ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করে কী চাইছেন ট্রাম্প
Published: 4th, March 2025 GMT
ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ট্রাম্প কী অর্জন করতে চাচ্ছেন?
বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়, ইউক্রেনের যুদ্ধকালীন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে, তাঁকে ছাড় দিতে বাধ্য করতেই মার্কিন সামরিক সহযোগিতা বন্ধের বিস্ময়কর সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন ট্রাম্প।
তিন বছর আগে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এই যুদ্ধে ইউক্রেনের সামরিক সহায়তার সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। এখন ট্রাম্প ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করে দিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁরা সহায়তা বন্ধ রাখছেন, সহায়তার বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন। তাঁরা দেখছেন, বিষয়টি একটি সমাধানের (ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে) ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে কি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থান স্পষ্ট। তিনি শান্তির প্রতি মনোনিবেশ করেছেন। তাঁরা চান, যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারেরাও এই লক্ষ্যের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, যতক্ষণ না ট্রাম্প মনে করেন যে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রতি অঙ্গীকারের সদিচ্ছা ইউক্রেন দেখাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সহায়তা বন্ধ থাকবে।
এদিকে ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য জেলেনস্কিকে পদত্যাগ করতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেন, ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন, শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন, এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।
আরও পড়ুনইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা দেওয়া বন্ধ করলেন ট্রাম্প৩ ঘণ্টা আগেরাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের সমাপ্তি ‘খুব, খুব দূরে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন জেলেনস্কি। তাঁর এই বক্তব্যের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। এই সমালোচনার কয়েক ঘণ্টার মাথায় তিনি ইউক্রেনকে মার্কিন সামরিক সহযোগিতা বন্ধ করলেন।
এর আগে শুক্রবার হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বাগ্বিতণ্ডা হয়। বাগ্বিতণ্ডার জেরে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত খনিজ চুক্তি ভেস্তে যায়।
যুক্তরাষ্ট্র কী চায়, হোয়াইট হাউসের ঘটনায় ট্রাম্পের কাছে জেলেনস্কি দুঃখ প্রকাশ করুক? কোনো ধরনের আপত্তি ছাড়াই তিনি খনিজ চুক্তি গ্রহণ করুন?
ট্রাম্প প্রশাসন তা-ই চায় বলে মনে হচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা হোয়াইট হাউসের ঘটনার জন্য জেলেনস্কিকে দোষারোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে, ট্রাম্পকে যথেষ্ট ধন্যবাদ না বলার অভিযোগে মিথ্যাভাবে জেলেনস্কিকে অভিযুক্ত করেছে ওয়াশিংটন।
আরও পড়ুনইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য জেলেনস্কিকে পদত্যাগ করতে হতে পারে: ট্রাম্পের উপদেষ্টা৯ ঘণ্টা আগেতবে জেলেনস্কি ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন, তিনি দুঃখ প্রকাশ করবেন না। ক্ষমা চাইবেন না। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া খনিজ চুক্তি করবেন না।
চলতি মাসেই জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার বিনিময়ে পদত্যাগ করতে রাজি থাকার কথা বলেছিলেন তিনি।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মস্কোর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সংগতি রেখে কিয়েভের এই জোটে যোগদানের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আরও পড়ুনইউরোপ কি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া ইউক্রেনে শান্তি নিশ্চিত করতে পারবে০২ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনরোজমেরি চিকেনসহ যেসব খাবার না খেয়েই হোয়াইট হাউস ছেড়েছিলেন জেলেনস্কি২২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র জন য বন ধ ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘কিছু লোকজনের অনুরোধে’ ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে ‘বিব্রত’ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা
