বন বিভাগের অভিযানে গাজীপুরে ঘরবাড়িসহ আড়াই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ
Published: 30th, March 2025 GMT
ঢাকা বন বিভাগের উদ্যোগে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় হঠাৎ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার চন্দ্রা রেঞ্জের সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘরবাড়িসহ আড়াই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। অভিযানের সময় বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন এলাকায় গত ৫ আগস্টের পর বনের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বন বিভাগের জমি দখল করে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে অনেকেই দোতলা ভবন, কেউ টিনশেড, আবার কেউ আধা পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিরা অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। কয়েক মাস ধরেই বনের লোকজন মাইকিং করে এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। অবশেষে রোববার সকালে যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় চারটি এক্সকাভেটর দিয়ে উপজেলার সিনাবহ ও বাঘাম্বর এলাকায় ঘরবাড়ি ভাঙা শুরু করা হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আড়াই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
বাঘাম্বর এলাকার মো.
একই এলাকার আসমা বেগম বলেন, ‘আমরা ঘরবাড়ি করার সময় বন বিভাগের লোকদের সঙ্গে আলোচনা করেই ঘর তৈরি করেছি। তাঁদের টাকাপয়সাও দিয়েছি। এখন হঠাৎ আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে ঈদের আনন্দ কেড়ে নিল।’
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বশিরুল আল মামুন, ঢাকা বিভাগের এসিএফ ফাহিম মাসুদ, কালিয়াকৈর রেঞ্জের বিভিন্ন অফিসের বিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার বাহিনী এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও সহযোগিতা করেছেন।
ডিএফও বশিরুল আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় ব্যক্তিরা বনের জমি দখল করে স্থাপনা তৈরি করছিলেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর দখলের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। তাঁদের নিজেরদের এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু সরাননি। বাধ্য হয়ে অভিযান চালিয়ে আড়াই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বনভূমি পুনরুদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র কর মকর ত ঘরব ড় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রদল বাংলা ‘সিনেমার শাবানা’ নয়: ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামকে (পারভেজ) হত্যার প্রতিবাদ এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আজ সোমবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীরা কালো ব্যানার ও কালো ব্যাজ ধারণ করে শোক প্রকাশ করেন। এ সময় তাঁদের হাতে ‘গুম–হত্যা আর খুন, মানি না মানব না’, ‘যে হাতে বই ছিল তা আজ রক্তে রাঙা, সংস্কারের নামে চলছে খুন আর দাঙ্গা’, ‘কাটতে হবে দোসর লেজ, আমরা আছি পারভেজ’সহ নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। যেখানে আমরা সমন্বয়ের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কারা এ ব্যানারকে কলুষিত করতে চায়? আজ থেকে আপনাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলবে না, আপনাদের ছাত্র আন্দোলন বৈষম্যমুখী হয়ে পড়েছে।’
ছাত্রদল বাংলা সিনেমার শাবানা নয় উল্লেখ করে সংগঠনটির এই নেতা বলেন, ‘আড়াই ঘণ্টা একটা চলচ্চিত্রে শাবানা খুব কষ্ট-দুঃখ করে। তবে যখন তার ভালো সময় আসে, তখন তিনি ক্ষমা করে দেন। আমাদের সামনের সারির নেতৃত্ব যদি আহত বা নিহত হয়, আমরা শাবানার মতো ক্ষমা করতে পারব না। আমাদেরও রক্ত গরম হয়, আমাদেরও শরীর গরম হয়।’
শিক্ষার্থীরা একটি ট্রমার (মানসিক আঘাত) মধ্যে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দেয়াল থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। আমরা চুপ করে ছিলাম। আমরা মনে করেছি, শিক্ষার্থীরা যেহেতু একটি ট্রমার মধ্যে আছে, আমরা যদি প্রতিক্রিয়া দেখাই, তাহলে ভুল–বোঝাবুঝি হবে। কিন্তু এখন আনাচকানাচে নামে-বেনামে মঞ্চ তৈরি হয়েছে।’
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে ‘মবোক্রেসি’ (বিশৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ কাজ) চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে মবোক্রেসি চালু করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণতন্ত্রকে কুক্ষিগত করতে চাইছে। ৫ আগস্টের পর ছাত্রদলের রক্তে ক্যাম্পাস রঞ্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর কেউ যদি ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়, তাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, ছাত্রদল কোনো গুপ্ত সংগঠন নয়।’
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিচয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নাহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে আর কোনো ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন করা হলে আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোর হব।’
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সহসভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন শাওন প্রমুখ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
জাহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল এবং সদস্যসচিব শামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
বিক্ষোভ মিছিলটি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘তুমি কে, আমি কে, পারভেজ পারভেজ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘আমরা দ্রুত পারভেজ হত্যার বিচারের দাবি জানাচ্ছি এবং যারা হত্যাকারী, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ রকম হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে, সে জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।'
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম হত্যার বিচার দাবিতে আজ সোমবার দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন