ভাষা নিয়ে ভাবাবেগ উসকে দেওয়ার পাশাপাশি তামিলনাড়ুর ডিএমকে মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন দ্বিতীয় মোক্ষম চালটি চেলেছেন সংসদের আসন বাড়ানোর বিরোধিতার মধ্য দিয়ে। আগামী বছর, ২০২৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার যদি বন্ধ থাকা জনগণনা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই অনুযায়ী সংসদীয় কেন্দ্রের সীমানা পুনর্বিন্যাস ঘটিয়ে আসন বৃদ্ধি হয়, তাহলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গোটা দাক্ষিণাত্য।

জনসংখ্যার অনুপাতে দক্ষিণের পাঁচ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত পদুচেরির আসন বাড়বে সবচেয়ে কম। সবচেয়ে লাভবান হবে হিন্দি বলয়; এতটাই যে দক্ষিণের সমর্থন ছাড়া স্রেফ হিন্দি বলয়ের রায়ের ওপর নির্ভর করে যেকোনো সর্বভারতীয় দল সরকার গড়তে পারবে।

বিষয়টি চর্চায় আছে অনেক দিনই। কিন্তু ঠিক এই সময়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ত্রিভাষা নীতি রূপায়ণের বিরোধিতার পাশাপাশি সংসদের আসন বৃদ্ধিকে স্ট্যালিন সামনে টেনেছেন রাজনৈতিক কারণেই। আগামী বছর তামিলনাড়ুর পাশাপাশি কেরালা বিধানসভারও নির্বাচন। হিন্দি আগ্রাসন ও সংসদের আসন বৃদ্ধির বিরোধিতাকে তিনি নির্বাচনী ইস্যু করতে চাইছেন।

হিন্দি নিয়ে তামিলনাড়ুর মতো এত তীব্র স্পর্শকাতরতা দক্ষিণের অন্য রাজ্যগুলোয় না থাকলেও সংসদের বহর বৃদ্ধি নিয়ে সবাই শঙ্কিত। লড়াইটাকে স্ট্যালিন তাই উত্তর বনাম দক্ষিণের দ্বন্দ্ব করে তুলতে চাইছেন। ইতিমধ্যে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে গৃহীত সর্বসম্মত প্রস্তাবের সুপারিশ, আগামী ৩০ বছর সংসদের আসন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা হোক।

স্ট্যালিন এক সর্বদলীয় অ্যাকশন কমিটিও গঠন করেছেন, যার কাজ হবে ওই প্রস্তাবের পক্ষে অন্য রাজ্যগুলোর সমর্থন আদায়। সে জন্য ২২ মার্চ বৈঠক ডেকেছেন। দেশের সাত মুখ্যমন্ত্রী ও তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে (চন্দ্রশেখর রাও, জগনমোহন রেড্ডি ও নবীন পট্টনায়ক) সেই বৈঠকে যোগ দিতে আমন্ত্রণপত্রও পাঠিয়েছেন। তাঁর কাছে এটা এসপার–ওসপার লড়াই।

প্রাথমিকভাবে স্ট্যালিন সফল। কংগ্রেস–শাসিত কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। কেরালাও আপত্তি করবে না। অন্ধ্র প্রদেশের ‘মোদি–মিত্র’ মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুকেও বাঁচতে হলে এই প্রবাহে গা ভাসাতে হবে। কারণ, অন্ধ্র প্রদেশের আসনসংখ্যাও বাড়বে নামমাত্র। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব ও ওডিশার মুখ্যমন্ত্রীরা পাশে দাঁড়ালে বিষয়টা শুধু আর বিজেপি বনাম বিরোধীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।

জনসংখ্যা, সংসদীয় আসন বৃদ্ধি ও জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি

ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় কোন রাজ্যের কত আসন থাকবে, তা নির্ধারিত হয়ে আসছে জনসংখ্যার নিরিখে। স্বাধীনতার পর ভারতের প্রথম জনগণনা হয়েছিল ১৯৫১ সালে। তখন জনসংখ্যা ছিল ৩৬ কোটি।

