বেড়েছে রোমান্টিক-পারিবারিক গল্পের চাহিদা
Published: 7th, March 2025 GMT
ঈদের ছুটি মানেই ছোটপর্দায় বর্ণিল আয়োজন। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ঈদ উৎসবের বাকি চার সপ্তাহেরও কম। অপেক্ষা ফুরিয়ে আসছে। ছোটপর্দার নির্মাতাদের ঈদের প্রস্তুতি শেষের দিকে। অভিনয়শিল্পীদের বেশির ভাগই তাদের হাতে থাকা নাটকের কাজ শেষ করেছেন। রোজার ছয় মাস আগেই সাধারণত শুরু হয়েছে ঈদ নাটক ও টেলিছবির কাজ। এখন শুটিং কমলেও বেড়েছে এডিটিংয়ের ব্যস্ততা।
পাশাপাশি চ্যানেলে চ্যানেলে ঈদের কাজগুলো জমা দিচ্ছেন নির্মাতারা। কয়েকজন নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে। বছর পাঁচেক আগেও ঈদ নাটকের শুটিং বেশির ভাগই হতো উত্তরায়। এখন সেই চিরচেনা দৃশ্যপট যেন বদলাতে শুরু করেছে। গাজীপুরের পুবাইলসহ উত্তরার বাইরে ঢাকার কিছু লোকেশনে দেখা গেছে টেলিভিশন নাটকের পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের ব্যস্ততা।
চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তরার ‘অপরাজিতা’, ‘আপনঘর’, ‘আনন্দবাড়ী’, ‘লাবণী’, ‘মন্দিরা’, ‘দোলনচাঁপা’, ‘হৈচৈ’, ‘মনি মহল’, ‘চড়ুই বাসা’, ‘নোঙর’, ‘ক্ষণিকালয়’-এর শুটিংবাড়িতে ব্যস্ততা ছিল বেশি। গত মাস থেকে শুটিং নেই বললেই চলে।
ঈদ মৌসুমেও অনেক শুটিং হাউসে চলছে ধারাবাহিকের শুটিং। ঈদে হাসির নাটকের আধিক্য থাকে। পাশাপাশি রোমান্টিক, পারিবারিক আবহের গল্প নিয়েও নির্মাতারা কাজ করছেন। এবারও হরেক রকম আমেজের নাটক থাকবে ঈদ আয়োজনে– এমনটিই জানিয়েছেন নির্মাতারা। খণ্ড নাটকের পাশাপাশি ঈদ ধারাবাহিকও এখন দর্শক পছন্দের। অনেক নির্মাতা-তারকা হাজির হবেন নাটকের সিকুয়াল নিয়ে। ওটিটিসহ নানা মাধ্যমের কাজে ব্যস্ততা বাড়ায় ঈদে মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী,আফরান নিশো, জাহিদ হাসান,জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, রুনা খান, জাকিয়া বারী মম, মেহজাবীন চৌধুরী, তাসনিয়া ফারিণ, নুসরাত ইমরোজ তিশার মতো তারকার উপস্থিতি টিভি পর্দায় কম থাকবে।
তবে কেউ কেউ আবার নতুন নাটকে কাজ না করলেও অনেকেরই পুরোনো কিছু কাজ প্রচার হবে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে মীর সাব্বির, সজল নূর, মুশফিক আর ফারহান, ইয়াশ রোহান, তৌসিফ মাহবুব, খায়রুল বাসার, ফারহান আহমেদ জোভান, ইরফান সাজ্জাদ, জিয়াউল হক পলাশ, পাভেল, মারজুক রাসেল, জাহের আলভী, শাশ্বত দত্ত, আরশ খান, পার্থ শেখ, তানজিন তিশা, সাবিলা নূর, তানজিম সাইয়ারা তটিনী, নাজনীন নিহা, আইশা খান, সাফা কবির, পারসা ইভানা, নাদিয়া আহমেদ, সালহা খানম নাদিয়া, অহনা, মৌসুমী হামিদ, নাজিয়া হক অর্ষা, তানিয়া বৃষ্টি, কেয়া পায়েল, রুকাইয়া জাহান চমক, সামিরা খান মাহি, সাদিয়া আয়মানের মতো অভিনয়শিল্পীদের থাকবে সরব উপস্থিতি। তাদের মধ্যে কোনো কোনো অভিনয়শিল্পীকে ডজনের বেশি নাটকে দেখা যাবে। এ সময়ের ব্যস্ত জুটি নিলয় আলমগীর ও জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি।
