পুতিন নাকি ট্রাম্প: কার হাতে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির লাগাম
Published: 15th, March 2025 GMT
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, তাঁর দেশে দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতির কূটনৈতিক উদ্যোগ ‘নষ্ট’ করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগের আহ্বানও জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ শেষ করতে পরবে।
জেলেনস্কি বলেছেন, ‘শুরু থেকেই, এমনকি একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার আগেই পুতিন খুবই কঠিন ও অগ্রহণযোগ্য শর্ত আরোপের মাধ্যমে এই কূটনৈতিক উদ্যোগকে নষ্ট করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।’
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেছিলেন, তিনি যুদ্ধবিরতির এই উদ্যোগকে গ্রহণ করেছেন। তবে এর বিস্তারিত নিয়ে তিনি অসংখ্য প্রশ্ন তুলেছেন।
পুতিন কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ছয় মাস আগে ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়ার ওই অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল। রুশ বাহিনী পরে কুরস্ক অঞ্চলটি ইউক্রেনের দখলমুক্ত করে।
পুতিনের অভিযোগ, ইউক্রেনের বাহিনী কুরস্কের ‘বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ’ করেছে। পুতিনের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে কিয়েভ।
যুদ্ধবিরতির সুযোগে ইউক্রেন আবার সেনা জড়ো করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সেনাদের জন্য রসদ সংগ্রহ করার কাজ করবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পুতিন। যদিও তাঁর বাহিনীর ক্ষেত্রে একই সুযোগ গ্রহণের বিষয় নিয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলজুড়ে যুদ্ধবিরতি যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি না, তার নজরদারি ও পাহারা কীভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পুতিন।
আরও পড়ুনরাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: কীভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হতে পারে১৩ ঘণ্টা আগেরুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘২ হাজার কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে কেউ সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন করছে কি না এবং ঠিক কোথায় করছে, তা কে খুঁজে বের করবে? যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের দায়ই–বা কে নেবে?’
পরদিনই সাংবাদিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, আকাশে ও সমুদ্রে যুদ্ধবিরতি যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি না, তা দেখভাল করার জন্য ইউক্রেনই যথেষ্ট। তবে সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নজরদারি ও গোয়েন্দা সক্ষমতার প্রয়োজন পড়বে।
ইউক্রেন বিশ্বাস করে, পুতিন যেসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, সেগুলোর সমাধান করা সম্ভব; বরং বেশি কঠিন হবে পুতিনের অপছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে একটি সমঝোতায় আসা।
পুতিন বলেছেন, এই সংকটের মূলে যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলোর সমাধান করতে হবে। তিনি এ বক্তব্যের মাধ্যমে ন্যাটো জোটের বিস্তার নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা তুলে ধরেছেন। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের অস্তিত্ব নিয়েও পুতিনের আপত্তি আছে।
আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় মস্কো যাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা, পুতিন গেলেন কুরস্কে১৩ মার্চ ২০২৫এ কারণে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়াই একমাত্র পক্ষ, যারা যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ ভেস্তে দিতে চায়।’
তাহলে এখন কী হবে? সে সিদ্ধান্ত সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রকেই নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়াতে পারেন, যেমনটা ইউক্রেন চাইছে। এ জন্য তিনি রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন। অথবা ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বাড়াতে পারেন।
আবার এমনটা হতে পারে, ট্রাম্প রাশিয়াকে আরও বেশি ছাড় দিয়ে একটি চুক্তিতে রাজি হওয়ার প্রস্তাব দিলেন, কিয়েভ এই ভয়ই পাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বেশির ভাগ যোগাযোগ খুবই গোপনে হচ্ছে, যেখানে ইউক্রেনের ওপর প্রকাশ্যেই কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এ কারণেই জেলেনস্কি বারবার পুতিনের সময়ক্ষেপণের কৌশলের কথা উল্লেখ করে পশ্চিমাদের রাশিয়ার ওপর চাপ দিতে বলছেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্প নানা আন্তর্জাতিক বিষয়ে নিজের কূটনীতির বুলডোজার চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও তিনি একই চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতির জন্য যেসব দাবি মানতে হবে, তার তালিকা দিয়েছে রাশিয়া১৩ মার্চ ২০২৫কিন্তু এবার তাঁকে ক্রেমলিনের শক্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে এবং ক্রেমলিনকে বাগে আনা সম্ভবত কঠিন হবে।
ট্রাম্প দ্রুত যুদ্ধের অবসান চান। অন্যদিকে পুতিন চাইছেন, একটি বিস্তারিত ও মৌলিক সিদ্ধান্ত।
ট্রাম্প ও পুতিন দুজনই একগুঁয়ে এবং দুজনই নিজেদের পছন্দমতো কাজ করতে অভ্যস্ত। তাই কে পিছিয়ে আসেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুনইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে: ট্রাম্প৮ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র ক টন ত ক বল ছ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
হুমকি না থাকলেও বর্ষবরণে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। এ উৎসবকে ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি না থাকলেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাইজিংবিডিকে এ তথ্য জানান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা বটমূলসহ পুরো ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার প্রধান সড়ক থেকে অলি গলিতেও গোয়েন্দা নজরদারি করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।”
এদিকে, প্রতিবারের মতো এবারও নববর্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে সারা দেশে র্যাবের সব সদস্য নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় কাজ করছেন।
সকালে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “র্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হচ্ছে।”
তিনি জানান, র্যাব সারা দেশে ২২৪টি পিকআপ টহল, ১২২টি মোটরসাইকেল টহলসহ সর্বমোট ৩৪৬টি টহল ও সাদা পোশাকে ৪১৩ জন সহ সর্বমোট ২৪৪৯ জন র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোন উগ্রবাদী গোষ্ঠী, অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠন এবং রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কুচক্রী মহল যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে কোনো ধরণের নাশকতার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বৃদ্ধির মাধ্যমে নাশকতাকারীদের যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে র্যাব।”
ভার্চুয়াল জগতে নববর্ষকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের গুজব, উস্কানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি জানান।
ঢাকা/এমআর/ইভা