তামাক কোম্পানির প্রলোভনে জেনেশুনে বিষপান চাষির
Published: 8th, March 2025 GMT
লোহাগাড়া উপজেলার টংকাবতী ও ডলুখালের চরে আগে চাষ হতো সবজির। টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, বাদাম, শিমসহ নানারকম শাক-সবজির চাষ করতেন কৃষকরা। গেল বছরও হয়েছে সবজির চাষ। এ বছর দেখা গেল ভিন্নচিত্র। সবজির চাষ ছেড়ে তামাক চাষ করেছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস তামাক চাষের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে স্থানীয় লোকজন ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় উপজেলায় ১৭ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে; যা গত বছরের দ্বিগুণ।
জানা যায়, বহুজাতিক তামাক কোম্পানির প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়ে ফসল চাষ ছেড়ে তামাক চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। বিশেষ করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, জাপান টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড, আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে।
চরম্বার লক্ষ্মণেরখীল এলাকার তামাক চাষি তপন বড়ুয়া জানান, ফসল আবাদে কোনো সমস্যা হলে কৃষি অফিসের মাঠ কর্মকর্তাদের পাওয়া যায় না। অথচ উৎপাদনের আগেই তামাক কোম্পানি দর নির্ধারণ, বিক্রির নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদমুক্ত ঋণ, প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে থাকে। এ কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও তারা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ১০ বিঘা জমিতে তামাকের চাষ করেছেন তপন বড়ুয়া।
চাষিরা জানান, আগে তিনি শসা, ভুট্টা, মরিচ, টমেটো চাষ করতেন। এসব পণ্য যথাসময়ে বিক্রি ও দামের নিশ্চয়তা থাকে না। তাই তামাক চাষ করেছেন। প্রতি কানি জমিতে তামাক চাষে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। লাভ প্রায় অর্ধেক।
জানা যায়, উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার হেক্টর, অনাবাদি জমি রয়েছে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর। উপজেলায় মোট আবাদকৃত তামাক চাষের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্টিত তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা কৃষি অফিস। স্থানীয়রা বলছেন, লোহাগাড়ার ফসলি জমিতে চলছে বিষাক্ত তামাকের আগ্রাসন। টংকাবতী ও ডলুখালের চরে ব্যাপকভাবে হচ্ছে তামাক চাষ। তামাকে পানি সেচ দিতে গিয়ে শুকিয়ে গেছে চরম্বা রাবার ড্যামের পানি। এতে হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি অনাবাদি রয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার পূর্ব কলাউজান লক্ষ্মণেরখীল ও রেঞ্জ অফিস এলাকা, চরম্বা ইউনিয়নের বাইয়ারপাড়া, মাইজবিলা, নাফারটিলা বাজারের পূর্ব পাশে, রাজঘাটা, বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ঘোনার মোড়, পল্লানের বিল পুটিবিলা ইউনিয়নের পহরচাঁদা, দক্ষিণ সড়াইয়া বলিরজুম, চুনতি ইউনিয়নের পানত্রিশা ও কিল্লাখোলা নামক এলাকায় তামাক চাষ হয়েছে। তবে এখানকার বেশির ভাগ চাষি পাশের লামা ও চকরিয়া উপজেলা থেকে আসা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নে বেশি তামাকের চাষ হয়েছে। তামাক ক্ষেতের পাশেই লোকালয় ও কৃষকের বাড়িতে তৈরি করা হচ্ছে তামাক পোড়ানোর চুল্লি।
তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকর ভূমিকা না থাকায় প্রতিনিয়ত তামাকের চাষ বাড়ছে বলে ধারণা স্থানীয় কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাজী শফিউল ইসলাম বলেন, ‘তামাক কোম্পানি কৃষকদের অগ্রিম টাকা ও উৎপাদিত তামাক বিক্রির নিশ্চয়তা দেওয়ায় ক্ষতিকর এ ফসলের আবাদ দিন দিন বাড়ছে। তামাক চাষ বন্ধে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে সভা-সমাবেশ করা হচ্ছে। তারপরও অনেক কৃষক লাভের আশায় তামাক চাষ করেছেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.
