Samakal:
2025-03-31@11:49:12 GMT

ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আমলে লউন

Published: 28th, March 2025 GMT

ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আমলে লউন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিরাজমান অপরাধচক্রের দৌরাত্ম্য লইয়া শুক্রবার সমকাল যেই সংবাদ দিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয়টি জেলা সংযুক্তকারী আড়াই শত কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের অন্তত ৩০টি পয়েন্টে পুলিশ অর্ধশতাধিক চক্রের সন্ধান পাইয়াছে, যাহারা যাত্রীবাহী বাসে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করিয়া চলিয়াছে নিরন্তর। প্রায়শ আমদানি-রপ্তানির পণ্যও গায়েব করিয়া দেয়। প্রসঙ্গত, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক পণ্যবোঝাই যানবাহনের প্রায় শতভাগ এই মহাসড়ক ব্যবহার করিয়া থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়া আমদানি হওয়া পণ্যেরও ৭০ শতাংশ পরিবহন হয় এই পথে। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাব প্রদত্ত তথ্য বলিতেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধশত পণ্য চুরির ঘটনা ঘটিয়া থাকে। সেই হিসাবে বৎসরে পাঁচ শতাধিক চুরির ঘটনা ঘটে। এহেন পরিস্থিতি উক্ত মহাসড়কে যাতায়াতকারীদের জানমালের নিরাপত্তাহীনতাই শুধু প্রতিফলিত করে না; বিশেষত ব্যবসায়ীদের মধ্যেও নানাবিধ শঙ্কার জন্ম দেয়। এহেন ডাকাতির ঘটনায় বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে, যাহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে পারে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। কারণ একদিকে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের মধ্যে আস্থাহীনতার জন্ম হয়, অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ বাবদ রপ্তানিকারককেই মোটা অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করিতে হয়। সমকালের প্রতিবেদনেই উদ্ধৃত হইয়াছে, গাজীপুরের এক তৈরি পোশাক মালিককে মহাসড়কে চুরির কবলে পড়িয়া রপ্তানি পণ্যের অংশবিশেষ ব্রাজিলে না পৌঁছাইবার কারণে ক্রেতার দাবি অনুসারে মোটা অঙ্কের খেসারত দিতে হইয়াছে।

অনস্বীকার্য, সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা নূতন নহে। দীর্ঘদিন যাবৎ এই সমস্যা সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াইতেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সমস্যাটি সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট মূর্তিমান আতঙ্করূপে উপস্থিত। আমরা জানি, মহাসড়কের নিরাপত্তায় সমগ্র দেশে ‘হাইওয়ে পুলিশ’ রহিয়াছে দুই সহস্র আটশত মাত্র। প্রয়োজনের তুলনায় এই জনবল নিঃসন্দেহে কম। উপরন্তু ব্যবসায়ীগণের অভিযোগ, রপ্তানি পণ্য চুরির ঘটনায় সাধারণ চুরির ধারায় মামলা হয়। ফলে তালিকাভুক্ত অপরাধী অনেকে গ্রেপ্তার হইবার পর জামিনে বাহির হইয়া পুনরায় একই অপরাধে লিপ্ত হয়। পাশাপাশি ৫ আগস্ট ও তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের প্রভাবে বিশেষত পুলিশের বেসামাল দশা বিষয়কে জটিল করিয়া তুলিয়াছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাত মাস পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রধান বাহিনীটি দায়িত্ব পালনে পূর্ণ সক্ষম না হইয়া উঠিবার ঘটনা হতাশাজনক বটে। পূর্বের ন্যায় বাহিনীর একাংশের মধ্যে অদ্যাবধি নানা অসাধু চর্চা বহাল রহিয়াছে, এমন অভিযোগও গুরুতর বৈকি। আমরা মনে করি, চোর ও ডাকাত ধরিতে হাইওয়ে পুলিশ ইতোপূর্বে উক্ত অপরাধসমূহে জড়িতদের যেই তালিকা করিয়াছে, তাহাদের আইনের আওতায় আনিতে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধারাবাহিক অভিযান চালাইতে হইবে।

