আল্লাহর আরশের কম্পনের বিষয়ে একটি হাদিস আছে। আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, সাদ ইবনে মুয়াজের মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল।

সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) ছিলেন মদিনার একজন আনসার সাহাবি। তিনি ছিলেন আনসারদের নেতা। তিনি সব সময় মহানবী (সা.)–কে রক্ষার চেষ্টা করতেন। মহানবী (সা.)-এর যেকোনো সিদ্ধান্তে তিনি সমর্থন জানাতেন। বিশেষ করে মদিনার আনসারদের সঙ্গে মক্কার মুহাজিরদের কোনো মনোমালিন্য তৈরি হলে তিনি তাঁর সাধ্যমতো সমাধানের চেষ্টা করতেন। তিনি আনসারদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। অথচ এই মহৎ চরিত্রের সাহাবি ইসলাম গ্রহণের পর মাত্র পাঁচ বছর জীবিত ছিলেন। এ কারণেই আমাদের নবী (সা.

) বললেন, তাঁর মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল।

আরও পড়ুনরোজার নিয়ত কখন করবেন১৯ মার্চ ২০২৪

সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) এর জানাজার ব্যাপারে সাহাবিরা বলেছিলেন, ‘আমরা যখন তার মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল যেন তার শরীরের কোনো ওজন নেই। মনে হচ্ছিল, আমরা কোনো তুলা বহন করে নিয়ে যাচ্ছি।’ এটা শুনে মদিনায় কিছু মুনাফেক তামাশার ছলে বলেছিল, ‘দেখলে তো, সাদ ইবনে মুয়াজের কোনো ওজন নেই। একইভাবে তার কাজেও কোনো ওজন ছিল না।’

পরে মহানবী (সা.) বিষয়টি পরিষ্কার করলেন, ‘সেদিন ফেরেশতারা সাদ ইবনে মুয়াজকে বহন করেছিল। তাই তোমরা কোনো ওজন অনুভব করোনি।’

কিন্তু আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠল কীভাবে?

মহানবী (সা.) এই কথা বলেননি যে সাদ (রা.)–এর মৃত্যুর কষ্টে বা ভয়ে আরশ কেঁপে উঠেছিল। বরং মহানবী (সা.) বলেন, ‘সাদ ইবনে মুয়াজের রুহ আল্লাহর দিকে ফিরে যাচ্ছে, এই খুশিতে আরশ কেঁপে উঠেছিল।’

ইমাম হাসান বসরী (র.) এই হাদিসটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আরশ আসলে কষ্টে বা ভয়ে কেঁপে ওঠেনি, বরং এটি খুশিতে কেঁপে উঠেছিল। একইভাবে উহুদ পাহাড়ও কেঁপে উঠেছিল যেদিন মহানবী (সা.), আবু বকর (রা.), ওমর (রা.) এবং উসমান (রা.) পাহাড়ে উঠেছিলেন। আমাদের নবী (সা.) পাহাড়কে লক্ষ করে বলেছিলেন, ‘তোমার কম্পন বন্ধ করো, হে উহুদ, তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দিক এবং দুজন শহীদ আরোহণ করেছে।’

আরও পড়ুনহাতির গল্প১৬ মার্চ ২০২৪

আরেক বর্ণনায় মহানবী (সা.) বলেন, ‘উহুদ হলো এমন পাহাড় যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমিও তাকে ভালোবাসি।’

সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.) মারা গিয়েছিলেন খন্দকের যুদ্ধের সময়ের এক আঘাতের ফলে। সেই আঘাতে আক্রান্ত হয়ে পরে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। অর্থাৎ তিনি শহীদ হয়েছিলেন।

মহানবী (সা.) শহীদদের আত্মার মহত্ত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘একজন শহীদ যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর রুহ একটি সবুজ পাখির মতো উড়ে যায়। এই পাখির বাসা সাত আসমানের ওপর আল্লাহর আরশ থেকে যে আলোকিত ঝাড়বাতি ঝুলছে, সেখানে অবস্থিত। সবুজ পাখিরা সেখানে থাকে এবং তারা জান্নাতের ওপর দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। জান্নাতের নেয়ামত উপভোগ করে আবারও তাদের ঘরে ফিরে আসে।’

সাদ ইবনে মুয়াজ (রা.)-এর মৃত্যুতে তার রুহ সবুজ পাখির ন্যায় ফিরে আসছে তার আপন নীড়ে। সেই খুশিতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল।

অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ

আরও পড়ুনরোজার তাৎপর্য, ইতিহাস ও উদ্দেশ্য১৭ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স দ ইবন আম দ র আনস র

এছাড়াও পড়ুন:

বঙ্গীয় সংস্কৃতি বিদেশে, বাঙালি একাত্ম

‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’- পংক্তিমালার কবি দাউদ হায়দার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ৭৩ বছর বয়সে শনিবার রাতে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একটি বয়স্ক নিরাময় কেন্দ্রে তিনি মারা যান। কবি দাউদ হায়দার একাধারে একজন লেখক ও সাংবাদিক ছিলেন। শেষ জীবনে তিনি একজন ব্রডকাস্টিং সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বাংলা ভাষার একজন আধুনিক কবি ছিলেন, যিনি সত্তর দশকের কবি হিসেবে চিহ্নিত।

‘বঙ্গীয় সংস্কৃতি বিদেশে, বাঙালি একাত্ম’ লেখাটি ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সমকালে প্রাকাশিত হয়। কবির স্মৃতিতে পাঠকদের জন্য লেখাটি পুনরায় প্রকাশ করা হলো।   

স্বর্গ কেউ দেখেছেন, অজানা। শুনিনি। ওখানে আবার ঢেঁকিও আছে! কী করে এই প্রবাদ তৈরি, কবে থেকে, হলফ করে কেউ বলতে অপারগ। হতে পারে, বাঙালি যেখানে যায় স্বভাব বদলায় না। কেন বদলাবে? নিজস্বতা হারালে ট্র্যাডিশন বরবাদ।

আমাদের জানা আছে, ‘বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন’-এর বয়স চার কুড়ির বেশি। দেশভাগের আগে থেকে। নামে বঙ্গ। প্রতিষ্ঠা পশ্চিমবঙ্গে। ধরে নেওয়া হয়, কলকাতায় গোড়াপত্তন হলেও পূর্ববঙ্গ যুক্ত। তখন একই বঙ্গ, বিভাজন পূর্ব-পশ্চিম নামে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে কী কাণ্ডই না ঘটেছিল!! ইতিহাস বিস্তৃত।

না-ঘটলে আমরা কি ‘আমার সোনার বাংলা’ গান পেতুম? ‘ও আমার দেশের মাটি’?

বঙ্গ বিভাজন হলেও এখনও ‘ইস্ট বেঙ্গল’ ফুটবল ক্লাব কলকাতায় বহাল তবিয়তে। দেশভাগের আগে ইস্ট বেঙ্গল। ১৯৪৭ (১৪ আগস্ট)-এ ভারত খণ্ডিত। ইস্ট বেঙ্গলের নামকরণ পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১-এ ১৬ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ।

লক্ষণীয়, বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন-এর নাম বদলায়নি। ভারতের নানা রাজ্যে ছড়িয়েছে। একই নামে। যেখানে বাঙালি আছে, ৫ বছর পরপর (গত শতকের আশির দশকের আগে ৩ বছর পরপর) সম্মেলন। বেছে নেওয়া কোনো রাজ্যের বিশেষ শহর। এখন বিশ্বের নানা দেশে। উত্তর আমেরিকার যেখানে সরগরম বাঙালি। নাম বঙ্গ সম্মেলন। নামে ‘বঙ্গ’ হলেও প্রাধান্য পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির। বাংলাদেশ থেকে কেউ আমন্ত্রিত নয়।

নিউইয়র্কে বিশ্বজিৎ সাহার প্রতি বছর ‘মুক্তধারা’ (ঢাকার মুক্তধারা প্রকাশনের কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহার ভাইপো বিশ্বজিৎ) দুই বাংলার লেখক, শিল্পী, বই নিয়ে তিন দিন বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন। ভেদাভেদ নেই বঙ্গের। প্রত্যেকে বাঙালি। দুই বাংলার মিলিত সম্মেলন। এলাহি কাণ্ড। বঙ্গ নানা সাজে ঝলমলে। বই প্রদর্শন, সাহিত্যিককুলের জমজমাটই নয় কেবল। বক্তৃতা, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। যোগদান উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপের বাঙালির। মূল উদ্দেশ্য বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির পরিচয় বহুলতায়। শুরুতে বিশ্বজিৎ সাহার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। এখন অনেকেই সঙ্গী। স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান।

বেলজিয়াম প্রবাসী ব্রাসেলসের লিপিকা ভট্টাচার্য, তাঁর স্বামী লীলাঞ্জন ভট্টাচার্য ইউরোপে বঙ্গীয় সাহিত্য, সংগীত, শিল্প, সংস্কৃতি বিস্তারিত করার মহৎ উদ্যোগী। নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের। জানা ছিল, বাংলার শিল্প, সাহিত্য, সংগীত তাঁর আরাধ্য।

লিপিকা ভট্টাচার্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির ছাত্রী। চমৎকার সুন্দরী। গুণবতী। কলকাতার দূরদর্শনে (টিভি) জনপ্রিয় উপস্থাপিকা।

কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজ্যে বঙ্গ ও ভারতীয় সংগীত, সংস্কৃতির প্রচারে নিরলস। অক্লান্ত কর্মী। ইউরোপেও। আয়োজন করেন তিন দিনের অনুষ্ঠান (৭-১০ সেপ্টেম্বর) হল্যান্ডের আইন্ডহোভেনে। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সর্বভারতীয় সংগীত ও সংস্কৃতি পরিষদ’। সর্বভারতীয় নামে ভ্যাবাচ্যাকা খাই। মূলত বঙ্গীয়। কাজল সেনগুপ্তর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। পশ্চিমবঙ্গের বহুমান্য শিল্পী-সাংস্কৃতিকজন সংযুক্ত। সেতারি মণিলাল নাগ, নৃত্যশিল্পী অমিতা দত্ত প্রমুখ একাসনে। ভারত সরকারের আর্থিক সাহায্যেও সর্বভারতীয় সংগীত ও সংস্কৃতি পরিষদ স্ফীত। কাজলের মূল উদ্দেশ্য বঙ্গীয় সংস্কৃতি, সংস্কৃতির নানা রূপ, সংগীত বিস্তারণ।

লিপিকা ভট্টাচার্য দায় নিয়েছেন ইউরোপে (ব্রিটেন বাদে)। কয়েক মাসে দিনরাত খেটে, লিপিকা ভট্টাচার্যের ভাষায় ‘অক্লান্ত’, প্রথম অধিবেশন (পোশাকি নাম ‘ফার্স্ট ইউরোপিয়ান কনভোকেশন কনফ্লুয়েন্স’)।

লিপিকার সঙ্গে বহুজন একত্রিত। ডক্টর শান্তনু সেনগুপ্ত নিরলস কর্মী। সঙ্গী প্রজনা ভট্টাচার্য, অনিন্দিতা ভট্টাচার্য, মহুয়া মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রত্যেকের দায় অনুষ্ঠান সুচারুর। যাকে বলে ‘ভ্যারাইটি অনুষ্ঠান’। নাচ। গান। কাব্যপাঠ। ছোটদের নাটক। ডাচ কবি/সাহিত্যিক/শিল্পীও অংশী। লিপিকা ভট্টাচার্য বললেন, ‘বঙ্গ সংস্কৃতির রূপ, ঐতিহ্য কতটা প্রাচীন, কতটা ঐশ্বর্যে ভরপুর, গরীয়ান তুলে ধরার প্রচেষ্টা।’ অনুষ্ঠানের আলাদা ঘরে অনিন্দিতার শিল্পকর্ম, প্রদর্শনী। দেখে আনন্দিত। সুখী।

নামে সর্বভারতীয়, বাংলাদেশিও একাত্ম। ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে হাজির আতিক (সংগীতশিল্পী), ইউটিউবের ‘শুদ্ধস্বর ডটকম’-এর হাবিবুল্লাহ বাবুল। হল্যান্ডে বসবাসরত বহু বাংলাদেশি। তারাও নানা অনুষ্ঠানমালায় অংশী। দুই বঙ্গের বঙ্গীয় আত্মিকতা। কতটা, বললেন হাবিবুল্লাহ বাবুল। তিনিও ফ্রাঙ্কফুর্টে দুই বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সম্মিলনে বহু বছরই কর্মী। অনুষ্ঠানের ইতি পর্বে লিপিকা ভট্টাচার্য জানান, ‘পরবর্তী আয়োজনে দুই বঙ্গের মিলন আরও নিবিড়, ঘনিষ্ঠতায় সমুজ্জ্বল হবে। বঙ্গীয় সংস্কৃতির নানা রূপই ইউরোপে তুলে ধরব। বঙ্গ কেবল পশ্চিমবঙ্গ নয়, বাংলাদেশও।’

প্রেক্ষাগৃহে তুমুল করতালি।

দাউদ হায়দার: কবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে পুলিশ বাহিনীর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যের ওপর হামলা
  • আর্নে স্লট: কিংবদন্তির জায়গা নিলেন এবং নিজেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন
  • পেহেলগামের ঘটনায় একের পর এক বাড়ি ধ্বংস, সরকারকে সতর্ক করল কাশ্মীরের দলগুলো
  • গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজের আগুনে পাঁচজন দগ্ধ
  • ‘এবং বই’ বুক রিভিউ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত
  • দাউদ হায়দার: কবির দেশ ছাড়ার কষ্ট
  • ছিনতাইকারী টান দেয় ভ্যানিটি ব্যাগ, নারীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় প্রাইভেটকার
  • নারীকে গাড়ির সঙ্গে টেনে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা
  • চলন্ত প্রাইভেটকারে ছিনতাইকারী এসে ছোঁ মেরে টান দিল ব্যাগ, টেনে নিয়ে গেল নারীকে
  • বঙ্গীয় সংস্কৃতি বিদেশে, বাঙালি একাত্ম