যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। শান্তিচুক্তির জন্য একের পর এক শর্ত দিয়ে যাচ্ছে মস্কো। এখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নতুন  দাবি, ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে সরিয়ে সাময়িক একটি প্রশাসনকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। ওই প্রশাসনের হাত ধরেই যুদ্ধ বন্ধ হবে।

আজ শুক্রবার রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলের মুরমানস্ক বন্দর পরিদর্শন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুতিন। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসায় মাতেন তিনি। পুতিন বলেন, ‘আমার মতে, যুক্তরাষ্ট্রে নতুনভাবে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন কারণে এ সংঘাত শেষ করার বিষয়ে সচেতন।’

ইউক্রেনে সাময়িক প্রশাসন ক্ষমতায় এলে তাঁদের অধীন নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং যুদ্ধ বন্ধ হবে উল্লেখ করে পুতিন বলেন, এ যুদ্ধসহ যেকোনো যুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে রাশিয়া। তবে এমন কোনো সমাধানের জন্য মস্কো কোনো ছাড় দিতে পারবে না। যুদ্ধের সম্মুখসারিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কৌশলগতভাবে এগিয়ে রয়েছেন।

তিন বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ শুরুর পর দেশটিতে সামরিক শাসন জারি করা হয়। স্থগিত হয় নির্বাচন। ফলে চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মেয়াদ শেষ হলেও এখনো তিনি ক্ষমতায় রয়েছেন। এ নিয়ে সম্প্রতি আপত্তি তুলেছিলেন ট্রাম্পও। তিনি সরাসরি জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

আসলে ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর থেকে বড় বিপত্তিতে পড়েছে কিয়েভ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট যেভাবে তাদের এককাট্টা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন, তা থেকে সরে এসেছেন ট্রাম্প। শান্তিচুক্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি কিয়েভের ওপর একপ্রকার চড়াও হয়েছেন তিনি। তবে গতকালের পুতিনের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেনে ক্ষমতায় কে থাকবে, তা দেশটির সংবিধানের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

কুরস্কের আরও এলাকা মস্কোর নিয়ন্ত্রণে

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের এক–পঞ্চমাংশ এলাকা এখন রাশিয়ার দখলে। দেশটিতে ইউক্রেন বাহিনীর বিপরীতে ভালো অবস্থানে রয়েছে রুশ বাহিনী। এরই মধ্যে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের আরও একটি গ্রাম ইউক্রেনের হাত থেকে মুক্ত করেছে তারা। গত আগস্টে অতর্কিত অভিযান চালিয়ে অঞ্চলটির বড় অংশ দখল করে নেয় ইউক্রেন বাহিনী।

রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেওয়া গ্রামটির নাম জোগোলেভকা। আজ গ্রামটি মুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে গত তিন সপ্তাহে কুরস্ক অঞ্চলের আরও বেশ কয়েকটি এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের হাতে এখন শুধু এ অঞ্চলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

ধীরে ধীরে কুরস্কের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ক্ষেত্রে কিয়েভের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ল। এ অঞ্চলকে চুক্তির জন্য দর–কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছিলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। সে কথা ভেবেই হয়তো চলতি মাসের শুরুর দিকে কুরস্ক সফরে গিয়ে পুতিন বলেছিল, যেকোনো মূল্যে অঞ্চলটি দখলমুক্ত করতে।

আরও পড়ুনসি–পুতিনের মধ্যে শত্রুতা বাধাতে গিয়ে উল্টো বিপদে ট্রাম্প!২৬ মার্চ ২০২৫খনিজ সম্পদ চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত হয়নি

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে যে খনিজ সম্পদ চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে, তার শর্তগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। আজ ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে চুক্তি নিয়ে ইউক্রেনের কাছে নতুন একটি প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

ওই প্রস্তাবের নথিটি রয়টার্সের হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ থেকে আয় যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে হবে। এভাবে বিগত তিন বছর ধরে কিয়েভকে যে পরিমাণ অর্থ ওয়াশিংটন দিয়েছে পরিশোধ করতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে সুদও।

ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী উইলিয়া এসভিরিদেঙ্কো দেশটির আইনপ্রণেতাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে যে চুক্তির খসড়া দিয়েছে, সে বিষয়ে ঐকমত্য হলেই ইউক্রেনের অবস্থান সম্পর্কে জানানো হবে। এর আগে এ নিয়ে জনসম্মুখে আলোচনা ক্ষতিকর হতে পারে। আর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেছেন, এখনো চুক্তির কোনো চূড়ান্ত খসড়া হয়নি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নানা পর্যায়ে এখনো আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুনকৃষ্ণসাগরে হামলা বন্ধে রাশিয়া–ইউক্রেন সমঝোতা২৫ মার্চ ২০২৫পুতিন–এরদোয়ান ফোনালাপ

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপ হয়েছে। সেখানে এরদোয়ান বলেছেন, আঞ্চলিক সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে মস্কো ও আঙ্কারা।

ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধের পাশপাশি সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন দুজন।
দিন কয়েক আগে কৃষ্ণসাগরে নৌযানে হামলা বন্ধ করতে রাজি হয় ইউক্রেন ও রাশিয়া। এ কৃষ্ণসাগরের বিষয়টিও পুতিন ও এরদোয়ানের আলোচনায় উঠে এসেছে। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়ার খাবার ও সার রপ্তানির ক্ষেত্রের বাধা দূর করতে এবং নিরাপদে নৌযানের চলাচল নিশ্চিত করতে কৃষ্ণসাগর–সংক্রান্ত উদ্যোগ চালু করা নিয়ে দুই পক্ষের কথা হয়েছে।

আরও পড়ুনট্রাম্পের আমলে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কী অগ্রগতি হলো২৪ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন র এরদ য় ন ক ষমত য় ক রস ক

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য হটলাইন চালুর ঘোষণা পুলিশের

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জরুরি যোগাযোগের জন্য হটলাইন সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। হটলাইন নম্বরে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে নিরাপত্তাজনিত যেকোনো সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে জানানো এবং দ্রুত সহায়তা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।

সম্প্রতি গাজায় হামলা নিয়ে বিক্ষোভের সময় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইজিপি ও বিডা চেয়ারম্যান। বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল– নেসলে বাংলাদেশ, কোকা-কোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো ও জুবিল্যান্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৭ ও ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শহরে এসব কোম্পানির কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মামলা হয়েছে।

বৈঠকে বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ‘আইজিপি, জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা ও বিডার কর্মকর্তাদের একসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বসা শুধু সময়োপযোগী নয়, নজিরবিহীন। এটি কেবল একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়। এটি এক ধরনের বার্তা যে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের পাশে আছে, বিশেষ করে যখন চ্যালেঞ্জ আসে।’

তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো হাজার হাজার কর্মজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকার উৎস। প্রতিবাদের অধিকার আছে, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মসংস্থান, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে, সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়। পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন বিডা চেয়ারম্যান।

প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা ভাঙচুর, ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রমে বিঘ্ন নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আইজিপি বাহারুল আলম বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য এখানে আসিনি, বরং আস্থা গড়ে তুলতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই এসেছি।’

এ আলোচনার ফলে বিডা, পুলিশ ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে একটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, দ্রুত সাড়া দেওয়া ইউনিট এবং সংকটকালে উন্নত যোগাযোগ চ্যানেল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