২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহানে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এরপর ২০২০ সালের শুরুর দিকে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও এই ভাইরাসজনিত রোগকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর।

২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মানুষ এই ভাইরাসের প্রকোপে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এরপর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবতা হলো, করোনাভাইরাসের প্রভাব এখনো বিশ্ব অর্থনীতিতে অনুভূত হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তার জেরে দেশে দেশে সরকারি ঋণ রেকর্ড পর্যায়ে উঠে যায়। শ্রমবাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়ে, অর্থাৎ অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। ভোক্তার আচরণও বদলে যায়। এ সবকিছুর জেরে অসমতা বৃদ্ধি পায়; দূর থেকে কাজ করা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থ পরিশোধ জনপ্রিয় হয় এবং ভ্রমণের ধরনে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আসে।

কোভিডের প্রকোপ আর নেই তা–ও প্রায় তিন বছর হলো; কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতি ও বাজারে তার প্রভাব রয়ে গেছে। বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে এখনো তার প্রভাব আছে।

ঋণ, মূল্যস্ফীতি ও সুদহার

কোভিড-১৯ এর জেরে বিশ্বের প্রায় সব দেশ মানুষের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিতে বিপুল পরিমাণে ঋণ করতে বাধ্য হয়। উন্নত দেশের সরকারগুলো মানুষকে বিপুল পরিমাণে প্রণোদনা দেয়। দেখা গেছে, ২০২০ সালের পর সামগ্রিকভাবে বিশ্বের ঋণ বেড়েছে ১২ শতাংশীয় পয়েন্ট। সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে উদীয়মান বাজারে।

এরপর মহামারির জেরে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির ধারা শুরু হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যাতে আরও তেল–জল জোগায়। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি ২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। কাঁচামাল ও শ্রমিক–সংকটের কারণে ২০২২ সালে অনেক দেশেই মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে।

এই পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্বের প্রায় সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে, যদিও সব কেন্দ্রীয় ব্যাংক একই হারে নীতি সুদহার বাড়ায়নি।

বাস্তবতা হলো, বেশি বেশি ঋণ নেওয়া এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক দেশের ঋণ পরিশোধের যোগ্যতা কমে যায়। ফিচ রেটিংসের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মহামারির শুরুর সময়ের তুলনায় বেশির ভাগ দেশের ক্রেডিট রেটিং কিছুটা কমে যায়। তবে এ ক্ষেত্রেও ধনী ও গরিব দেশের ব্যবধান আছে, গরিব দেশগুলোর ক্রেডিট রেটিং কমেছে বেশি হারে। ক্রেডিট রেটিং বা ঋণমান কমে যাওয়ার অর্থ হলো, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এসব দেশের ঋণ নেওয়ার খরচ বেড়ে যাওয়া।

বেকারত্ব

মহামারির জেরে কোটি কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এর মধ্যে আবার গরিব পরিবার ও নারীরা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন, বিশ্বব্যাংকের হিসাবেই এ কথা বলা হয়েছে। লকডাউন উঠে গেলে অবশ্য বেকারত্বের হার আবার কমতে শুরু করে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে একধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন হয়ে যায়; চাকরির খাত হয়ে ওঠে আতিথেয়তা ও ডেলিভারি খাত। কারণ, এ সময়ের মধ্যে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে। তার প্রতিফলন কাজের বাজারেও পড়ে।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ৬১ শতাংশ কর্মরত ছিলেন, ২০১৯ সালের তুলনায় যা কিছুটা বেশি। অর্থাৎ শ্রমবাজারে সেই পরিমাণ চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে।

অসমতা বেড়েছে

পৃথিবী এক অসম জায়গা। অনেক দিন থেকেই এই বাস্তবতা আমরা দেখে আসছি। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটে ধনী ও গরিবের ব্যবধান কিছুটা কমলেও মহামারির পর তা আবার বেড়েছে। বিশ্বের শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর আয় ২০২০ সালের পর বেড়েছে।

আরেকটি বিষয়, মহামারির সময় দেখা গেছে, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ২০২০ সালের পর কমেছে। এর কাঠামোগত কারণ আছে। সেটা হলো, আতিথেয়তা, খাদ্যসেবা, উৎপাদন ও শিশুর যত্নআত্তিতে নারীর অতি অংশগ্রহণের কারণে মহামারির সময় নারীর কর্মসংস্থান কমে যায়, এই খাতগুলোই মহামারিতে সবচেয়ে আক্রান্ত হয়েছিল।

