হবিগঞ্জের পাহাড়ে সজনের ফলনে চাষিরা লাভবান
Published: 5th, April 2025 GMT
হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় সজনের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে সজনের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাই পাহাড়ি চাষিরা সজনে বিক্রিতে লাভবান হচ্ছেন।
এখন সজনের মৌসুম। এটি ফাল্গুন মাসের প্রথমে ধরা শুরু করে। চৈত্র ও বৈশাখ মাসজুড়ে বিক্রি হয়। এ সবজিটি এক সময় হবিগঞ্জ জেলার সর্বত্র চাষ হতো। এখন শুধু ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে জেলার পাহাড়ি এলাকায়। তার পাশাপাশি গ্রামের অনেক বাড়িতেও সজনে চাষ হয়। আর এ মৌসুমে সজনের ভালো ফলন হয়েছে।
জেলার চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা পাহাড়ি এলাকা ও দেউন্দি চা-বাগান এলাকা পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, বাড়ি বাড়ি সজনের গাছ। অনেকে গাছ থেকে সজনে সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। আবার নিজেদের খাবারে সবজির চাহিদা মেটাচ্ছেন। এভাবে জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, মাধবপুর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার প্রতিটি চা-বাগান, আদিবাসী পুঞ্জির বাড়িতে সজনে চাষ হচ্ছে। এর ফলনে কোনো সার বা বিষ প্রয়োগের প্রয়োজন হচ্ছে না।
আরো পড়ুন:
ব্যয় বেশি, তুলার দাম বাড়ানোর দাবি চাষিদের
মিষ্টি ভুট্টায় সফলতার স্বপ্ন দেখছেন স্কুল শিক্ষক মনি
আলাপকালে দেউন্দি চা-বাগানের বাসিন্দা প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, বাগানের উঁচু-ঢালু স্থানের মাটিতে সজনের ভালো ফলন হয়ে থাকে। এ সবজিতে পুষ্টি রয়েছে। দেউন্দি বাগানের শ্রমিক নেতা আমোদ মাল বলেন, তাদের কয়েকটি গাছ রয়েছে। প্রতিবছর সবকটি গাছে সজনে ধরে। নিজেদের খাওয়াসহ বিক্রি করে ভালো টাকা পাওয়া যায়। মৌসুম শেষে গাছের কিছু কিছু ডাল কেটে দিতে হয়। এতে নতুন ডালে বেশি ফলন হয়।
চুনারুঘাট উপজেলার কালেঙ্গা পাহাড়ের কালিয়াবাড়ী পুঞ্জির হেডম্যান বিনয় দেববর্মা জানান, তাদের বাড়ি বাড়ি সজনে গাছ রয়েছে। গাছে সজনে ধরে। এ সব সজনে তারা বিক্রি করার পাশাপাশি নিজেরা খেতে পারেন। সজনে চাষে কোনো খরচ নেই। বরং বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।
বাহুবলের আলীয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী উটিয়ান টংপেয়ার জানান, সজনে গাছের ডালপালা নরম। ঝড় আসলে ভেঙে যায়। তারপরও সজনে চাষে ওষুধ না দিলেও ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। নিজেদের খাওয়ার পাশাপাশি বিক্রিও করা যাচ্ছে।
সাতছড়ি ত্রিপুরা পল্লীর হেডম্যান চিত্তরঞ্জন দেববর্মা ও সহকারী হেডম্যান আশিষ দেববর্মা জানান, তাদের পল্লীতে বেশ কিছু সজনে গাছ আছে। প্রতি বছরই সজনে ধরছে। নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি বিক্রি করে তারা অর্থ পাচ্ছেন।
শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজারের পাইকারি ক্রেতা মোতাব্বির হোসেন জানান, গ্রামে এখনো কিছু কিছু বাড়িতে সজনের চাষ হয়। তবে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে পাহাড়ে। তাই তারা পাহাড় থেকে সজনে কিনে বাজারে খুচরা ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে ভালো লাভ হচ্ছে। ক্রেতারাও বিষমুক্ত সজনে খেতে পারছেন।
ক্রেতা সজল মিয়া জানান, এক আঁটি সজনে ৬০ টাকা দিয়ে কিনছেন। এ সবজি খেয়ে স্বাদ পাওয়া যায়। আরেক ক্রেতা কামাল মিয়া জানান, সজনে খেতে হলে শুকনো শীমের বীজ ও শুটকির প্রয়োজন। সঙ্গে মাছ দিলে আরও ভালো স্বাদ পাওয়া যায়।
চাষিরা প্রতি কেজি সজনে ডাটা পাইকারদের কাছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করেন। আর ১২টা সজনে এক আঁটি করে বিক্রি করেন ৫০ টাকায়। সেই সজনে ডাটা খুচরা পর্যায়ে যেতে কেজি ১২০ টাকায় ও আঁটি ৭০ টাকায় বিক্রি হয়।
হবিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.
