দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ কিছুতেই বন্ধ হইতেছে না। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গল ও বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত পাঁচটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়াছে। যাহার মধ্যে তিনটিই ঘটিয়াছে এক দিনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর রায়পুরায় দুই স্কুলছাত্রী ঘুরিতে গিয়া আটজন দ্বারা দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হইয়াছে। একই দিন মধ্যাহ্নে নরসিংদীরই শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের কুন্দারপাড়া গ্রামে এবং রাত্রিকালে নেত্রকোনার আটপাড়ায় ১২ বৎসর বয়সী দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়। বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চকলেটের প্রলোভন দেখাইয়া ৫ বৎসরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হইয়াছে বলিয়া অভিযোগ। একই দিনে পিরোজপুরের নাজিরপুরে পুত্রবধূকে ঘুমের ঔষধ খাওয়াইয়া ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুরের বিরুদ্ধে মামলা হইয়াছে। শুধু ধর্ষণ নহে; পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাতিলাখালী এলাকায় বুধবার ১১ বৎসরের শিশুকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে আইয়ুব আলী নামে একজনকে গণপিটুনির পর পুলিশে সোপর্দ করিয়াছেন এলাকাবাসী। একই দিন সকালে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় বান্দুটিয়া গ্রামে এক মুয়াজ্জিনের বিরুদ্ধে ৭ বৎসরের শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠিয়াছে। আমরা কিছুদিন পূর্বে আছিয়া নামে এক শিশুকে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াইতে গিয়া ধর্ষণের শিকার ও মৃত্যুবরণ করিতে দেখিয়াছি। একই সময়ে পটুয়াখালী, নোয়াখালীসহ আরও কয়েক স্থানে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়াছে।

আছিয়ার ঘটনায় রাজধানীসহ সমগ্র দেশে আমরা এহেন পাশবিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে জনগণের বিভিন্ন অংশকে ফুঁসিয়া উঠিতে দেখিয়াছি। যাহার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারও অতি তৎপরতার সহিত সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ও তাহার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করিয়াছে। কিন্তু দুঃখজনক, উক্ত প্রতিবাদ থামিয়া যাইবার পরপর যেন সকল কিছুই পূর্ববৎ চলিতেছে। যাহার প্রতিফলস্বরূপ আলোচ্য ধর্ষণের ঘটনাগুলি ঘটিয়াছে। শুধু উহাই নহে; নরসিংদীর দুই স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা প্রভাবশালী বিধায় যথারীতি ভুক্তভোগী দরিদ্র পরিবার দুইটি আইনের আশ্রয় গ্রহণের পরিবর্তে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়। তদুপরি ঘটনা প্রকাশ হইবার পর স্থানীয় জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলি মামলা করিলেও অদ্যাবধি কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয় নাই। এই ঘটনায় প্রমাণ হয়– আছিয়ার মৃত্যু জনগণকে বিক্ষোভে শামিল হইতে তাড়িত করিলেও অন্তত পুলিশের চৈতন্যোদয় ঘটাইতে পারে নাই। এই বিষয়ে সরকারও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে অপরাধীদের মনে ভীতি সঞ্চার এবং ভুক্তভোগীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইনের দ্বারস্থ হইতে উদ্বুদ্ধ করিতে সক্ষম হয় নাই। প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, অতীতের বহু ঘটনার ন্যায় এই ঘটনায়ও ভুক্তভোগী পরিবারদ্বয় সামাজিক কলঙ্ক হইতে কন্যাসন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষাকল্পে ধর্ষণের ঘটনা চাপিয়া যাইবার চেষ্টা করিয়াছে। ইহাতে স্পষ্ট, যেই কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে দোষারোপের যেই অপসংস্কৃতি সমাজে শিকড় গাড়িয়াছে, উহার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারাভিযানও উচ্চকণ্ঠে শুরু করা যায় নাই।

অনস্বীকার্য, ধর্ষণের ন্যায় জঘন্য অপরাধ দেশে দীর্ঘকালব্যাপী চলমান। এই ক্ষেত্রে পূর্বের সরকারসমূহের অসংবেদনশীলতা এবং অপরাধীদের প্রশ্রয়দানের মানসিকতা ইন্ধন জোগাইয়াছে। সুতরাং সমাজকে রজনীকালেই এহেন অপরাধ হইতে মুক্ত করা অসম্ভব। কিন্তু রায়পুরার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করিতে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছাই যথেষ্ট। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ যেই সকল প্রভাবশালী মামলা না করিবার জন্য ভুক্তভোগীদের পিতার উপর চাপ প্রয়োগ করিয়াছিলেন, তাহাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণও জটিল কিছু নহে। প্রতিবেদনমতে, আসামিরা দুই কন্যার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিতেছে। ফলে পরিবার দুইটি এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করিতেছে। আসামি ও উক্ত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে আলোচ্য পরিবার দুইটি অন্তত বল-ভরসা পাইত। ইহা অন্যদেরও ভবিষ্যতে একই রকম প্রতিকূলতা মোকাবিলা করিতে সাহস জোগাইত। আমাদের প্রত্যাশা, ধর্ষণের ন্যায় গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার প্রকৃতই শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করিবে। অপরাধী মাত্রকেই দ্রুত আইনের আওতায় আনিবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ঘটন য় পর ব র র পর ব কর য় ছ অপর ধ হইয় ছ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করুন

দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ কিছুতেই বন্ধ হইতেছে না। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গল ও বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত পাঁচটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়াছে। যাহার মধ্যে তিনটিই ঘটিয়াছে এক দিনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর রায়পুরায় দুই স্কুলছাত্রী ঘুরিতে গিয়া আটজন দ্বারা দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হইয়াছে। একই দিন মধ্যাহ্নে নরসিংদীরই শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের কুন্দারপাড়া গ্রামে এবং রাত্রিকালে নেত্রকোনার আটপাড়ায় ১২ বৎসর বয়সী দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়। বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চকলেটের প্রলোভন দেখাইয়া ৫ বৎসরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হইয়াছে বলিয়া অভিযোগ। একই দিনে পিরোজপুরের নাজিরপুরে পুত্রবধূকে ঘুমের ঔষধ খাওয়াইয়া ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুরের বিরুদ্ধে মামলা হইয়াছে। শুধু ধর্ষণ নহে; পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাতিলাখালী এলাকায় বুধবার ১১ বৎসরের শিশুকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে আইয়ুব আলী নামে একজনকে গণপিটুনির পর পুলিশে সোপর্দ করিয়াছেন এলাকাবাসী। একই দিন সকালে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় বান্দুটিয়া গ্রামে এক মুয়াজ্জিনের বিরুদ্ধে ৭ বৎসরের শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠিয়াছে। আমরা কিছুদিন পূর্বে আছিয়া নামে এক শিশুকে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াইতে গিয়া ধর্ষণের শিকার ও মৃত্যুবরণ করিতে দেখিয়াছি। একই সময়ে পটুয়াখালী, নোয়াখালীসহ আরও কয়েক স্থানে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়াছে।

আছিয়ার ঘটনায় রাজধানীসহ সমগ্র দেশে আমরা এহেন পাশবিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে জনগণের বিভিন্ন অংশকে ফুঁসিয়া উঠিতে দেখিয়াছি। যাহার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারও অতি তৎপরতার সহিত সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ও তাহার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করিয়াছে। কিন্তু দুঃখজনক, উক্ত প্রতিবাদ থামিয়া যাইবার পরপর যেন সকল কিছুই পূর্ববৎ চলিতেছে। যাহার প্রতিফলস্বরূপ আলোচ্য ধর্ষণের ঘটনাগুলি ঘটিয়াছে। শুধু উহাই নহে; নরসিংদীর দুই স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা প্রভাবশালী বিধায় যথারীতি ভুক্তভোগী দরিদ্র পরিবার দুইটি আইনের আশ্রয় গ্রহণের পরিবর্তে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়। তদুপরি ঘটনা প্রকাশ হইবার পর স্থানীয় জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলি মামলা করিলেও অদ্যাবধি কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয় নাই। এই ঘটনায় প্রমাণ হয়– আছিয়ার মৃত্যু জনগণকে বিক্ষোভে শামিল হইতে তাড়িত করিলেও অন্তত পুলিশের চৈতন্যোদয় ঘটাইতে পারে নাই। এই বিষয়ে সরকারও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে অপরাধীদের মনে ভীতি সঞ্চার এবং ভুক্তভোগীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইনের দ্বারস্থ হইতে উদ্বুদ্ধ করিতে সক্ষম হয় নাই। প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, অতীতের বহু ঘটনার ন্যায় এই ঘটনায়ও ভুক্তভোগী পরিবারদ্বয় সামাজিক কলঙ্ক হইতে কন্যাসন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষাকল্পে ধর্ষণের ঘটনা চাপিয়া যাইবার চেষ্টা করিয়াছে। ইহাতে স্পষ্ট, যেই কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে দোষারোপের যেই অপসংস্কৃতি সমাজে শিকড় গাড়িয়াছে, উহার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারাভিযানও উচ্চকণ্ঠে শুরু করা যায় নাই।

অনস্বীকার্য, ধর্ষণের ন্যায় জঘন্য অপরাধ দেশে দীর্ঘকালব্যাপী চলমান। এই ক্ষেত্রে পূর্বের সরকারসমূহের অসংবেদনশীলতা এবং অপরাধীদের প্রশ্রয়দানের মানসিকতা ইন্ধন জোগাইয়াছে। সুতরাং সমাজকে রজনীকালেই এহেন অপরাধ হইতে মুক্ত করা অসম্ভব। কিন্তু রায়পুরার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করিতে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছাই যথেষ্ট। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ যেই সকল প্রভাবশালী মামলা না করিবার জন্য ভুক্তভোগীদের পিতার উপর চাপ প্রয়োগ করিয়াছিলেন, তাহাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণও জটিল কিছু নহে। প্রতিবেদনমতে, আসামিরা দুই কন্যার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিতেছে। ফলে পরিবার দুইটি এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করিতেছে। আসামি ও উক্ত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে আলোচ্য পরিবার দুইটি অন্তত বল-ভরসা পাইত। ইহা অন্যদেরও ভবিষ্যতে একই রকম প্রতিকূলতা মোকাবিলা করিতে সাহস জোগাইত। আমাদের প্রত্যাশা, ধর্ষণের ন্যায় গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার প্রকৃতই শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করিবে। অপরাধী মাত্রকেই দ্রুত আইনের আওতায় আনিবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