২০২০ সালের পর শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে শতভাগ সমতা আসতে এখনো ঢের বাকি। এ ছাড়া মানুষের অবসর ও ভ্রমণের অভ্যাসও অনেকটা বদলে গেছে। ২০১৯ সালে যত মানুষ ঘরের বাইরে যেত বা খেত, এখনো সেই পরিমাণ মানুষ তা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ঘর থেকে কাজের অভ্যাস বেড়ে যাওয়ার কারণে লন্ডনের মতো বড় শহরে মানুষের চলাচল অনেকটাই কমে গেছে।

বিমান চলাচল বেড়েছে

মহামারিতে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সবচেয়ে আক্রান্ত হয় বিমান চলাচল খাত। ২০২০ সালে এই খাতের ক্ষতি হয় ১৭৫ বিলিয়ন বা ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এরপর টিকাদান ও পরবর্তী পর্যায়ে কোভিড-১৯ আর বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে বিবেচিত না হওয়ায় বিমান চলাচল কোম্পানিগুলোর সংগঠন আশা করছে, ২০২৫ সালে এই খাত ৩৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার নিট মুনাফা করবে এবং মোট ৫২০ কোটি যাত্রী এ বছর বিমান ভ্রমণ করবে। তবে পর্যটকদের সমস্যা হলো, এর মধ্যে হোটেল কক্ষের ভাড়া বেড়ে গেছে।

ডিজিটাল পৃথিবী

ডিজিটালাইজেশন অনেক আগেই শুরু হয়েছিল, মহামারির সময় তার গতি বেড়ে যায়। ওই সময় মানুষের ঘর থেকে বেরোনার উপায় ছিল না। ফলে অনলাইনে কেনাকাটা করা ছাড়া উপায় ছিল না। ২০২০ সালে অনলাইনে কেনাকাটা অনেকটাই বেড়ে যায় এবং তারপর সেই হার স্থিতিশীল আছে। অনলাইন বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় আবার বিক্রেতাদের দোকানের আকারও বাড়াতে হয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, এতে সরাসরি ও অনলাইন-উভয় ধরনের বিক্রিই বেড়েছে।

এ ছাড়া মহামারির সময় মানুষের হাতে সময় ছিল এবং উন্নত দেশের মানুষের হাতে টাকাও ছিল। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্টক মার্কেটের ২৭ শতাংশ বিনিয়োগ ছিল খুচরা বিনিয়োগকারীদের।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, মহামারির সময় প্রযুক্তি, ডেলিভারি ও টিকা প্রস্তুতকারী ওষুধ কোম্পানিগুলোর বাড়বাড়ন্ত হয়। এই ওষুধ কোম্পানিগুলোর সেই রমরমা আর নেই, কিন্তু ডেলিভারি ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সেই বাস্তবতা এখনো আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব স তবত ন ত হয় পর ম ণ সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হবে আরেফিন সিদ্দিককে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতাল কিংবা মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হবে। বার্তা সংস্থা ইউএনবি আজ শনিবার তাঁর পরিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, সিঙ্গাপুরে জেনারেল হাসপাতাল আর মাউন্ট এলিজাবেথে ডকুমেন্টস পাঠানো হয়েছে। ঢাকার চিকিৎসকেরা অনুমতি দিলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে ব্যাংকের বুথে গিয়ে টাকাও তুলেছেন আরেফিন সিদ্দিক। এরপর তিনি ঢাকা ক্লাবে (রমনায়) যান এবং সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার মধ্যেই পড়ে যান। এরপর তাঁকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শুরুর পর তাঁকে নিউরো আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষ করে আবারও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০২০ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চ্যাম্পিয়ন ভারত
  • টাঙ্গাইলে সালিশে ধর্ষণের মূল্য দেড় লাখ টাকা!
  • হিযবুত তাহরীরের ৫ জন কারাগারে
  • দুই শ হলো না নাঈমের
  • চ‌্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভ্রমণ: নিউ জিল‌্যান্ড ৭,১৫০ কিলোমিটার, ভারত ০
  • শ্রীপুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ, অভিযুক্ত তরুণ আটক
  • চারুতা সংগীত একাডেমির সুরেলা সন্ধ্যা
  • চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হবে আরেফিন সিদ্দিককে
  • যেমন খুশি তেমন চুল রাখার অনুমতি পেল থাইল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা