সিঁড়ি বেয়ে উঠতে আপনারও শ্বাসকষ্ট হয়? কারণ ও প্রতিকার জানুন
Published: 3rd, April 2025 GMT
নির্দিষ্ট কিছু শরীরচর্চা আপনাকে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠার সময় শ্বাসকষ্ট হওয়ার মতো অস্বস্তিকর অনুভূতি থেকে মুক্তি দিতে পারে। অবশ্য যদি তাতেও কাজ না হয়, তবে কিন্তু আপনাকে নিতে হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শও।
কেন সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে কষ্ট হয়সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে শ্বাসকষ্ট হওয়ার এই বিষয়টিকে চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় বলা হয় ‘এগজারশনাল ইনটলারেন্স’। একে বলা যেতে পারে, শারীরিক পরিশ্রমে অস্বস্তি বা পরিশ্রম সহ্য করতে না পারা।
চিকিৎসাবিদ্যা বলছে, যখন কেউ সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে যায়, তখন সাধারণত তাঁর পেশি শিথিল থাকে, হৃদস্পন্দন থাকে ধীর। অর্থাৎ তাঁর শরীর সিঁড়ি ভাঙার জন্য প্রস্তুত থাকে না। এই অবস্থায় যখন কেউ সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করে, তাঁকে পর্যায়ক্রমে একেকবার একেক পায়ের ওপর ভর দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। এতে হৃদস্পন্দন অনেকটা ‘রকেটগতি’তে বেড়ে যায়। সঙ্গে যুক্ত হয় কার্ডিওভাসকুলার নানা কার্যক্রম। তখন শরীরে হঠাৎ অক্সিজেনের চাহিদা যায় বেড়ে। এই বাড়তি অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ না হলেই তৈরি হয় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি।
আরও পড়ুনবৃদ্ধরা জানালেন, তরুণ বয়সে যেসব কাজ না করার জন্য তাঁরা এখন আক্ষেপ করেন২০ মার্চ ২০২৫সিঁড়ি ভাঙতে শ্বাসকষ্ট হওয়ার আরও একটি ব্যাখ্যা আছে। সেটি হলো, সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে আমরা সাধারণত সেসব পেশি ব্যবহার করি, যেসব দ্রুত গতির জন্য ব্যবহৃত হয়। এসবকে বলে ফাস্ট-টুইচ পেশি। এ ছাড়া সিঁড়ি ভাঙতে আমাদের পশ্চাৎপেশিও ব্যবহার করতে হয়, যেসব পেশির ব্যায়াম সাধারণত করা হয় না।
আমরা সাধারণত যেসব ব্যায়াম করি, সেসব কম গতির এবং এসব ব্যায়ামে উপকৃত হয় আমাদের স্লো-টুইচ পেশিগুলো। এসব পেশি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে খুব একটা কাজে লাগে না। তাই সিঁড়ি ভাঙতে গেলে অ্যাথলেটদেরও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আর আমরা যাঁরা তেমন কোনো ব্যায়ামই করি না, তাঁদের তো শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিই হবে!
আরও পড়ুনকম বয়সে গোঁফে বাদামি রং ধরলে কী করবেন?১৪ আগস্ট ২০২৪তাহলে সহজে সিঁড়ি ভাঙা যাবে কীভাবেযদি আপনাকে প্রায়ই সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, তবে তা যথেষ্ট অস্বস্তিকর বটেই। সে ক্ষেত্রে সহজে সিঁড়ি বাইতে আপনি কিছু ব্যায়াম চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
ঘাবড়াবেন না, আপনাকে কোনো ভবনে ওঠার আগে আগে সিঁড়িঘরের সামনে বুকডন দিতে বলা হবে না; বা সিঁড়ির সামনে জগিংও করার পরামর্শ দেওয়া হবে না। তবে এ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে আপনার দৈনন্দিন রুটিনের ভেতরেই কিছু ব্যায়াম যোগ করে নিতে হবে।
দৌড়, লাফ বা দ্রুত গতি তুলতে সাহায্য করে, এ ধরনের ব্যায়াম আপনাকে হঠাৎ পরিশ্রমের অস্বস্তি কাটাতে সহায়তা করবে। পা ও পশ্চাৎপেশির ব্যায়াম আপনাকে এক পায়ে ভারসাম্য রাখার মতো কাজে সাহায্য করবে।
এ ছাড়া সহনশীলতা বাড়াতে সাইকেল চালানো, পাহাড়ে ওঠা, দ্রুত হাঁটা, নৌকা বাওয়া ও সাঁতরানো খুব ভালো ব্যায়াম।
আপনি যদি ধূমপান করেন, তবে তা-ও বাদ দিতে হবে। এমনকি যদি ই-সিগারেট টানেন, পরিত্যাগ করতে হবে সেটাও।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেনবলা হয়, যদি কখনো চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছে কি না—এমন সন্দেহের উদ্রেক হয়, তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই নিরাপদ। তবুও নিচের কিছু লক্ষণ চিকিৎসক ডাকার ক্ষেত্রে খেয়াল করতে পারেন।
সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে যদি বুকে ব্যথা হয়, তবে আপনার হৃদরোগ বা ধমনিতে ব্লক আছে—এমন শঙ্কা তৈরি করে।
যদি শ্বাসকষ্টের কারণে আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়, তবেও আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যেমন অল্প হাঁটতেও যদি আপনি হাঁপিয়ে যান কিংবা হালকা ব্যায়ামেও শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে চিকিৎসক বা কোনো থেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই নিরাপদ।
সূত্র: ইয়াহু লাইফ
আরও পড়ুন কম বয়সে স্ট্রোক হয় কেন০৭ জুলাই ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর স থ ত শ ব সকষ ট চ ক ৎসক র স ধ রণত আপন র আপন ক
এছাড়াও পড়ুন:
হিজরতের ৫টি শিক্ষা
সাহাবিদের হিজরতের ঘটনাবলি কেবল ইতিহাসের অংশ নয়, বরং তা মুমিন জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। তাদের হিজরতের ঘটনা ও ত্যাগের আদর্শ থেকে কয়েকটি মৌলিক শিক্ষা উঠে আসে:
১. হিজরত প্রথমত আল্লাহর আদেশ পালনহিজরত কেবল কৌশলগত পরিকল্পনা ছিল না, বরং ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এক ইবাদতমূলক নির্দেশ। এই কারণে সাহাবিরা সবচেয়ে প্রিয় বস্তু—ঘরবাড়ি, সম্পদ, আত্মীয়স্বজন—সহজে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন। (মুহাম্মদ সাইদ রমাদান আল-বুতি, ফিকহুস সিরাহ, পৃষ্ঠা: ১৫৬, দারুল ফিকর, দামেস্ক, ২০০৪)
২. ইমানের জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগহিজরত শেখায় যে একটি জাতির ভিত্তি স্থাপন এবং সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়। সুহাইব তাঁর সব সম্পদ, আবু সালামা তাঁর পরিবার এবং বনু জাহশ (রা.) জন্মভূমি ত্যাগ করে এই মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এই ত্যাগ বিনা মূল্যে অর্জিত হয়নি।
আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. ইমানের সম্পর্ক অন্য সব সম্পর্ক থেকে ঊর্ধ্বেওমর (রা.) আইয়াশকে যখন তার মায়ের দোহাইয়ের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছিলেন, তা প্রমাণ করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি আনুগত্যের বন্ধন অন্য সব জাগতিক সম্পর্ক (গোত্র, পরিবার, রক্ত) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।
৪. ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসাহিজরত মোটেই বিশৃঙ্খল ছিল না। ওমর (রা.)-এর পরিকল্পনা, কাফেলাবদ্ধ হয়ে যাত্রা এবং কৌশল অবলম্বন—সবই প্রমাণ করে যে আল্লাহর ওপর নির্ভরতার পাশাপাশি মানবীয় প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করাও আবশ্যক।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র হিজরত মদিনায় হলো যে কারণে২৯ জুন ২০২৫৫. আল্লাহর দয়ার বিশালতাএই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ফিতনা ও দুর্বলতা মানুষের জীবনে আসতে পারে। কিন্তু যখন তারা মক্কায় বন্দী হয়ে নিজেদের পাপী মনে করছিলেন, তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াতটি নাজিল করে আশার দরজা খুলে দেন, ‘বলো, “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ (পাপ করেছ), তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।”’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)
এই আয়াতটি ছিল তাঁদের জন্য এক ঐশী ক্ষমা ও নতুন সুযোগের বার্তা।
হিজরত কেবল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়; এটি একটি অক্ষয়–দর্শন—যেখানে ইমান, ধৈর্য এবং আত্মত্যাগের সমন্বয়ে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের বীজ নিহিত ছিল। এই দর্শনই মুসলমানদের নতুন এক দিগন্তে পৌঁছে দেয়।
আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