রা জধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জনপদ নারায়ণগঞ্জ হইতে মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি-আরসাপ্রধান আতাউল্লাহসহ ১০ জনের গ্রেপ্তার যুগপৎ স্বস্তি ও উদ্বেগের বিষয়। আমরা জানি, মিয়ানমার হইতে বাংলাদেশে আশ্রিত জনগোষ্ঠীর একাংশ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়াইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু সশস্ত্র গোষ্ঠীও এইভাবে দেশের কেন্দ্রীয় এলাকায় আসিয়া ঘাপটি মারিয়া থাকিবার বিষয় নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। ইহাও ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত, আরসার একাংশ রোহিঙ্গা শিবিরকেন্দ্রিক অপহরণ, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সংশ্লিষ্ট। ২০২১ সালে রোহিঙ্গাদের জনপ্রিয় নেতা মহিবুল্লাহ হত্যায় আরসার নাম প্রচারিত হইবার পর রোহিঙ্গা শিবিরে তাহারা চাপে পড়ে। ফলে এই সময়ে সশস্ত্র সংগঠনটির শীর্ষ নেতার গ্রেপ্তার রোহিঙ্গাদের জন্যও খুশির বিষয়। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাংগঠনিকভাবে আরসা কোণঠাসা। কারণ উহারা মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পক্ষ হইয়া আরাকান আর্মির সহিত লড়াই করিয়া পরাস্ত। দলটির নেতারা যখন নূতন আশ্রয় খুঁজিতে বাংলাদেশে আসিয়াছে তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাহাদের ধরিতে সক্ষম হইয়াছে। তবে উহাদের গ্রেপ্তার স্বস্তির বিষয় হইলেও শঙ্কা এখনও দূরীভূত হয় নাই।
অভিযোগ উঠিয়াছে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারপূর্বক মিয়ানমার আর্মির চেকপোস্টে হামলা করাইয়াছিল আরসা। ইহার পর আরাকান আর্মির সহিত রাখাইনে সংঘাত আরম্ভ হইলে আরসাকে প্রলোভন দেখাইয়া ব্যবহার করে জান্তা সরকার। তাহাদের বলা হয়, আরাকান আর্মিকে পরাজিত করিতে পারিলে স্ব-ভূমিতে ফিরাইয়া আনা হইবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের। তবে জান্তা সরকার পরাজিত হইবার পর তথায় বেকায়দায় পড়ে আরসা ও সাধারণ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক খুনোখুনি ও নানা অপরাধে আরসা নেতা আতাউল্লাহর বিরুদ্ধে দুই ডজনের অধিক মামলা রহিয়াছে। ২০২২ সালে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রের নিকট মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হইয়াছিলেন সেনা গোয়েন্দা সংস্থার জনৈক কর্মকর্তা। ঐ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিও আতাউল্লাহ।
এমন সময়ে আরসার শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হইয়াছে, যাহার কিছুদিন পূর্বেই প্রধান উপদেষ্টা ড.
স্বাভাবিক কারণেই আরসা যদ্রূপ রোহিঙ্গাদের বন্ধু নহে, তদ্রূপ বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। তজ্জন্য সংগঠনটির প্রতি শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন জরুরি। অস্বীকার করিবার উপায় নাই, রোহিঙ্গা শিবিরে আরসার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণেই রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয় ‘হোস্ট কমিউনিটি’ ও দেশব্যাপী এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈয়ার হইয়াছে। এমনকি রোহিঙ্গারা যখন নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হইয়াছে, তখন তাহাদের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও অনুজ্জ্বল। এতদ্ব্যতীত আরসার কর্মকাণ্ডে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও হুমকির মুখে। সেই কারণেই সশস্ত্র সংগঠনটির প্রতি কোনো রকম দুর্বলতা প্রদর্শনের অবকাশ নাই।
এই আশঙ্কা অমূলক হইতে পারে না, বেকায়দায় থাকা আরসার অনেক নেতাকর্মী দেশব্যাপী ছড়াইয়া পড়িতে পারে। তজ্জন্য তাহাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রাখিতে হইবে। দেশ হইতে আরসার মূলোৎপাটন করিতে না পারিলে উহা নিরাপত্তা সংকট তৈয়ার করিবে। সীমান্তে আরসা শুধু নয়, তৎসহিত অপরাপর সশস্ত্র সংগঠনের দিকেও শ্যেনদৃষ্টি দিতে হইবে। কোণঠাসা আরসা নেতারা যখন নূতন আশ্রয় খুঁজিতেছে, তখন বাংলাদেশে যাহাতে তাহারা সেই সুযোগ না পায়, উহা নিশ্চিত করিতেই হইবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সশস ত র স গঠন ন আর ম র সহ ত আর ক ন অপর ধ আরস র হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
করনীতিতে সংস্কার চান ব্যবসায়ী নেতারা