১৯৫২ সালে হয় লোকসভার প্রথম নির্বাচন। তখন আসন ছিল ৪৮৯টি। প্রতি ৭ লাখ ৩০ হাজার মানুষের জন্য একজন প্রতিনিধি। ১০ বছর পর দ্বিতীয় জণগননা ১৯৬১ সালে। জনসংখ্যা বেড়ে হয় ৪৪ কোটি। লোকসভার আসন বেড়ে হয় ৫২২। ৮ লাখ ৪০ হাজারের জন্য একজন প্রতিনিধি।

তৃতীয় জনগণনা ১৯৭১ সালে। জনসংখ্যা তখন ৫৪ কোটি ৮০ লাখ। প্রতি ১০ লাখে একজনের প্রতিনিধিত্ব। লোকসভার আসন বেড়ে হয় ৫৪৩, রাজ্যসভার ২৫০। সেটাই শেষ বৃদ্ধি।

তারপর নিয়মমতো প্রতি ১০ বছর অন্তর জনগণনা হয়েছে ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে। শেষ গণনায় জনসংখ্যা ১২১ কোটি ছুঁয়েছে। কিন্তু লোকসভার আসন ৫৪৩টিতেই আটকে আছে। ২০২১ সালে জনগণনা বন্ধ ছিল কোভিডের কারণে। সরকারি হিসাবে যদিও ভারত এখন ১৪০ কোটির দেশ।

আরও পড়ুনবিজেপির হিন্দি, হিন্দু ও হিন্দুস্তান নীতির ‘বিপদ’২১ ঘণ্টা আগে

১৯৮১ সালের পর ২০১১ পর্যন্ত চারবার জনগণনা সত্ত্বেও লোকসভার আসন না বাড়ার কারণ দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। ১৯৭৬ সালে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার সারা দেশে জননিয়ন্ত্রণের এক কর্মসূচি গ্রহণ করে। তিনি ভেবেছিলেন, ওই কর্মসূচি দেশের সর্বত্র জন্মহারে সামঞ্জস্য আনবে। জন্ম নিয়ন্ত্রণও হবে। ফলে সেই বছর সংবিধানের ৪২তম সংশোধন ঘটিয়ে বলা হয়, ১০ বছর অন্তর জনগণনা হবে কিন্তু লোকসভার আসনসংখ্যা আগামী ২৫ বছর বাড়বে না।

২০০১ সালে সংবিধানের ৮৪তম সংশোধন ঘটিয়ে সেই সময়সীমা আরও ২৫ বছর বাড়ানো হয়। অর্থাৎ ২০২৬ পর্যন্ত লোকসভার বহর অপরিবর্তিত থাকছে। তারপর জনগণনা ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ শেষে বাড়ানো হবে লোকসভা ও রাজ্যসভার আসন। তেমন ধরে নিয়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তৈরি করেছেন নতুন সংসদ ভবন। সেই ভবনে লোকসভার আসনসংখ্যা ৮৮৮। রাজ্যসভায় বসতে পারবেন ৩৮৪ জন।

এই পরিস্থিতিতে দুটি সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২১ সালের বন্ধ জনগণনা ২০৩১ সালে হলে সেই গণনার ভিত্তিতে লোকসভা কেন্দ্রের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। সেই অনুযায়ী সংসদের আসন বৃদ্ধি করা যাবে ২০৩৪ সালের লোকসভা ভোটের (যদি ধরে নেওয়া যায় সরকার পুরো ৫ বছর চলবে) সময়।

দ্বিতীয় সম্ভাবনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ২০১১ সালের জনগণনার ভিত্তিতে (১২১ কোটি) সীমান্ত পুনর্নির্ধারণ করা হবে, যাতে ২০২৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে লোকসভার আসন বাড়ানো যায়। গোটা দাক্ষিণাত্যের আপত্তি দুই ক্ষেত্রেই।

