হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে শান্তি আলোচনার তারিখ নির্ধারণের পরে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু মার্কিন অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য আবার প্রবাহিত হতে শুরু করলেও, ইউক্রেনীয় জেনারেলদের তাদের সবচেয়ে বড় সমর্থকের সুবিধামাফিক যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। কেননা তারা অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ ইচ্ছামতো বন্ধ করে দিতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রে এই নতুন অনিশ্চিত বিশ্বে প্রভাব পড়বে।
ইউক্রেন এখন এক ভয়াবহ উভয় সংকটের মুখোমুখি– হয় সীমিত সম্পদ নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাও অথবা শত্রুর কাছে জমি ছেড়ে দিয়ে সেনাশক্তি সংহত করো এবং রাজনৈতিক ফায়দা পেতে শত্রুপক্ষকে ভৌগোলিক সুবিধা দাও। যুদ্ধের গতিবিধি বরাবরই উপকরণ সরবরাহের ওপর নির্ভর করেছে। মস্কো আশা করে, কিয়েভের কাছে গোলাবারুদের অভাব দেখা দিলে তখন তারা নতুন আক্রমণ শানাবে। প্রকৃতপক্ষে ২০২৪ সালে পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এসেছিল ইউক্রেনে সরবরাহ ঘাটতির সময়ে।
রাশিয়া সুবিধা পেতে কামানের গোলা ব্যবহার করেছে। কৌশলগত শহর আভদিভকারের উত্তর ও পশ্চিমে অগ্রসর হতে বিমানের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে মাঝে মাঝে ইউক্রেনের প্রতিটি কামান শেলের বিপরীতে রাশিয়া পাল্টা ২০টি শেল নিক্ষেপ করেছে। ২০২৫ সালে যুদ্ধক্ষেত্রগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায়, রাশিয়া দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন থেকে উত্তরে খারকিভ পর্যন্ত নিজেদের চলমান আক্রমণাত্মক অভিযান জোরালো করতে এবং রাশিয়ান কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলো বিতাড়িত করার জন্য যে কোনো সরবরাহ থামিয়ে দিতে পারে।
এর মানে ইউক্রেনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোথায় কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টির আগেই নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে এবং কোথায় রাশিয়ার সৈন্যদের হতাশ করার জন্য সুযোগ বুঝে বিলম্বিত কর্মসূচি নিতে হবে। সুবিধা নিতে শত্রুপক্ষকে ভৌগোলিক জায়গা ছেড়ে দেওয়া একটি পুরোনো সামরিক কৌশল, কিন্তু যখন ভূখণ্ডটি আপনার সার্বভৌম অঞ্চল হয় তখন এটি বিশাল রাজনৈতিক মূল্য সৃষ্টি করে। অতএব, বিলম্বিত পদক্ষেপের সামরিক যুক্তি ইউক্রেনে রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি ও বেসামরিক মনোবল কমিয়ে দেয় এবং সরকারের যুদ্ধ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেসামরিক সমর্থন দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই সংকট যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন তার প্রচেষ্টাকে কোথায় এবং কীভাবে গুরুত্ব দেবে, তা নির্ধারণ করবে। প্রথমত, রাশিয়ার বিরুদ্ধে দূরপাল্লার হামলা দিন দিন আকর্ষণ হারাবে। ইউক্রেনকে তার প্রতিরক্ষামূলক
অভিযানের জটিলতা কমাতে হবে এবং নিজস্ব ভূখণ্ডের অনেক ভেতরে ফিরে আসতে হবে।
দ্বিতীয়ত, রাশিয়া শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করে না। এটি আলোচনার টেবিলে সুবিধা নিতে জবরদস্তিমূলক বিমান হামলা চালায়। মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত থাকায় রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনীয় শহর ও অবকাঠামোর ওপর হামলা বাড়ানোর একটি দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে, যা কিয়েভকে তার সম্মুখ সারির প্রতিরক্ষা বা রাজনৈতিক কেন্দ্র রক্ষা করতে বেদনাদায়ক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে। ভিয়েতনাম থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত বিমানশক্তি ঐতিহাসিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ দরকষাকষির হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন উত্তর ভিয়েতনামে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে বোমা হামলা চালিয়েছিলেন। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের সঙ্গেও একই আচরণ করতে পারে।
এ অবস্থান থেকে বলা যায়, রাশিয়া প্রতিরক্ষা দুর্বল করা এবং মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে ইউক্রেনের শহর ও অবকাঠামোর বিরুদ্ধে তার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন অভিযান কঠোরতর করতে পারে। কিয়েভ তার আকাশপথের সুরক্ষায় গোয়েন্দা তথ্য ও মার্কিন নির্মিত প্যাট্রিয়ট ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের মতো পদ্ধতির ক্ষেত্রে পশ্চিমা সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। তাই এই জবরদস্তিমূলক অভিযান কার্যকর হতে পারে।
