স্থূলতা প্রতিরোধে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস
Published: 3rd, March 2025 GMT
স্থূলতা বা ওবেসিটি দেশের তরুণ সমাজের জন্য বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে এ রোগ। স্থূলতার কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ অসংক্রামক নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। কেবল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করলেই এ সংকট নিরসন সম্ভব। পাশাপাশি স্থূলতা প্রতিরোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা। বিশ্ব স্থূলতা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সমকাল কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশে দৈহিক স্থূলতার ব্যাপকতা: সচেতনতা, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের শীর্ষস্থানীয় এন্ডোক্রাইনোলজি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইনোলজি সোসাইটি, এসিআই লিমিটেড ও সমকাল যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে।
অধ্যাপক মো.
স্থূলতা বর্তমানে একটি বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে চিহ্নিত। স্থূলতার কারণে সৃষ্ট নানা জটিলতায় বছরে বিশ্বের ৪০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্বজুড়েই প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুর মধ্যে স্থূলতার হার বাড়ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১৯৭৫ সাল থেকে স্থূলতার হার তিনগুণ বেড়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ স্থূলথায় আক্রান্ত। ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ অতিরিক্ত ওজনধারী এবং ১৩ শতাংশ মানুষ স্থূলতায় ভুগছে। শিশু-কিশ মধ্যে স্থূলতার হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে স্থূলতার হার বেশি। স্থূলতা বৃদ্ধির কারণগুলো হচ্ছে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার ও ফাস্টফুড গ্রহণ; শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাত্রা। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারাও এর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে স্থূলতার হার গত ২০ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৪ সালে নারীর স্থূলতার হার ছিল ১৭ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে বেড়ে ৪৯ শতাংশ হয়েছে। পুরুষের ক্ষেত্রে একই সময়ে ২১ থেকে ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। শহরাঞ্চলে স্থূলতার হার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ, গ্রামাঞ্চলে স্থূলতার হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। স্থূলতা বাড়ার আরও কারণ রয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম খাদ্যাভ্যাস। অধিক তেল-চর্বিযুক্ত খাবার ও ফাস্টফুডের প্রতি আসক্তি। শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, যেমন– প্রযুক্তিনির্ভর জীবনযাত্রা, কম হাঁটা ও ব্যায়ামের অভাব। এ ছাড়া অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার ও চিনিযুক্ত পানীয় গ্রহণ; অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ফলে জীবনযাত্রার উন্নতি হলেও খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ন্ত্রিত বেড়েছে। গত কয়েক বছরে স্থূলতার পরিবর্তন হয়েছে। ২০০০ সালের তুলনায় বর্তমানে স্থূলতার হার প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে পেয়েছে। শিশুর মধ্যে স্থূলতা ২০১০ সালে ৮ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রতি ৫ জনে ১ জন স্থূল হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানো এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমে এই হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে জরুরি পরামর্শ হচ্ছে– ওজন আধিক্য এবং স্থূলতাকে একটি রোগ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। ওজন এবং কোমরের মাপ পরিমাপ করে স্থূল কিনা জানতে হবে। রোগীর রোগ হওয়ার ঝুঁকিগুলো জানার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
ডা. তাহনিয়াহ্ হক
বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশে স্থূলতা একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ স্থূলকায় বা ওবেসিটিতে আক্রান্ত। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালের একটি জাতীয় জরিপে দেখা গেছে, ২৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওজন বেশি এবং ৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ স্থূলকায়। এই পরিসংখ্যানগুলো আন্তর্জাতিক বডি ম্যাস ইনডেক্স কাট-অফ, অর্থাৎ ২৫ এবং ৩০ কেজি/বর্গমিটারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। তবে এশিয়ান কাট-অফ মানদণ্ড আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে কম; যার ফলে বাংলাদেশে স্থূলতার প্রকৃত প্রাদুর্ভাব এই পরিসংখ্যানে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয় না। স্থূলতা নির্ণয়ের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড রয়েছে, পাশাপাশি এটি মোকাবিলার কৌশলও রয়েছে। তবে এশিয়ানদের ক্ষেত্রে স্থূলতার ধরন ভিন্ন। ককেশীয়দের তুলনায় এশিয়ানদের একই ইগওতে শরীরে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে, যা ফিনোটাইপ হিসেবে পরিচিত। এশিয়ানদের পেটের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস (টি২ডিএম) এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের (সিভিডি) ঝুঁকি বাড়ায়। এ কারণে এশিয়ানদের জন্য স্থূলতা নির্ণয়ের মানদণ্ড কম হওয়া উচিত। একইভাবে ইগও-এর কম কাট-অফের ভিত্তিতে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। স্থূলতার চিকিৎসা ও প্রতিরোধে জীবনধারা পরিবর্তনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে এশিয়ান জীবনধারা আমেরিকান ও ইউরোপীয় জীবনধারা থেকে আলাদা। বাংলাদেশের মতো দেশে রোগীদের পরামর্শ দেওয়ার সময় এ বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরি। আমাদের দেশের মানুষ উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণ করে এবং বসে থাকা জীবনযাপন করে। স্থূলতা এতটাই সাধারণ হয়ে উঠেছে যে এটি এখন আর উপেক্ষা করার মতো সমস্যা নয়। এ ছাড়া আমাদের সমাজে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতাকে প্রায়ই সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। ওজন সম্পর্কে এই ভুল ধারণা সফলভাবে ওজন কমানোর কৌশল বাস্তবায়নের পথে একটি বড় বাধা। এ সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের নিজস্ব ডায়াগনস্টিক কাট-অফ এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রয়োজন। বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির স্থূলতা টাস্কফোর্স বাংলাদেশে স্থূলতা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নির্দেশিকা প্রস্তাব করেছে। এশিয়ান দেশগুলোর জন্য স্থূলতা একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ, কারণ এখানে অপুষ্টি এবং অতিপুষ্টির দ্বৈত বোঝা বিদ্যমান। স্থূলতা মোকাবিলায় আমাদের একটি জাতি এবং একটি অঞ্চল হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ডা. সামিরা মেহজাবিন
স্থূলতা শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং একাধিক জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এর মধ্যে অন্যতম রোগ হলো ডায়াবেটিস ও স্থূলতা। স্থূলতা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রধান ঝুঁকি তৈরি করে। অতিরিক্ত ফ্যাট কোষ ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়; ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। প্যানক্রিয়াসের বিটা সেলের কার্যকারিতা কমে গিয়ে ইনসুলিন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। দ্বিতীয় যে রোগটি হয়, তা হচ্ছে হৃদরোগ ও স্থূলতা। অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের রক্তনালির ব্লকেজ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। লিপিড প্রোফাইলের পরিবর্তন হয় (খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরল কমে যায়)। স্থূলতা ইনফ্লেমেশন বাড়িয়ে আর্টারি (ধমনির) কঠিন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। অগ্ন্যাশয় ও যকৃৎ জটিলতা তৈরি হয়। যেমন ফ্যাটি লিভার ডিজিজ– অতিরিক্ত ওজনের কারণে লিভারে চর্বি জমে যায়। উচ্চ ফ্যাটযুক্ত ডায়েট ও স্থূলতা প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ তৈরি করে। হরমোন ও প্রজনন স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থূলতা নারীর পিসিওস (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) এবং বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে ইরেকটাইল ডিসফাংশন হতে পারে। স্থূলতা গর্ভাবস্থায় গেস্টেশনাল ডায়াবেটিস, প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া এবং সিজারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া অস্থি ও সন্ধিজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত ওজন হাঁটু, কোমর ও মেরুদণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করে অস্টিওআর্থ্রাইটিস এবং ব্যথা বাড়ায়। হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে অস্টিওপোরোসিস ও ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ায়। স্থূলতা নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়– যেমন স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার। মানসিক স্বাস্থ্য ও নিউরোলজিক্যাল সমস্যাও তৈরি হয়। স্থূলতা ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি