লোভ দেখিয়ে টাকা নিয়ে উধাও ২৩টি সমবায় প্রতিষ্ঠানের মালিক, টাকা ফেরত পেতে গ্রাহকদের বিক্ষোভ
Published: 23rd, March 2025 GMT
জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন গ্রাহকেরা। আজ রোববার সকাল থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। ‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’–এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, তাঁরা কষ্টার্জিত টাকা লাভের আশায় সমবায় সমিতি নামের ২৩টি প্রতিষ্ঠানে জমা করেছিলেন। কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে টাকা জমা দিয়ে লাভের টাকা নিচ্ছিলেন। তবে এখন লাভ তো দূরের কথা, আসল টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা প্রায় দুই বছর ধরে আত্মগোপনে। গ্রাহকদের অভিযোগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি নিয়ে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা আত্মগোপনে চলে গেছেন।
কর্মসূচি পালনের জন্য সকালে বাস, পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে হাজারো গ্রাহক জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আসেন। বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন তাঁরা। আমানতের অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে তাঁরা সেখানে বসে পড়েন। এর আগে একই দাবিতে ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করেন তাঁরা। ২৪ ফেব্রুয়ারি মাদারগঞ্জ উপজেলা শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণেও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী, সদস্য মাহবুব আলম, মাহফুজুর রহমান, বিএনপি নেতা মোখলেছুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। শিবলুল বারী অভিযোগ করে বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। মাঝেমধ্যে লোকদেখানো কথাবার্তা বলছে। প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক। আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু এই নয় যে আমরা বিশৃঙ্খলা করতে পারব না। টাকা উদ্ধারে আমরা জীবন দিতেও প্রস্তুত। আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা সবকিছু অচল করে দেওয়ার সক্ষমতাও রাখি। আজ যদি আমরা ভালো কোনো সংবাদ না পাই, তাহলে আমরা সড়কে নামতে বাধ্য হব। দীর্ঘ সময় ধরে এই গ্রাহকেরা বিভিন্ন কর্মসূচি ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।’
সমিতিগুলোর মালিকপক্ষের অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাউকে ধরছে না অভিযোগ করে শিবলুল বারী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কত আসামি ধরে, কিন্তু মালিকপক্ষের কাউকে গ্রেপ্তার করছে না। ঈদের আগেই যাঁদের বিরুদ্ধের ওয়ারেন্ট আছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে। জেলা প্রশাসক, জেলা সমবায় কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমানতের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তাঁরা এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন তাঁরা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমিতিগুলোর অধিকাংশই নিবন্ধিত। জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোতে ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধুন অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরের কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাহকেরা যাতে তাঁদের টাকা ফেরত পান, সম্প্রতি সে জন্য সর্বস্তরের প্রশাসন নিয়ে বসেছিলাম। টাকা উদ্ধারে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে, তাঁদের গ্রেপ্তারে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারে আমরাও চেষ্টা করছি; কিন্তু এটা তো দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে সম্ভব নয়। সময় তো দিতেই হবে। তবে আমরা গ্রাহকদের পক্ষে রয়েছি।’
২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র হকদ র ম দ রগঞ জ গ র হক র
এছাড়াও পড়ুন:
পরপর তিন মেয়ের পর এক ছেলে, তাদের পর এলো জমজ
ছেলের আশায় পরপর তিনটি মেয়ে হয়েছে তানিয়া বেগমের। পরবর্তীতে ছেলেও হয়েছে। সেই ছেলের বয়স এখন তিন। ইচ্ছাপূরণের পর দরিদ্র স্বামী ইস্রাফিল মোল্লা বা তানিয়া– কারোই আর সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। তবে বিধির লীলা বোঝা বড়ই ভার। তানিয়া নতুন করে যখন সন্তানসম্ভবা হন, তখন ভরসা রাখেন আল্লাহর ওপর। নড়াইলের এই গৃহবধূ সোমবার সকালে জন্ম দিয়েছেন জমজ ছেলের।
নড়াইল শহরের বেসরকারি মডার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক অ্যান্ড চিকিৎসা কেন্দ্রে সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুই ছেলের জন্ম দেন তানিয়া। তাঁর স্বামী ইস্রাফিল মোল্লা সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় ভ্যানচালক তিনি। ছেলেদের জন্মের পর মা তানিয়া তাদের নাম রেখেছেন– মোহাম্মদ ও আহম্মদ।
সন্তানসম্ভবা পুত্রবধূকে নিয়মিত নড়াইল সদর হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন বলে জানান শিশুদের দাদি রেবেকা খাতুন। তিনি বলেন, তারা দরিদ্র মানুষ। ইচ্ছা ছিল স্বাভাবিকভাবেই প্রসব করানোর। কিন্তু সোমবার সকাল ৬টার দিকে হঠাৎ করেই পুত্রবধূর ব্যথা ওঠে। তখন বাড়ি থেকে আসার সুবিধার কারণে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেন তানিয়াকে।
রেবেকার ভাষ্য, ‘পুতা (সন্তানের ছেলে) জন্ম হওয়ার পর প্রথমজনকে আমি কোলে নিই, আরেকজনকে কোলে নেয় বৌমার মা (শিশুদের নানি) তসলিমা বেগম।’ শিশুদের জন্মের সময় নববর্ষের দিনে পড়েছে কি-না এ বিষয়ে কেউই জানতেন না। তাদের কোলে নেওয়ার পর দাদি-নানিই তাদের কানে আজান দেন। তাদের বাবা বাড়িতে গিয়ে ওজু-গোসল সেরে আজান দিয়েছেন।
প্রতিটি শিশুর ওজনই দুই কেজি ৭০০ গ্রাম করে হয়েছে জানিয়ে রেবেকা খাতুন বলেন, ‘বাচ্চারা এখনো ঠিকমতো মায়ের দুধ পাচ্ছে না। দুধ পাবার চেষ্টা করতিছি।’
১৮ বছর আগে নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের ইস্রাফিল মোল্যার সঙ্গে বিয়ে হয় সদরের বাঁশগ্রামের কিশোরী তানিয়া বেগমের। তখন তানিয়ার বয়স ছিল ১৩ বছর। প্রথম সন্তান মারিয়ার জন্ম হয় এর তিন বছর পর। সেই মেয়েটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়তো। ঈদুল ফিতরের তিনদিন পর বিয়ে হয়েছে এই কিশোরীর। তার স্বামীই জমজ শ্যালকদের জন্য সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি কিনে দিয়েছে বলে জানান ইস্রাফিল মোল্লা। তিনি বলেন, তাঁর মেঝ মেয়ে মরিয়ম (১০) ও ছোট মেয়ে হাবিবা (৮) বলরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ছেলে আব্দুর রহমানের বয়স ৩ বছর। ইস্রাফিলের ভাষ্য, ‘৬ সন্তান হলেও আমরা খুশি, আনন্দিত। এ সন্তান আল্লাহর দান।’
মডার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক অ্যান্ড চিকিৎসা কেন্দ্রে তানিয়ার অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন নড়াইল সদর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার। তিনি বলেন, ‘প্রসূতিকে সোমবার সকালে জরুরি অবস্থায় ভর্তি করা হয়। সবাই তাদের বিষয়ে আন্তরিক ছিলাম। নবজাতক ও তাদের মা সুস্থ আছে। আমরা তাদের খোঁজ-খবর রাখছি।’