Samakal:
2025-04-20@12:22:56 GMT

ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আমলে লউন

Published: 28th, March 2025 GMT

ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আমলে লউন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিরাজমান অপরাধচক্রের দৌরাত্ম্য লইয়া শুক্রবার সমকাল যেই সংবাদ দিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয়টি জেলা সংযুক্তকারী আড়াই শত কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের অন্তত ৩০টি পয়েন্টে পুলিশ অর্ধশতাধিক চক্রের সন্ধান পাইয়াছে, যাহারা যাত্রীবাহী বাসে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি করিয়া চলিয়াছে নিরন্তর। প্রায়শ আমদানি-রপ্তানির পণ্যও গায়েব করিয়া দেয়। প্রসঙ্গত, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক পণ্যবোঝাই যানবাহনের প্রায় শতভাগ এই মহাসড়ক ব্যবহার করিয়া থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়া আমদানি হওয়া পণ্যেরও ৭০ শতাংশ পরিবহন হয় এই পথে। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‍্যাব প্রদত্ত তথ্য বলিতেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় অর্ধশত পণ্য চুরির ঘটনা ঘটিয়া থাকে। সেই হিসাবে বৎসরে পাঁচ শতাধিক চুরির ঘটনা ঘটে। এহেন পরিস্থিতি উক্ত মহাসড়কে যাতায়াতকারীদের জানমালের নিরাপত্তাহীনতাই শুধু প্রতিফলিত করে না; বিশেষত ব্যবসায়ীদের মধ্যেও নানাবিধ শঙ্কার জন্ম দেয়। এহেন ডাকাতির ঘটনায় বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে, যাহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িতে পারে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে। কারণ একদিকে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের মধ্যে আস্থাহীনতার জন্ম হয়, অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ বাবদ রপ্তানিকারককেই মোটা অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করিতে হয়। সমকালের প্রতিবেদনেই উদ্ধৃত হইয়াছে, গাজীপুরের এক তৈরি পোশাক মালিককে মহাসড়কে চুরির কবলে পড়িয়া রপ্তানি পণ্যের অংশবিশেষ ব্রাজিলে না পৌঁছাইবার কারণে ক্রেতার দাবি অনুসারে মোটা অঙ্কের খেসারত দিতে হইয়াছে।

অনস্বীকার্য, সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা নূতন নহে। দীর্ঘদিন যাবৎ এই সমস্যা সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াইতেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সমস্যাটি সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট মূর্তিমান আতঙ্করূপে উপস্থিত। আমরা জানি, মহাসড়কের নিরাপত্তায় সমগ্র দেশে ‘হাইওয়ে পুলিশ’ রহিয়াছে দুই সহস্র আটশত মাত্র। প্রয়োজনের তুলনায় এই জনবল নিঃসন্দেহে কম। উপরন্তু ব্যবসায়ীগণের অভিযোগ, রপ্তানি পণ্য চুরির ঘটনায় সাধারণ চুরির ধারায় মামলা হয়। ফলে তালিকাভুক্ত অপরাধী অনেকে গ্রেপ্তার হইবার পর জামিনে বাহির হইয়া পুনরায় একই অপরাধে লিপ্ত হয়। পাশাপাশি ৫ আগস্ট ও তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের প্রভাবে বিশেষত পুলিশের বেসামাল দশা বিষয়কে জটিল করিয়া তুলিয়াছে।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাত মাস পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রধান বাহিনীটি দায়িত্ব পালনে পূর্ণ সক্ষম না হইয়া উঠিবার ঘটনা হতাশাজনক বটে। পূর্বের ন্যায় বাহিনীর একাংশের মধ্যে অদ্যাবধি নানা অসাধু চর্চা বহাল রহিয়াছে, এমন অভিযোগও গুরুতর বৈকি। আমরা মনে করি, চোর ও ডাকাত ধরিতে হাইওয়ে পুলিশ ইতোপূর্বে উক্ত অপরাধসমূহে জড়িতদের যেই তালিকা করিয়াছে, তাহাদের আইনের আওতায় আনিতে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধারাবাহিক অভিযান চালাইতে হইবে।

গত ২ মার্চ সমকালেরই অপর এক প্রতিবেদনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাইয়াছিল, ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও থানাকে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় জানাইয়া দিয়াছে হাইওয়ে পুলিশ। কেন্দ্র হইতে নজরদারিরও নাকি ব্যবস্থা হইয়াছে। তাহারা এই সংবাদও দিয়াছিলেন, সম্প্রতি ডাকাতি প্রতিরোধে মহাসড়কের কিছু এলাকায় যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের ভিডিও এবং চিত্র ধারণ করিয়া রাখা হইতেছে। তদুপরি দায়িত্বে অবহেলার দরুন কিছু ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও গৃহীত হইয়াছে। এই সকল পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হইলে ইতোমধ্যে পরিস্থিতির কিছুটা হইলেও উন্নতি লক্ষ্য করা যাইত। রপ্তানির পণ্য চুরি রোধে সাধারণ ধারায় মামলা না গ্রহণ করিয়া আইন সংশোধনপূর্বক বিশেষ ধারায় মামলা গ্রহণের যেই প্রস্তাব ব্যবসায়ীদের পক্ষ হইতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হইয়াছে, উহা অবিলম্বে আলোর মুখ দেখিবে বলিয়া আমাদের প্রত্যাশা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র ঘটন হইয় ছ অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে মামলায় প্রতিবেদন জমার সময় বাড়ল

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আরও দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। আগামী ২৪ জুন এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ রোববার এই আদেশ দেন। এর আগেও এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ানো হয়েছিল।

এই মামলার ১১ জন আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজনের নাম প্রকাশ করেছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। শেখ হাসিনা ও জিয়াউল ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এই মামলার আসামি। এই মামলায় মাত্র একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি জিয়াউল আহসান। তাঁকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল।

শুনানিতে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-২-এর কার্যালয় এবং কচুক্ষেতে গুম কেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছেন। সেগুলো তিনি পরিদর্শন করেছেন এবং আলামত জব্দ করেছেন। কিছু কিছু আলামত ধ্বংস করারও চেষ্টা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তাজুল ইসলাম বলেন, ৮০০-৯০০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে ২০০টির মতো ঘটনার তদন্ত শেষের দিকে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০০ জনের বেশিকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

গুমের কাজ গোপনে করা হতো উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, এ জন্য তদন্ত করতে সময় লাগছে। এরপর তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও দুই মাস বাড়ানোর আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