তেঁতুলিয়ায় গ্রেপ্তার ৫ জন টাঙ্গাইলে শিক্ষাসফরের বাস ডাকাতির সঙ্গে জড়িত: পুলিশ
Published: 3rd, March 2025 GMT
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার স্কুলশিক্ষকের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫ জন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শিক্ষাসফরের চার বাস আটকে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুনসী।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সঠিবাড়ি-হরিপুর এলাকার আনোয়ার হোসেন (৪২), পীরগঞ্জ উপজেলার মকিমপুর এলাকার শরিফুল ইসলাম (২৮), আজমপুর ফকিরপাড়া এলাকার হাসানুর (৪১) ও পালানো শাহপুর এলাকার আয়নাল হক (৪০) এবং দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর এলাকার তৌহিদুল ইসলাম (৪০)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শিক্ষাসফরের বাস ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জানিয়েছেন বলে দাবি করেন পুলিশ সুপার। তাঁর মতে, তেঁতুলিয়ায় একাধিক বাড়িসহ সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল তাঁদের।
আরও পড়ুনটাঙ্গাইলে শিক্ষাসফরের বাসে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪ জন কারাগারে২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫পুলিশ জানায়, গত শনিবার গভীর রাতে তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর এলাকায় বেলায়েত হোসেন নামের এক স্কুলশিক্ষকের বাড়িতে ডাকাতির খবর পাওয়া যায়। এরপর তাঁদের ধরতে জেলার ৫টি থানা এলাকায় বিভিন্ন এলাকা, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে চেকপোস্ট বসানো হয়। পরে গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকা থেকে ডাকাত দলের সদস্য ও ও ট্রাকচালক আনোয়ার হোসেনকে আটক করা হয়। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ভজনপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুটি যাত্রীবাহী বাস থেকে দুজন করে মোট ৪ ডাকাত সদস্যকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছে ডাকাতির বিভিন্ন সরঞ্জাম ও মালামাল জব্দ করা হয়।
গত শনিবার রাতের ডাকাতির ঘটনায় গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তেঁতুলিয়ায় মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী স্কুলশিক্ষক বেলায়েত হোসেন। মামলায় আটক পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ২ থেকে ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচ ডাকাত সদস্যকে আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুনসী।
আরও পড়ুনটাঙ্গাইলে শেষ রাতে শিক্ষাসফরের চারটি বাস আটকে ডাকাতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫শিক্ষাসফরের বাসে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ১১টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শিক্ষা সফরের ৪ বাস আটকে ডাকাতির ঘটনায় এ নিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো বলে জানান টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। আজ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
পুলিশ সুপার জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার সোয়াইতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ৪টি বাস নিয়ে নাটোরের একটি পার্কে শিক্ষা সফরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কের লক্ষণের বাধা এলাকায় পৌঁছালে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুনটাঙ্গাইলে শিক্ষাসফরের বাসে ডাকাতি: ‘গল্পে শুনলেও জীবনে প্রথমবার সেদিন ডাকাত দেখেছিলাম’২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর থেকে শরিফুল ইসলাম ওরফে শরিফ (১৯) ও রুপম চন্দ্র ভাট (২৪) নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানায়, শরিফের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে। তাঁর বাবা আয়নাল একটি আন্তজেলা ডাকাত দলের প্রধান। বিভিন্ন জেলায় গিয়ে স্থানীয় ডাকাত দলের সদস্যদের সহায়তায় ডাকাতি করে থাকেন।
