জয়পুরহাটের আক্কেলপুর ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় অনলাইন স্লিপের বদলে ছাপা ভাউচার স্লিপ ব্যবহার করে অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়েছেন ক্যাশিয়ার। এরপর সেই টাকা গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া সার্ভারে সমস্যার কথা বলে একাধিকবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েও গ্রাহকদের হিসাব থেকে কৌশলে টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি। অনেকের স্থায়ী আমানতের টাকা নিয়ে ব্যাংকে জমা করেননি তিনি।

ইসলামী ব্যাংকের আক্কেলপুর এজেন্ট শাখার কয়েকজন গ্রাহক ও ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। গত রোববার এজেন্ট শাখাটিতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ধরে পড়ে। পুলিশ সূত্র বলছে, এজেন্ট শাখাটির ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা একাই গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আক্কেলপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম রব্বানী বলেন, মাসুদ রানা গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন গতকাল মঙ্গলবার আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার পর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁরা হলেন আক্কেলপুর এজেন্ট শাখার ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা, ব্যবস্থাপক রিওয়ানা ফারজানা ও এজেন্ট ব্যাংকের মালিক জাহিদুল ইসলাম।

জয়পুরহাট আদালত পুলিশের পরির্দশক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের মামলার তিন আসামি গতকাল আদালতে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাঁদের জামিন দেন। ওই দিনই তাঁরা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন।

আরও পড়ুনজয়পুরহাটে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ২৩ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনগ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাৎ করে জমি কিনেছেন এজেন্ট ব্যাংকের ক্যাশিয়ার২৪ মার্চ ২০২৫

গতকালও ইসলামী ব্যাংকের আক্কেলপুর এজেন্ট শাখা বন্ধ ছিল। আতঙ্কিত গ্রাহকেরা ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখা ও আশপাশের এজেন্ট শাখায় গিয়ে হিসাব যাচাই করেছেন। গতকাল এজেন্ট শাখার সামনে ব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ বুথ খোলা হয়। সেখানে ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রতারিত গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহণ করেন। অভিযোগ বুথে থাকা প্রিন্সিপাল অফিসার জহুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ৩৮ জন গ্রাহকের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছুটির দিন ছাড়া আরও দুই দিন অভিযোগ বুথ থাকবে। তিনি এই ৩৮ জনের খোয়া যাওয়া টাকার পরিমাণ জানাননি।

সেখানে ১০ জন গ্রাহকদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তাঁদের দাবি, খোয়া যাওয়া টাকার পরিমাণ ৬৭ লাখ। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ গ্রাহকই ছাপা ভাউচার স্লিপে ক্যাশিয়ারের কাছে টাকা জমা দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের হিসাব নম্বরে টাকা জমা হয়নি।

আতিকুর রহমান নামের এক গ্রাহক বলেন, ভাউচার স্লিপে ক্যাশিয়ার ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ব্যাংক হিসাবে সেই টাকা জমা হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট বলেন, এজেন্ট শাখায় অনলাইন স্লিপ ছাড়া ব্যাংকের ভাউচার ব্যবহার করা যাবে না—এটাই নিয়ম। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের ওই এজেন্ট শাখায় ছাপা ভাউচার ব্যবহার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো.

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এজেন্ট শাখায় অনলাইন স্লিপ ছাড়া ভাউচার ব্যবহার করা হয়েছে, এটা অনিয়ম। আমাদের একজন কর্মকর্তা নিয়মিত এজেন্ট শাখা তদারক করতেন। এ অনিয়ম ধরা পড়ল না কেন, তা জানতে চাওয়া হবে।’ ব্যাংকের এই কর্মকর্তার আশঙ্কা, ওই এজেন্ট শাখা থেকে টাকা আত্মসাতের পরিমাণ পাঁচ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর গ র হকদ র কর মকর ত গ র হক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘ক্যাশিয়ার’ মোশাররফ রিমান্ডে

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত মোশাররফ হোসেন ওরফে মিনতি মোশাররফকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আদালত তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তেজগাঁও থানার বরাত দিয়ে তালেবুর রহমান বলেন, “বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাকে আদালত পাঠানো হলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।”

তিনি বলেন, “মোশাররফ তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক এবং গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।তিনি হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে বোমা বিস্ফোরণের মামলাও রয়েছে।”

২০১৫ সালের এপ্রিলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রচার চালানোর সময় হামলার ঘটনা ঘটে। ২০২৪ সালের ২২ আগস্ট এ ঘটনায় মামলা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছিলেন।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