কৃষকের আত্মহত্যা ও প্রশ্নহীন নিওলিবারেল পেঁয়াজু
Published: 30th, March 2025 GMT
পতিত রেজিমে পেঁয়াজের দাম ভয়াবহভাবে বেড়েছিল। রাস্তাঘাটে মানুষ কত টিটকারি, টিকটক, ঠাট্টা করেছে। একদিন গলিতে দেখলাম কিছু উঠতি বয়সের ছেলেরা আঙুরের মতো করে একটা একটা করে পেঁয়াজ ঝুলিয়ে ভিডিও করছে। রাষ্ট্র পেঁয়াজের দাম কমাতে পারেনি। এমনকি পেঁয়াজ চাষ করে দেশবাসীর হাতে তুলে দেয়ার ক্ষমতাও রাষ্ট্রের ছিল না। পেঁয়াজ চাষ বা বাজারে বেচা বিক্রি করা রাষ্ট্রের কাজ না। কিন্তু কৃষকরা যেন সঠিকভাবে পেঁয়াজ চাষ করতে পারে সেই নিরাপত্তা বজায় রাখা রাষ্ট্রের কাজ। দেশবাসী যাতে নির্বিঘ্নে পেঁয়াজ কিনতে পারে, কৃষক যাতে ন্যায্য দামে তা বিক্রি করতে পারে রাষ্ট্রের কাজ এই বাজার ঠিক রাখা। বিগত রেজিমের কর্তৃত্ববাদী বাজারের লাগাম টানতে পারেনি। বাজার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে নাকানিচুবানি চক্করের ভেতর রেখেছিল। বৈশ্বিক নিওলিবারেল ক্ষমতা মূলত এই বাজার ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার নিওলিবারেল বাহাদুরিকে তোয়াজ করে। একটা ফুলের টোকাও কখনো দেয় না। আর এই নিওলিবারেল ক্ষমতার রাজনীতিই আমাদের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। পেঁয়াজ বা ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে তাই কোনো সরকার সাহস করে না। রাজনৈতিক দরদ দেখায় না। মরিচের দাম এমন বেড়েছিল যে, আমাদের কাঁচামরিচ সংরক্ষণের একশ টোটকা শেখানো হয়েছিল, কিন্তু বাজারকে কিচ্ছু বলেনি। বেগুনের দর আকাশচুম্বী হওয়ায় মিষ্টিকুমড়া থেকে শুরু করে নানা সবজি দিয়ে বেগুনি বানানোর রেসিপি উপহার দিয়েছিল পতিত রেজিম। আলুর দাম কমে যাওয়ায় আরেকবার রাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছিল, বেশি করে আলু খান ভাতের উপর চাপ কমান। কেউ কখনো কৃষক, উৎপাদক, বিক্রেতা, ক্রেতা, ভোক্তার কথা বলেনি। কৃষি উৎপাদন ও ন্যায্য বিপণনের জন্য চেষ্টাই করেনি। সবকিছু স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছিল নিওলিবারেল বাহাদুরির জিম্মায়। এই নিওলিবারেল ক্ষমতা কয়েক হাজার সিন্ডিকেট পুষে। কেউ বাজারে দোকান নিয়ন্ত্রণ করে। কেউ দাম নিয়ন্ত্রণ করে। কেউ বীজের ব্যবসা করে। কেউ সার-বিষ। কেউ সেচের পানি জিম্মি করে। কেউ ক্রেতা-ভোক্তার রুচি নিয়া খেলে। আমার মাটিতে আমি আমার পছন্দমত ফসল ফলাবো, আমি ন্যায্য দামে তা বেচব, আমি আমার পছন্দমতো নিরাপদ ফসল ন্যায্য দামে কিনে খাব এই অতি সরল গণিতটি দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছরেও কেউ মিলাতে যায়নি। কৃষকের কথা কেউ রাখেনি। জুলাই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে আমরা আশা করেছিলাম রাষ্ট্র কৃষকের পক্ষে দাঁড়াবার রাজনৈতিক সাহস অর্জন করবে। নিওলিবারেল বাহাদুরিরে প্রশ্ন করবে। এই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের রক্ত আছে, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি সবার রক্তদাগ আছে। কিন্তু নিদারুণভাবে কৃষক-শ্রমিকের অবদান সবাই ভুলে যায়। রমজান মাসে ঈদের আগেভাগে চাষে লোকসান হওয়ায় পেঁয়াজ ক্ষেতে গিয়ে বিষপানে একজন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। মেহেরপুরের মুজিবনগরের ভবেরপাড়া এলাকার কৃষক সাইফুল শেখ (৫৫) ২৭ মার্চ ২০২৫ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আগেরদিন স্বাধীনতা দিবসে আত্মহত্যা করার জন্য তিনি বিষপান করেন।
