Samakal:
2025-03-30@21:50:00 GMT

ত্বরিত পদক্ষেপ কাম্য

Published: 27th, March 2025 GMT

ত্বরিত পদক্ষেপ কাম্য

দেশে নূতন করিয়া পক্ষী জ্বর তথা ‘বার্ড ফ্লু’ শনাক্তের খবর যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, যশোরের সরকারি একটি মুরগির খামারে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হইয়া দুই সহস্রাধিক মুরগির মৃত্যু হইয়াছে। সাত বৎসর পর পুনরায় এই ভাইরাসের সংক্রমণে স্বাভাবিক কারণেই খামারিরা উদ্বিগ্ন। ২০০৭ সালে দেশে প্রথমবার যখন বার্ড ফ্লু দেখা গিয়াছিল, ঐ বৎসর ১০ লক্ষাধিক মুরগি মারিয়া ফেলা হইয়াছিল। আমরা জানি, এই জ্বর মানবদেহেও সংক্রমিত হইতে পারে। যদিও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর অভয় দিয়াছে– এইবারের ফ্লু প্রাথমিক অবস্থায় থাকিবার কারণে মানুষের আক্রান্ত হইবার আশঙ্কা কম। আমরা মনে করি, ইহাতে নিশ্চিন্ত হইয়া বসিয়া থাকিলে চলিবে না; বরং ফ্লু প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

স্বস্তির বিষয় হইল, শনাক্তের অব্যবহিত পরই বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রস্তুতি গ্রহণ করিয়াছে সরকার। নাজুক পোলট্রি খামারিদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়াছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সীমান্ত অঞ্চলে সতর্কতা, তৎসহিত কোনো মৃত বা সন্দেহজনক অসুস্থ হাঁস-মুরগি বা পাখি দৃষ্টিগোচর হইলে নমুনা সংগ্রহ করিয়া দ্রুত নিকটবর্তী গবেষণাগারে পরীক্ষা করিবার নির্দেশনা দেওয়া হইয়াছে। 

আমরা মনে করি, বার্ড ফ্লু মোকাবিলায় শুধু নির্দেশনাই যথেষ্ট নহে; উক্ত নির্দেশনা কতখানি প্রতিপালিত হইতেছে, উহার তদারকিও জরুরি। বিশেষত যশোরের আলোচ্য খামারে কীভাবে বার্ড ফ্লুর উদ্ভব হইল, উহার উৎস অনুসন্ধান প্রয়োজন। প্রাণীর মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয় বলিয়া ইহা উচ্চমাত্রার সংক্রামক।

কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড.

কবিরুল বাশার সমকালকে বলিয়াছেন, যেহেতু প্রাথমিকভাবে যশোরে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হইয়াছে, তজ্জন্য তথা হইতে দেশের অন্যত্র ডিম বা মুরগি সরবরাহ বন্ধ করিতে হইবে। অঞ্চলভিত্তিক মুরগি পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপরেও তিনি গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন। সেই সঙ্গে শনাক্ত মুরগি পুঁতিয়া ফেলিবার পরামর্শ দিয়াছেন। 
বার্ড ফ্লু শনাক্তে উদ্বিগ্ন প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন বুধবার বিবৃতি দিয়া পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনয়নের তাগিদ দিয়াছে। বার্ড ফ্লুর সম্প্রসারণ ঘটিলে উহার প্রভাব শুধু পোলট্রি শিল্পেই সীমাবদ্ধ থাকিবে না; একই সঙ্গে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে। শুধু তাহাই নহে; মানবকুলে উহার সংক্রমণ আরও ভয়াবহ হইতে পারে। তজ্জন্য প্রাথমিক অবস্থায় থাকা এই বার্ড ফ্লু প্রতিরোধী সকল ব্যবস্থা গ্রহণ কাম্য। 

আমরা জানি, দেশের প্রান্তিক পোলট্রি খামারিরা সাধারণত সংকটে রহিয়াছে। অভিযোগ, করপোরেট সিন্ডিকেটের কারণে প্রান্তিক খামারিরা সাশ্রয়ী মূল্যে মুরগির খাদ্য ও ছানা সংগ্রহ করিতে হিমশিম খাইয়া থাকে। খামারিদের উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ঋণ সহায়তা, ভর্তুকি, তৎসহিত প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া; প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বাজারে সরবরাহের ব্যবস্থা করা, পোলট্রি খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি এবং ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ বন্ধ করিবার ন্যায় দাবিও সংগঠনটি জানাইয়াছে।
সাম্প্রতিক সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হইয়াছে, তাহার পরই বাংলাদেশে পোলট্রি খামারে উহার সংক্রমণ দেখা গেল। বস্তুত প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তরফ হইতে আরও পূর্বেই সীমান্তে সতর্কতা জারি জরুরি ছিল।
যশোর, তৎসহিত দেশের অন্যত্র বার্ড ফ্লুর সম্প্রসারণ ঘটা বিচিত্র নহে। এহেন দুর্বিপাক হইতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের আলোকে ভাইরাসটি নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাকরণের ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশ্যক। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ত হইয় হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত সকাল ১০টায়, শুরু হবে ৩ দফা গুলিতে

কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগায় জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। ঐতিহ্য অনুসারে তিন দফা গুলি ফুটিয়ে শুরু হবে জামাত। এটি বিশ্বের বুকে এক বিরল দৃষ্টান্ত ও ঐহিত্য। জামাতে ইমামতি করবেন শহরের বড় বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে রেললাইন পেরিয়ে নরসুন্দা নদীর উত্তর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যাবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ। এটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৭৫০ সালে। তবে ১৮২৮ সালে প্রথম সর্ববৃহৎ সোয়া লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সেই থেকেই ‘সোয়ালাকিয়া’ শব্দ থেকে উচ্চারণ বিবর্তনের মাধ্যমে এর নামকরণ হয়েছে ‘শোলাকিয়া’। আর ১৮২৮ সালের জামাত থেকেই ক্রমিক নম্বর ধরে এবারের জামাতকে বলা হচ্ছে ১৯৮তম জামাত।

জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান বলেন, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার-ভিডিপির পাশাপাশি সেনা সদস্য এবং ৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৬৪টি সিসি ক্যামেরা। মাঠে থাকবে পুলিশের চারটি ও র‌্যাবের দুটি ওয়াচ টাওয়ার। ঈদের দিন দূরের মুসল্লিদের আসার জন্য সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে এবং সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। নামাজ শেষে দুপুর ১২টায় দুটি ট্রেন আবার গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এছাড়া ঈদের আগের দিনই দূরবর্তী যেসব মুসল্লি চলে আসছেন, আশপাশের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মসজিদের তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে যে বিপুল পরিমাণ মুসল্লির আগম ঘটে, তাতে মূল ঈদগায় স্থান সঙ্কুলান হয় না। জামাতের পরিসর আশপাশের খালি জায়গা, পার্শ্ববর্তী সকল রাস্তা, নরসুন্দা নদীর বিশাল সেতু, পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ির আঙিনায়ও বিস্তার লাভ করে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি ১১০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। থাকবে ক্যামেরাবাহী ড্রোন ও বাইনোকুলার। চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি পেরিয়ে মুসল্লিদের ঈদগায় প্রবেশ করতে হবে। কেবল মাত্র জায়নামাজ ও মোবাইল ফোন ছাড়া অন্য কোনো ডিভাইস, ব্যাগ এবং ছাতা নিয়ে প্রবেশ না করতে মুসল্লিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এবারের জামাতে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম হবে বলে তিনি মনে করছেন। র‌্যাব-১৪ ময়মনসিংহ অঞ্চলের কমান্ডিং অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি নায়মুল হাসান বলেছেন, পর্যাপ্ত র‌্যাব সদস্য মোতায়েন ও টহল অবস্থায় থাকবেন। সাদা পোশাকেও অনেকে দায়িত্ব পালন করবেন। ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার কারণে একই বছরের ঈদুল আযজহার সময় থেকেই  নেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শহরকে বেশ কিছু তোরণ ও উৎসব পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। ঈদগায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকবে। ফায়ার সার্ভিস ও মেডিক্যাল টিম মোতায়েন থাকবে। মুসল্লিদের অজুর সুব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত শৌচাগারও করা হয়েছে।

শোলাকিয়ার একটি বিরল ঐতিহ্য হচ্ছে গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরু। জামাত শুরুর ১৫ মিনিটি আগে তিনটি, ১০ মিনিট আগে দুটি এবং ৫ মিনিট আগে একটি শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে নামাজের সংকেত দেয়া হয়। এক সময় সুতলির মধ্যে তিনবার সারিবদ্ধ পটকা ঝুলিয়ে সুতলির নিচের মাথায় আগুন দিয়ে পটকা ফাটানো হতো। সুতলি বেয়ে আগুন ওপরের দিকে যেত, আর একের পর এক পটকাগুলো ফুটতো। মাঝে মাঝে পটকা নষ্ট থাকতো বলে আওয়াজের তালের ব্যত্যয় ঘটতো। যে কারণে এখন শর্টগানের গুলি ফুটিয়ে জামাত শুরুর সংকেত দেওয়া হয়। এই ঐতিহ্য দেশে অদ্বিতীয় ও নজিরবিহীন বলে কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