আরবি ‘ইতিকাফ’ অর্থ অবস্থান করা। পরিভাষায় ইতিকাফ বলা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদে অবস্থান গ্রহণ করা। ইতিকাফ পবিত্র রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল। মহানবী (সা.) রমজান মাসে নিয়মিত ইতিকাফ করতেন। পূর্ববর্তী নবী-রাসুলরাও ইতিকাফ করেছেন বলে কোরআন, সুন্নাহ ও ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)
আবু হুরাইরা (রা.
রমজান মাসের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নত। সার্বিক বিবেচনায় এটি রমজানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এটা রমজানের ফল ও ফসল ঘরে তোলার সময়। কেননা রমজানের শেষ দশকেই শবে কদর হয়ে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে অধিক পরিমাণ ইবাদত করতেন এবং নির্বিঘ্নে ইবাদতের জন্য তিনি ইতিকাফ করতেন। উপমহাদেশের বিখ্যাত দার্শনিক আলেম শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘মসজিদের ইতিকাফ হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি, আত্মার পবিত্রতা ও চিত্তের নিষ্কলুষতা। চিন্তার পরিচ্ছন্নতা ও বিশুদ্ধতা। ফিরিশতাকুলের গুণাবলি অর্জন এবং লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য ও কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুযোগ লাভের সর্বোত্তম উপায়। এ জন্য রাসুল (সা.) নিজে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইতিকাফ পালন করেছেন এবং তাঁর বিবিরাসহ সব সাহাবায়ে কিরামের অনেকেই এই সুন্নতের ওপর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমল করেছেন।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা : ২/৪২)
আরো পড়ুন:
রমজান মাসে এই ভুলগুলো করছি না তো!
রমজানে আল্লাহর ক্ষমা লাভের উপায়
ইতিকাফের বিধানাবলী
১. প্রতিটি মহল্লার মসজিদে ইতিকাফ করা মহল্লাবাসীর জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়াহ। অর্থাৎ মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে একদল মানুষ ইতিকাফ করলে অন্যরা দায়মুক্ত হয়ে যাবে। আর কেউ না করলে সবাই গুনাহগার হবে।
২. এক মহল্লায় একাধিক মসজিদ থাকলে প্রত্যেক মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম। তবে তা জরুরি নয়। বরং যে কোনো মসজিদে ইতিকাফ করলে মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে যথষ্টে।
৩. সুন্নত ইতিকাফের সময় ১০ দিন। রমজানের শেষ দশকে তা আদায় করা হয়। এর সময় শুরু হয় রমজান মাসের ২০ তারিখ সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে এবং শেষ হয় শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে।
৪. ইতিকাফকারী ২০তম রোজার সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে নিয়ত করে ইতিকাফের স্থানে প্রবেশ করা জরুরি। যদি কেউ ২০ রমজান সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথে সাথেই ইতিকাফে বসতে না পারে, বরং পরের দিন অর্থাৎ ২১ রমজান থেকে ইতিকাফ শুরু করে, তবে এটি মাসনুন ইতিকাফ বলে গণ্য হবে না, বরং এটি নফল ইতিকাফ হবে।
৫. ইতিকাফ ইবাদত। তাই তা স্বেচ্ছায় ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পালন করতে হবে। কাউকে টাকার বিনিময়ে ইতিকাফ করানো ও করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এভাবে ইতিকাফ করানোর দ্বারা মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হতে পারবে না।
৬. সুন্নাত ইতিকাফকারীর জন্য মানবীয় ও শরয়ি প্রয়োজন ছাড়া অন্য কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। সুতরাং সে প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ, ফরজ গোসল ও গায়ের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য বের হতে পারবে।
৭. মসজিদের ভেতর ওজুর ব্যবস্থা না থাকলে ওজুর জন্য বের হতে পারবে।
৮. ইতিকাফকারী ওজু করার জন্য মসজিদ থেকে বের হলে, তার জন্য ওজুর আগে বা ওজুর সময় দ্রুত সাবান দিয়ে হাত, মুখ ধুয়ে নেওয়ার অনুমতি আছে। তবে শুধু হাত, মুখ ধোয়ার জন্য বাইরে বের হওয়া জায়েজ হবে না।
৯. ইতিকাফের শেষ সময় হলো ঈদের চাঁদ ওঠার দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। সূর্যাস্তের আগে চাঁদ দেখা গেলেও মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হতে পারবে।
১০. যে ব্যক্তি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছে, তার জন্য উত্তম হলো ঈদের নামাজ আদায় করে ঘরে ফেরা।
১১. মসজিদের এক তলা থেকে অন্য তলায় গেলে বা একাংশ থেকে অন্য অংশে গেলে ইতিকাফ নষ্ট হয় না।