এছাড়া দাঁতের মাড়ির সমস্যা দূর করতে সজনে ডাটার জুড়ি নেই। প্রাথমিক অবস্থায় টিউমারের প্রতিষেধক হিসেবে সজনে পাতা বেশ কাজের। বাতের ব্যথা ও হেঁচকি উপশমে এই সজনে ডাটা বেশ উপকারে আসে। এছাড়াও আঘাতে ফুলে যাওয়া কমাতে সহায়তা করে। নানা গুণে ভরা সজনে ডাটা আপনার রসনাতৃপ্তি মেটানোর পাশাপাশি দেবে পুষ্টি, রাখবে সুস্থ।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আকতারুজ্জামান জানান, সজনে সবজিটির পুষ্টিগুণ ভালো। জেলার পাহাড়ি এলাকায়সহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয় ৬৫ মেট্রিক টন। শুকনো স্থানে উৎপাদন ভালো হয়। বর্তমানে পাহাড়ি এলাকায় চাষে কৃষকরা লাভবান। পাহাড়ি এলাকার বাড়ি বাড়ি সজনের চাষ হচ্ছে। এর চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। হবিগঞ্জ থেকে কিছু পরিমাণ সজনে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
ঢাকা/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল র সমস য এল ক য় সজন র
এছাড়াও পড়ুন:
হাইকোর্টের রুল: মেঘনা আলমকে কেন মুক্তি নয়
বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের আাদেশ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং কেন তার মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হবে না; তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রিট আবেদনটি করেন মেঘনা আলমের বাবা বদরুল আলম। তার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া কেন অসাংবিধানিক ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি নয়; সেটিও জানতে রুল দিয়েছেন আদালত।
আরো পড়ুন:
ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ স্থগিত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন উদ্বোধন
রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদির হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করে এই রুল দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, আইজিপিকে রুলের জবাব দিতে দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবীরা বলছেন, মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতা আইনে কেন আটকাদেশ দেওয়া হলো? তারা মনে করছেন, একটি অস্পষ্ট অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তাকে আটকের আদেশ দেওয়া হয়েছে, যে কারণে তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে গত বুধবার (৯ এপ্রিল) ফেসবুকে লাইভ করার মধ্যেই মেঘনা আলমকে আটক করা হয়। লাইভে তিনি বলছিলেন, তার বাসার ‘দরজা ভেঙে পুলিশ পরিচয়ধারীরা’ ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছে। অবশ্য শেষপর্যন্ত তাকে আটক করা হয়। তারপর তার লাইভ বন্ধ হয়ে যায়। ১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা ওই লাইভ মেঘনার প্রোফাইল থেকে মুছে যায়। তবে এর আগেই ফেসবুকে সেই লাইভের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক এই মিস আর্থ বাংলাদেশকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে তোলে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনাকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন।
মডেল মেঘনাকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনার মধ্যে শনিবার ডিএমপির ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রবিবার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল স্বীকার করেন, মেঘনা আলমের আটকের প্রক্রিয়া সঠিক ছিল না।
তিনি জানান, মেঘনা আলমের ব্যাপারে কিছু তদন্ত পুলিশ করছে। তার বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটা সঠিক হয়নি। তার যদি কোনো অপরাধ থাকে, সেই অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার ২০২০ সালের আসরে জয়ী হন মডেল ও মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম।
ঢাকা/মামুন/রাসেল