গাজায় পাঁচ মাস ধরিয়া ইসরায়েল যেই হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাইতেছে; নৃশংসতা ও বর্বরতার মাপকাঠিতে তাহার তুলনা বিশ্বের ইতিহাসে নাই। গত বৎসরের ৭ অক্টোবর মধ্যপ্রাচ্যের এই জায়নবাদী রাষ্ট্র বিমান আক্রমণের মধ্য দিয়া গাজার নিরীহ জনসাধারণের উপর ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল, এক পর্যায়ে যাহা স্থল আগ্রাসনে পরিণত হইয়া নির্মমতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। সেই ধারাবাহিক বিমান ও স্থল অভিযানের বলি হইয়া তখন ৪০ সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান; আহত হন ততোধিক গাজাবাসী। ঐ নিহত ও আহতদের উল্লেখযোগ্য অংশ নারী ও শিশু। গত জানুয়ারিতে দীর্ঘ আলোচনার ফলস্বরূপ দুই পক্ষের মধ্যে একটা সাময়িক যুদ্ধবিরতি হইলেও, উহা টেকসই হয় নাই। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী তাহার চিরাচরিত খামখেয়ালিপনা প্রদর্শন করিয়া গাজাবাসীর উপর পুনরায় হামলা শুরু করেন, যাহা অদ্যাবধি চলিতেছে। তৎসহিত গাজায় নিহত ও আহতের সংখ্যাও পাল্লা দিয়া বৃদ্ধি পাইয়াছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য উদ্ধৃত করিয়া সোমবার সমকাল জানাইয়াছে, রবিবার অবধি ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫১ সহস্র ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লক্ষ ১৫ সহস্রাধিক আহত হইয়াছেন। ইসরায়েল বুঝাইয়া দিতেছে– উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই গণহত্যা ও নির্বিচার ধ্বংসযজ্ঞ চালাইয়া যাইবে। ইহাও অজানা নহে যে, বিশ্বের একমাত্র ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির উদ্দেশ্য ২৬ লক্ষ বাসিন্দার গাজা উপত্যকাকে সম্পূর্ণ দখলে লওয়া। 

আমরা জানি, এই হীন কার্যটি ইসরায়েল একক শক্তিতে করিতেছে না। বিশেষত পশ্চিমা শক্তিগুলির আশীর্বাদ তাহাকে শক্তি জোগাইয়া চলিয়াছে। ইতোপূর্বে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধ প্রলম্বিত করিবার সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইসরায়েলের জন্য বিলিয়ন ডলারের সহায়তা মঞ্জুর করিয়াছিলেন। তদুপরি, ইসরায়েলে প্রেরণ করা হইয়াছিল অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ এবং মার্কিন সেনা। সকল কিছুই ব্যবহৃত হইয়াছে গাজাকে মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরে। বর্তমান মার্কিন প্রশাসন সেইখানে সাময়িক যুদ্ধবিরতির জন্য বাহবা কুড়াইলেও ইসরায়েলের চরমপন্থি শাসকগোষ্ঠীকে অধিকতর হিংস্র হইবার ইন্ধন দিয়াছে। অন্যদিকে দুর্ভাগ্যবশত, নিজেদের ইসলামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পাহারাদার বলিয়া দাবি করা মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলি নির্বিকার। পশ্চিমা বিশেষত মার্কিন শাসক শ্রেণির সহিত হীন স্বার্থে উহারা এমনই বন্ধন গড়িয়া তুলিয়াছে, যাহা ফিলিস্তিনি ও সাধারণ আরবদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করিয়া তুলিয়াছে। কেহ অস্বীকার করিতে পারিবে না, বর্তমানে যেই সামরিক অভিযান গাজায় চলিতেছে উহা ফিলিস্তিনিদের আরেক আবাসভূমি পশ্চিম তীরকেও রেহাই দিবে না। এমনকি লেবানন, ইয়েমেন, ইরানসহ সম্পূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যকেই কালক্রমে গ্রাস করিতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইসরায়েলবিরোধী যেই বিক্ষোভ চলিতেছে, উহাকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।

অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যেই কোনো শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কর্তব্য। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ যতই দূরের হউক, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রতিবাদের সম্মিলন ও ধারাবাহিকতা বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করিবে, যাহা অন্যায়কারীর উপরে নৈতিক চাপ সৃষ্টিতে সহায়ক। তবে প্রতিবাদসমূহ এমনভাবে চালাইতে হইবে যাহাতে ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলে অংশগ্রহণ করিতে পারে। শুধু মুসলমানদের পক্ষে যদ্রূপ এহেন বর্বরতার বিরুদ্ধে জয়লাভ অসম্ভব, তদ্রূপ ইতিহাস সাক্ষী, সকল শান্তিপ্রিয় ও যুদ্ধবিরোধী মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদের সম্মুখে অতি বৃহৎ অত্যাচারীকেও একদিন পরাজয় মানিতে হয়।
বস্তুত নেতানিয়াহু ও তাঁহার দোসরদের বিরুদ্ধে খোদ ইসরায়েলে দীর্ঘদিন যাবৎ জনবিক্ষোভ চলমান। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশে দেশে বহু ইহুদি ধর্মের অনুসারী ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভে শামিল হইয়াছেন। আমরা বিশ্বাস করি, কথিত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের নামে ইসরায়েল গাজাসহ মধ্যপ্রাচ্যব্যাপী যেই তাণ্ডব চালাইতেছে, তাহা বিশ্ব ইতিহাসে এমন এক কলঙ্কময় অধ্যায় সৃষ্টি করিয়াছে, যাহা এক সময়ে ভয়াবহ গণহত্যার শিকার ইহুদিদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে লজ্জায় নিমজ্জিত করিবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা বললে সরকার পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দেয়

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুললে সরকার পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ‘দোহাই’ দেয় বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। আজ শুক্রবার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশে এ কথা বলেছেন তিনি। ‘জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে’ এই সমাবেশের আয়োজন করে ইনকিলাব মঞ্চ।

আজ শাহবাগে এই উন্মুক্ত প্রান্তরে তাঁরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেটা ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে পূরণ হওয়ার কথা ছিল বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন সারজিস আলম। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই তাদের কাছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তারা আমাদের পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দেয়।’ এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যখন শাপলা চত্বর, পিলখানা এবং জুলাইয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, তখন পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় ছিল?’

তবে সারজিস আলম তাঁর বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নিয়ে এই অবস্থান ব্যক্তকারী হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা উপদেষ্টা কিংবা পশ্চিমা কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি।

এ সময় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে সারজিস বলেছেন, ‘এই জেনারেশনকে (প্রজন্ম) ভয় করুন। যদি এই জেনারেশনের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আবেগ নিয়ে খেলা করেন, তাহলে এই জেনারেশন সকল ক্ষমতার বিপক্ষে গিয়ে যে কাউকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারে।’

এই সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সহসমন্বয়ক মোসাদ্দেক ইবনে আলী বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে, তারা বিদেশি দূতাবাসগুলোর কাছে নিজেদের শির দাঁড়া বিক্রি করে দিয়েছে। দল গঠনের পর তারা দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়, কিন্তু কোথাও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা ছিল না। এই সরকারের ঘুড়িটা অন্তর্বর্তীকালের মধ্যে ঘুরলেও তার নাটাইটা বিদেশি কোনো দূতাবাসের হাতে রয়েছে।

সরকার কোন কোন বিচার করছে এবং সেটা কতখানি হয়েছে, তা স্পষ্ট করে বলার দাবি জানান এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, পৃথিবীতে অনেক ফ্যাসিবাদী দলকে চিরস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের নজির আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সেই নিয়মেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

‘জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার এবং গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে’ সমাবেশে উপস্থিত দর্শকদের একাংশ। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন: মামুনুল হক
  • জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
  • আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে আপ বাংলাদেশের মিছিল
  • ফিলিস্তিনে নির্বিচার মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবিতে মহাসমাবেশ
  • ‘ম্যাস গ্যাদারিং ফর প্যালেস্টাইনে’ জনতার ঢল, বিশ্বমুসলিম ঐক্যের আ
  • ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ 
  • নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি
  • প্রশাসন আগের মতো দলবাজি শুরু করছে: নুরুল হক
  • সংস্কার-নির্বাচনের খেলা বাদ দিয়ে বিচার করুন: সারজিস
  • আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা বললে সরকার পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দেয়