এবারও ঈদে সর্বাধিক নাটকে জুটি হয়েছেন তারা। দু’জনের নাটকের সংখ্যা ১৫ ছাড়াতে পারে। তারা এরই মধ্যে বেশকিছু নাটকে কাজ করেছেন। চাঁদরাত পর্যন্ত থাকবে তাদের ব্যস্ততা। এবার হিমি ছাড়াও অন্য অভিনেত্রীর সঙ্গেও বেশ কিছু কাজ করেছেন নিলয়। এরইমধ্যে শামীম জামানের পরিচালনায় তাসনুভা তিশার বিপরীতে ‘ডাবল রোল’ নাটকে তাঁকে দেখা যাবে দ্বৈত চরিত্রে।
ঈদের নাটকের কাজ নিয়ে তৌসিফ মাহবুব বলেন, ‘বেশ আগে থেকেই নাটকে অভিনয় শুরু করেছি। নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ১৫টির মতো নাটক প্রচার হবে ঈদে। এ আয়োজনে কত বেশি নাটকে কাজ করেছি, সেটি আমার কাছে মুখ্য নয়, কয়টি ভালো নাটক প্রচার হলো, সেটিই বড় বিষয়। চেষ্টা করেছি নতুন চরিত্র নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হতে। গৎবাঁধা চরিত্র নয়, নতুন কিছু চরিত্রে আমাকে দর্শক দেখতে পাবেন।’
তরুণ অভিনেত্রী কেয়া পায়েল বলেন, ‘দর্শক ঈদে নানা ধরনের গল্পের নাটক দেখতে চান। তাদের কথা মাথায় রেখেই ভিন্নধর্মী কিছু গল্পে অভিনয় করেছি। চরিত্রে বেশ নতুনত্ব রয়েছে; যা দর্শকের ভালো লাগবে।’
সারা বছর ছোটপর্দায় উপস্থিতি না থাকলেও কোনো উৎসব আয়োজনে জ্যেষ্ঠ তারকাশিল্পীদের ঈদের কাজে দেখা যায়। প্রতি ঈদে অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন নিজের পরিচালনায় ‘ছোটকাকু’ সিরিজ নিয়ে হাজির হন। এই ঈদে তিনি এটি পরিচালনা করছেন না। নাট্যনির্মাতা অনিমেষ আইচের পরিচালনায় অভিনয় করেছেন এই নন্দিত অভিনেতা। এবারের সিরিজের নাম ‘মিশন মুন্সিগঞ্জ’।
পাশাপাশি তিনি অভিনয় করেছেন ‘কোনো একদিন’ নাটকে। ফারিয়া হোসেনের রচনায় নাটকটি নির্মাণ করেছেন চয়নিকা চৌধুরী। এতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন সাদিয়া ইসলাম মৌ। এই জুটি হাজির হবেন দম্পতির চরিত্রে। শাহেদ শরীফ ও তানজিকা আমিনকে নিয়ে অভিনেতা ও নির্মাতা আবুল হায়াত বানিয়েছেন নাটক ‘সামনে সমুদ্র’।
সম্প্রতি এর দৃশ্যধারণ শেষ করেছেন। এতে অভিনয়েও তাঁকে পাওয়া যাবে। চ্যানেল আইয়ে এটি প্রচার হবে। অভিনেতা মোশাররফ করিম অভিনয় করেছেন জিয়াউদ্দিন আলমের পরিচালনায় ‘খুচরা পাপী’ নাটকে। এটি প্রচার হবে এনটিভিতে।
এছাড়াও শামীম জামানের পরিচালনায় ‘স্বামীর সুখ মনে মনে’, ‘বউ হইতে সাবধান’ নাটকে তাঁকে দেখা যাবে। শিগগিরই এ নাটক দুটির শুটিংয়ে অংশ নেবেন তিনি। চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় করেছেন অনিমেষ আইচের পরিচালনায় ‘মিশন মুন্সিগঞ্জ’ নাটকে। এছাড়া আরও একটি নাটকে তাঁর অভিনয়ের কথা রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ন টক ন টক র ন ন টক ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
পবিত্র রমজান: দেশে দেশে যত আচার-রীতি
বিশ্বব্যাপী সব মুসলমান একই নিয়মে রোজা রাখেন, সাহ্রি ও ইফতার করেন। কিন্তু পবিত্র রমজানকেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠান পালনে মুসলমানদের মধ্যে কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। এর কারণ, দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য। ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা যে আচার পালন করেন, মরক্কোর মুসলমানরা তা করেন না। এভাবে রমজান যেন হয়ে ওঠে মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি চর্চার মাস।