জনসংখ্যার অনুপাতে আসন বৃদ্ধিতে দক্ষিণের শঙ্কা

বছর ঘোরার আগেই স্ট্যালিন হিন্দির আগ্রাসন ও লোকসভার সম্ভাব্য আসন বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে কেন হইচই ফেলে দিয়েছেন, সেই ভোট–রাজনীতির ব্যাখ্যা আগেই করেছি। দ্রাবিড় জাত্যা ভিমান উসকে দিয়ে বিজেপির মোকাবিলা করে তিনি আরও একবার ক্ষমতাসীন হতে চান।

কিন্তু শুধু ভোটে জেতাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য নয়। জনসংখ্যার অনুপাতে লোকসভার আসন নির্ধারণ করা হলে (এযাবৎ যা হয়ে এসেছে) দক্ষিণের পাঁচ রাজ্যের বৃদ্ধি হবে নামমাত্র। তুলনায় অনেক বেশি বাড়বে হিন্দি বলয়ের আসনসংখ্যা। এতটাই বাড়বে যে বিজেপির মতো সর্বভারতীয় দলের পক্ষে দক্ষিণের সমর্থন ছাড়াই সরকার গড়া সম্ভবপর হবে। সেটা যেমন হবে সরকারি নীতি রূপায়ণে হিন্দি বলয়ের ব্যর্থতাকে পুরস্কৃত করা, তেমনি তা সাফল্যের জন্য দাক্ষিণাত্যের শাস্তি হিসেবে গণ্য হবে।

স্ট্যালিন এটাই বড় করে তুলে ধরে বলছেন, জননিয়ন্ত্রণ নীতি সাফল্যের সঙ্গে রূপায়িত হয়েছে বলে দাক্ষিণাত্য শাস্তি পেতে পারে না। উত্তরের রাজ্যগুলোতে হু হু করে জনসংখ্যা বেড়েছে; কারণ, জন্মনিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ। সেই ব্যর্থতার পুরস্কার তারা পাবে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে। অথচ দক্ষিণ শাস্তি পাবে, এটা অন্যায় ও অসহনীয়। এর ফলে জাতীয় রাজনীতিতে গোটা দাক্ষিণাত্য অপ্রাসঙ্গিক ও এলেবেলে হয়ে পড়বে।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকে বঞ্চনার প্রতিবাদে গোটা দাক্ষিণাত্যের নেতৃত্ব নিতে স্ট্যালিন এগিয়ে এসেছেন। তামিল আবেগ উসকে দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যবাসীকে তাঁর পরামর্শ, যত পারুন সন্তান উৎপাদন করুন। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি, কর্ণাটকের সিদ্দারামাইয়া ও কেরালার পিনারাই বিজয়নের সমর্থন তিনি পাচ্ছেন। আবেগ ভাসিয়ে দিলে অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুও পিছিয়ে থাকবেন না। ‘পাউরুটির কোন দিকে মাখন লেগে আছে’, তা তিনি বিলক্ষণ বোঝেন।

বিষয়টি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বুঝে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন এই বলে যে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হলেও আনুপাতিক হারে দক্ষিণের আসন কমবে না। স্ট্যালিন পাল্টা জানতে চেয়েছেন, বাড়বে কি? বাড়লেও কতটা? উত্তরের মতো? সে জবাব কিন্তু আসেনি।

আনুপাতিক হারের অর্থ কী, জনসংখ্যা বৃদ্ধির আনুপাতিক হার নাকি লোকসভার মোট আসনের সঙ্গে রাজ্যের আসনের অনুপাত, সে ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু দেননি। সংশয় বাড়িয়েছে তাঁর সেই নীরবতাও।

জনসংখ্যার নিরিখে লোকসভার সম্ভাব্য চিত্র

জনসংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এত দিন লোকসভার বহর বৃদ্ধি যেভাবে ঘটানো হয়েছে, তা অপরিবর্তিত থাকলে এক রকম, না হলে অন্য রকম। প্রথমবার, ১৯৫১ সালের গণনার পর, প্রতি ৭ লাখ+ জনগণের প্রতিনিধি ছিলেন একজন সংসদ সদস্য। দ্বিতীয়বার তা বেড়ে হয় প্রতি ৮ লাখ+ জনগণের জন্য একজন প্রতিনিধি।

