চুল কেন পাকে

সাধারণত ২০-৩০ বছর বয়সের আগে চুল পাকলে অকালে চুল পাকা বলে ধরা হয়। চুল পাকে মূলত মেলানিন উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে। এই মেলানিন একধরনের প্রাকৃতিক রঞ্জক, যা আমাদের ত্বক, চুল ও চোখের রং নির্ধারণ করে। ব্রিটিশ জার্নাল অব ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৫-৬৫ বছর বয়সে ৭৪ শতাংশ মানুষেরই চুলে পাক ধরে। আর এ সময়ের মধ্যে পেকে যায় মাথার ২৭ ভাগ চুল। তবে ব্যক্তিভেদে তারতম্য তো হয়ই। প্রশ্ন হলো অকালে কেন চুল পাকে? এর পেছনে লুকিয়ে থাকা কারণগুলো কী?

১.

বংশগত কারণ

অকালে চুল পাকার একটি বড় কারণ জিনগত প্রভাব। ডার্মাটোলজির ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও ‘ফরগেট দ্য ফেসলিফট’ বইয়ের লেখক ডরিস ডে বলেন, ‘আপনার মা–বাবার চুল অল্প বয়সে পেকে গেলে আপনার ক্ষেত্রেও তেমনটা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।’ এ ছাড়া ২০১৬ সালে নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি নির্দিষ্ট জিনের কারণে অকালে চুল পেকে যায়।

২. অটোইমিউন রোগের প্রভাব

কিছু নির্দিষ্ট রোগ অকালে চুল পাকার কারণ হতে পারে। অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়াটা নামের এক অটোইমিউন রোগের কারণে চুলের নির্দিষ্ট অংশ পড়ে যেতে পারে। আবার সেখানে নতুন চুল গজালে, তা সাদা বা ধূসর হয়ে গজাতে পারে। ন্যাশনাল অ্যালোপেসিয়া অ্যারিয়াটা ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাথার নির্দিষ্ট অংশে গোলাকার এবং মসৃণ চুলহীন অংশ তৈরি হয়। অনেক সময় পুরো মাথার বা শরীরের সব চুলও ঝরে যেতে পারে। ডরিস ডে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই রোগ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা চুলের ফলিকলগুলোর ওপর আক্রমণ করে। ফলে চুল পড়ে যায়। নতুন চুল গজালে তা সাদা হয়ে যায়।’ হঠাৎ চুল পড়া বা টাক পড়ার সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই কোনো চর্মবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন৩০ বছরেই টাক পড়ছে? প্রতিকার জেনে নিন২৮ জানুয়ারি ২০২৫৩. দূষিত পরিবেশের প্রভাব

পরিবেশের দূষণও অকালে চুল পাকার একটি বড় কারণ হতে পারে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের তথ্যমতে, বায়ুদূষণ এবং বিষাক্ত পদার্থ চুলের মেলানিন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। এতে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়, যাতে অকালে চুল ধূসর হয়ে যায়। এ ব্যাপারে ডক্টর ডে বলেন, ‘চুল একবার ফলিকল থেকে বেরিয়ে গেলে তা মৃত কোষে পরিণত হয়। তাই ফলিকলের স্তরে পৌঁছানো বিষাক্ত উপাদানগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। যদিও পরিবেশগত বিষয়ের প্রভাবও রয়েছে, তবে মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের প্রভাব আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

৪. অতিরিক্ত চাপের প্রভাব

প্রচণ্ড চাপ কি সত্যিই অকালে চুল পাকার কারণ হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আছে ভিন্নমত। তবে ডরিস ডে মনে করেন, স্ট্রেস জিনগত প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চুলের পরিবর্তনের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি। মার্কিন মুলুকের দায়িত্ব নেওয়ার সময় বারাক ওবামার চুল ছিল গাঢ় কালো, কিন্তু পাঁচ বছর পর তা সম্পূর্ণ ধূসর হয়ে গিয়েছিল। শুধু চাপের কারণে অকালে চুল পাকে না বটে; তবে জিনগতভাবে অকালে চুল পাকার প্রবণতা থাকলে অতিরিক্ত মানসিক চাপ তা আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। মানে আপনার মা–বাবার অল্প বয়সে চুল পাকলে এবং আপনি বেশি মানসিক চাপে থাকলে আপনার চুল অকালে পেকে যেতে পারে।

আরও পড়ুনমাথার চুল পড়ে যাচ্ছে? ব্যবহার করুন রোজমেরি তেল, দেখুন জাদু১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫৫. ধূমপানের প্রভাব

আপনি ধূমপান করুন বা ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকুন—উভয় ক্ষেত্রেই অকালে চুল পাকার ঝুঁকি বাড়ে। ইন্ডিয়ান ডার্মাটোলজি অনলাইন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে অকালে চুল পাকার হার আড়াই গুণ। কারণ, ধূমপানের ফলে প্রচুর ফ্রি-র‌্যাডিক্যাল উৎপন্ন হয়, যা চুলের মেলানিন উৎপাদন ব্যাহত করে। তাই চুলের স্বাভাবিক রং ধরে রাখতে ধূমপান ত্যাগ করা জরুরি। যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের আশপাশে থাকাও ক্ষতিকর।

৬. হরমোনের পরিবর্তন

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নানা হরমোনের পরিবর্তন হয়। এসব হরমোন চুলের রং, ঘনত্ব ও টেক্সচারে প্রভাব ফেলে। মোটামুটি ৩০ বছর বয়সের পর থেকে অনেকেই এসব পরিবর্তন লক্ষ করতে শুরু করেন। বিশেষজ্ঞরা এখনো নিশ্চিত নন যে কীভাবে ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এবং কর্টিসল হরমোন চুল পাকার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। তবে এটি শুধু বয়সের বিষয় নয়। ৫০ বছর বয়সেও অনেক নারীর মাথায় সাদা চুল দেখা যায় না। তার মানে জিন, পরিবেশ এবং হরমোন—এই তিনটি একত্রে চুল পাকার সময় নির্ধারণ করে।

৭. বয়সের কারণ

আপনি চাইলেও চুলের স্বাভাবিক বয়সজনিত পরিবর্তন এড়াতে পারবেন না। চুলের রং নির্ধারণকারী মেলানিন উৎপাদন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের তথ্যানুসারে, ৩০ বছর বয়স পার হওয়ার পর প্রতি ১০ বছরে চুল পাকার হার ১০-২০ শতাংশ বেড়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে এটি ধীরে হয়, আবার কারও কারও বেলায় তুলনামূলক দ্রুত চুল পেকে যায়। তবে সবার চুলই একসময় পেকে যায়, শুধু আগে আর পরে।


সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনযা খেলে অকালে চুল পাকা থামাতে পারবেন০৭ জুলাই ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর বয়স পর ব শ হরম ন আপন র বয়স র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে, বললেন ওয়াসিম আকরাম

দাপটের সঙ্গে অপরাজিত থেকে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে ভারত। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলা ভারতের কাছে গতকাল ফাইনালে ৪ উইকেটে হেরেছে নিউজিল্যান্ড। তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর প্রশংসায় ভাসছে ভারত ক্রিকেট দল।

তবে প্রশংসার কারণ যে শুধু একটা টুর্নামেন্ট জয়ের নয়, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। মূলত লম্বা সময় ধরে গড়ে তোলা ক্রিকেট-সংস্কৃতির ফলই এখন পাচ্ছে ভারত। ভারতের ক্রিকেট-সংস্কৃতিটা কেমন, সেটাই গতকাল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল শেষে কিছুটা জানালেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম।

গতকাল এক টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে আকরাম বলছেন, ভারত ক্রিকেট মঞ্চে বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই পেসার মনে করেন, ‘এখন সবাইকে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে হবে। মানসিকভাবে তারা অন্য সব দলের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এ জন্য দলের সঙ্গে যারা জড়িত, সবাইকে কৃতিত্ব দিতে হবে, বিসিসিআইসহ সবাইকে। সেখানে যে ব্যক্তিই পদে আসুক, তারা নিজেদের প্রক্রিয়াগত জায়গায় কোনো পরিবর্তন আনে না।’

আরও পড়ুনশামির মায়ের পা ছুঁয়ে পৃথিবীকে চ্যালেঞ্জ কোহলির৯ ঘণ্টা আগে

ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) কীভাবে কাজ করে, সেটা ব্যাখ্যা করে আকরাম যোগ করেন, ‘তাদের বোর্ড থেকে যখন কোনো চেয়ারম্যান বা সচিব বিদায় নেন, তাঁরা নিশ্চয়ই সবকিছু লিখিত আকারে দিয়ে যান। বলে যান, তাঁদের হাতে কী প্রজেক্ট ছিল, কীভাবে সেসব চালাতে হবে সব। সেখানে (বোর্ডে) নিচের স্তরে কোনো পরিবর্তন আসে না। ওপরের স্তরেই শুধু বদল আসে। নিচে যারা কাজ করে, তারা তেমনই থাকে।’

পাকিস্তান কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