পরিবেশকর্মী ও গ্রিন নার্সারির মালিক অধ্যাপক হামিদুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও মাটির গুণাগুণের ভয়াবহ ক্ষতির কথা জেনেও শুধু অধিক লাভের আশায় তামাক চাষ করছেন কৃষকরা। তামাক চাষে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের ব্যবহার হয়। এ কারণে নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা। এতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ম ক চ ষ কর চ ষ কর ছ ন ক ষকদ র ন ক ষকর চরম ব উপজ ল সবজ র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যবসাবান্ধব করতে এনবিআরকে অটোমেশন করা হচ্ছে: এনবিআর চেয়ারম্যান
২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নের প্রাক্কালে চট্টগ্রামে আয়োজিত প্রাক-বাজেট মতবিনিময় সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, ব্যবসাবান্ধব করতে এনবিআরকে অটোমেশন করা হচ্ছে। এবারের বাজেট হবে ব্যবসাবান্ধব বাজেটকে জনবান্ধব করতে ব্যবসায়ীসহ সকলের মতামত নেওয়া হচ্ছে। যার প্রতিফলন পাওয়া যাবে বাজেটে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চিটাং চেম্বারের উদ্যোগে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। চেম্বার প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার সভাপতিত্বে সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আগামী বাজেটে ঘাটতি থাকবে কিন্তু যাতে মূল্যস্ফীতি না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হবে। আর রাজস্ব আদায়ে যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হবে করহারও।’’
তিনি বলেন, ‘‘গত অর্থবছরে ৪৫ লাখ করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করে। যার মধ্যে ৩০ লাখ করদাতা শূন্য রিটার্নধারী। বাকি ১৫ লাখ কারদাতা থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এত কম সংখ্যক লোকের থেকে রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। এনবিআর জরিপ করে যারা রিটার্ন দিচ্ছে না তাদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে তাদের ব্যাংক হিসেব তলব করা হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও খুবই কম। তাই করহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। মার্কিন শুল্ক আরোপের ফলে দেশের পোশাকখাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। এ ছাড়া, ব্যবসায়ীরা যাতে এনবিআর অফিসে ঘুরতে না হয় সেজন্য সবকিছু অটোমেশন করা হচ্ছে। এখন সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে এক লাখ ৬০ হাজার সার্টিফিকেট অনলাইনে প্রদান করা হয়েছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ভ্যাট এবং বন্ড সুবিধা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা বন্ড সুবিধা অটোমেশনের আওতায় আনতে কাজ করছি। এ ছাড়া, আয়করের মতো ভ্যাটও যেন ঘরে বসে দেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।’’
তিনি আগামী বাজেটে ভ্যাট হার যৌক্তিকীকরণ এবং ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ট্যাক্স রেট কমানো, ট্যাক্সনেট বৃদ্ধি ও রিফান্ড ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা হবে বলে তিনি জানান।
সভায় মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান, উইমেন চেম্বারের সভাপতি আবিদা মোস্তফা, চিটাগাং চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ও সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, প্রাক্তন সিনিয়র সহ-সভাপতি এরশাদ উল্লাহ, প্রাক্তন সহ-সভাপতি বেলাল আহমেদ, চেম্বার পরিচালক ও বিজিএমইএ এর ১ম সহ- সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক হাসানুজ্জামান চৌধুরী (জোসেফ) ও আমজাদ হোসেন চৌধুরী, পান রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. একরামুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী (খোকা), রাঙ্গামাটি চেম্বার সভাপতি মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ মামুন, চট্টগ্রাম ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু তাহের, চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত আলী, চট্টগ্রাম ফ্রেশ ফ্রুটস ভেজিট্যাবলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুব রানা, বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মাকসুদুর রহমান, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসেস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কামরুল হুদা, চট্টগ্রাম গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যাসোসিয়েশনের মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, বিএসআরএম জিএম শেখর রঞ্জন কর ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ শামীম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা/রেজাউল/এনএইচ