তৃতীয়বার ১৯৭১ সালে একজন সংসদ সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেন ১০ লাখ+ মানুষের। চতুর্থবার কতজন মানুষপিছু একজন সংসদ সদস্য হবেন? কেউ এখনো তা জানে না। এটা হলো জনসংখ্যার অনুপাতে আসন বাড়ানোর ফর্মুলা। অন্য ফর্মুলা হতে পারে লোকসভার মোট আসনের সঙ্গে প্রতি রাজ্যের আসনের অনুপাত অনুযায়ী আসন বৃদ্ধি।

১৯৭১ সালের জনসংখ্যার হার ও রাজ্যওয়ারি আসন বণ্টনের যে হিসাব, সেটা যদি আনুপাতিক হার হয়, তাহলে জনসংখ্যা যা–ই হোক, রাজ্যের আসনপ্রাপ্তির আনুপাতিক হার একই থাকবে। যেমন এখন তামিলনাড়ুর ভাগে রয়েছে লোকসভার মোট আসনের ৭ শতাংশ। দাক্ষিণাত্যের পাঁচ রাজ্যের রয়েছে ২৪ শতাংশ আসন।

ভবিষ্যতে সেই হার অপরিবর্তিত থাকবে কি? এখনো কেউ তা জানে না। কারণ, অর্ধশতাব্দী ধরে সেই প্রশ্ন ওঠেইনি। তা ছাড়া সরকার এখনো এ নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেনি।

তবে জনসংখ্যার হারের সঙ্গে মিলিয়ে আসন বাড়ানো হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের একাংশ একেক ধরনের হিসাব দিয়েছেন। কারও মতে, এর ফলে তামিলনাড়ুর আসন ৩৯ থেকে বেড়ে হবে ৪১, কর্ণাটকের ২৮ থেকে বেড়ে হবে ৩৬, তেলেঙ্গানার ১৭ থেকে ২০, অন্ধ্র প্রদেশের ২৫ থেকে ২৮। কেরালা (২০) ও কেন্দ্রশাসিত পদুচেরির আসন (১) অপরিবর্তিত থাকবে। বাড়বেও না কমবেও না। মোট আসন ১৩০ থেকে বেড়ে হবে মাত্র ১৪৪।

তুলনায় উত্তর প্রদেশের আসন ৮০ বেড়ে হবে ১২৮, বিহারের ৪০ হবে ৭০, মধ্যপ্রদেশ ২৯ থেকে ৪৭, মহারাষ্ট্র ৪৮ থেকে ৬৮, রাজস্থানের আসন ২৫ থেকে বেড়ে হবে ৪৪। দিল্লির ৭ আসন বেড়ে হবে ১২, পশ্চিমবঙ্গের পাওনা ৪২ থেকে বেড়ে ৬০।

অন্য হিসাবে উত্তর প্রদেশের আসন বেড়ে হবে ১৪৩। উত্তর প্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান থেকেই লোকসভায় আসবেন ৩২৪ জন। লোকসভার মোট আসন দাঁড়াবে ৮৪৮।

যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাংক ‘কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’–এর ফর্মুলা অনুযায়ী লোকসভার আসন হবে ৮৪৬। দাক্ষিণাত্যের ভাগ ১৩০ থেকে বেড়ে হবে ১৬৫।

ফর্মুলা যা–ই হোক, মোদ্দাকথা, দক্ষিণের সাহায্য ছাড়াই উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের দল হেসেখেলে সরকার গড়তে পারবে।

নরেন্দ্র মোদির বিজেপি আজ কিংবা আগামীকালের জন্য রাজনীতিটা করে না। তারা প্রতিটি পদক্ষেপ নেয় ক্যানভাসে সুদূর অতীতের ছবি এঁকে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার, অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের উদ্যোগের দিকে তাকালে তা স্পষ্ট হবে। তা না হলে কোভিডের সময় নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত তারা নিত না।