ও আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করতে পারে। স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে, যা ঘুমের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাস বাড়ায়। বন্ধ করে দেয় এবং কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকিও থাকে। অর্থাৎ স্থূলতা শুধু বাহ্যিক ওজন বৃদ্ধির সমস্যা নয়, এটি মেটাবলিক ডিজঅর্ডার সৃষ্টি করে শরীরের প্রায় প্রতিটি সিস্টেমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই স্বাস্থ্যকর ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজন হলে ওষুধ বা হরমোনাল থেরাপির মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
অধ্যাপক ডা. মো. ফিরোজ আমিন
অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা নানা ধরনের ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আমাদের উপমহাদেশের মানুষের ক্ষেত্রে বডি ম্যাস ইনডেক্স (বিএমআই) সূচক যদি ২৩ অথবা তার বেশি হয় তাহলে সেটিকে অতিরিক্ত ওজন ধরা হয়। ফলাফল যদি ৩০ অথবা তার বেশি হয়, তখন সেটিকে স্থূল বলা হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে ৯০ সেন্টিমিটার এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৮০ সেন্টিমিটার পার হলে তাকে স্থূলতার পর্যায়ে ধরা হয়। স্থূলতা বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে জীবনযাপন ব্যবস্থা। আমরা কতক্ষণ ব্যায়াম করি, হাঁটছি, কী খাবার খাচ্ছি– এসব ভাবতে হবে। সামাজিকভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে যেসব খাবার গ্রহণ করে থাকি, সেগুলো সবসময় হাইক্যালরিযুক্ত খাবার। আগে শিশুকে যেসব খাবার দেওয়া হতো, এখন সেখানে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। স্কুলের আশপাশেও ফাস্টফুডের কালচার শুরু হয়ে গেছে। ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় বিশেষ করে খাবারে নানা ধরনের অফার থাকে। যেমন কোনো হোটেল-রেস্টুরেন্টে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হলে একজনের খাবারের সঙ্গে আরেকজনের খাবার ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। ছুটির দিনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে হোটেলে রাতের খাবার খাওয়াটা অনেকের জন্য এখন ‘কালচারে’ পরিণত হয়েছে। সেখানে আমরা ‘এনার্জি রিচ’ খাবারগুলো খাচ্ছি। আবার প্রয়োজন মতো আমরা ব্যায়ামও করি না। অথচ প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা দরকার। ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমছে। এই বাড়তি চর্বি শরীরকে নানারকম জটিলতায় ফেলে দিচ্ছে। খাদ্য তালিকায় প্রয়োজন মতো ফাইবারযুক্ত খাবার রাখা হচ্ছে না। জেনেটিক একটা বিষয়ও আছে, মা-বাবা কারোর যদি স্থূলতা বা ওজনের আধিক্য থাকে, তাহলে সন্তানের মধ্যেও আসতে পারে। আমাদের কাছে রোগীরা এলে অনুসন্ধান করি বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে হরমোনাল কোনো রোগ আছে কিনা, থাইরয়েড কিংবা জেনেটিক রোগ তা নিশ্চিত করি। যারা স্ট্রেসে থাকে অফিস কিংবা বাসায়, সেই স্ট্রেস থেকে কিছু হরমোন রিলিজ হয়। তখন ওজনটা বেড়ে যায়। অনেকে স্ট্রেস থেকে মুক্ত হতে খাবারের প্রতি ঝুঁকে। কেউবা কোল্ড ড্রিংকস পছন্দ করে। আবার কারোর ঘুম কম হয়। গবেষণায় বলা আছে, কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা না ঘুমালে স্ট্রেস হরমোন বাড়িয়ে দেয়। তখন মানুষ ডিপ্রেশনে ভোগে। মাতৃস্বাস্থ্যর ক্ষেত্রে দেখা যায়, অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রতি যত্ন না নিলে তার সন্তানও এ ধরনের রোগের ঝুঁকিতে থাকে। বর্তমান সময়ে সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে শিশুকে ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। ফলে শিশুরা ঘরের চার দেয়ালের মধ্যেই কম্পিউটারে গেমসের প্রতি আসক্ত হয়। এতেও ওজন বাড়ে।
অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান
স্থূলতা একটি ক্রনিক ডিজিজ। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আমরা এই সমস্যাকে শনাক্ত করতে পারি। কারও স্থূলতা হয়ে গেলে প্রথমে শনাক্ত করতে হবে কী কারণে তার স্থূলতা দেখা দিল। এ জন্য আমরা রোগীর আগের জীবনযাত্রার ইতিহাস নিয়ে থাকি। স্থূলতা ভোগা ব্যক্তি ধূমপানে আসক্ত কিনা। এ ছাড়া কিছু রুটিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। যেমন রক্তে সুগারের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা। তার ডায়াবেটিস, ফ্যাটিলিভার, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা। তার ফ্যাটিলিভার, পিত্তথলিতে পাথর আছে কিনা সেটা দেখা হয়। মেয়েদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম আছে কিনা সেটিও দেখা হয়। একটা রোগীর স্থূলতা কী কারণে হচ্ছে সেটি যদি জানতে পারি। তাহলে দ্রুত সময়ে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।