বর্তমান করনীতি ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাই এ নীতি সংস্কার করে ব্যবসাবান্ধব করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এ সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সংগঠনের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। লিখিত এ প্রস্তাবনায় সংগঠনটি বলেছে, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক নীতি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। কর্মসংস্থানের স্বার্থে বিনিয়োগ, দেশীয় শিল্প ও সেবা এবং কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে কর যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনতে হবে।
এফবিসিসিআই করহার কমিয়ে আয়কর ও মূসকের আওতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন, পণ্য খালাস এবং সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ত্বরান্বিত করতে এসাইকুডা সিস্টেমের সার্বিক উন্নয়নসহ সিঙ্গেল উইন্ডো সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়াতে সুদের হার কমিয়ে আনার প্রস্তাবও দিয়েছে সংগঠনটি।
একই সঙ্গে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী বাজেটে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চেয়েছে এফবিসিসিআই। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক খরচ কমানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নগদ সহায়তার বিকল্প সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম লিখিত প্রস্তাবনায় বলেন, বর্তমান করনীতি কোনোভাবেই ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নয়। তাই এটি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব নীতি প্রণয়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংগঠনটির প্রস্তাব হচ্ছে, তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য উৎসে কর আদায়কে চূড়ান্ত কর আদায় হিসেবে গণ্য করে আগামী পাঁচ বছরের জন্য এ হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করতে হবে।
বিকেএমইএ বলেছে, বর্তমানে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। তারপরও এ প্রণোদনা পেতে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টেশন এবং অডিট প্রক্রিয়ায় হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রক্রিয়াটি সহজ করে রপ্তানির বিপরীতে অর্থ প্রত্যাবাসনের সময় হিসাব করে রপ্তানিকারককে সরাসরি দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রণোদনার ওপর আয়কর অব্যাহতি দিতে হবে।
সভা শেষে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সাংবাদিকদের বলেন, কর পদ্ধতি সহজ করতে অনেক দিন ধরেই দাবি জানানো হচ্ছে। এবার একটা পরিবর্তন আসবে বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে। এখন ১ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) নিচ্ছে সরকার। তবে এটি চূড়ান্ত হিসাব নয়। আবার এই অর্থ পুরোপুরি সমন্বয় হচ্ছে না বা ফেরত দিচ্ছে না। এক কোটি টাকা এআইটি নিলেও ওই ব্যবসায়ী যখন ২০ লাখ টাকা করের রিটার্ন দাখিল করছেন, তখন অগ্রিম আয়কর কেটে রাখলেও তা ফেরত দিচ্ছে না। এতে করহার কত দাঁড়াচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট নয়। এটা পরিবর্তন প্রয়োজন।
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, মোট বিক্রির ভিত্তিতে কর প্রক্ষেপণ করে এনবিআর, যা যৌক্তিক নয়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চর্চাও অনুসরণ করা হয় না। পোশাক খাতকে ১ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হচ্ছে। যদিও এটা চূড়ান্ত হিসাব নিষ্পত্তি নয়। লোকসান হলেও ১ শতাংশ দিতে হয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দ্বৈতকর হয়ে যায়। এসব কিছু বিষয়ে নিষ্পত্তিতে একমত হয়েছে এনবিআর।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সাহেলউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যবসা উপযোগী করনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগও থাকবে। তিনি বলেন, করের ব্যাপারে মতামত এসেছে। কিছু খাতে সুবিধা কম রয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছেন, কর কাঠামোর প্রক্রিয়া যেন অনলাইনে করা হয়। এ ছাড়া পেমেন্ট নিয়ে যে জটিলতা তা সমাধান চেয়েছেন তারা। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করবে সরকার।
বৈঠকে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন। এ সময় অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।