স্বাধীনতা দিবসে কৃষকের বিষপান
মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী এবং জুলাই অভ্যুত্থানের মুক্তিরেখায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের মৌলিক জিজ্ঞাসা কী? কোন খাতে সংস্কার ও ন্যায্যতা অতীব জরুরি? নিশ্চিতভাবেই দেশের কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন খাত। কিন্তু এই আলাপ আমরা এখনও পাবলিক ন্যারেটিভ করতে পারিনি। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের ভেতর দেশের গরিষ্ঠভাগ মানুষের উৎপাদন ব্যবস্থার আলাপ নেই। মব, ফেসবুক কূটনামি আর যন্ত্রণাময় বিভাজন বা পাতানো ষড়যন্ত্র প্রতিনিয়ত জটিলতর করে তুলছে সর্বজনের রাষ্ট্রের বিকাশ। প্রতিদিন গ্রাম থেকে গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে দেশি জাতের বীজদানা, মুরগির বাচ্চা কিংবা কুড়িয়ে যাওয়া শাকলতা। বীজের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক দল বা নাগরিক প্রতিক্রিয়া রাস্তায় নেমেছে? আজ যেখানেই আমরা হাত দেই হয় বিষ নয় প্লাস্টিক। চাল থেকে চালকুমড়া, পানি থেকে পনির সব কিছুতেই চূড়ান্ত রকমের বিষ।
আর যাই হোক আমাদের সবাইকে খেয়ে-পরেই তো বাঁচতে হয়। তো আমাদের মুখের সামনে খাবারের থালাটা হাজির করে কে? কোনো কর্পোরেট কোম্পানি, এজেন্সি বা ক্ষমতাধর নয়। এখনও দুনিয়াময় একমাত্র কৃষক এবং ক্ষুদ্র খামারি কৃষক ভূমিহীন বর্গাচাষীই দুনিয়ায় খাদ্যের জোগান দেয়। আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। কৃষকের জোগান হজম করেই কেউ কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠে, কেউ আবার সেই কর্তৃত্ববাদ চুরমার করে রক্তাক্ত জুলাই জন্ম দেয়। কিন্তু সবাই নির্দয়ভাবে কৃষকের যন্ত্রণা ও প্রশ্নহীন জখমের কথা বেমালুম ভুলে যায়। একবার করোনা মহামারির কথা আসুন স্মরণ করা যাক। দেশ দুনিয়া সবকিছু লকডাউন হয়ে গিয়েছিল। এমনকি কারখানাও বন্ধ ছিল। একমাত্র নির্ঘুম ছিল কৃষকরা। কৃষকদের কোনো লকডাউন ছিল না। কৃষকরা যদি সেইসময় লকডাউনে থাকতেন আমাদের কী হতো একবার চিন্তা করা যায়? কোনো সরকার, এজেন্সি বা নিওলিবারেল ক্ষমতার সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কোনো সামর্থ্য ছিল না। আমরা সব বুঝি। কিন্তু উৎপাদন আর বাজারের বেসিক বৈষম্য গুলো নিয়ে কোনো আওয়াজ তুলি না।
কৃষক সাইফুল শেখ কেন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন? এর দায় ও দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রকে নিতে হবে। এই মৃত্যুর দায়ভার নিওলিবারেল বাজার ব্যবস্থাকে নিতে হবে। আমরা কোনোভাবেই কৃষকের এই নির্মম মৃত্যু-প্রতিবাদকে আড়াল করতে পারব না। অন্তবর্তীকালীন সরকারকে এই নিহত কৃষক ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। কেন পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকের লোকসান হয় এবং কোন পরিস্থিতিতে একজন কৃষক আত্মহত্যার মাধ্যমে এর জবাব দেন তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। তা না হলে দেশের গরিষ্ঠভাগ কৃষক সমাজের ভেতর আত্মহত্যা প্রবণতা জারি রেখে এবং এক অন্যায্য উৎপাদন ব্যবস্থা ও বাজার ব্যবস্থাকে কোনো প্রশ্ন না করে আমরা কোনো মৌলিক সংস্কার করতে পারব না। ইনক্লুসিভ ও বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মাণ করতে পারব না। কৃষক সাইফুল শেখ কেন পেঁয়াজ চাষ করে আত্মহত্যা করতে গেলেন এর উত্তর সামগ্রিকভাবে আমাদের খুঁজতে হবে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত বা সম্পর্কিত সকল পক্ষ, এজেন্সি এবং সিন্ডিকেটকে আইন, বিচার, শাস্তি ও দণ্ডের আওতায় আনতে হবে। আশা করি কৃষি উপদেষ্টা বিষয়টি আমলে নেবেন এবং ঈদের আগেই নিহত কৃষকের বাড়ি ও এলাকা নানা স্তরের নাগরিক প্রতিনিধিদিরে নিয়ে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করবেন।
কৃষক কেন আত্মহত্যা করেন?
স্বাধীনতা দিবসের সকাল ১১টার দিকে সাইফুল শেখ নিজের চাষের জমিতে গিয়ে বিষ পান করেন। প্রতিবারের মতো আশা নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেন সাইফুল শেখ। কিন্তু পেঁয়াজের বাজারদর কম হওয়াতে তার অনেক লোকসান হয়ে যায়। তবে এই বছরই মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ঘাসিয়ারা গ্রামের কৃষক ওলেমান মোল্লা পেঁয়াজ চাষ করে জমিতে জার্মান বায়ার কোম্পানির এন্ট্রাকল বিষ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্ট্রোক করেছিলেন। বাংলাদেশের কৃষক যা করেন ধারদেনা করে কোনোরকমে জীবন টিকিয়ে রাখতে কৃষিকাজ চালিয়ে যান। দেখা যায় প্রতিনিয়ত চাষাবাদের খরচ বাড়ছে। কারণ ষাটের দশকে প্রবর্তিত সবুজ বিপ্লব প্রকল্পের কারণে কৃষি হয়ে ওঠছে বিপদজনক রাসায়নিক মাত্রাতিরিক্ত ইনপুট-নির্ভর চাষাবাদ। এতে কৃষকের স্ব-নিয়ন্ত্রণ ও লোকায়ত কৃষিবিদ্যা জায়গা পাচ্ছে না। কৃষক তার ফসলের ন্যায্যদাম কোনোভাবেই নির্ধারণ করতে পারছেন না। আমরা এই দৃশ্য আর কতকাল দেখব? কৃষক তার রক্ত পানি করা ফসল পুড়িয়ে ফেলছেন, দুধ ঢালছেন রাস্তায়, জমিতেই ফেলে রাখছেন ফসল। কারণ কোনো দাম নাই। চাষাবাদ করে কৃষকের লোকসান হয়, ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটে তা প্রথমত রাষ্ট্রকে আইনত স্বীকার করতে হবে। কার্যকর রাষ্ট্রীয় নীতি ও নথির মাধ্যমে কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্রকে কৃষকের স্বনির্ভর ও প্রাকৃতিক চাষাবাদ এবং উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর রাজনৈতিক আস্থা অর্জন করতে হবে। কেবল সাইফুল শেষ নন, বিশ্বব্যাপী কৃষকরা আত্মহত্যার মাধ্যমে অন্যায্য কৃষি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।
আমাদের নিশ্চয়ই কোরিয়ান কৃষক লীর কথা মনে আছে। ২০০৪ সালে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে তিনি কৃষিকে সকল বৈশ্বিক চক্রান্ত থেকে মুক্ত করার বিরুদ্ধে সবার সামনে আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যা বিষয়ক বহু গবেষণা জানাচ্ছে, ভারত, শ্রীলংকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও অন্যান্য পেশার চেয়ে কৃষকরাই আত্মহত্যার ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ ২০২০ সনে প্রকাশিত গবেষণাতেও জানাচ্ছে, অন্যান্য পেশাজীবীর চেয়ে কৃষিপেশায় আত্মহত্যা বেশি। ‘সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশান অ্যান্ড রিসার্চ’ ২০১৬ সনের এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে সংগঠিত আত্মহত্যার ঘটনায় প্রায় ৫৫ ভাগই কৃষক বা কৃষিশ্রমিক। ভারতে কৃষক আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধান বিষয়ে বহু গবেষণায় দেখা গেছে ফসলহানি, ঋণের বোঝা, বিটি তুলার মতো জেনেটিক ফসল চাষ, খরা, দুরারোগ্য ব্যাধি, কন্যাদায়গ্রস্থতা, পারিবারিক কলহ ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে আত্মহত্যা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কৃষক আত্মহত্যার সামাজিক ও প্রাকৃতিক কারণ অনুসন্ধান বিষয়ক গবেষণা কাজের নজির কম। কিন্তু কৃষক আত্মহত্যার যে খবরগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেসব খবর বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় কৃষিকাজের মাধ্যমে পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব না হওয়া, কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, নানামুখী সামাজিক বঞ্চনা, জলবায়ুজনিত সংকট, ঋণের চাপ এরকম জটিল কারণ গুলোই কৃষককে আত্মহত্যার মতো বিপদজনক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডী দুই সাঁওতাল কৃষক সেচের পানি না পেয়ে ফসলহানির দুশ্চিন্তায় প্রতিবাদে বিষপানে আত্মহত্যা করে।
রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও নিওলিবারেল পিঁয়াজু
কৃষক সাইফুল শেখের বিষপান এমনি এমনি ঘটেনি। নিওলিবারেল বাজারের কাছে নতজানু রাষ্ট্রের প্রশ্নহীন অবহেলা তাকে এই পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। একটু হিসাব মেলান এ বছর এবং বেশ কয়েকবছর ধরেই পেঁয়াজ চাষের মওসুমে দেশজুড়ে কী ঘটেছে? মনে আছে দেশজুড়ে সরকার বা কোম্পানির পেঁয়াজ বীজ কিনে কৃষকেরা সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। মনে আছে, পেঁয়াজ ক্ষেতে বিভিন্ন কোম্পানির বিষ ব্যবহার করে সব ফসল ঝলসে পুড়ে গিয়ে কৃষক সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। কৃষকের পক্ষে কোনো মিছিল হয়েছিল? কোনো সংস্কার কমিশন এ নিয়ে মৌলিক আলাপ তুলেছেন কিনা আমরা জানিনা। মার্শাল এগ্রোভেট কেমিক্যাল কোম্পানির কীটনাশক স্প্রে করে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদায় কিংবা মাগুরার শতাধিক কৃষকের পেঁয়াজের জমি নষ্ট হয়েছে বায়ার কোম্পানির এন্ট্রাকল ব্যবহারের কারণে। রাষ্ট্র কি বায়ার, সিনজেনটা, মনস্যান্টো, কারগিল, বিএএসএফ কোম্পানির অন্যায়কে প্রশ্ন করবার মতো যথেষ্ট সংস্কার ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে? কৃষক সমাজ তো তা দেখতে পায় না। ২০১০ সালে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভয়াবহ টমেটো-সন্ত্রাস ঘটালেও সিনজেনটার কোনো বিচার করতে পারেনি রাষ্ট্র। বছরের পর বছর ফসলের ন্যায্য দামের জন্য কৃষকসমাজ লড়ছে। নীলবিদ্রোহ থেকে তেভাগা, নানকার, টংক কিংবা অগণিত কৃষক আন্দোলন। নিওলিবারেল পিঁয়াজুর বিজ্ঞাপন জনগণের সামনে দিয়ে লাভ নেই। চালাকি, খবরদারি, নজরদারি, লুন্ঠন কিংবা দখল কৃষকসমাজ সবকিছু পাঠ করতে জানে। কৃষক সাইফুল শেখের মৃত্যু আমাদের সামনে সেই পুরনো প্রশ্নহীন বার্তাকেই সামনে এনেছে। কৃষি উৎপাদন ও ন্যায্য বাজার ব্যবস্থার প্রশ্ন। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে দেশের কৃষক সমাজের কাছে যেতে হবে। ত্রিশটি কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলে হাওর, বিল, চর, পাহাড়, সমতল, বন, গড়, বরেন্দ্র এবং উপকূলে। সকল শ্রেণি ও বর্গের সাথে আলাপ-বাহাসে বসতে হবে। নিহত কৃষক সাইফুল শেখের পরিবার আজ যে কৃষি বাস্তবতা এবং নির্মম মৃত্যু দেখল, সেই পরিবারের শিশু-তরুণেরা কী আর পিতার মতো কৃষক হতে চাইবে? কৃষক হওয়ার জন্য নতুন প্রজন্মেও জন্য এই যে নিওলিবারেল নিরুৎসাহ, এর বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ মজবুত করতে হবে। জোরালো করতে হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফসল র ন য য য ব জ র ব যবস য় জ চ ষ কর ব যবস থ র র জন ত ক র জন য হয় ছ ল র স মন র র জন পর ব র আম দ র সরক র ক ষকর
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদ উদযাপনে ফিলিস্তিনকে স্মরণ করলেন হামজা চৌধুরী
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য হামজা দেওয়ান চৌধুরী ঈদ উদযাপনেও ফিলিস্তিনের জন্য ভালোবাসা ও সংহতি প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ঈদ উদযাপনের কিছু ছবি পোস্ট করেছেন এই প্রবাসী ফুটবলার।
ইংল্যান্ডের এক স্টেডিয়ামে ঈদের নামাজ পড়ার মুহূর্তের একটি ছবি শেয়ার করেছেন হামজা। এছাড়া অন্য একটি ছবিতে তাকে কালো ফিতার একটি ব্রেসলেট পরতে দেখা যায়, যেখানে সংযুক্ত রয়েছে লকেট আকৃতির ফিলিস্তিনি পতাকা।
তৃতীয় ছবিতে সেই পতাকাটি আরও স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। শুধু তাই নয়, তার হাতের নিচে রাখা ছিল ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী ‘কেফিয়াহ’ স্কার্ফ, যা ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতীক। ঈদ আনন্দের মাঝেও যে হামজার মন কাঁদছে ফিলিস্তিনের জন্য, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তার এই প্রতীকী বার্তায়।
ইউরোপিয়ান ফুটবলে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ধারা বেশ আগে থেকেই চলছে। তবে মাঠে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ানোর রীতি চালু করার পথিকৃৎদের একজন হামজাই।
এর আগেও এক ম্যাচে গ্যালারিতে ফিলিস্তিনের পতাকা দেখে তিনি ম্যাচ জিতলে সেটি ওড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। পরবর্তীতে স্টেডিয়ামের এক নিরাপত্তারক্ষীর মাধ্যমে পতাকাটি সংগ্রহ করে মাঠে উড়িয়েছিলেন তিনি। তার সেই প্রতিবাদ বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে এবং প্রশংসিত হন তিনি ও ফরাসি ডিফেন্ডার ওয়েসলি ফোফানা।
হামজার এই ছবি দেখে নেটিজেনরা প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন তাকে। এদিকে, যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভেঙে ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে হামজার ঈদ উদযাপনের মাঝেও ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।