ডা. মারুফা মোস্তারী
স্থূলতা নিয়ন্ত্রণের জন্য জীবনধারার পরিবর্তন আনা জরুরি। জীবনধারার মধ্যে আছে খাদ্যাভ্যাস। আছে নিয়মিত ব্যায়াম। স্বাস্থ্যকর খাবারটা কী– সেটি সম্পর্কে ভালো ধারণা দিতে হবে এবং জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। কিংবা হেলদি লাইফস্টাইল মানে কী– সেটি সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার অবশ্যই সুষম খাবার। আমরা স্কুল-কলেজে পড়েছি। সুষম খাবারে মধ্যে কার্বোহাইড্রেড হবে ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ। আমিষ বা প্রোটিন থাকবে ৩০ থেকে ৩০ শতাংশ। ফ্যাট থাকবে ৩৫ শতাংশের নিচে। সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ শাকসবজি থাকবে, যেটি ফাইবারযুক্ত। যথেষ্ট পরিমাণ পানিও খেতে হবে। স্থূল মানুষ তার ওজন যখন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করবে, তখন খাবারে পরিমাপটাও কমিয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ স্বাস্থ্যকর খাবারের পাশাপাশি পরিমিত খাবার– দুটো মিলেই কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। যেমন অস্বাস্থ্যকর খাবার ও মিষ্টি জাতীয় খাবার। কারণ মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। বার্গার, ফাস্টফুড, শিঙাড়া ও সমুচা– এসব খাবারে ক্যালরির পরিমাণ বেশি। যদিও দেখতে অনেক কম মনে হয়। ডুবোতেলে ভাজা খাবার খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের বিষয়টি সহজভাবে জনসাধারণকে বুঝিয়ে বলতে হবে। পরবর্তী ধাপ হচ্ছে, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা। একজন মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। হাঁটতে হবে। কায়িক পরিশ্রম তো আছেই। এখানে যদি ওজন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি থাকে, তাহলে আরেকটু বেশি সময় ধরে ব্যায়াম করতে হবে। সাঁতার কাটা, দৌড়ানো, হাঁটা, সাইক্লিং করাসহ প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’বার ভারোত্তোলন করতে হবে। এগুলো নির্ভর করছে কে কোনটা করতে পারবেন। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে, অনেকেই ডিভাইসনির্ভর খেলাধুলা করে, বিশেষ করে শিশুরা। সেখান থেকে তাদের বের করে আনতে হবে। তাদের খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিদ্রাহীনতা অর্থাৎ ঘুমের পরিমাণ কম হওয়া। রাত জাগাটা স্থূলতার পরিমাণটা বাড়িয়ে দেয়। মানসিক চাপ, স্ট্রেসফুল লাইফ কমবেশি সবারই থাকে। তাই স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে মেডিটেশন করতে পারেন। গান শুনতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, কাউন্সেলিং করানো হলে স্থূলতাসংক্রান্ত সমস্যা অনেকটা দূর করা যাবে। এর সাফল্যের হার ৪০ শতাংশ। এদিকেও নজর দিতে হবে।
ডা. ফারিয়া আফসানা
স্থূলতা প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা একযোগে কাজ করে থাকে। বিশ্ব সংস্থা চারটি অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে কাজ করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা, ফাস্টফুড পরিহার করা এবং চিনিযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকা। বাংলাদেশেও স্থূলতা প্রতিরোধে তিনটি লক্ষ্য অর্জনে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মসূচির মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হয়। উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খাবার সরবরাহে সচেতন হওয়া এবং বাচ্চাদের স্কুলে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা। মিষ্টি জাতীয় খাবারের ওপর কর বা ট্যাক্স আরোপ করা যেতে পারে। এ ছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর খাবার ও শরীরচর্চার ওপর সচেতনতা বাড়ানোর জন্য জোর দিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি অফিসে স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিতে জোর তাগিদ দেওয়া। স্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদনে কৃষককে আরও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। স্থূলতা নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণা এখনও অপ্রতুল। এটা নিয়ে কাজ করা। একই সঙ্গে স্থূলতা নিয়ে নতুন করে গবেষণা করা। পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই, স্থূলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি মানুষ সচেতন হয়।
ডা. এম সাইফুদ্দিন
