ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না ইউক্রেন, এই শর্তে শান্তিচুক্তি করতে চায় রাশিয়া
Published: 17th, March 2025 GMT
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় ইউক্রেনকে সদস্য করা হবে না এবং যেকোনো শান্তি আলোচনায় কিয়েভ নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকবে—এমন নিশ্চয়তা চায় মস্কো। রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার গ্রুশকো এ কথা বলেছেন।
ইউক্রেনের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রসঙ্গে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা চাই, লৌহদৃঢ় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এই চুক্তির অংশ হোক।’
এই নিশ্চয়তার একটি অংশ হতে পারে ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান। ন্যাটো জোটের দেশগুলোর পক্ষ থেকে কিয়েভের সদস্য হওয়ার চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করতে হবে, এমনটাই মন্তব্য করেন রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আগামী দিনগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিফোনে কথা বলতে পারেন। ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের রাশ টানতে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা বলবেন দুই নেতা। এর আগে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির এমন চাহিদার কথা জানান।
রাশিয়াকে ৩০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন।
আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি নিয়ে শিগগির কথা বলবেন ট্রাম্প-পুতিন৮ ঘণ্টা আগেঅন্যদিকে পুতিন বলেছেন, তিনিও যুদ্ধবিরতির পক্ষে, তবে শান্তির পথে বেশকিছু কঠিন শর্ত যুক্ত করতে চায় তাঁর দেশ।
এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অভিযোগ, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ‘ধ্বংস করতে’ চাইছেন পুতিন।
মস্কোয় গত বৃহস্পতিবার পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। সিএনএনকে স্টিভ উইটকফ বলেন, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে টেলিফোনে কথা হতে পারে। সম্ভবত এ সপ্তাহেই সেটা হবে।
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নেবেন তিনি। নতুন প্রশাসনের ‘প্রথম দিনেই’ এটা হতে পারে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার এক মাসের কম সময়ের মধ্যে পুতিনের সঙ্গে ৯০ মিনিট কথা বলেছেন। যুদ্ধ বন্ধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর বিষয়ে কথা বলেন তাঁরা।
আরও পড়ুনইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে: ট্রাম্প১৫ মার্চ ২০২৫রুশবাহিনী ইউক্রেনের যেসব ভূমি দখলে রেখেছে, সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সেই বিষয়টি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন স্টিভ উইটকফ। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূমি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে রাশিয়া।
আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: কীভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হতে পারে১৪ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ
ইউক্রেন সংকট ঘিরে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা আরও জোরদার হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির উদ্যোগে শুক্রবার ব্রাসেলসে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউক্রেন প্রতিরক্ষা যোগাযোগ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি জানিয়েছেন, এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ আরও বাড়ানো।
বৈঠকে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ৫৮ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই প্যাকেজের আওতায় রাডার সিস্টেম, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন এবং বিপুল পরিমাণ ড্রোন সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সামরিক যান ও সরঞ্জাম মেরামতেও ব্যয় করা হবে এ অর্থের একটি অংশ।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে তা হবে উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে তৃতীয় বৈঠক। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে উইটকফ পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করে আমেরিকান শিক্ষক মার্ক ফোগেলকে মুক্ত করিয়েছিলেন। রাশিয়া সফরের আগে তিনি ওয়াশিংটনে রুশ আলোচক কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘একটি সমঝোতা’ হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে এই আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার দিমিত্র লুবিনেৎস জানিয়েছেন, রুশ সেনারা ১৩ মার্চ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের পিয়াতিখাতকি গ্রামে চারজন নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। লুবিনেৎস আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও জাতিসংঘের কাছে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং রাশিয়ার একটি প্রাতিষ্ঠানিক নীতি, যা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত হচ্ছে।’ এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে।
এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত একটি বন্দিবিনিময় হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় রাশিয়ায় কারাবন্দি আমেরিকান নাগরিক ক্সেনিয়া কারেলিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র আর্থার পেত্রভ নামে এক রুশ-জার্মান নাগরিককে রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। এই বিনিময় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কারেলিনার বাগদত্তা ক্রিস ভ্যান হেরডেন এই মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে আরও কয়েকজন মার্কিন নাগরিক এখনও রাশিয়ার হেফাজতে আছেন, যাদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি তুরস্ক ও ইস্তাম্বুলে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কূটনৈতিক সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক পরিসরে এই নতুন আলোচনাপ্রবাহ ইউক্রেন সংকটের সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে, তবে এখনও বড় ধরনের অগ্রগতি অনিশ্চিত।