ট্রাম্পকে শান্তি-নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করেন পশ্চিম ইউরোপের বেশির ভাগ মানুষ
Published: 7th, March 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। পশ্চিম ইউরোপের পাঁচটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এমনটাই মনে করেন বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক হয়। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও বৈঠকে ছিলেন। বৈঠকে ট্রাম্প-ভ্যান্স জুটি জেলেনস্কির ওপর চড়াও হন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের শীর্ষ নেতাদের মধ্যকার নজিরবিহীন এই বাগ্যুদ্ধের ঘটনার পর কিয়েভের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত করেন ট্রাম্প। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প সম্পর্কে পশ্চিম ইউরোপীয়দের শঙ্কার মনোভাব উঠে এল জরিপে।
জরিপটি করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারনেটনির্ভর জরিপকারী সংস্থা ইউগভ। পশ্চিম ইউরোপের পাঁচ দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাজ্যে জরিপটি করা হয়। জরিপ পরিচালনার সময়কাল ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ।
জরিপ পরিচালনার সপ্তাহটি ছিল বেশ নাটকীয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প-ভ্যান্স জুটির সঙ্গে জেলেনস্কির বাগ্যুদ্ধের পর ২ মার্চ যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হন ইউরোপীয় নেতারা।
বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তিত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎসহ ইউরোপের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। চার দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করে তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে ইউক্রেনের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।
ইউগভের জরিপে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের মধ্যে একটি সংখ্যালঘু অংশই কেবল মনে করেন, কিয়েভের পাশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি সরে গেলে বাকি পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে সক্ষম হবে। তবে উত্তরদাতাদের মধ্যে তুলনামূলক খুব কমসংখ্যকই ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির পক্ষে মত দিয়েছেন জরিপে।
ইউক্রেন ও ইউরোপকে বাইরে রেখেই রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করে দিয়েছে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র। জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন, কিয়েভ বা ইউরোপকে শান্তি আলোচনা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। অনেক উত্তরদাতা মনে করেন, শান্তি চুক্তির পরও রাশিয়া সম্ভবত আবার ইউক্রেনে আক্রমণ চালাবে।
রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে এক মাসের আংশিক যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ফ্রান্স-যুক্তরাজ্যের একটি প্রস্তাবের কথা সামনে এনেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে ইউক্রেনে ইউরোপীয় স্থলসেনা (শান্তিরক্ষী) মোতায়েন করা হবে। তবে ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়ে ফ্রান্স-যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবের ব্যাপারে ইউগভের জরিপে বিভক্ত মতামত উঠে এসেছে।
ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের আপাত প্রতীয়মান জোটের প্রেক্ষাপটে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, পশ্চিম ইউরোপের পাঁচটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য খুব বড় বা মোটামুটি বড় হুমকি হয়ে উঠেছেন।
ইতালির ক্ষেত্রে এই মনোভাব প্রকাশ করেছেন ৫৮ শতাংশ উত্তরদাতা, যা ফ্রান্সে ৬৯ শতাংশ, জার্মানিতে ৭৪ শতাংশ, স্পেনে ৭৫ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ৭৮ শতাংশ।
অন্যদিকে ইতালির ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে হুমকি হিসেবে অভিহিত করেন। জার্মানির ক্ষেত্রে তা ৭৯ শতাংশ, ফ্রান্সে ৮০ শতাংশ, স্পেনে ৮৭ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ৮৯ শতাংশ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র ইউর প য় র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যান্সারের থাবায় মৃত্যুমুখে ইব্রাহিম, দিশেহারা পরিবার
২২ বছরের তরুণ মো. ইব্রাহিম খাঁ বিএ ক্লাসের ছাত্র। পিতা গ্রামের দিন মজুর, দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার। কুঁড়ে ঘরে বসবাস, পরিবারের এক একটি দিন মানে একটি কষ্টের গল্প।
টানাটানির সংসার হলেও ইব্রাহিমের ছিল অদম্য ইচ্ছা যে কারণে তার লেখাপড়া থেমে থাকেনি। ছোট বেলা থেকেই সে ক্লাসের সব পড়া ঠিক করে প্রতিদিন স্কুলে উপস্থিতি থাকত।
