রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যের সুনির্দিষ্ট তাৎপর্য কী, তা স্পষ্ট কারণেই কখনো বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়নি।

তবে অধিকাংশ বিশ্লেষক এ ব্যাপারে একমত, মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ করছে। এর একটি, এটি রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের আক্রমণের পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করছে। অন্যটি রাশিয়ার সম্ভাব্য ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মোকাবিলায় কিয়েভকে আগাম সতর্কতা দিচ্ছে।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ও সংকেত ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর অবস্থান, তাঁদের গতিবিধি ও সম্ভাব্য কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও ধারণা দেয়।

স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ও সংকেত ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর অবস্থান, তাঁদের গতিবিধি ও সম্ভাব্য কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও ধারণা দেয়।

আবার মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হিমার্স লঞ্চার বা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সরবরাহ করা স্টর্ম শ্যাডোর মতো দূরপাল্লার পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্র ঠিকঠাক ব্যবহার করতে সক্ষম হবে না ইউক্রেন।

ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ করতে রাজি হয়, তবে আবার দেশটিতে সামরিক সহায়তা শুরু করা হতে পারে।মাইক ওয়াল্টজ, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ওয়াশিংটনের রিয়েল-টাইম তথ্য ইউক্রেনকে পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারের এমন সক্ষমতা প্রদান করা ছাড়াও দেশটির সামরিক, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামো ও বেসামরিক জনগণকে আসন্ন হুমকি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আগাম তথ্য দিয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইটের দেওয়া প্রাথমিক সতর্কতামূলক তথ্যের ভিত্তিতেই ইউক্রেনের অধিবাসীরা কমবেশি বিমান হামলার সাইরেন ও মুঠোফোনের সতর্কবার্তা জানতে পারেন। রুশ ভূখণ্ডের একেবারে ভেতর থেকে উড্ডয়ন করা যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণও শনাক্ত করতে পারে এসব স্যাটেলাইট।

দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে তা ইউক্রেনের সুরক্ষা সক্ষমতার ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এরই মধ্যে ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কয়েক মাস আগেও ইউক্রেন আশা করছিল, তারা অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাবে এবং এটি দেশের বিভিন্ন শহর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ রুশ হামলার আরও বেশিসংখ্যক সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুর সুরক্ষায় কিয়েভের সক্ষমতা বাড়াবে।

কয়েক মাস আগেও ইউক্রেন আশা করছিল, তারা অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাবে এবং এটি দেশের বিভিন্ন শহর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ রুশ হামলার আরও বেশিসংখ্যক সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুর সুরক্ষায় কিয়েভের সক্ষমতা বাড়াবে।

কিন্তু ইউক্রেনের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ ফুরিয়ে আসছে। সম্প্রতি ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনকে স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউক্রেনকে কিছু হুমকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে এটি। তবে রাশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে এটি সুরক্ষা দিতে পারবে না।

এটা স্পষ্ট যে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়কে আরেকটি কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেছেন, ইউক্রেন যদি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক উদ্যোগে অংশগ্রহণ করতে রাজি হয়, তবে আবার দেশটিতে সামরিক সহায়তা শুরু করা হতে পারে।

আরও পড়ুনইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র২২ ঘণ্টা আগে

ওয়াল্টজ ফক্স নিউজকে বলেন, ‘আমি মনে করি, যদি আমরা এ সমঝোতাকে ফলপ্রসূ করতে পারি ও একে এগিয়ে নিতে পারি.

..তবে প্রেসিডেন্ট স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন।’

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ ফক্স বিজনেসকে বলেন, এ স্থগিতাদেশ ‘কেটে যাবে’।

তবে এ কেটে যাওয়ার বিনিময়ে হোয়াইট হাউস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছ থেকে কী চায়, তা পরিষ্কার।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা স্থগিতে বিপদে ইউক্রেন ০৪ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স য ট ল ইট ইউক র ন র সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেনে ট্রাম্পের সহায়তা বন্ধে কতটা সুবিধা পাবে রাশিয়া