গত ২ মার্চ সমকালেরই অপর এক প্রতিবেদনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাইয়াছিল, ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও থানাকে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় জানাইয়া দিয়াছে হাইওয়ে পুলিশ। কেন্দ্র হইতে নজরদারিরও নাকি ব্যবস্থা হইয়াছে। তাহারা এই সংবাদও দিয়াছিলেন, সম্প্রতি ডাকাতি প্রতিরোধে মহাসড়কের কিছু এলাকায় যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের ভিডিও এবং চিত্র ধারণ করিয়া রাখা হইতেছে। তদুপরি দায়িত্বে অবহেলার দরুন কিছু ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও গৃহীত হইয়াছে। এই সকল পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হইলে ইতোমধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা হইলেও উন্নতি লক্ষ্য করা যাইত। রপ্তানির পণ্য চুরি রোধে সাধারণ ধারায় মামলা না গ্রহণ করিয়া আইন সংশোধনপূর্বক বিশেষ ধারায় মামলা গ্রহণের যেই প্রস্তাব ব্যবসায়ীদের পক্ষ হইতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হইয়াছে, উহা অবিলম্বে আলোর মুখ দেখিবে বলিয়া আমাদের প্রত্যাশা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র ঘটন হইয় ছ অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি

চলতি মার্চ মাসে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ধর্ষণ ও হত্যা। মার্চ মাসে যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণচেষ্টাসহ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪২৮টি। আগের মাসে মোট নারী নির্যাতনের ঘটনার এ সংখ্যা অনেকটাই বেশি।

মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মার্চ মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। আজ সোমবার (৩১ মার্চ) এমএসএফ এ প্রতিবেদন দেয়। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি।

এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ মাসে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল ৫৭টি। মার্চে দলবদ্ধ ধর্ষণ হয়েছিল ১৭টি, যেটি পরের মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫টিতে। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ফেব্রুয়ারিতে ঘটেছিল ১৯টি আর এ ধরনের ঘটনা মার্চে ঘটে ৬১টি।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে শিশু ও নারী নির্যাতন বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে । নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকার অভাব, বিচারহীনতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের বেপরোয়া করে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেতিবাচক দায়িত্ববোধ, ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে অপারগতার ফলে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যে হারে বেড়ে চলেছে, তা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ধর্ষণ বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা বেড়েছে।

এমএসএফ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও শিথিলতার সুযোগে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতির মতো অপরাধের সংখ্যাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। স্পষ্টতই এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

মার্চ মাসে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ও পালানোর চেষ্টাকালে মৃত্যু এবং পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা যেমন বেড়েই চলেছে, তেমন বেড়েছে দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের আন্দোলনবিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। এ মাসে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার কমলেও তা এখনো উদ্বেগজনক।

রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত

মার্চ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা বিশেষত রাজনৈতিক নেতাদের নিজদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব অনেক বেড়েছে। বিএনপিরর দলীয় কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫২টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪৫৯ জন। তাঁদের মধ্যে ১২ জন নিহত এবং ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ছয়জন বিএনপির, তিনজন আওয়ামী লীগের, এক পথচারী, এক বৃদ্ধ ও এক প্রবাসী রয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মী না হয়েও বিএনপির দলীয় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে উল্লিখিত তিনজন নিহত হন।

সহিংসতার ৫২টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বের ৩৯টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ৬টি, বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষের ৩টি, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী ঐক্যজোটের সংঘর্ষের ১টি, বিএনপি-এলডিপি সংঘর্ষের ১টি, বিএনপি–জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংঘর্ষের ১টি, জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্বের ১টি ঘটনা ঘটেছে।

এর পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ৪টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুজন এবং আহত হয়েছেন ছয়জন। এ ছাড়া এ মাসে দুজন রাজনৈতিক নেতার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এদের মধ্যে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত একজন বিএনপির ও একজন আওয়ামী লীগের এবং লাশ উদ্ধার হওয়া দুজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

গণপিটুনি

মার্চ মাসে অন্তত ৩৯টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১৩ জন নিহত ও ৫৬ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন ৮ জন। গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ৭ জন ডাকাত সন্দেহে, ২ জন সন্দেহজনক চুরির অভিযোগে, ১ জন রাজনৈতিক কারণে, ১ জন ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ১ জন অতিরিক্ত মদ্যপানের অভিযোগে এবং ১ জনকে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অপরদিকে ১৯ জন ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে, ৪ জন যৌন হয়রানির অভিযোগে, ৪ জন ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১৪ জন ডাকাতির অভিযোগে এবং সন্দেহজনক চুরি, ছিনতাই এ ধরনের অপরাধজনিত কারণে ১৫ জনকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

এমএসএফ প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন অবজ্ঞা করে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ, যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া আইনকে নিজ হাতে তুলে নিয়ে নির্যাতন বা গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটিয়ে গুরুতর আহত করা অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ। এ ক্ষেত্রে গণপিটুনির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব।

সম্পর্কিত নিবন্ধ