উগ্র হিন্দুত্ববাদের ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ চূড়ান্ত করে হিন্দি বলয়ে জাঁকিয়ে বসে আরও বহুকাল দেশ শাসনের পাকাপাকি বন্দোবস্তের এমন উত্তম সুযোগ হারানোর পাত্র আর যে–ই হোন, নরেন্দ্র মোদি নন। বিপদঘণ্টি অবশ্য বাজতে শুরু করেছে।

দক্ষিণকে অচ্ছুত করে উত্তরের শাসন কায়েম হয়তো সম্ভব, কিন্তু দেশটা কি তাহলে এক থাকবে? দক্ষিণকে অশান্ত রেখে উত্তর কি শান্তিতে থাকতে পারবে? বৈচিত্র্যপূর্ণ ঐক্যবদ্ধ ভারতের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রশ্নটা বড়ই জটিল।

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল কসভ র ম ট আসন ল কসভ র আসন ম খ যমন ত র আসন ব ড় ন র আসন ব ড় র জন য অন য য় ফর ম ল র জন ত সরক র আসন র

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মতো শিল্পপতিদেরই চায়

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুসংবাদ আমাকে খুবই ব্যথিত করেছে। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। তিনি ছিলেন দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং তাঁর দক্ষতা ও নীতিনিষ্ঠা সর্বজনবিদিত। সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা ছিল। শুধু তা–ই নয়, দুবার (১৯৯৬ ও ২০০১) তিনি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি নিয়ে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সুস্পষ্ট ধারণা ছিল। তিনি ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাঁর নানামুখী প্রজ্ঞা রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনেক সহায়ক ছিল। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে  সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) পরিচালক ছিলেন। ব্যাংক খাতের উন্নতি, এ খাতের সুশাসন, খেলাপি ঋণের হার নিয়ন্ত্রণে তাঁর পরামর্শ আমরা কাজে লাগিয়েছি। এ ছাড়া বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী ফোরাম এমনকি বাজেট প্রণয়নেও তাঁর জ্ঞানগর্ভ সুপারিশ অর্থ মন্ত্রণালয় পেয়েছে বলে জানতে পেরেছি।

সানবিমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ শিক্ষা খাত এবং বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তাঁর সঙ্গে সামাজিক ফোরামে যখনই দেখা হয়েছে, আমি দিলখোলাভাবে কথা বলেছি, গল্প করেছি। তিনি ছিলেন একজন অমায়িক ও পরিশীলিত ভদ্রলোক।

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরকে অ্যাপেক্স গ্রুপের দায়িত্ব দিয়েছেন অনেক আগেই। এটাও তাঁর একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। এবার যখন অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন, আমি খোঁজ নিয়েছি। আশা ছিল, সুস্থ হয়ে ফিরে দেশে ফিরে আসবেন।

ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়া, কাগজপত্রের ভিত্তিতে ব্যাংকঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা, বিদেশে অর্থ পাচার করা ইত্যাদি কাজ করে থাকেন দেশের একশ্রেণির ব্যবসায়ী। এর বিপরীতে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মতো শিল্পপতিরাও তৈরি হয়েছেন, যাঁরা দেশের সম্পদ। এ ধরনের শিল্পপতিদেরই বাংলাদেশ চায়। আমি মনে করি কর্ম, নিষ্ঠা, সাফল্য ও সততার দিক থেকে যেকোনো ব্যবসায়ী বা শিল্পপতির জন্যই আদর্শ হতে পারেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী।

লেখা: সালেহউদ্দিন আহমেদ, অর্থ উপদেষ্টা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ার রাস্তা পারাপারের সময় ট্রাকচাপায় একজন নিহত
  • জয়া আহসান আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন: আশফাক নিপুণ
  • প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা শিবিরে যাচ্ছেন আজ
  • বাড়ি তো নয়, যেন উদ্যান
  • সাত বছর ধরে হাতে লিখে পত্রিকা বের করছেন একজন দিনমজুর 
  • অস্ত্রধারীরা যাত্রীদের দলে দলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করছিল: প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
  • কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি-সদস্যদের সম্মানী বন্ধ, শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর
  • সব প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন তিনি
  • বাংলাদেশ সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মতো শিল্পপতিদেরই চায়