ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিরোধে স্তম্ভিত মার্কিন বংশোদ্ভূত ইউক্রেনীয়রা
Published: 4th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের অ্যালেনটাউনে ইউক্রেনীয় গির্জা সেন্ট মেরির যেসব সদস্য গত রোববার প্রার্থনার জন্য জড়ো হচ্ছিলেন, তাঁরা তখনো ট্রাম্প-জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি। সবশেষ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কথার মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘চপেটাঘাত’ করেছেন বলে মনে করছেন গির্জার সদস্যরা। এ ঘটনায় হতবিহ্বল তাঁরা।
সেন্ট মেরির পুরোহিত ফাদার রিচার্ড জেন্দ্রাস বলেছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, ইউক্রেনের মুখে চপেটাঘাত করা হয়েছে। আর এই চপেটাঘাত আমি অনুভব করতে পেরেছি।’
ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার নজিরবিহীন বিবাদের বিষয়টি চোখের চিকিৎসক দেখাতে যাওয়ার সময় প্রথম ফাদার রিচার্ড জেন্দ্রাসের নজরে আসে। তিনি বলেন, ‘ভিডিওটি দেখার পর আমি হতবাক হয়ে যাই। তিন বছর আগে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ শুরুর সময় আমার যেমন অনুভূতি হয়েছিল, এখনো ঠিক একই রকম অনুভূতি হচ্ছে।’
রিচার্ড জেন্দ্রাস গির্জায় উপস্থিত মানুষের উদ্দেশে ইংরেজি ও ইউক্রেনীয় ভাষায় কথা বলেন। এ সময় তিনি ক্ষমার মহত্বের ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য দেন।
জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা অ্যালেনটাউন ও এর আশপাশের ইউক্রেনীয় সম্প্রদায়কে নাড়া দিয়েছে। ইস্পাত ও টেক্সটাইলশিল্পে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ওই এলাকায় অভিবাসী হয়ে এসেছেন অনেক ইউক্রেনীয়।
গত শুক্রবার প্রকাশ্যে বিরল এই বিতর্কের সময় ট্রাম্প যখন জেলেনস্কিকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে মার্কিন সহায়তার জন্য ইউক্রেনের আরও বেশি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, তখন তাঁর কণ্ঠস্বর বারবার উঁচু হয়ে যাচ্ছিল। যুদ্ধ শেষ করতে রাশিয়ার সঙ্গে ‘একটি চুক্তি’ করতেও জেলেনস্কিকে চাপ দেন ট্রাম্প।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও জেলেনস্কির সমালোচনা করে তাঁর আচরণকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।
যুদ্ধবিরতি বজায় রাখতে রাশিয়াকে বিশ্বাস করা যেতে পারে কি না, তা নিয়ে যখন জেলেনস্কি প্রশ্ন তোলেন, তখনই ট্রাম্প ও ভ্যান্স খেপে যান। ট্রাম্প বলেন, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর আস্থা রাখেন। পুতিন কথা রাখবেন বলেও মনে করেন ট্রাম্প।
উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ফলে জেলেনস্কি নির্ধারিত সময়সূচি অনুসারে ইউক্রেনীয় খনিজ ভাগাভাগিসংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর না করেই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন।
কালো পোশাক ও ইউক্রেনীয় পিন পরে চার্চের ফাদার রিচার্ড জেন্দ্রাস বলেন, ‘মানুষ আমার বাড়িতে, আমার দোরগোড়ায় এসে হাজির হচ্ছে। সম্প্রদায়ের লোকজন আসছেন এবং নিজেদের মতামত ব্যক্ত করছেন। আমি এখানে গির্জায় অসংখ্য ই–মেইল ও ফোনকল পেয়েছি, যাঁরা ট্রাম্প ও জেডি ভ্যান্সের কর্মকাণ্ডের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য এখনই কিছু করতে চান।’
রুশ আক্রমণে বিপর্যস্ত ইউক্রেন এবং যুদ্ধে নিহত সেনাদের স্মরণে বিভিন্ন পোস্টার দিয়ে ঘেরা ওই গির্জা। গির্জার এক সেবকের পিতা এ যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। বাখমুতে তাঁর নিহত হওয়ার খবর কয়েক মাস পরে যুক্তরাষ্ট্রে ইউক্রেনের ওই সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছেছিল বলে জানান জেন্দ্রাস।
৭৪ বছর বয়সী উপাসক মারিয়া নর্টন বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের ঘটনা অনেক বেশি মানুষকে নাড়া দিয়েছে। (জেলেনস্কিকে) তিরস্কার করা হয়েছে। তাঁকে হুমকি দিয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।’
নর্টন বলেন, ‘তাঁরা ওভাল অফিসে বিষয়টিকে একটি সার্কাসে পরিণত করেছেন। আমি যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা সবাই এমনকি রিপাবলিকান ইউক্রেনীয়রাও লজ্জিত।’
জেন্দ্রাস বলেন, সম্প্রদায়টি শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে ওই অঞ্চলের কংগ্রেসম্যান রায়ান ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে দেখা করবে। ২০২৬ সালে আবারও নির্বাচনে লড়বেন ম্যাকেঞ্জি। অঞ্চলটির প্রতিটি ভোটই তাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন য ইউক র ন র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানে হামলাকারীদের বিচারসহ ১১ দাবি ঢাবি সাদা দলের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার মানোন্নয়নসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে সাদা দলের নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার। এছাড়া ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও স্যার পিজে হার্টজ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ এমএ কাউসার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনার ফাঁসি দেখতে চান গুলিবিদ্ধ রিকশাচালক
বাংলাদেশের তরুণদের কাছে সারাবিশ্ব পরিবর্তনের শিক্ষা নিয়েছে: হারমান বেঞ্জামিন
স্মারকলিপিতে সাদা দলের নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার বাতিঘর। এর মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই উচ্চশিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের অভিপ্রায়ে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা, শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ কার্যকর অপরিহার্য।
তারা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস ও উচ্চশিক্ষায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান অপরিসীম। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, সমাজ তথা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলকভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের পাঠ-পঠন যেমন আধুনিক হয়নি, তেমনি এর অবকাঠামোরও সময়োপযোগী উন্নয়ন হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের জন্য আবসন ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের জন্য সাদা দলের পক্ষ থেকে দেওয়া দাবিগুলো বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।
স্মারকলিপিতে তারা ১১ দফা দাবি উপত্থাপন করেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য স্বতন্ত্র বেড নিশ্চিতকরণ; হলগুলোর খাবারের মান বৃদ্ধি ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা; শ্রেণি কক্ষের মানোন্নয়ন ও পাঠদানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি; বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ বৃদ্ধি; শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ সৃষ্টি।
অন্য দবিগুলো হলো- প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা; ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি; পরিবহন সুবিধা সম্প্রসারণ; স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং ও মেন্টরশীপ কর্মসূচি উন্নতিকরণ; প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন; শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ রাস্তার সংস্কার; জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার নিশ্চিতকরণ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী