গাইবান্ধা শহরে কুলির কাজ করেন সদর উপজেলার পূর্ব কোমরনই মিয়াপাড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। কাজকর্ম তেমন না থাকায় অতিরিক্ত আয়ও হয়না। তবুও কষ্ট করে ৭০ থেকে ৮০ টাকার ইফতার কিনতে হয়। তা দিয়েই চলে পরিবারের চারজনের ইফতার। 

শুধু জাহিদুল ইসলাম নন, তার মতো আরও অনেক মানুষের আয় কমে যাওয়ায় এবার তাদের অনেকেই  ইফতার সামগ্রী কিনতে পারছেন না। 

সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া প্রায় প্রত্যেক পেশাজীবির আয় কমেছে। এর মধ্যে দিনমজুর, অটোভ্যান-রিকশা চালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অন্যতম। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির তুলনায় তাদের আয় বাড়েনি, বরং কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে পবিত্র রমজান মাসের ইফতার সামগ্রী বিক্রির দোকানেও।

গাইবান্ধা ডিবি রোডের রড সিমেন্টের দোকানে কুলির কাজ করেন শফিকুল ইসলাম। সারাদিনে আয় করেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, “এই টাকা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। ইফতার কিনবো কিভাবে? এবছর এক দিনও ইফতার কিনিনি। ভাত-তরকারি দিয়েই ইফতার করি।” 

ডিবি রোডের কাচারি বাজার এলাকায় সড়কের পাশে ভ্রাম্যমাণ ইফতার বিক্রেতা শুভ মিয়া। তিনি বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর বেচা-বিক্রি অনেক কম। গত বছর সারাদিনে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার ইফতার বিক্রি করেছিলাম। এ বছর ৩ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষের হাতে টাকা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যও ভালো না।” 

মাঠ বাজার এলাকার আজাদ মিয়া জর্জ কোর্টে চাকরি করেন। বিকেলে ইফতার কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, “আগের মতো আর ইফতার কিনতে পারিনা। এখন বুট, বুন্দিয়াসহ তিন-চারটা আইটেম ৮০ টাকায় কিনেছি। বাসায় মুড়ি আছে, এসব দিয়েই পরিবারের সবাই ইফতার করবো।” 

তিনি বলেন, “চাল, ডাল, তেল, মাছ-মাংসসহ  নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুরই দাম বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। সবকিছু কেমন যেন থমকে আছে। যারা ব্যবসা করেন, তারাও ভালো নেই। তাই, ইফতারের পিছনে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।” 

রমজানে শহরের ডিবি রোড, স্টেশন রোড, পার্ক মোড়, কাচারি বাজার, পুরাতন বাজার মোড়, জেলা পরিষদ মোড়, হাসপাতাল রোড, বাস টার্মিনাল, খন্দকার মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বসেছে অস্থায়ী এসব ইফতার সামগ্রীর দোকান।

ইফতারের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১০০ গ্রাম ছোলা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, বেগুনি ৫ টাকা, পিঁয়াজু ৫ টাকা, প্রতি পিস জিলাপি আকার ভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা, চিংড়ির বড়া ১০ টাকা, গ্রিল চিকেন সিঙ্গেল ৮৫ টাকা, বুন্দিয়া ১০০ গ্রাম ১৫ টাকা, খাসির কার্টলেট ৩০ টাকা, চিকেন ফ্রাই কোয়ার্টার ১২০ টাকা, হালিম হাফ ৮০ টাকা, চিকেন বিরানি ১৫০ টাকা, খাসির কাচ্চি ১৫০ টাকা, বিফ রোল ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

ভ্রাম্যমান ইফতার বিক্রেতা ডি বি রোডের সিয়াম বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি কমেছে। গত বছর রোজার শুরু থেকেই ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার ইফতার বিক্রি করেছি। এবছর ছয় রোজা পার হলেও একদিনে ৫ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে না।” 

সদর উপজেলার মিয়াপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম রড সিমেন্টের দোকানে কুলির কাজ করেন। সারাদিনে আয় করেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। তিনি জানান, এই টাকা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। ইফতার কিনবো কিভাবে? 

রড সিমেন্টের দোকানে কাজ করেন শহরের মিতালিবাজার এলাকার কবির মিয়ার ইফতার কেনার সামর্থ্য নেই 

শহরের মিতালিবাজার এলাকার ভ্যানচালক কবির মিয়া। বিভিন্ন দোকানে কুলির কাজ করেন। তিনি বলেন, “আগের মতো আয়, রোজগার নাই। এখন সারাদিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কামাই করি। ইফতার কেনার সামর্থ্য নেই। ভাত খেয়েই ইফতার করি।”

শহরের বড় মসজিদ এলাকার ভ্রাম্যমাণ ইফতার বিক্রেতা বাদশা মিয়া গত বছর ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ইফতার বিক্রি করতেন। এ বছর ৩ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারছেন না তিনি। 

বিক্রেতা বাদশা মিয়া বলেন, “এবছর যে বেচা-বিক্রি হচ্ছে, তাতে করে দোকানের কর্মচারীদের বেতন দিতেই শেষ। আগে কখনো এত কম বিক্রি হয়নি। ব্যবসার অবস্থা একেবারেই খারাপ।”

ঢাকা/মাসুম/টিপু

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ল র ক জ কর ন ইফত র ব ক র ব জ র এল ক ইফত র ক ন র ইফত র ল ইসল ম গত বছর এল ক র এ বছর ব যবস শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষের শোভাযাত্রায় ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি’ গাইবেন ২০০ ব্যান্ড তারকা

সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ও নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, নববর্ষের এবারের শোভাযাত্রার থিম হবে কৃষক, যা বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকদের প্রতি সম্মান জানাতে চিহ্নিত করা হবে। এটি কৃষকের অবদান ও তাদের সংগ্রামকে স্বীকৃতি প্রদান করবে।

এবার বাংলা নববর্ষে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের জন্য শান্তি কামনা করে উৎসব উদযাপন হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।  বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার কক্ষে চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, 'বিশ্বের একটা দেশ ফিলিস্তিন। সেখানে যেভাবে গণহত্যা চলছে, এই পরিস্থিতিতে শুধু দেশের জন্য শুভকামনা করে নববর্ষ উদযাপন করতে পারি না। তাই আমরা সারাবিশ্বের শান্তি কামনা করে এবারের নববর্ষ বা বৈশাখের অনুষ্ঠান উদযাপন করব।'

ফারুকী বলেন, এবারের শোভাযাত্রায় ২০০ জন বাংলাদেশ ব্যান্ড তারকা উপস্থিত থাকবেন। সেখানে 'ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি' গান গেয়ে শোভাযাত্রা শুরু হবে। আশা করছি ৫০০ মিউজিশিয়ান এতে যোগ দেবেন।

তিনি বলেন, 'সারাদেশে নানাবয়সী মিউজিশিয়ানরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারা তাদের গিটার ও একটি প্যালেস্টাইনের পতাকা নিয়ে নববর্ষে সারা বিশ্বের জন্য শান্তি কামনা করে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারেন।'

এছাড়াও শোভাযাত্রায় যারা মিউজিশিয়ান আছেন, তাদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানস ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানসের পক্ষ থেকে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য শেখ মনিরুল আলম টিপু বলেন, চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষকে কেন্দ্র করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহ আশাবহ। এবছর চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষের শোভাযাত্রা আরো বড় পরিসরে ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে কিছু আকর্ষণীয় ও ভিন্ন আয়োজন রয়েছে যার অন্যতম তারুণ্য নির্ভর ব্যান্ড সংগীতের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি আর সময়োপযোগী ও ভিন্ন কিছু বার্তা নিয়ে শোভাযাত্রায় শতাধিক শিল্পী হাজির হবে।

একাডেমি সূত্র জানায়, চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষ ১৪৩২ বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানসের বিশেষ কিছু আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়। যা এই প্রথমবারের মতো নববর্ষে উপস্থাপিত হবে। এবছর চৈত্র সংক্রান্তি ও নববর্ষের শোভাযাত্রা আরো বড় পরিসরে ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে কিছু আকর্ষণীয় ও ভিন্ন আয়োজন রয়েছে যার অন্যতম তারুণ্য নির্ভর ব্যান্ড সংগীতের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি আর সময়োপযোগী ও ভিন্ন কিছু বার্তা নিয়ে শোভাযাত্রায় শিল্পীদের অংশগ্রহণ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নববর্ষের শোভাযাত্রায় ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি’ গাইবেন ২০০ ব্যান্ড তারকা