আশাশুনিতে নদীভাঙনে পাঁচ শতাধিক মানুষ ঘরছাড়া, রিং বাঁধের কাজ শুরু
Published: 2nd, April 2025 GMT
আশাশুনির বিছট এলাকার খোলপেটুয়া নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধে ৪৮ ঘণ্টা পর আজ বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ভাটার সময় ধীরগতিতে শুরু হয়েছে রিং বাঁধ (বিকল্প বাঁধ) দেওয়ার কাজ। কাজ তদরক করছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আনুলিয়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম নদীর পানিতে তলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাঁচ শতাধিক পরিবার ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। কয়েক শ কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে।
আরও পড়ুনহঠাৎ বাঁধ ভেঙে আশাশুনিতে ডুবছে একের পর এক গ্রাম০১ এপ্রিল ২০২৫সাতক্ষীরা থেকে আশাশুনির দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। সেখান থেকে আরও ২৫ কিলোমিটার গেলে আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। পরিষদের দক্ষিণে আরও তিন কিলোমিটার গেলে বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা। সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনকবলিত এলাকায় যত দূর চোখ যায়, সব পানিতে টইটম্বুর। ভাটায় গ্রামগুলো থেকে পানি নেমে নদীতে যাচ্ছে। বিছট গ্রামের উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে রিং বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন রিং বাঁধ দেওয়ার জন্য কাজ করছেন। পাউবোর তত্ত্বাবধানে স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজের তদারক করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাতে জোয়ারের পানিতে কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি তলিয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এলাকায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় কয়েক শ পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে তারা। বিছট গ্রামের আবদুল সবুর গাজী (৭৩) তাঁর বাড়ি দেখিয়ে বলেন, বাড়িঘর ছেড়ে দিয়েছেন। গত রোববার রাতে ভাত খেয়েছিলেন। তারপর শুকনা খাবার খেয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছেন। প্রতিবেশী লিয়াকত আলীর গাজীর দোতলা বাড়ি দেখিয়ে বলেন, ওই বাড়িটিও ঝুঁকিতে পড়েছে।
একই গ্রামের শ্রমিক আবদুল করিম জানান, কোথাও শুকনা জায়গা নেই যে চুলা জ্বালিয়ে বাচ্চাকাচ্চাদের খাবার রান্না করে দেবেন। প্রতিবেশীদের একই অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুড়ি–চিড়া খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শিশুদের নিয়ে সবাই সমস্যায় রয়েছেন।
বল্লভপুর গ্রামের বাসুদেব দাস জানান, তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। শ্রমিকের কাজ করে মাটির গাঁথুনি দিয়ে একটি ঘর করেছিলেন। জোয়ারের পানিতে ঘরটি ভেঙে পড়েছে। বাড়ির জিনিসপত্রও সরানো যায়নি। গরু-ছাগলগুলো কোনোরকমে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এগুলো বেঁচে আছে কি না জানেন না।
আনুলিয়া গ্রামের পুষ্প রানী মণ্ডলকে (৬০) দেখা যায়, পানির মধ্যে দিয়ে দুটি গরু নিয়ে ডাঙায় আসছেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িঘর সব পানিতে ডুবে গেছে। জিনিসপত্র ঘর থেকে নিতে পারিনি। গরু দুডোনে কোনোরকমে বার হতে পারেছি।’ পুষ্প রানীর অসুস্থ স্বামী প্রতিবাস মণ্ডল বলেন, ‘সব শেষ। ৬০ বছরের মধ্যে এমন ভাঙন আর জল দেখেনি। বুঝে ওঠার আগেই সব তলিয়ে গেল।’
বাসুদেবপুর গ্রামের রমজান মোড়ল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কাঁচা ধান কাটচ্ছিলেন। তিনি জানান, তিন বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন ধান ভালোই হয়েছিল। ৬০ থেকে ৭০ মন ধান হবে বলে আসা করছিলেন। বাধ্য হয়ে কাঁচা ধান কেটে নিচ্ছেন, যদি দু–চার বস্তা ধান পাওয়া যায়, এ আশায়।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে আনুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো.
আজ সকাল আটটার দিকে রিং বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, জিওটিউব দিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে ন্যূনতম পাঁচটি বাল্কহেড দরকার, সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড সরবরাহ করেছে মাত্র দুটি। এ জন্য কাজ চলছে ধীরগতিতে। যত সময়ক্ষেপণ হবে, ততই বাঁধের ভাঙন বাড়বে।
আশাশুনির দায়িত্বরত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম বলেন, বাল্কহেড পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না দক্ষ শ্রমিক। তারপরও আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রিং বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। আধুনিক পদ্ধতির জিওটিউব দিয়ে বাঁধের কাজ চলছে। এটি সফল হলে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে পানি আটকানো সম্ভব হবে
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিন বছর পর সেভেনটিনের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম
কে–পপ বয় ব্যান্ড সেভেনটিনের এক দশক পূর্তি হবে আগামী ২৬ মে। একই দিনে পঞ্চম স্টুডিও অ্যালবাম ‘হ্যাপি বার্স্টডে’ প্রকাশ করবে ব্যান্ডটি।
প্রায় তিন বছর পর সেভেনটিনের পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম প্রকাশিত হবে। সবশেষ ২০২২ সালে ‘ফেস দ্য সান’ শিরোনামে একটি অ্যালবাম এনেছিল ব্যান্ডটি।
‘হ্যাপি বার্থডে’ ও ‘বার্স্ট’ শব্দ মিলিয়ে অ্যালবামের নামকরণ করা হয়েছে। গ্রুপের এজেন্সি প্লেডিস এন্টারটেইনমেন্ট বলেছে, ‘দশক পূর্তিতে অ্যালবামের পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবেশনা দিয়ে ভক্তদের সঙ্গে যুক্ত থাকবে সেভেনটিন।’
এপ্রিলে জাপানের ওসাকায় ও মে মাসে সাইতামাতে ফ্যান মিট করবে সেভেনটিন। ১৩ সদস্যের ব্যান্ডটি গঠিত হয়েছে ২০১৫ সালের ২৬ মে। এদিন ব্যান্ডের প্রথম ইপি ‘১৭ ক্যারাট’ প্রকাশিত হয়েছে।
২০১৬ সালে প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ‘লাভ অ্যান্ড লেটার’ প্রকাশ করেছে সেভেনটিন। এরপর ‘টিন, এজ’, ‘অ্যান ওড’ ও ‘ফেস দ্য সান’ নিয়ে এসেছে ব্যান্ডটি।
আরও পড়ুনকে পপ অ্যালবামের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কপি বিক্রির রেকর্ড০৫ জুলাই ২০২৩