১ মাস ৯ দিন আগে কুমিল্লা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন। লাইসেন্স পেতে তিনি যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা একজন বিদ্যালয় শিক্ষক। তিনি জেলার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে আমি নিজেই বিব্রত। আমি শিক্ষক মানুষ, ঠিকাদারির কিছুই বুঝি না। গত বছরের নভেম্বরে স্থানীয় কিছু লোকজন আমাকে ধরল, এলজিইডিতে অনেক কাজটাজ আসতেছে, আপনার একটা লাইসেন্স থাকলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। এলাকার কিছু মানুষ আপনার লাইসেন্সে কাজ এনে করতে পারবে। এতে কিছু মানুষের কাজের ব্যবস্থাও হবে। আসলে বিষয়টি আমার ছেলে (উপদেষ্টা) কিছুই জানেও না। পরে এলাকার মানুষের বারবার অনুরোধের কারণে গত বছরের নভেম্বরে আমি ওই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। এক মাস আগে লাইসেন্স পেয়েছি, কিন্তু এটা দিয়ে এক টাকার কাজও করিনি।’
বিষয়টি নিয়ে এত সমালোচনা আর কেলেঙ্কারি হবে, বিষয়টি ভাবনাতেও ছিল না উল্লেখ করে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার ভুলের জন্য ছেলেকে (উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ) বিতর্কের মুখে পড়তে হবে, কখনো চিন্তাও করিনি। এ ঘটনায় আমি নিজেই লজ্জিত।’
সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাইসেন্স পেয়েছেন উল্লেখ করে মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘যখন সবাই আমাকে ধরল একটা লাইসেন্স করার জন্য, তখন চিন্তা করলাম, দেশের নাগরিক হিসেবে একজন মানুষের অধিকার আছে ঠিকাদারি লাইসেন্স করার। আমিও সেই জায়গা থেকেই সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করেছি এবং নভেম্বরে আবেদনের পর দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত ১৬ মার্চ লাইসেন্স পেয়েছি। আমি উপদেষ্টার বাবা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই আবেদন করেছি। যদি জানতাম বিষয়টি নিয়ে এত কেলেঙ্কারি হবে আর উপদেষ্টাকে বিতর্কের মুখে পড়তে হবে, তাহলে কখনোই আমি এমন কাজ করতাম না। এ ছাড়া আমি আজ পর্যন্ত কোথাও ঠিকাদারি কাজের বিষয়ে জেলা ও উপজেলার কোথাও কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। কেউ বলতে পারবে না উপদেষ্টার বাবা হিসেবে এক টাকার ঠিকাদারি কাজ করেছি।’
আরও পড়ুনবাবার ঠিকাদারির লাইসেন্স ছিল, জানিয়ে ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ৫ ঘণ্টা আগেএলজিইডি কুমিল্লার সূত্রে জানা গেছে, আয়কর সনদ, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্সসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর কুমিল্লার জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্সের আবেদন করেন বিল্লাল হোসেন। গত ১৬ মার্চ ৫ হাজার ৯০০ টাকার ব্যাংক চালান দেওয়ার পর ওই দিন এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হিসেবে মো. বিল্লাল হোসেনের ওই লাইসেন্সে স্বাক্ষর করেন। তাঁর এই ঠিকাদারি লাইসেন্সের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়।
এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার রাতে মো. বিল্লাল হোসেন তাঁর ঠিকাদারি লাইসেন্সটি বাতিলের জন্য আবেদন করেন। তবে রাতে তিনি আবেদনটি হাতে পাননি। আজ সকালে আবেদনটি হাতে পেয়ে অফিসে গিয়ে প্রথমেই বিধি মোতাবেক সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া লাইসেন্সটি বাতিল করে কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, এর আগে বিল্লাল হোসেন সব বিধি মেনেই ঠিকাদারি লাইসেন্স পেয়েছিলেন। গত ১৬ মার্চ মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়। তবে এখনো এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে জেলার কোনো এলজিইডির কার্যালয়ে দরপত্রে অংশ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিল্লাল হোসেন অন্য কোনো নামেও ঠিকাদারি কাজ করেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে আজ বিকেল পর্যন্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি জানিয়ে গতকাল রাতে ফেসবুকে পোস্ট দেন এক গণমাধ্যম কর্মী। তিনি বিষয়টির সত্যাসত্য জানতে চান আসিফ মাহমুদের কাছে। আসিফ মাহমুদ খোঁজ করে জানান যে তাঁর বাবার লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি সঠিক। আর বিষয়টি তাঁকে জানান বলেও ওই গণমাধ্যমকর্মী তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন। এরপরই আজ আসিফ মাহমুদ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
‘বাবার ভুলের জন্য’ ক্ষমা চেয়ে আসিফ মাহমুদ পোস্টে লেখেন, ‘আমার বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তাঁর কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যেকোনো ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোনো লাইসেন্স করতেই পারেন। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেননি, সে জন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।’