১২. ইতিকাফ অবস্থায় সিগারেট খাওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয়। শুধু সিগারেট খেতে মসজিদের বাথরুমে গেলেও ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে।
১৩. ইতিকাফ অবস্থায় শুধু নারীর ছবি দেখলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয় না। তবে এর ফলে বীর্যপাত ঘটলে রোজা ও ইতিকাফ উভয় নষ্ট হয়ে যাবে।
১৪. হোটেল বা ভবনের মসজিদে ইতিকাফ করলে সুন্নত ইতিকাফ আদায় হয় না। সুন্নত ইতিকাফের জন্য মহল্লার মসজিদ হওয়া আবশ্যক।
১৫. একান্ত প্রয়োজন হলে মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করা যাবে। যেমন অনলাইনে কোনো কাজ করে দেওয়া। এটা কেবল নিরুপায় হলেই করা যাবে।
১৬. নারীরা ঘরের একটি স্থান নির্ধারণ করে সেখানে ইতিকাফ করবে। তাদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করা মাকরুহ।
১.৭ নাবালেগ শিশু যার জ্ঞান-বুদ্ধি পরিপক্ক হয়েছে, সেও সুন্নত ইতিকাফ করতে পারবে। তবে তাকে রোজা রাখতে হবে।
১৮. ইতিকাফরত ব্যক্তি উপকারী বই-পুস্তক পড়তে পারবে।
১৯. ইতিকাফ অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা নাজায়েজ নয়, যদি না তা কোনো হারাম কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে অনিয়ন্ত্রিত মোবাইল ব্যবহার ইতিকাফের মাহাত্ম্য নষ্ট করতে পারে।
নিম্নোক্ত কারণে সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যায়
১. কোনো প্রাকৃতিক বা শরয়ি কারণ ছাড়া মসজিদ থেকে বের হওয়া।
২. রোজা না রাখা বা ভেঙে ফেলা।
৩. ইতিকাফের অবস্থায় সহবাস করা।
৪. মহিলা ইতিকাফে থাকলে হায়েজ বা নিফাস শুরু হওয়া।
৫. কোনো কারণে ইতিকাফের স্থান থেকে বাইরে বের হয়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় অবস্থান করা।
৬. ভুলে মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেও ইতিকাফ ভেঙ্গে যায়। সে ক্ষেত্রে এক দিনের ইতিকাফ কাজা করতে হবে।
তথ্যসূত্র : রদ্দুল মুহতার ২/৪৪২; ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ১৭/১৬৯; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ৫/৩৬১; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ২/১৫২; আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৫১৫
শাহেদ//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন রমজ ন র শ ষ দশক মহল ল ব স মসজ দ থ ক রমজ ন ম স র জন য ম মসজ দ র অবস থ য় ব র হওয় র মসজ দ র সময় করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত: শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেছেন, জুলাই গণহত্যায় জড়িত শেখ হাসিনা এখন ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত। এটাই প্রকৃতির সুনির্দিষ্ট গন্তব্য। কোনো অমোঘ ঐতিহাসিক ‘নিয়ম’ মানুষকে সৃষ্টি করে না। ছাত্র-জনতা জুলাই গণহত্যা প্রতিরোধে যে বীরত্ব ও অসম সাহসিকতা প্রদর্শন করে ফ্যাসিবাদের আইকনকে উচ্ছেদ করেছে, তাতে আরেকবার প্রমাণ হয়েছে- মানুষই ইতিহাস সৃষ্টি করে, ইতিহাস মানুষকে সৃষ্টি করে না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জেএসডি আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে সকলের বাংলাদেশ। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী নিজ অধিকারের জোরে অন্য কোনো গোষ্ঠীর অধিকারকে আত্মসাৎ করতে পারবে না। সকলের অংশীদারিত্বমূলক রাজনীতি ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ জীবনে এক গণজোয়ার সৃষ্টি করবে, যা দলকেন্দ্রিক নিষ্ঠুর ও নির্মম রাজনীতিকে চিরতরে উচ্ছেদ করবে। এ লক্ষ্যেই জেএসডি অংশগ্রহণমূলক বা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার দাবি উত্থাপন করছে। এটাই একমাত্র বিকল্প রাজনৈতিক মডেল।
আলোচনা সভায় জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব বলেন, জুলাই গণহত্যায় শেখ হাসিনার স্বরূপ প্রকাশিত হয়ে গেছে। অবৈধ ক্ষমতাকে শুধুমাত্র দীর্ঘায়িত করতে কয়েক হাজার মানুষ হত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা এখন দেশবাসীর কাছে ক্ষমার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ এর আহবায়ক আবদুল মান্নান মুন্সি। যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ মোস্তাকের সঞ্চালনায় পুরাতন ঢাকার নবাববাড়ি পুকুরপাড়ে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, বীর মুক্তিযুদ্ধের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলাল, মোশারেফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সামছুল আলম নিক্সন, দপ্তর সম্পাদক কামরুল আহসান অপু,মোহাম্মদ শামিম, ছাত্রনেতা মোসলেহ উদ্দিন বিজয় প্রমুখ।