পুলিশের দাবি, এ তথ্য পাওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে টাঙ্গাইলের গোপালপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একটি দল গতকাল রাতে রংপুরে পৌঁছে। পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপারকেও তথ্যটি জানানো হয়। পরে পঞ্চগড় পুলিশের একটি দল তেঁতুলিয়ার আজিজনগর এলাকা থেকে মূল পরিকল্পনাকারী আয়নালসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুনটাঙ্গাইলে শিক্ষাসফরের বাসে ডাকাতির ঘটনায় মামলা, জড়িত সন্দেহে আটক ২২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন য় গ শ ক ষ সফর র ব স প র এল ক র উপজ ল র এল ক য় সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মিরে হামলার সময় বেছে বেছে পুরুষদের গুলি চালানো হয়
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যটকদের ওপর হামলা করে বন্দুকধারীরা। এতে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বলছেন, বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর সময় নারী-পুরুষদের আলাদা করে বেছে বেছে পুরুষদের লক্ষ্য করে গুলি করেছিল। খবর বিবিসির।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।
আরো পড়ুন:
কাশ্মিরে হামলার দায় স্বীকার করল টিআরএফ
জালিয়াতির মামলা, মহেশ বাবুকে তলব
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র কয়েক মিনিটের তাণ্ডবের নেপথ্যে ছিল মাত্র চার থেকে ছ’জন জঙ্গি। সবার হাতে ছিল একে-৪৭।
হামলার ঘটনায় কেউ স্বামী হারিয়েছেন, কেউ আবার পুত্র। পরিজনদের হারিয়ে শোকে পাথর অনেকেই। যাঁরা প্রাণ বাঁচিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ফিরতে পেরেছেন তাদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। আহতদের মধ্যে অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে একজন নারী বলেছেন, “জঙ্গিরা, আমি বলতে পারছি না ঠিক কতজন, একটি খোলা ছোট তৃণভূমির কাছের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে গুলি চালাতে শুরু করে।”
তিনি বলেন, “স্পষ্টতই তারা মহিলাদের ছাড় দিচ্ছিলেন এবং পুরুষদের দিকে গুলি চালাতে থাকল, কখনও একটি একটি করে, আবার কখনো একাধারে গুলি চলছিল ঠিক ঝড়ের মতো।”
ভারতীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পল্লবী রায় নামে আরেক নারীকে চিহ্নিত করেছে। যার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতদের মধ্যে ছিলেন। তিনিও বলেছেন যে, পুরুষদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।
হিন্দুস্তান টাইমসের কাছে আশাবরী নামে এক তরুণী বলেন, “আমরা পাঁচ জনের একটি দল ছিলাম, আমার বাবা-মা সহ। আমরা পাহেলগাঁওয়ের কাছে বইসরান উপত্যকায় ছিলাম এবং যখন গুলি শুরু হয়েছিল তখন মিনি সুইজারল্যান্ড নামক একটি স্থানে ছিলাম। আমরা তৎক্ষণাৎ কাছের একটি তাঁবুতে সুরক্ষার জন্য ছুটে গেলাম। আরও ছয় থেকে সাতজন (পর্যটক)ও সেখানে উপস্থিত হলেন। গুলিবর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা সবাই মাটিতে শুয়ে পড়লাম। আমরা ভেবেছিলাম সন্ত্রাসী এবং নিরাপত্তা কর্মীদের মধ্যে গুলিবর্ষণ হয়েছে। কিন্তু তারপর জঙ্গিরা আমাদের তাঁবুতে এসে আমার বাবাকে বাইরে আসতে বলল। বাবাকে কিছু একটা পড়তে দিয়েছিল জঙ্গিরা। তিনি তা পড়তে না পারায় তিনটি গুলি করে।”
তার বাবার হত্যার পর তার চাচার দিকে এগোয় জঙ্গিরা। আশাবরী বলছেন, ‘আমার চাচা আমার পাশেই ছিলেন। সন্ত্রাসীরা তখন তাকে লক্ষ্য করে চার থেকে পাঁচটি গুলি চালায়। তারা ঘটনাস্থলে থাকা আরও কয়েকজনকে গুলি করে। সাহায্য করার জন্য কেউ ছিল না।’
কাশ্মির দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল, কিন্তু পর্যটকদের উপর আক্রমণের ঘটনা বিরল।
এদিকে, হামলার ঘটনার পর পহেলগাঁও উপত্যকায় নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরের অন্যান্য জায়গাও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার রাতেই কাশ্মিরে পৌঁছেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সৌদি আরব সফরসূচি কাঁটছাঁট করে বুধবার সকালে দিল্লি ফিরে এসেছেন।
এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে নিরাপত্তাবাহিনী।
ঢাকা/ফিরোজ