সরকারি হাসপাতালের বৈকালিক বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ হইবার বিষয়টি দুঃখজনক। কারণ প্রথমত, এই ব্যবস্থার অধীনে একজন রোগীকে বিশেষত চিকিৎসা পরামর্শ ও রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ যেই অর্থ ব্যয় করিতে হইত, উহা বেসরকারি খাতের সমমানের সেবা ব্যয় অপেক্ষা অনেক কম ছিল। ফলে বিশেষত সীমিত আয়ের মানুষদের জন্য উহা ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। দ্বিতীয়ত, এই ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসা সেবাপ্রাপ্তি প্রশ্নে দেশে ধনী-দরিদ্রের দৃষ্টিকটু বৈষম্য হ্রাসের যেই সম্ভাবনা সৃষ্টি হইয়াছিল, তাহা বন্ধ হইয়া গেল। সেই হিসাবে ইহাকে গরিবের হক মারিবার আয়োজনও বলা যাইতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে দুই দফায় রাজধানীসহ দেশের ১৮৩টি সরকারি হাসপাতালে এই স্বল্পমূল্যের সেবা চালু করে সরকার। এক পর্যায়ে উহাতে রোগ নির্ণয়ের সুবিধাও যুক্ত হয়। প্রতিদিন বেলা ৩টা হইতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পালাক্রমে রোগী দেখিবার বিধান চালু করা হয়। নির্ধারিত ফি ধরা হয় ৫০০ টাকা, যাহার মধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতাকারীর ভাতা এবং সার্ভিস চার্জ বাবদ নির্দিষ্ট অঙ্ক নির্ধারিত ছিল।

বলিয়া রাখা প্রয়োজন, একই সেবার জন্য বেসরকারি কোনো চিকিৎসা কেন্দ্রে শুধু চিকিৎসকের ফি বাবদ ৮০০ হইতে ১৫শ টাকা অবধি দিতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই সেবাটি ব্যাপক প্রচার না থাকিবার পরও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, শুরু হইতে গত বৎসরের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ১৮৩টি হাসপাতালে ২ লক্ষ ৩০ সহস্রাধিক মানুষ এই সেবা গ্রহণ করিয়াছেন। এই রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ১২ লক্ষাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হইয়াছে। অস্ত্রোপচার হইয়াছে প্রায় আট সহস্র। 
সোমবার সমকাল জানাইয়াছে, এই বৈকালিক সেবায় নিয়োজিত অধিকাংশ চিকিৎসক অদ্যাবধি কোনো ভাতা পান নাই। ইহার সহিত যুক্ত হইয়াছে অন্যান্য খাতের ন্যায় স্বাস্থ্য খাতেও উদ্ভূত ৫ আগস্ট-পরবর্তী জটিল পরিস্থিতি। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ঘোষণা না দিয়াই হঠাৎ সেবাটি বন্ধ করিয়া দিয়াছে। উদ্বেগজনক হইল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলিয়াছেন, নূতন করিয়া উক্ত বৈকালিক চিকিৎসা সেবা চালু হইতেছে না।

তাহাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার সমগ্র স্বাস্থ্য খাতকে নববিন্যাসের দিকে অগ্রসর হইতেছে। উহারই অংশরূপে সমগ্র দেশে রেফারেল পদ্ধতির মাধ্যমে সেবাদানের পরিকল্পনা চলিতেছে। এই পদ্ধতিতে রোগীকে তাহার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এক চিকিৎসা কেন্দ্র হইতে অপর চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। ইহাতে একদিকে রোগের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা নিশ্চিত হয় বিধায় চিকিৎসা ব্যবস্থায় এক প্রকার শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা পায়। অপরদিকে হরেদরে সকল প্রকার রোগী দেখিতে হয় না বলিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সময় বাঁচে এবং তাহারা রোগীর প্রতি অধিকতর মনোযোগ দিতে সক্ষম হন। অতএব, সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় রেফারেল পদ্ধতি চালু অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত বিষয়। কিন্তু ইহার জন্য সরকারি হাসপাতালে স্বল্প ব্যয়ে বিশেষজ্ঞ সেবাপ্রাপ্তি বন্ধ হইবে কেন? এই ব্যবস্থা বরং উক্ত রেফারেল পদ্ধতির পরিপূরক হইতে পারিত। কারণ নিছক রেফারেল পদ্ধতি স্বল্প ব্যয়ে মানসম্মত চিকিৎসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে না।
বিগত সরকার চালু করিয়াছিল বলিয়া বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবাটি বন্ধ হইল কিনা, আমরা জানি না। তবে এই কার্যক্রমে বাধ্যতামূলক যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনেকে একই সময়ে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে বিপুল অর্থের বিনিময়ে সেবা দিয়া থাকেন। অভিযোগ রহিয়াছে, তাহাদেরই একটা অংশ পকেট ভারী করিবার সুযোগ হ্রাস পাইবার কারণে উক্ত বৈকালিক সেবা বন্ধের সহিত যুক্ত থাকিতে পারেন। যাহাই হউক, আলোচ্য সেবা কার্যক্রম অব্যাহত থাকা জরুরি বলিয়া আমরা মনে করি। যখন রেফারেল পদ্ধতি চালু হইবে তখন প্রয়োজনে বৈকালিক সেবা কার্যক্রম লইয়া ভিন্ন ভাবনা ভাবিবার অবকাশ সৃষ্টি হইলেও হইতে পারে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ব যবস থ র জন য সরক র হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

চমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

পাঁচ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চলে আসা ইর্ন্টান চিকিৎসকদের সপ্তাহব্যাপী চলমান র্কমবরিতি র্কমসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্লাস বর্জন র্কমসূচওি প্রত্যাহার করে নয়িছেনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শনিবার দুপুরে ‘চমেক শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকবৃন্দ’ ব্যানারে কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও সমাবশে অনুষ্ঠতি হয়। এতে ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবির প্রতি সর্মথন জানিয়ে বক্তব্য দেন চমেক অধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দীন, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন এবং উপাধ্যক্ষ আবদুর রব। এসময় তারা আদালতের রায় আসা পর্যন্ত কর্মসূচি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। রায়ের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানান তারা। এরপর কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় ইর্ন্টান চিকিৎসকরা।

অধ্যক্ষ মো. জসিম উদ্দীন বলেন, সরকারিভাবে দাবির বিষয়গুলো মীমাংসার চেষ্টা চলছে। ১২ মার্চ আদালতের একটি রায় আসার কথা রয়েছে। তাই আমি সবার প্রতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরতে আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার উচিত রায়ের জন্য অপেক্ষা করা।

তসলিম উদ্দীন বলেন, বিএমডিসির নিবন্ধন ছাড়া কেউ ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। এই দাবির পক্ষে রয়েছে অনেকেই। পাশাপাশি পাঁচদফা দাবিগুলোও আমরা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি শিগগির এ ব্যাপারে ইতিবাচক নির্দেশনা আসবে।

এই দুই দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন ইতিবাচক বক্তব্যের পরপরই র্কমবরিতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা দেন ইর্ন্টান ডা. আহমদ হাসনাইন। পাশাপাশি ক্লাস বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহাররে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থী সাকিব হোসেন।

ডা. আহমদ হাসনাইন বলেন, কলেজ অধ্যক্ষ, হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা র্কমসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছি।

প্রসঙ্গত, পাঁচ দফা দাবিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছিলেন চমেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘোষণা ছাড়াই বৈকালিক চিকিৎসাসেবা বন্ধ
  • মানিকগঞ্জে দুই পক্ষের কর্মসূচিতে নানা দাবি
  • রামেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত
  • চমেক হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার
  • ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ও শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন প্রত্যাহার