রমজানের শেষ দশকে যেসব আমল গুরুত্বপূর্ণ
Published: 22nd, March 2025 GMT
রমজান মাস অত্যন্ত বরকতপূর্ণ। এ মাসে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়াপরবশ হন। তাই মুমিনও এই মাসে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে অধিক সচষ্টে হয়। হাদিসের ভাষ্য অনুসারে রমজান মাস তিনটি দশকে বিভক্ত। প্রত্যেক দশকের বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা ভিন্নতর। সালমান ফারেসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশক জাহান্নাম থেকে মুক্তির।’ (সহিহ ইবনে খুজায়মা, হাদিস: ১৭৪০)
পূর্বসূরী আলেমরা বলেন, সাধারণভাবে অন্য সব মাসের বিশেষ মর্যাদা প্রমাণিত। আর পুরো রমজান মাসের ওপর শেষ দশকের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। এ জন্য নবীজি (সা.
রমজানের শেষ দশকে মহানবী (সা.) শুধু নিজে বেশি বেশি ইবাদত করতেন না, বরং তিনি তাঁর পরিবার পরিজনকেও অধিক পরিমাণে ইবাদত করতে উৎসাহিত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন নবী (সা.) তাঁর লুঙ্গি কষে বেঁধে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)
মহানবী (সা.) সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করতেন। তাঁর জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ ছিল। তথাপি রমজানের শেষ দশক এলে তিনি রাতের ইবাদতের পরিমাণ অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতেন। আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর হাদিস রমজান মাসে মহানবী (সা.)-এর রাতের ইবাদত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আমার স্মরণে নেই নবী (সা.) রমজান ব্যাতীত কখনো এক রাতে পুরো কোরআন তিলাওয়াত করেছেন, অথবা (রাতে মোটেই না ঘুমিয়ে) সকাল পর্যন্ত ইবাদত করেছেন, রমজান ছাড়া কখনো পুরো মাস রোজা রেখেছেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৩৩৬)
আরো পড়ুন:
রোজা থেকে রাগ নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা
ইতিকাফের মর্যাদা ও বিধান
হাদিসের বর্ণনা অনুসারে রমজানের শেষ দশকে মহানবী (সা.)-এর কয়েকটি প্রিয় আমল তুলে ধরা হলো:
তাহাজ্জুদ আদায় : রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ আদায়ে অধিক মনোযোগী হতেন এবং পরিবার-পরিজনকেও উৎসাহিত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া কখনো ভোর পর্যন্ত সারা রাত জেগে ইবাদত করতে বা পুরো মাস একনাগারে রোজা পালন করতে দেখিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬১৪)
কদরের রাত অনুসন্ধান করা : রমজানের প্রত্যেক বেজোড় রাতই কদরের রাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত অনুসন্ধানের বিশেষ তাগিদ আছে। নবীজি (সা.) নিজে রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধান করতেন এবং সাহাবিদেরও এই আমলের প্রতি উৎসাহিত করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) রজমানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে কদরের রাত অনুসন্ধান কোরো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২০)
শবে কদরের ব্যাপারে যারা উদাসীন তাদের ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর হুঁশিয়ারি হলো আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এই যে মাস (রমজান) তোমরা লাভ করেছ তাতে এমন একটি রাত আছে যা হাজার রাতের চেয়ে উত্তম। এই রাতে বঞ্চিত থাকবে সে যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো। আর হতভাগ্য ব্যক্তিরাই কেবল তা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)
ক্ষমা লাভের দোয়া করা : রমজানের শেষ দশকে আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের দোয়া করা সুন্নত। এই আমলের প্রতি নবীজি (সা.) উৎসাহিত করেছেন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকে রোজাদারকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, এই রাত কি কদরের রাত? নবী কারিম (সা.) বললেন, না, বরং নিয়ম হলো, শ্রমিকের কাজ শেষ হওয়ার সময় তাঁকে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।’ (মুসনাদে আহমদ)
রমজান মাসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার সময় নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করা উত্তম। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বললেন, তুমি বোলো (উচ্চারণ) ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা'ফু আন্নি’। অর্থ ‘হে আল্লাহ! আপনি সম্মানিত ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (সুনানে তিরমিজি, আয়াত : ৩৫১৩)
ইতিকাফ করা : রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ ছিল প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রিয় আমল। তিনি মদিনায় আগমনের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনো ইতিকাফ ত্যাগ করেননি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৬)
সদকাতুল ফিতর আদায় করা : শেষ দশকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সদকাতুল ফিতর আদায় বা আদায়ের প্রস্তুতি। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ঈদের নামাজের আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘প্রত্যেক দাস, আজাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের ওপর আল্লাহর রাসুল (সা.) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক বা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন এবং লোকজনের ওপর ঈদের সালাতের বের হওয়ার আগেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫০৩)
সর্বোপরি মনে রাখতে হবে, গুনাহ মাফের মাস রমজান। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলোধূসরিত হোক যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)
রমজানের শেষ দশকে অধিক পরিমাণ ক্ষমা প্রার্থনা করাও প্রয়োজন। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা
শাহেদ//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন রমজ ন র শ ষ দশক সহ হ ব খ র রমজ ন ম স ত করত ন পর ম ণ বর ণ ত কর ছ ন দ য় কর আল ল হ বল ছ ন দশক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে বিপুল পরিমান নিষিদ্ধ পলিথিন উদ্ধার, আটক ৩
সিদ্ধিরগঞ্জে ৫ হাজার ৬২০ কেজি পরিবেশ দূষণকারী নিষিদ্ধ পলিথিন উদ্ধার করেছে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ। যার আনুমানিক মূল্য ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৮শ টাকা।
এ সময় পলিথিন সরবারহের কাজে ব্যবহৃত একটি কাভার্ডভ্যান (ঢাকা মেট্রো ন-১৩-৭৩৩৮) জব্দসহ তিনজনকে আটক করে হাইওয়ে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন- ঢাকা জেলার, ধামরাই থানার, গাংগুটিয়া গ্রামের এসহাক মিয়ার ছেলে রফিক, মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর থানার বাংলা বাজার এলাকার রুহুল আমিন সরকারের ছেলে মনির ও নোয়াখালী জেলার সাধুরাম থানার মহাব্বাতপুর এলাকার শফিকুল রহমানের ছেলে।
রবিবার (২৩ মার্চ ) ভোর রাতে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রাম মুখী লেনে কাঁচপুর ব্রিজের ঢালে টাইগার রি- রোলিং মিল সংলগ্ন সাজেদা হসপিটাল এর সামনে থেকে ওই নিষিদ্ধ পলিথিনসহ তাদের আটক করা হয়।
শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ আবু নাঈম সিদ্দিকী এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পলিথিন উদ্ধারের ঘটনায়আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।