বেঞ্জামিন জেনসেন: মেরিন কর্পস ইউনিভার্সিটির অ্যাডভান্সড ওয়ারফাইটিং স্কুলের কৌশলগত
অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক; দ্য কনভারসেশন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র জন ত ক সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে আরও পিছিয়ে যাচ্ছে উৎপাদন
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের সঞ্চালন লাইন আগামী এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার আশা করছে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি। লাইনটি চালু করার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে অন্তত দুই মাস সময় লাগতে পারে রূপপুরে। জুলাইয়ে শুরু হতে পারে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন। এরপর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হতে পারে আগামী বছর।
সংশ্লিষ্টব্যক্তিরা বলছেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সময় দফায় দফায় পেছাচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। এটি পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়। এখন আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। আর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। এটি পিছিয়ে ২০২৫ সালে নেওয়া হয়েছিল। তবে এটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে ২০২৭ সালে।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, গত সেপ্টেম্বরে চুল্লিপাত্রের ভেতর ‘ডামি’ জ্বালানি প্রবেশ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পুরোটাই এখন নির্ভর করছে সঞ্চালন লাইনের ওপর। সঞ্চালন লাইন তৈরি হওয়ার দুই মাস পর পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানো হবে। জ্বালানি প্রবেশে এক মাস সময় লাগে। এরপর কিছু কিছু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। একই সঙ্গে চলবে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এতে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে আগামী বছর। তবে এটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ বিক্রি শুরু হলেই কেবল বিনিয়োগের বিপরীতে আয় আসা শুরু হতো। সেটিও দুই বছর পিছিয়ে গেছে। এতে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। এ প্রকল্পের আওতায় ঠিকাদার হিসেবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। গত বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২৭ করা হয়েছে। তবে চুক্তি অনুসারে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও খরচ বাড়াতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সূত্র বলছে, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে কাজ ব্যাহত হয়েছে। আর্থিক লেনদেনে জটিলতা, যন্ত্রপাতি দেশে আনা, বিশেষজ্ঞদের আসায় জটিলতা, বৈদেশিক মুদ্রা ডলারসংকটে বিল পরিশোধে দেরি, সব মিলে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। এতে কাজ পিছিয়ে গেছে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজও। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহেদুল হাছান প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত হলে দুই মাস সময় লাগবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিছু পরীক্ষা করতে। এরপর এক মাস ধরে পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানো হবে। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের সময় এখন নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় আছে।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সূত্র বলছে, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে কাজ ব্যাহত হয়েছে। আর্থিক লেনদেনে জটিলতা, যন্ত্রপাতি দেশে আনা, বিশেষজ্ঞদের আসায় জটিলতা, বৈদেশিক মুদ্রা ডলারসংকটে বিল পরিশোধে দেরি, সব মিলে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে।শেষ হয়নি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনদেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সংস্থা পাওয়া গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি রূপপুর বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজ করছে। মোট ৬টি গ্রিড লাইন নির্মাণ করছে তারা। রূপপুর-বাঘাবাড়ি ৬৫ কিলোমিটার, রূপপুর-বগুড়া ১০২ কিলোমিটার ও আমিনবাজার-কালিয়াকৈর ৫১ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া রূপপুর-গোপালগঞ্জ ১৪৪ কিলোমিটার, রূপপুর-ঢাকা ১৪৭ কিলোমিটার ও রূপপুর-ধামরাই ১৪৫ কিলোমিটার লাইনের স্থলভাগের কাজও শেষ। তবে এই লাইন তিনটি পদ্মা ও যমুনা নদী অতিক্রম করছে। এর মধ্যে পদ্মা নদী অতিক্রম করার দুই কিলোমিটার লাইন মার্চের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পাওয়ার গ্রিড। এর আগে তারা গত ডিসেম্বরের মধ্যে এটি শেষ করার কথা বলেছিল। এটি শেষ হলে রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।
পাওয়ার গ্রিড পিএলসি বলছে, দুই নদী অতিক্রমের মোট তিনটি লাইনের প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা আগামী জুনে। রূপপুরের দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যমুনা নদী অতিক্রমে ৭ কিলোমিটার করে দুটি লাইন করা হচ্ছে। এখন পূর্ণ উদ্যমে কাজ চললেও বৃহৎ নদী অতিক্রম করতে প্রায়ই নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে যমুনা নদী অতিক্রম করার দুটি সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হতে পারে বলে দাবি করেছে পাওয়ার গ্রিড পিএলসি।
বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত হলে দুই মাস সময় লাগবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিছু পরীক্ষা করতে। এরপর এক মাস ধরে পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানো হবে। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে।রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহেদুল হাছানদুই বছর বাড়তি সময় লাগছেদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক প্রকল্প রূপপুরে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর রাশিয়া থেকে ঋণ সহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ উদ্বোধন করা হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। ২০২১ সালের অক্টোবরে রূপপুরে ইউনিট-১-এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলা যায়। চুল্লিপাত্র হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয়। আর ২০২৩ সালের অক্টোবরে বসানো হয় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিপাত্র।
২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হাতে পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম চালান তুলে দেয় রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। পারমাণবিক ক্লাবের ৩৩তম সদস্য হিসেবে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি এখন রূপপুরে মজুত আছে। চুক্তি অনুসারে প্রকল্প খরচের মধ্যেই প্রথম তিন বছর রাশিয়া থেকে আসবে এ জ্বালানি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৪ ঘণ্টা সমান হারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
২০২১ সালের অক্টোবরে রূপপুরে ইউনিট-১-এর ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে বলা যায়। চুল্লিপাত্র হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যেই পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয়। আর ২০২৩ সালের অক্টোবরে বসানো হয় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিপাত্র।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চুল্লিতে জ্বালানি স্থাপনের পর অন্তত ছয় মাস ধরে পরীক্ষামূলকভাবে ধাপে ধাপে কম পাওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এই প্রতিটি ধাপে পরীক্ষামূলক উৎপাদন সফল হলেই কেবল পুরোদমে উৎপাদন শুরু করা যাবে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পুরোদমে উৎপাদনে আসতে আগামী বছর লেগে যেতে পারে।
অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই বছর পেছানোয় প্রকল্পের খরচ না বাড়লেও প্রায় ১ হাজার ৮০০ জনবলের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য অনেক খরচ তো বাড়ছেই। বিদ্যুৎ বিক্রি শুরু হলেই কেবল বিনিয়োগের বিপরীতে আয় আসা শুরু হতো। সেটিও দুই বছর পিছিয়ে গেছে। এতে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে।
চুল্লিতে জ্বালানি স্থাপনের পর অন্তত ছয় মাস ধরে পরীক্ষামূলকভাবে ধাপে ধাপে কম পাওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। এই প্রতিটি ধাপে পরীক্ষামূলক উৎপাদন সফল হলেই কেবল পুরোদমে উৎপাদন শুরু করা যাবে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম