দাম বাড়াতে চাওয়ার কারণ এটাই।
বিষয়টি নিয়ে ৬ এপ্রিল ও ৮ এপ্রিল বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন পরিশোধন কারখানার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। পরবর্তী বৈঠক আজ হওয়ার কথা।
৮ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ছয় মাস ধরে ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। লম্বা সময় এ ধরনের সুযোগ বজায় রাখার বাস্তবতা এনবিআরের নেই।
এই পটভূমিতে ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রোববার ট্যারিফ কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে নতুন দর নির্ধারণের কথা জানিয়েছে। তারা বলেছে, বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে ১৮৯ টাকা হচ্ছে, যা এত দিন ১৭৫ টাকা ছিল। আর পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম হচ্ছে ৯২২ টাকা, যা আগে ছিল ৮৫২ টাকা ছিল। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম ১৬৯ টাকা, যা ছিল ১৫৭ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল আছে। মার্চ মাসে সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমেছে। এমন সময়ে দেশীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে শুল্কছাড় প্রত্যাহারের কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে এনবিআরের দাবি, অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর রেয়াত দেওয়ার সুযোগ নেই। অবস্থা দাঁড়িয়েছে, এনবিআর আমদানি কর বাড়াবে আর ব্যবসায়ীরা সেই কর বৃদ্ধির বোঝা চাপাবেন ভোক্তাদের ওপর।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে রোজার আগে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৬–১৭ টাকা বাড়িয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বোতলের তেলও নির্ধারিত দামে পাওয়া যায়নি।
চাল, ডাল, আটার মতো ভোজ্যতেল ও চিনি অপরিহার্য খাদ্যপণ্য। এ ধরনের পণ্যকে রাজস্ব আদায়ের হাতিয়ার করা সমীচীন নয়। সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর প্রয়োজন হলে বিত্তবানদের কাছ থেকে আরও বেশি বেশি আয়কর নিতে পারে। বিভিন্ন মহল থেকে আয়করের সীমা বাড়ানোর কথাও বলা হচ্ছিল। এনবিআর সেদিকে না গিয়ে আমদানি পণ্যের ওপর কর বাড়ানোর সহজ পথ বেছে নিয়েছে।
রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক–করের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। প্রত্যক্ষ কর, অর্থাৎ আয়কর বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক–করের হার বেশি। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত শুল্ক ও করনীতির পুনর্মূল্যায়ন করা। যেসব পণ্যের দাম বাড়ালে গরিব ভোক্তাসাধারণের ওপর বেশি চাপ পড়ে, সেসব পণ্য শুল্ক–করমুক্ত রাখতে হবে। কারণ, এখনো মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। অন্যদিকে মজুরি বৃদ্ধির হার কম এবং কর্মসংস্থান যথেষ্ট তৈরি হচ্ছে না। মানুষের আয়রোজগার পরিস্থিতি ভালো নয়।
সিদ্ধান্তের আগে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর আগাম ঘোষণা দেওয়া ঠিক হয়নি বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা যে মন্তব্য করেছেন, (প্রথম আলোর প্রতিবেদনে), আমরা তার সঙ্গে পুরোপুরি একমত। এ ধরনের আগাম ঘোষণা বাজারকে কেবল অস্থিতিশীলই করবে না, কৃত্রিম সংকটও তৈরি করতে পারে।
আমরা আশা করব, আজকের বৈঠকে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হবে না, যাতে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। আশা করি, এনবিআর তথা সরকার ভোক্তাসাধারণের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেবে।