কুরস্কে আরো ৩ এলাকা পুনরুদ্ধারের দাবি রাশিয়ার
Published: 10th, March 2025 GMT
কুরস্কে ইউক্রেনের দখলে থাকা আরো তিনটি এলাকা পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে রাশিয়া। সাত মাস ধরে ইউক্রেনের দখলে থাকা কুরস্ক অঞ্চল পুনরুদ্ধারে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সোমবার (১০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কুরস্কের সুদজা শহরের কাছে তিনটি এলাকা রুশ বাহিনী পুনরুদ্ধার করেছে।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়াকে সামলানো সহজ: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে: ইউক্রেন
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, রাশিয়ার সেনা কুরস্ক থেকে ইউক্রেনের সেনাকে পিছনে পাঠাচ্ছে।
রুশপন্থি সামরিক ব্লগার ইউরি পোদোল্যাকা জানিয়েছেন, রুশ বিশেষ বাহিনী একটি সরু গ্যাস পাইপলাইনের ভিতর দিয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার অগ্রসর হয় এবং সেখানে কয়েক দিন অবস্থান করে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে চমকে দিয়ে সুদজা এলাকায় আক্রমণ চালায়।
আরেক রুশপন্থি ব্লগার টু মেজর্স জানিয়েছেন, সুদজা এলাকায় বড় ধরনের সংঘর্ষ চলছে। সেখানে রুশ বাহিনী গ্যাস পাইপলাইনের পথ ব্যবহার করে আকস্মিকভাবে ইউক্রেনীয় সেনাদের ওপর আঘাত হানে।
গত বছরের আগস্টে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের প্রায় এক হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়। ভবিষ্যতের আলোচনায় দর কষাকষির সুযোগ লাভের জন্য এবং রাশিয়াকে পূর্ব ইউক্রেন থেকে সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য করার একটি প্রচেষ্টা ছিল এটি।
রাশিয়া সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কিছুটা সাফল্যের সাথে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ওপেন সোর্স মানচিত্রে দেখা গেছে, দ্রুত রুশ অগ্রগতির পর কুরস্কে কিয়েভের সেনাদের প্রায় ঘিরে ফেলা হয়েছে।
২৮ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে একটি বৈঠকে তীব্র বাদানুবাদ হয়। এরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সাথে সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি বন্ধ করে দেয়। এই সুযোগে রাশিয়ার সেনাদের ইউক্রেনীয়দের ওপর আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাশিয়ার ব্লগারদের রিপোর্ট বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে আলোচনায় বসার আগে কুরস্ক থেকে ইউক্রেনের সেনাকে সরাতে চাইছে রাশিয়া।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউক র ন য ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
চীন ও ইউরোপ কীভাবে মার্কিন শুল্ক ঝড় রুখবে
অ্যাডাম স্মিথের লেখা বিখ্যাত বই দ্য ওয়েলথ অব ন্যাশনস অর্থনীতির জগতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল। স্মিথ বলেছিলেন, ভাগ ভাগ করে কাজ করলে উৎপাদন ও দক্ষতা বাড়ে। দেশগুলোর মধ্যেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য। যে দেশ যেটা সবচেয়ে ভালো করতে পারে, সেটাই উৎপাদন করবে এবং অন্য দেশের সঙ্গে বিনিময় করবে। কিন্তু শুল্ক বা ট্যারিফের মতো বাধাগুলো এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, অর্থনীতিকে করে তোলে অকার্যকর এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষতিই বেশি হয়।
এই সুপ্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও শুল্কনীতির পক্ষে সওয়াল করছেন। তিনি দাবি করেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ‘আমেরিকাকে আবার মহান’ করে তোলা যাবে। ট্রাম্পের ‘পারস্পরিক শুল্কনীতি’ অনুযায়ী, যেসব দেশ আমেরিকান পণ্যে শুল্ক বসায়, তাদের পণ্যের ওপর আমেরিকাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। এতে নাকি আমেরিকার শিল্প এবং চাকরি রক্ষা পাবে এবং রাজস্বও বাড়বে।
শুল্ক আসলে কী করেকিন্তু বাস্তব চিত্রটা ভিন্ন। শুল্ক মূলত ভোক্তা ও ব্যবসার ওপর একধরনের করের মতো কাজ করে। এতে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ে, যার ফলাফল হয় মূল্যস্ফীতি। যেসব শিল্প বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহার করে, তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় আর এই বাড়তি খরচ পড়ে সাধারণ ক্রেতার ঘাড়ে। অন্যদিকে প্রতিশোধমূলক শুল্ক বসিয়ে অন্যান্য দেশও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। ফলে মার্কিন রপ্তানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিদেশি বাজার হারায় এবং এর প্রভাবে চাকরি হারান বহু মানুষ। এককথায়, সাময়িক যে রাজস্ব আসে, তা এই আর্থিক ক্ষতির তুলনায় নেহাতই সামান্য।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এই ‘পারস্পরিক শুল্কনীতি’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রাজিল এবং ভারতকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের মূল লক্ষ্য ইউরোপের এমন সব খাত, যেগুলোর প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান অনেক শক্তিশালী। বিশেষ করে ইউরোপের গাড়িশিল্প এই শুল্কের বড় শিকার হতে পারে।
সেই সঙ্গে যন্ত্রপাতি, ওষুধ এবং মহাকাশপ্রযুক্তি—এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতও মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে শুল্কসংক্রান্ত উত্তেজনা চলতে থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।
সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক সহযোগিতা ও মুক্তবাণিজ্যের বদলে যদি দেশগুলো একে অপরের ওপর শুল্ক চাপিয়ে দেয়, তাহলে ক্ষতিটা সবারই হবে।
আরও পড়ুনবিশ্ব চালাবে কে—চীন নাকি ইউরোপ২০ ঘণ্টা আগেইউরোপ যে ঝামেলায় পড়েছেএই মুহূর্তে ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতারা কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। একদিকে বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদনে চীন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপও ক্রমেই বাড়ছে। চীনা কোম্পানিগুলোর উদ্ভাবন ও উৎপাদনদক্ষতা ইউরোপীয় গাড়িশিল্পের জন্য একটা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ইউরোপ এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।
এর মধ্যে আরও চাপ তৈরি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বড় বড় ইউরোপীয় কোম্পানিকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনকেন্দ্র সরিয়ে আনার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাঁর যুক্তি, এতে আমেরিকায় চাকরি তৈরি হবে এবং অর্থনীতি মজবুত হবে।
অথচ ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ থেকে আসা শিক্ষিত পেশাজীবীদের অভিবাসনের মাধ্যমেও যুক্তরাষ্ট্র অনেক লাভবান হচ্ছে। ইলন মাস্কের কথাই ধরা যাক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বড় হয়েছেন, পড়ালেখা করেছেন কানাডায় এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে এসে টেসলা ও স্পেসএক্সের মতো বৈপ্লবিক কোম্পানি গড়ে তুলেছেন।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট, চীনা প্রধান মন্ত্রী ও ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট বেইজিং-এ এক সংবাদ সম্মেলনে, জুলাই ২০১৮