হাড়ের ইনফেকশনকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে অস্টিওমাইলাইটিস। এক্ষেত্রে হাড় ও অস্থিমজ্জায় সংক্রমণ ও প্রদাহ হয়। সংক্রমণ রক্তের মাধ্যমে বা নিকটবর্তী টিস্যু থেকে ছড়াতে পারে। আবার সংক্রমণ হাড় থেকেও হতে পারে, যদি হাড়টি আঘাত পেয়ে জীবাণুর সংস্পর্শে আসে।
যেসব লোক ধূমপান করেন এবং যারা দীর্ঘস্থায়ী রোগে যেমন ডায়াবেটিস বা কিডনির বিকলতায় ভুগছেন, তাদের অস্টিওমাইলাইটিসে আক্রান্ত হবার বেশি আশঙ্কা থাকে।
একসময় অস্টিওমাইলাইটিসের চিকিৎসা সহজ ছিল না। বর্তমানে সফলভাবে চিকিৎসা দওয়া হয়। যেসব লোকের হাড় মরে যায়, তাদের অপারেশনের মাধ্যমে মৃত হাড় অপসারণের প্রয়োজন হয়।
উপসর্গ
অস্টিওমাইলাইটিসের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে –
lইনফেকশনের স্থান ফুলে যাওয়া, গরম হওয়া ও লাল হয়ে যাওয়া lইনফেকশনের স্থানে ব্যথা হওয়া lঅবসন্নতা lজ্বর
অস্টিওমাইলাইটিসে কখনও কখনও কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। আবার কখনও কখনও উপসর্গগুলো অন্য সমস্যা থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি নবজাতক, বয়স্ক লোক ও যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য বেশি সত্য।
হাড়ে ইনফেকশনের কারণ
lবেশির ভাগ অস্টিওমাইলাইটিসের কারণ হলো স্ট্যাফাইলোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া।এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণভাবে সুস্থ মানুষের ত্বকে ও নাকে দেখা যায়।
জীবাণুগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে হাড়ে ঢুকতে পারে।
lরক্ত–আপনার শরীরের অন্যস্থানের জীবাণু–উদাহরণস্বরূপ নিউমোনিয়া আক্রান্ত ফুসফুস থেকে কিংবা ইনফেকশনযুক্ত প্রস্রাবের থলি থেকে এই জীবাণু রক্তের মাধ্যমে আপনার হাড়ের দুর্বল স্থানে যেতে পারে।
lইনজুরি–আঘাতের দ্বারা আপনার ত্বকে গুরুতর ক্ষত সৃষ্টি হলে জীবাণু আপনার শরীরের গভীরে ঢুকে যেতে পারে। যদি আঘাতের স্থানটি সংক্রমিত হয়, জীবাণু পার্শ্ববর্তী হাড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার যদি আঘাতের ফলে আপনার হাড় ভেঙে গিয়ে ভাঙা হাড় চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসে, তাহলে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
lসার্জারি–জয়েন্টে অপারেশন বা কোনো ভাঙা হাড় লাগানোর সময় সরাসরি জীবাণুর সংস্পর্শ ঘটতে পারে।
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
আপনার হাড় স্বাভাবিকভাবে ইনফেকশন প্রতিহত করতে পারে। যখন আপনার বয়স বাড়তে থাকে এই সুরক্ষার মাত্রাও কমতে থাকে। অন্য কিছু বিষয়ও আপনার হাড়কে ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে সহায়তা করে।
সাম্প্রতিক আঘাত বা অর্থোপেডিক সংক্রান্ত সার্জারি
গুরুতরভাবে হাড় ভেঙে গেলে কিংবা গভীর ক্ষত হলে আপনার হাড়ে বা আশপাশের টিস্যুতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। পশু-পাখির কামড় কিংবা জুতার মাধ্যমে নখে ইনজুরি হলে সেখান থেকেও ব্যাকটেরিয়া ঢুকে ইনফেকশন ঘটাতে পারে। ভাঙা হাড় অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক করার সময় বা জোড়া প্রতিস্থাপনের সময় হাড়ে জীবাণু ঢুকতে পারে। হাড় বা জোড়ায় স্থাপিত অর্থোপেডিক জিনিসপত্র ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
রক্ত সঞ্চালনে অস্বাভাবিকতা
যখন রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা বন্ধ হয়ে যায়, আপনার শরীরের ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াইকারী কোষগুলো সমস্যায় পড়ে যায়। একটি ছোট কেটে যাওয়া থেকে বড় ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, যার দরুন গভীর টিস্যু ও হাড় উন্মুক্ত থাকে এবং সেখানে ইনফেকশন হতে পারে।
কিছু রোগে রক্তসঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হয়
lঅনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
lপ্রান্তিক রক্তনালির রোগ, যা সচরাচর ধূমপানের সঙ্গে সম্পৃক্ত lসিকেল সেল রোগ lযেসব রোগে শিরাপথে চিকিৎসা বা ক্যাথেটার দেওয়া হয় lডায়ালাইসিস lইউরিনারি ক্যাথেটার lশিরাপথে স্যালাইন
যেসব অবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
যদি কোনো কারণে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে আপনার হাড়ে সংক্রমণ হবার ব্যাপক আশঙ্কা থাকে। নিচের বিষয়গুলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দমিয়ে রাখে-
lক্যান্সারের চিকিৎসা lঅনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
lকর্টিকোস্টেরয়েড গ্রহণ
নিষিদ্ধ ওষুধ
যেসব লোক শিরাপথে ইনজেকশনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ওষুধ গ্রহণ করেন, যেহেতু তারা জীবাণুযুক্ত সুই ব্যবহার করেন তাই তাদের হাড়ে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
জটিলতা
হাড়ের ইনফেকশনে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে
lহাড় মরে যাওয়া
lআপনার হাড়ে ইনফেকশন হলে হাড়ের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে হাড় মরে যায়। হাড়ের যে স্থানটি মরে যায় সেটি অপারেশনের মাধ্যমে ফেলে দিতে হয়। তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ভালো কাজ করে।
lসেপটিক আর্থ্রাইটিস
কখনও কখনও হাড়ের ইনফেকশন পার্শ্ববর্তী জয়েন্টে ছড়িয়ে যায়।
lবৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া