ইব্রাহিমের যেমন একদিন মানুষের মত মানুষ হওয়ার স্বপ্ন ছিল। পরিবারেও স্বপ্ন ছিল ইব্রাহিম একদিন দরিদ্র পরিবারের দুঃখ ঘোঁচাবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
মরণব্যাধী ক্যান্সার থাবা বসিয়েছে ইব্রাহিম খাঁ এর শরীরে। তার লড়াইটা যেন ধীরে ধীরে থেমে যাচ্ছে। সে এখন মৃত্যু পথযাত্রী। ইব্রাহিম আর খেলার মাঠে যায় না, বন্ধুদের সাথে আর আড্ডায় মেতে ওঠে না। বাড়ির বিছানায় শুয়ে থাকে সে। প্রতিদিনই প্রতিবেশী, আত্নীয় স্বজন, সহপাঠী ও বন্ধুরা তাকে দেখতে আসে।
ইব্রাহিমকে নিয়ে পুরো পরিবার এখন দিশেহারা। পুরো পরিবার জেনে গেছে চিকিৎসা না হলে বেশি দিন আর পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে না সে! তার আকুতি শুনতে শুনতে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে তার স্বজনরা।
প্রায় দুই বছর আগে কোমরে ব্যথা দেখা দেয় ইব্রাহিমের। মাঝেমধ্যেই ব্যথা হতো। চিকিৎসরা কোমর ব্যথার সাধারণ ওষুধ দিতেন। এক সময় সাধারণ ওষুধে কাজ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎই ওজন কমে যেতে শুরু করে। কিছু খেলেই গুলিয়ে আসে গা। সঙ্গে মাথা ঘোরা, দুর্বলতাও রয়েছে। খুলনার সিটি মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখানো হলো। এম আর আই করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
এম আর আই করার পর ইব্রাহিমের ব্যাক বোন টিউমার ধরা পড়ে। তাকে দ্রুত জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু এখানেই অপেক্ষা করছিল এক দুঃসংবাদ। বায়োপসি রিপোর্টে ইব্রাহিমের মারাত্মক পর্যায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে।
ইব্রাহিমের বাবা মো. ইউনুছ খাঁ সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের একজন দিন মজুর। মা নার্গিস বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে ইব্রাহিম সবার বড়। তার বোনের বয়স ৭ বছর ও ছোট ভাইয়ের বয়স ৩ বছর।
সংসারে অনেক টানাটানি আর অভাবের কারণে প্রায়ই তাদেরকে আশ্রয় নিতে হয় পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী গ্রামে তার মামা জিনারুল ইসলামের সংসারে।
বর্তমানে ইব্রাহিম গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিএ পাস কোর্সের (শিক্ষা বর্ষ-২০২১-২০২২) ছাত্র। বিগত প্রায় এক বছর ধরে কখনও হাসপাতালের বিছানায়, কখনও বাড়িতে বিছানায় শুয়ে। যে কারণে তার লেখাপড়াও এক প্রকার বন্ধ।
ইব্রাহিম বর্তমানে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ডা. নাহিদ হাসানের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, ১৭টি কেমো থেরাপি দিতে পারলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে তার মামা ও পিতা সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে ও ধার দেনা করে তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ছয় লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন। ১৭টি কেমোর মধ্যে মাত্র ৪টি কেমো ও বেশ কিছু রেডিও থেরাপি দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
বর্তমানে টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। পঞ্চম কেমো দেওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাবার টাকা জোগাড়ের আর কোন পথ খোলা নেই।
এদিকে দিন দিন খারাপ হচ্ছে ইব্রাহিমের শারীরিক অবস্থা। সে এখন আর দাঁড়াতে পারে না। এদিকে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে তার পরিবার।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার চিকিৎসা সম্পন্ন করতে আরও অন্তত ২০ লাখ টাকার প্রয়োজন। একদিকে সন্তানের চিকিৎসা, অন্যদিকে সংসার খরচ। উভয় দিকেই চরম নাজুক অবস্থায় আছেন ইউনুছ খাঁ। একদিকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রাণপ্রিয় সন্তান, অপর দিকে বিপুল পরিমাণ টাকার যোগাড়ের অনিশ্চয়তা। কোন দিকে যাবেন এই অসহায় পিতা?
এখন প্রাণপ্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে সমাজের হৃদয়বান মানুষের দিকে তাকিয়ে আছেন ইব্রাহিমের বাবা ও পরিবার। ২০ লক্ষ টাকা ইব্রাহিমের মতো পরিবারে অকল্পনীয় হলেও সমাজের সবাই মিলে এগিয়ে এলে এই পরিমাণ অর্থ জোগাড় হওয়া হয়তো অতটা কঠিন হবে না। প্রয়োজন শুধুই সামান্য একটু ভালোবাসা আর অন্তর থেকে সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসা।
ইব্রাহিমকে বাঁচাতে তার বাবা ও মামার বিকাশ অ্যাকাউন্টে আপনার সহায়তা পৌঁছে দিতে পারেন। মো. ইউনুছ খাঁ (বাবা), মোবাইল ও বিকাশ নম্বর- 01799-141644; জিনারুল (মামা) রকেট নম্বর- 01915-891902. অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে পারেন। আপনার ছোট ছোট সহায়তা হয়তো তাদের কাছে অনেক বড় কাজে আসবে।
ঢাকা/শাহীন/মুকুল/এস