চিকিৎসার সকল আয়োজন ব্যর্থ করিয়া অনন্তলোকে গমন করিল ছোট্ট শিশু আছিয়া। গত ৫ মার্চ মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াইতে গিয়া বোনের শ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হইয়াছিল ৮ বৎসরের আছিয়া। তাহাকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হইলে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অবস্থার কোনো উন্নতি না হইলে ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত্রিতে অচেতন অবস্থায় তাহাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শেষমেশ ৮ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয় আছিয়াকে। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সেই হাসপাতালে মৃত্যুর সহিত তাহার অসম লড়াই সমাপ্ত হয়। স্বজনের হৃদয়ভাঙা আর্তনাদ এবং দেশ-বিদেশের কোটি মানুষের শোকের মধ্যে আছিয়া চিরনিদ্রায় শায়িত মাগুরার নিভৃত পল্লি শ্রীপুরের সোনাইকুন্ডিতে তাহার দাদার কবরের পার্শ্বে। পাশবিক ঐ ঘটনা সংবাদমাধ্যমের তরফে প্রকাশের পর হইতেই রাজধানীসহ সমগ্র দেশে বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়িয়াছিল বিশেষত তরুণ সমাজ। স্বাভাবিকভাবেই আছিয়ার মৃত্যু সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো বটেই, জনমানসেও ক্ষোভের আগুন উস্কাইয়া দেয়। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছিয়ার স্বজনের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ, তৎসহিত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হইয়া ওঠে। কার্যত আছিয়া এখন শিশু ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ‘মশাল’। 

সংশ্লিষ্ট ধর্ষক ও তাহার সহযোগীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জনদাবির প্রতি ইতোমধ্যে সরকারও একাত্মতা প্রকাশ করিয়াছে। আছিয়ার মায়ের দায়েরকৃত মামলার আসামিরা সকলে গ্রেপ্তারও হইয়াছে। বলা হইয়াছে, সপ্ত দিবসের মধ্যে উক্ত মামলার বিচারকার্য সূচিত হইবে। গত রবিবার আইন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলিয়াছেন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করিয়া তদন্তকাল হ্রাস করিয়া ৩০ দিবস হইতে ১৫ দিবস করা হইতেছে। আর ধর্ষণ মামলায় বিচারকার্য সম্পন্ন করিতে হইবে ৯০ দিবসের মধ্যে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আশা করা যায়, আছিয়া হয়তো ন্যায়বিচার পাইবে। কিন্তু তাহার মধ্য দিয়া কি এহেন বর্বরতার অবসান ঘটিবে? নিশ্চয়তা মিলিবে যে, এহেন পাশবিকতার আর পুনরাবৃত্তি হইবে না? অন্তত নারী-সম্পর্কিত প্রচলিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, তৎসহিত সংশ্লিষ্ট অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করিলে এমন ভরসা পাইবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। নারীও যে পুরুষের ন্যায় স্বাভাবিক মানুষ; তাহার অধিকার যে বিপরীত লিঙ্গের কাহারও অপেক্ষা কম নহে– দুর্ভাগ্যবশত এই ধারণার প্রভাব তৃণমূল তো দূরস্থান, এমনকি শিক্ষিত সমাজেও উল্লেখযোগ্য নহে। এই কারণেই আছিয়া ধর্ষণের বিষে জর্জরিত হইবার পর এই কথা প্রকাশের ‘অপরাধে’ তাহার ভগিনীকে স্বামী কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হইতে হয়। ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করিবার বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অনেকে উৎসাহ কম প্রদর্শনের কারণ নিহিত এখানেই। উপযুক্ত সাক্ষীর অভাবে বহু ধর্ষণ মামলায় অপরাধীর নিষ্কৃতির অন্যতম নেপথ্য কারণও ইহা। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ধার্যকরণের পরও এহেন অপরাধ আদৌ হ্রাস পাইতেছে না, বরং উহা ক্রমবর্ধমান। ৮ মার্চ প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসেই ১০৭ নারী ও কন্যাশিশু নিপীড়নের শিকার হইয়াছে। এক মাসে ৫৩ জন ধর্ষণের শিকার হইয়াছে, যাহাদের মধ্যে ৩৮ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। সাম্প্রতিক সময়ে ‘মব ভায়োলেন্স’-এর মাধ্যমে নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানির বাড়বাড়ন্ত অবস্থাও যে এহেন সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির ফসল, ইহা বলাই বাহুল্য।

তবে আছিয়াকে কেন্দ্র করিয়া বিশেষত তরুণ সমাজে যে জাগরণ ঘটিয়াছে, তাহা অব্যাহত থাকিলে পরিস্থিতির কিছুটা হইলেও পরিবর্তন ঘটিবে– এই প্রতীতি আমাদের আছে। এহেন সামাজিক সচেতনতা আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করিতে পারে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হইয় ছ র হইয় অপর ধ অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

২৩ কোটি রুপির চাপ টের পাচ্ছেন কলকাতা অলরাউন্ডার

ভেঙ্কটেশ আইয়ার কি দামের চাপ অনুভব করছেন? হ্যাঁ, বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার নিজেই চাপে থাকার কথা স্বীকার করছেন। ২৩ কোটি ৭৫ লাখ রুপি খরচে এবার তাঁকে দলে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। এই অলরাউন্ডারকে নিলামের জন্য না ছেড়ে ধরে রাখলেও এত টাকা খরচ করতে হতো না কলকাতার। স্বাভাবিকভাবেই পারফর্ম করার চাপ একটু বেশিই থাকবে আইয়ারের ওপর।

আইপিএল নিলামে দামি ক্রিকেটারদের নিয়ে আলোচনাটা একটু বেশিই হয়। ২০২৪ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলা মিচেল স্টার্কের (২৪.৭৫ কোটি) প্রতিটি ডেলিভারি পিছু খরচ ছিল ৯.৬৮ লাখ টাকার বেশি। প্রতিটি উইকেট পিছু খরচ ১.৪৫ কোটি টাকা। এটাকে চাপ বলুন বা আশীর্বাদ, মোটা দামের খেলোয়াড়দের জন্য প্রত্যাশার চাপ থাকেই। আইয়ারও এর ব্যতিক্রম নন।

টানা ১৩ মৌসুম পর ২০২৪ সালে কলকাতা তৃতীয় শিরোপা জেতে। যেখানে আইয়ারের বড় ভূমিকা ছিল। ব্যাট হাতে ১৫৮.৭৯ স্ট্রাইক রেটে ৩৭০ রান করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তবে মেগা নিলামে কৌশলের কারণে কলকাতা তাঁকে ছেড়ে দিয়ে পরিণামে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ রুপি খরচ করে!

দুই দিন আগে দলে যোগ দিয়েছেন আইয়ার

সম্পর্কিত নিবন্ধ