স্থূলতা নিয়ে সমাজে নানা কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে। প্রথম অন্ধ বিশ্বাস হলো স্থূলতার জন্য ব্যক্তি নিজেই দায়ী। নানা কারণে স্থূলতা দেখা দিতে পারে। জিনগত কারণেও স্থূলতা হয়ে থাকে। আমাদের অনেকের ধারণা, স্থূলতা ব্যক্তিরা অলস। তাদের দিয়ে সমাজের কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে না। বাস্তবে আমরা দেখে থাকি অনেক স্থূলতা ব্যক্তি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। তাই তাদের অলস বলা ঠিক হবে না। আবার অনেকেই মনে করে, ব্যক্তিপ্রচেষ্টায় স্থূলতা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। আবার স্থূলতা মানুষের জীবনযাত্রার অস্বাস্থ্যকর। তবে বাস্তবে নাও হতে পারে। এ জন্য পরিবার থেকে বাচ্চাদের এসব মানুষকে নিয়ে তিরস্কার না করার শিক্ষা দেওয়া। কর্মক্ষেত্রে স্থূলতার জন্য বৈষম্যের শিকার হয়। এগুলো দূর করতে হবে। স্থূলতা মানুষের সঙ্গে থাকা।
ডা. শাহজাদা সেলিম
স্থূলতা প্রতিরোধে এর ঝুঁকিগুলো বোঝা, করণীয় জানা প্রয়োজন। এ জন্য বর্ধিত পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। তবে বাংলাদেশে গবেষণা খুবই কম হয়। স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা আরও কম হয়। বাংলাদেশের মানুষের বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতি রয়েছে। নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও এই ঘাটতি রয়ে গেছে। এটি দূর করতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা পৃথিবীতে সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শর্করা খাই আমরা। সর্বনিম্ন আমিষ জাতীয় খাবার গ্রহণ করি আমরা। দেশের মানুষ এখনও আলুকে সবজি মনে করে। এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কোন খাবারকে স্বাস্থ্যকর বলব– এ বিষয়ে আমাদের কোনো গবেষণা নেই। জীবননযাত্রার মান পরিবর্তনের কথা বলা হয়। আসলেই কী করলে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হবে– এ বিষয়ে আমাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। যে গবেষণাগুলো আমাদের সামনে এসেছে এগুলো অধিকাংশের অন্য দেশ বা সংস্থার করা। আমরা শুধু সংখ্যা নিরূপণের জন্য গবেষণা করে থাকি। এ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। স্থূলতা কী ঝুঁকি তৈরি করছে– এগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা জরুরি। দিন দিন দেশে বন্ধ্যত্বের হার বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণ স্বামী-স্ত্রী উভয়ের দৈহিক স্থূলতা অন্যতম দায়ী। পুরুষের যৌন সক্ষমতা কমার জন্যও স্থূলতা দায়ী। এ বিষয়গুলো নিয়ে ছোটখাটো গবেষণা রয়েছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক চিত্র প্রকাশ পাবে এমন কোনো গবেষণা এখনও হয়নি। ছোট বরাদ্দে আসলেই বড় গবেষণা করা সম্ভব নয়। কাজেই গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ কাজে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ জরুরি। স্বাস্থ্যবান জাতি গড়তে হলে এ খাতে অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। অন্য দেশে এ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি হলেও দেশে সুস্বাস্থ্যের জন্য কোনো ব্যয় নেই। দেশে সুস্বাস্থ্যের মানুষের সংখ্যা যদি বাড়াতে চায় তাহলে মানুষকে এ খাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। এ ছাড়া নীতিমালাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা চিকিৎসকরাও ব্যক্তিগতভাবে কিছু কাজ করছি। তবে সম্মিলিত উদ্যোগে এই স্থূলতা নিরসন করা সম্ভব।
এম মহিবুজ জামান
স্থূলতা প্রতিরোধের চিকিৎসায় দেশের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি দু’ভাবে প্রতিরোধ করা যায়। একটা হচ্ছে স্থূলতা, যাতে না হয় সে জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা। সেই সঙ্গে শরীর চর্চা করা। অন্যটি হলো, জীবনধারা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজন হয়, এসব ওষুধ যেমন টিরজেপ, এসিআই ফার্মা বাজারে এনেছে। এটি দারুণ কার্যকরী একটি ওষুধ। এ ওষুধ বিশ্বমানের।
মুহসিন মিয়া
স্থূলতা প্রতিরোধে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। শুধু জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এখানে ওষুধের প্রয়োজন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও ওষুধের মাধ্যমে সম্মিলিত প্রয়াস দরকার। স্থূলতাবিষয়ক সেমিনার বা আলোচনা সভা, গোলটেবিল বৈঠক করা যাতে পারে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। অনলাইন প্রশিক্ষণমূলক পোর্টাল চালু করা যেতে পারে। অনলাইনে স্থূলতার সেবা নিশ্চিতে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা যাতে পারে। এসিআই এরই মধ্যে একটি টেলিমেডিসিন সেবা প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। এ ছাড়া গবেষণা করা জরুরি। স্থূলতা প্রতিরোধে দেশে যে ওষুধগুলো পাওয়া যায় এ ওষুধগুলো বিশ্বের উন্নত দেশগুলো গবেষণা করে তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশীয় আবহাওয়ায় কার্যকরী নাও হতে পারে। এ জন্য গবেষণা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষের ওপর আমরা টিরজেপ নিয়ে গবেষণা করছি। পাশাপাশি ওজন কমানোর ওষুধের অপব্যবহারও হচ্ছে। কারণ আমাদের দেশের মানুষ খাবে বেশি, পরিশ্রম করবে কম। এই বাড়তি ওজন কমাতে ওষুধ খায়। এতে অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হয়। নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এ জন্য এই ওষুধগুলো বেশি অপব্যবহার হচ্ছে। ওষুধের অপব্যবহার রুখতে নিবন্ধিত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ওজন কমানো ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
গৌতম মণ্ডল
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, ১৯৭৫ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী স্থূলতার হার ৩ গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০১৮ সালের তথ্যানুযায়ী, নারীর মধ্যে স্থূলতার হার ২৪ শতাংশ এবং পুরুষের মধ্যে ১৬ শতাংশ। স্থূলতার কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে স্থূলতার হার দ্বিগুণ হয়েছে। এই দেড় দশকে অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলকায় নারীর সংখ্যা বেড়েছে। এ হার শহরাঞ্চলে বেশি। এ সময় শিশুর মধ্যে স্থূলতার হার ১০ বছরে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। শহর এবং গ্রামের তুলনা যদি করি, শহরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে স্থূলতার হার ৩৫ শতাংশ। যেখানে গ্রামে ১৫ শতাংশ। শহরে ফাস্টফুডসহ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবারের চাহিদা বেশি হওয়ায় এ হার দ্রুত বাড়ছে। স্থূলতার কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়েছে। বিআইডিএসের গবেষণা বলছে, স্থূলতা বাড়ার কারণে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানুষ এটিকে সমস্যা মনে করছে না। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি হয়েছে। শারীরিক পরিশ্রম করছে না মানুষ। এর কারণেও স্থূলতা বাড়ছে। সরকারি নীতিমালায়ও দুর্বলতা রয়েছে। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যারা আছেন, তাদের এ বিষয়গুলো ভাবতে হবে। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও তারা সুপারট্যাপ, ফাস্টফুড নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকা পালন করতে পারে। স্থূলতা প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন জায়গায় সুপারিশে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। স্থূলতা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভুল ধারণা আছে, অসচেতনতা আছে, সেগুলো দূর করতে হবে। স্কুল পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করার কথা বলা আছে। সুপারিশে টেলিভিশন ও পত্রিকায় জাঙ্কফুডের বিজ্ঞাপন দেখি। নিষিদ্ধ নয়, জাঙ্কফুডের বিজ্ঞাপনকে সীমিত করার কথা বলা হয়েছে। সরকারের নীতিমালার উন্নয়ন, সুপারট্যাপ প্রবর্তন, স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রচার, লেবেলিং বাধ্যতামূলক করা গেলে স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি সরকারেরও উদ্যোগ রয়েছে। তবে সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জরুরি। স্থূলতা শুধু ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, একটি জাতীয় স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে স্থূলতার প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণ, গবেষণা ও সচেতনতা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
সুপারিশ
ওজন আধিক্য এবং স্থূলতাকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
স্থূলতা হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে
জানতে হবে।
সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে স্থূলতার ক্ষতিকর দিক এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে প্রচারণা চালানো।
স্কুল পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিতকরণে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে পুষ্টিকর খাবার ও ব্যায়ামের গুরুত্ব শেখানো।
জাঙ্কফুড বিশেষ করে ফাস্টফুড ও
উচ্চ চিনিসমৃদ্ধ পানীয়ের বিজ্ঞাপন সীমিত করা।
সরকারি নীতিমালায় সুগার ট্যাক্স প্রবর্তন, স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রচার ও ক্যালরি লেবেলিং বাধ্যতামূলক করা।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থূলতা নির্ণয় ও পরামর্শ সেবা প্রদান নিশ্চিত করা।
আলোচক
অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান
পরিচালক
বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ
প্রধান পৃষ্ঠপোষক
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি
ডা. তাহনিয়াহ্ হক
আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সমন্বয়ক অবেসিটি টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি এবং সহযোগী অধ্যাপক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ
ডা. সামিরা মেহজাবিন
আজীবন সদস্য
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ
অধ্যাপক ডা. মো. ফিরোজ আমিন
বিভাগীয় প্রধান (হরমোন), বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ
সহসভাপতি, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি
অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান
সিনিয়র কনসালট্যান্ট, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
ইউনাইটেড হাসপাতাল
ডা. মারুফা মোস্তারী
সহকারী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ
যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি
ডা. ফারিয়া আফসানা
সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল
ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ
সভাপতি (নির্বাচিত)
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি
ডা. এম সাইফুদ্দিন
সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
গবেষণা সম্পাদক
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি
এম মহিবুজ জামান
ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ অপারেটিং অফিসার
এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেড
মুহসিন মিয়া
মার্কেটিং অপারেশনস ডিরেক্টর
এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেড
সঞ্চালক
গৌতম মণ্ডল
ইনচার্জ, অনলাইন, সমকাল
অনুলিখন
তবিবুর রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক, সমকাল
ও
সাজিদা ইসলাম পারুল
নিজস্ব প্রতিবেদক, সমকাল
আলোকচিত্রী
মামুনুর রশিদ, সমকাল
ইভেন্ট সমন্বয়
হাসান জাকির
হেড অব ইভেন্টস, সমকাল
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ যকর খ দ য ভ য স স ব স থ যকর খ ব র ম ড ক ল কল জ জ বনয ত র র র জ বনয ত র ন শ চ ত কর পর স খ য ন ২০১৮ স ল ন র জন য র পর ম ণ ব শ ষ কর কর খ ব র ব যবহ র ইনস ল ন ম নদণ ড ব সরক র ক ট অফ আম দ র জন য ব পর য য় এ জন য ক জ কর জন য স দ র কর র ওপর ওজন ন হরম ন সমস য ওজন ব ত করত সহক র সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভোট সম্ভবত ডিসেম্বরের মধ্যেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভোট সম্ভবত এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কমিশনার হাজা লাহবিব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। খবর- বাসস।
এদিকে চলতি বছর রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সম্প্রদায় ও আশ্রয়দাতা স্থানীয় কমিউনিটি এবং মিয়ানমারের সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৬৮ মিলিয়ন ইউরো সহায়তার কথা জানিয়েছে ইইউ। সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ইইউর এই কমিশনার বলেন, যদিও এই অর্থের পরিমাণ গত বছরের প্রাথমিক ইইউ অনুদানের চেয়ে বেশি, তবু এটি রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি রোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ তহবিল ঘাটতি ক্রমশ বাড়ছে।
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট মোকাবিলায় তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। এটি বছরের পর বছর ধরে চলছে, কিন্তু এখনও কোনো সমাধান নেই। কখন সমাধান হবে, তার কোনো সময়সীমা নেই।
ইইউ কমিশনার বলেন, এই সংকটের একমাত্র সমাধান হলো শান্তি। আমাদের সব ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যার মধ্যে মানবসৃষ্ট দুর্যোগও অন্তর্ভুক্ত।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে তারা নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির সুযোগ, জ্বালানি সংযোগ, বন্যা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য ইইউর সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে উত্তরণের পথ সুগম করবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি ইইউর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে কমিশনার বলেন, আপনি এক ব্যতিক্রমী সময়ে অসাধারণ কাজ করেছেন। আমরা আপনাদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত।
কারও লাশ যেন বেওয়ারিশ হিসেবে না থাকে: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা চাই বেওয়ারিশ লাশ যেন না থাকে। আমরা এমন একটা সমাজ বানাই, যেখানে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাজ আর থাকবে না।’ রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দোয়া ও ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের নতুন ভবন আঞ্জুমান জে আর টাওয়ারের উদ্বোধন করেন। ইফতার মাহফিলে অন্যদের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের ট্রাস্টি গোলাম রহমান, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সভাপতি মুফলেহ আর ওসমানী বক্তব্য দেন।