ইউক্রেন ও রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে কোনো পক্ষই এখন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করতে পারছে না। সেখানকার যুদ্ধে একরকম অচলাবস্থা চলছে। রাশিয়ার সেনারা যেন অগ্রসর হতে না পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে ইউক্রেনীয় সেনারা। কখনো কখনো দুই পক্ষের লড়াই সামান্য কয়েক গজ গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ধারণা করা হয়, তাঁর এ সিদ্ধান্তের কারণে যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র পাল্টে যেতে পারে। এতে হয় যুদ্ধ থেমে যাবে অথবা রাশিয়া চূড়ান্ত সুবিধা পাবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, অতিরিক্ত মার্কিন সহায়তা ছাড়াই ইউরোপের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহযোগিতাকে কাজে লাগিয়ে গ্রীষ্মকালজুড়ে লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে ইউক্রেন। তবে ইউক্রেন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তাকারী দেশের সহায়তা হারালে তাতে রাশিয়া লাভবান হবে। দেশটি তখন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলোতে সহজেই হামলা চালাতে পারবে।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট সেথ জি জোন্স এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যুদ্ধাস্ত্র ও বাহিনীগুলোকে নিয়ে সমস্যার মধ্যে থাকার পরও ইউক্রেনীয়রা রাশিয়ার যেকোনো ধরনের অগ্রগতি ঠেকিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশংসনীয়ভাবে ভালো কাজ করেছে।’

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, জেলেনস্কি যদি হোয়াইট হাউসের দাবির কাছে নতিস্বীকার করেন, তবে তাঁর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে যে বিরতি টানা হয়েছে, কম সময়ে সে পরিস্থিতির অবসান হতে পারে।

গত মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি ‘আলোচনার টেবিলে আসতে’ প্রস্তুত আছেন। মঙ্গলবার রাতে কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণ জেলেনস্কির সে বক্তব্যের উল্লেখ করে ট্রাম্পও তাঁর প্রশংসা করেছেন।

আপাতত ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করছে। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বা রুশ সেনাবাহিনীর ওপর তুলনামূলকভাবে কম চাপ প্রয়োগ করছে তারা। ইউক্রেনের শহরগুলোতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া।

শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যায্য মধ্যস্থতাকারী বলে বিবেচনা করলে ইউরোপের সমর্থন নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজতে পারে ইউক্রেন।

তিন বছর আগে ইউক্রেনে হামলা শুরু করলেও রাশিয়া এখন পর্যন্ত আকাশপথে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌথ অভিযানে রাশিয়া তাদের সামরিক দলগুলোকে কার্যকরভাবে একত্র করতে পারেনি এবং এত বেশি প্রাণহানি হয়েছে যে পুতিন চাপ কমাতে উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজার সেনা মোতায়েন করেছেন।

তবে এর সবকিছুই ঘটেছে রাশিয়া ট্রাম্পের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার আগেই।

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব সম্পর্কে ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা আলেক্সান্দার ভিন্দমান বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে সেনাদের মনোবল ক্ষুণ্ন হবে—রুশ পক্ষ শক্তিশালী হবে এবং ইউক্রেনীয়রা হতাশ হবে।’

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে ইউক্রেনে সরবরাহের অপেক্ষায় থাকা কোটি কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদের চালানের ওপর প্রভাব পড়ছে।

পেন্টাগনের মজুত থেকে ইউক্রেনের জন্য সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ইউক্রেন সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স ইনিশিয়েটিভ নামের উদ্যোগের আওতায় সহায়তা কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। এ উদ্যোগের আওতায় কিয়েভকে সরাসরি মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো থেকে নতুন সামরিক হার্ডওয়্যার কিনতে তহবিল সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, দূরপাল্লার রকেটে ব্যবহৃত গোলাবারুদ, যন্ত্রাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রের সরবরাহও হারাতে পারে ইউক্রেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পরিচালনায় ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণ দেখছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। জার্মানির একটি অজ্ঞাত স্থানে, ১১ জুন ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এবার রোজায় বড় ব্যবসা করল ইউরোপের কোম্পানি
  • খুঁটির জোরবিহীন ইউক্রেন
  • ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার ২৫ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি
  • ১ ঘণ্টার বাজারে কোটি টাকার দুধের বাণিজ্য
  • নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকায় স্বস্তি
  • হুঁশিয়ারির পরও নির্ধারিত দামে মিলছে না সয়াবিন তেল
  • রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে আরও পিছিয়ে যাচ্ছে উৎপাদন
  • ভোলার গ্যাস খুলনার বদলে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বিএনপির উদ্বেগ ও ক্ষোভ
  • ইউক্রেনে ট্রাম্পের সহায়তা বন্ধে কতটা সুবিধা পাবে রাশিয়া