তুরস্কে এখনো তোপধ্বনি দিয়ে ইফতারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এটা মধ্যপ্রাচ্য ও সংলগ্ন দেশগুলোর অনেক পুরোনো রীতি। এই আধুনিক সময়ে এসেও ঐতিহ্য থেকে সরে যায়নি প্রাচীন সভ্যতার দেশটি। পয়লা রমজানে ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদের সামনে ইফতারের আগে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো নারী-পুরুষ। সরকারিভাবে বিতরণ করা হচ্ছিল ইফতারির প্যাকেট। তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে ঘোষণা করা হলো, ইফতারের সময় হয়েছে। পরিবারগুলো ঘাসের ওপর মাদুর বিছিয়ে আনন্দ ও সন্তুষ্টির সঙ্গে ইফতার শুরু করল।
ওই দিন আয়া সোফিয়া মসজিদের সামনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিক ও খ্যাতনামা কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালাউদ্দিন সুমন। ৪ মার্চ রাতে প্রথম আলোকে সেই সন্ধ্যার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি, ‘কামান দাগার আগে অনেকটা সময় ধরে ইসলামি সংগীত পরিবেশন হয়েছিল। সংগীতের সুরের মূর্ছনায় একটা মোহনীয় পরিবেশ তৈরি হলো। ব্যাপারটা বিশেষভাবে ভালো লেগেছে।’ সুমন জানান, ঐতিহাসিক এই মসজিদের সামনে উপস্থিত থেকে এত বড় আয়োজনের অংশ হওয়া তাঁর জীবনের এক পরম পাওয়া। সে দিন তিনিও সরকারিভাবে বিতরণ করা প্যাকেট সংগ্রহ করে উন্মুক্ত প্রান্তরে বসে ইফতার করেছেন বলে জানালেন।
তুরস্কে তোপধ্বনি দেওয়ার সময়ই মসজিদের মিনারগুলোতে জ্বালানো হয় ‘কানদিল’ নামের একধরনের বাতি। বাতিগুলো জ্বলতে থাকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। বাতি জ্বালানোর এই ঐতিহ্য বহু পুরোনো। আর তোপধ্বনি কেবল ইফতারের সময় নয়, সাহ্রি শুরু ও শেষের সময়ও দেওয়া হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে রমজানকে স্বাগত জানানো হয় ভিন্নধর্মী এক উৎসবের মধ্য দিয়ে। এ উৎসবের নাম ‘হক আল লায়লা’। মূলত শাবান মাসের ১৫ তারিখের পরই ছোট শিশুরা রঙিন কাপড় পরে দলবদ্ধ হয়ে প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি যায়। এ সময় তারা সুর করে বলতে থাকে, ‘তোমার দরজায় এসেছি, আমাদের দুহাত ভরে দাও। আমাদের দিলে আল্লাহও তোমাদের দেবেন।’ তখন গৃহকর্ত্রীরা শিশুদের হাতে চকলেট, বাদাম, কেকসহ নানা উপহার তুলে দেন। সাধারণত আসরের নামাজের পর শিশুরা বের হয় এবং মাগরিব অবধি মিষ্টান্ন সংগ্রহ করে।
আরব আমিরাতে শত বছর ধরে এই হক আল লায়লা উৎসব চলছে। এর মধ্য দিয়ে শিশুরা অন্যকে উপহার দেওয়া এবং ভাগাভাগির মতো গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত হয়।
দুবাইয়ে বসবাসরত প্রবাসী সাংবাদিক কামরুল হাসান বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলছিলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের লোকেরা নিজেদের সংস্কৃতিকে লালন করতে ভালোবাসেন। রোজার আগে হক আল লায়লা উৎসব তেমনই এক সংস্কৃতি। তবে করোনার পর অনেক ধরনের সামাজিক উৎসবে বদল এসেছে, অথবা সীমিত হয়ে পড়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের ছোট কিন্তু ধনী দেশ কাতারে ১৪ রমজানে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। মাগরিবের নামাজের পর শিশুরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে মানানসই ব্যাগ নিয়ে বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। এ সময় তারা গায় ‘গারাংগাও’ গান। উপহার হিসেবে পায় মিষ্টি ও চকলেট। এটা মাত্র ওই এক দিনই করা হয়।
প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লীলাভূমি মিসরে রমজান মাসে বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে রঙিন ফানুস ঝুলিয়ে রাখা হয়। মূলত এগুলো লন্ঠন। এসব ফানুস বা লন্ঠন দেশজুড়ে উৎসবের বার্তা আনে।
উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোয় পবিত্র রমজানকে বরণ করার প্রস্তুতি শুরু হয় শাবান মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। মানুষ রমজানের আগে তাঁদের বাড়িঘর রং করান। ঘরের চারদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন, ধুয়েমুছে একেবারে চকচকে করে তোলেন।
ইফতারের পর ইরাকিরা মেহাবেস নামে একটি খেলা খেলে থাকেন। ৫০ থেকে আড়াই শ জন এ খেলায় অংশ নেন। এটা মূলত আংটি লোকানো খেলা। পালা করে একটি দল আংটি লুকিয়ে রাখে। অন্য দলের সদস্যদের ধারণা করতে হয় যে আংটিটি কার কাছে আছে।
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। রমজানের আগে তাঁরা নিজেদের শরীর পবিত্র করার জন্য বিশেষ একধরনের গোসল করে থাকেন। একে বলা হয় পাদুসান। জাভা দ্বীপের মুসলিমদের বিশ্বাস, এই গোসল কেবল শরীর নয়, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে নয়, এই গোসল করা হয় পাহাড়ি ঝরনা কিংবা কোনো প্রাকৃতিক জলাশয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ছোট্ট দেশ মালদ্বীপে ইফতারের পর রাইভারু নামে একধরনের কবিতা পড়া হয়। এটা সাধারণত চার বা ছয় লাইনের হয়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, সপ্তদশ শতাব্দীতে দেশটিতে রাইভারু ছড়িয়ে পড়ে। সেখানকার মানুষ রাইভারু গাইতে গাইতে ইফতার করেন। কেউ কেউ আবার ইফতারের পর সমবেত সংগীতের মতো এটা আবৃত্তি করেন।
আমাদের ঢাকা শহরে কাসিদা গেয়ে সাহ্রির জন্য রোজাদারদের ঘুম থেকে জাগানোর সংস্কৃতি একসময় চালু ছিল। এখন তেমন নেই। রোজাদারদের জন্য যাঁরা এমন ত্যাগ স্বীকার করেন, মিসর ও জর্ডানে তাঁরা মেসাহারাতি নামে পরিচিত। আর মরক্কোয় তাঁদের ডাকা হয় নাফারস নামে। তুরস্কের গ্রামেগঞ্জে দাভুল নামে একধরনের ঢোল পিটিয়ে এই কাজ করা হয়। ঐতিহ্যবাহী তুর্কি পোশাক পরে যে তরুণেরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা বকশিশ পান, এমনকি অনেক পরিবার তাঁদের ডেকে নিয়েই সাহ্রি করিয়ে থাকে। বিভিন্ন সূত্র অবলম্বনে।