শিশুদের ক্ষেত্রে হাড় বা জয়েন্টের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, যদি সংক্রমণ হাড়ের নরম এলাকা বা গ্রোথ প্লেটে ঘটে।
lত্বকের ক্যান্সার
যদি হাড়ের ইনফেকশনের ফলে পুঁজ বেরিয়ে আসতে থাকে তাহলে সেখানকার ত্বকে ক্যান্সার হবার উচ্চ ঝুঁকি থাকে।
প্রতিরোধ
যদি আপনার হাড়ে ইনফেকশনের উচ্চ ঝুঁকি থাকে, তাহলে ঝুঁকি কমানোর জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
সাধারণভাবে কেটে যাওয়া, ছড়ে যাওয়া বা প্রাণীর আঁচড় বা কামড়ানো এড়িয়ে চলবেন। কেননা এক্ষেত্রে সহজে জীবাণু ঢুকতে পারে। যদি আপনার নিজের বা আপনার সন্তানের শরীরের কোথাও সামান্য কেটে যায়, তাহলে জায়গাটি দ্রুত পরিষ্কার করুন ও সেখানে পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বেঁধে দিন। ক্ষতটিতে ইনফেকশনের চিহ্ন দেখার জন্য ঘনঘন পরীক্ষা করুন। v
[ উপাধ্যক্ষ ও সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হ ড় র ইনফ কশন ইনফ কশন র আপন র হ ড় স ক রমণ উপসর গ
এছাড়াও পড়ুন:
অসমাপ্ত আধা কিলোমিটারে দুর্ভোগ
১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের সাড়ে ১৫ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৫০০ মিটারের কাজ না করেই ঠিকাদার হাওয়া। এই ৫০০ মিটারই দুর্ভোগে ফেলেছে এলাকাবাসীকে। তারা ধুলায় একাকার হচ্ছেন। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার টুঙ্গিপাড়া-ঘোনাপাড়া সড়কের চিত্র এটি। স্থানীয়রা দ্রুত এ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করে তাদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সড়ক বিভাগের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর-নাজিরপুর-মাটিভাঙ্গা-পাটগাতী-ঘোনাপাড়া সড়কটি পিরোজপুর, নাজিরপুর, টুঙ্গিপাড়া, জিয়ানগর ভাণ্ডারিয়া উপজেলা থেকে ঢাকা-গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলায় যাতায়াতের সহজ পথ। এ সড়কের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ডেন্টাল কলেজ, আঞ্চলিক ধান গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিআরটিসি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও বাস ডিপো, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া সরকারি কলেজ উল্লেখযোগ্য। তাই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির টুঙ্গিপাড়া থেকে ঘোনাপাড়া পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে চওড়া করার কাজ শুরু করা হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই সড়কের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা থেকে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৫০০ মিটার সড়কের কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। তার পরই এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল, পণ্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে হচ্ছে যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনাও।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের ফোরকান আলী বলেন, সড়কটির প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। মাত্র আধা কিলোমিটার কাজ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে গেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গেলে ভোগান্তির শেষ নেই। কখনও কখনও যানজট, ধুলাবালির মধ্যে পড়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে এখানে ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। তাই তিনি দ্রুত এই আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।
পাটগাতী গ্রামের ভ্যানচালক রইচ বিশ্বাস বলেন, সড়কের সব জায়গা ভালো। কিন্তু গিমাডাঙ্গা থেকে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। এখানে ভ্যান চালাতে গেলে প্রচুর ঝাঁকুনি হয়। এতে বয়স্ক যাত্রীর অসুবিধা হয়। মাঝেমধ্যে ভ্যানের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। ঘটে দুর্ঘটনা। এ সড়কের ৫০০ মিটার অংশটুকুর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
বাসচালক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, সড়কটি খুবই সুন্দর হয়েছে। কিন্তু মাত্র আধা কিলোমিটারের কাজ বাকি রয়েছে। এই আধা কিলোমিটার অতিক্রম করার সময় ধুলাবালি ওড়ে। এতে পথচারী ও ছোট যানবাহনের যাত্রীদের কষ্ট হয়। এ ছাড়া বাসের জানালা বন্ধ করতে হয়। কখনও কখনও যানজটে আটকা পড়তে হয়। আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন করা হলে এলাকাবাসী দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।
টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি গ্রামের সাইফুল শেখ বলেন, যাতায়াত ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য পাটগাতী হাটে পরিবহনে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তাই ওই সড়কের গুরুত্বপূর্ণ ৫০০ মিটার এলাকার কাজ দ্রুত শুরু করে শেষ করার দাবি জানান তিনি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর পরও ওই সড়কের ৫০০ মিটারের নির্মাণকাজের সব বাধা অপসারিত হয়েছে। ২-১ দিনের মধ্যে ফান্ড ছাড় করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দ্রুত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে। কাজ শুরু হলে শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না।