ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি সই করতে প্রস্তুত রয়েছে তাঁর দেশ।

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ল্যাংকেস্টার হাউসে গতকাল রোববার ইউক্রেন সংকট নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষে বিবিসিকে এ কথা বলেন জেলেনস্কি। এদিন তিনি যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

 এর আগে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। সেই মোতাবেক ওয়াশিংটনে যান জেলেনস্কি। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি।ইউরোপ কি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া ইউক্রেনে শান্তি নিশ্চিত করতে পারবে

আরও পড়ুনইউরোপ কি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া ইউক্রেনে শান্তি নিশ্চিত করতে পারবে৩ ঘণ্টা আগে

কিন্তু শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি সই হয়নি। বৈঠকে ট্রাম্প–জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এর পর দুই নেতার যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল হয়। হোয়াইট হাউস ছাড়তে বলা হয় জেলেনস্কিকে।

লন্ডনে রোববার জেলেনস্কির কাছে চুক্তিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘খনিজ চুক্তিটি মন্ত্রীদের (উভয় দেশের) সইয়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমরা এটি সই করতে প্রস্তুত।’

জেলেনস্কি যোগ করেন, ‘টেবিলে যে চুক্তিটি রয়েছে, তা সই হবে যদি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো প্রস্তুত থাকে।’

আরও পড়ুনলন্ডন সম্মেলনে ইউক্রেনের পক্ষে চার বিষয়ে মতৈক্য৫ ঘণ্টা আগে

ইউক্রেনে এক মাসের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার একটি প্রস্তাব সামনে এনেছেন। ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমগুলো এমন খবর প্রচার করেছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জেলেনস্কি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে সবকিছুই জানি।’

সদ্য শেষ হওয়া লন্ডন সম্মেলন নিয়ে টেলিগ্রামে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘এখানে আমরা ইউক্রেন, আমাদের জনগণ, সেনাবাহিনী ও বেসামরিক নাগরিক এবং আমাদের স্বাধীনতার প্রতি দৃঢ় সমর্থন অনুভব করেছি।’

প্রকৃত শান্তি ও নিশ্চিত নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার শক্ত ভিত্তি গড়ার জন্য আমরা ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে মিলে একযোগে কাজ করছি—যোগ করেন জেলেনস্কি।

আরও পড়ুনসবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, লন্ডন সম্মেলন শেষে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান৫ ঘণ্টা আগে

নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাওয়ার বিষয়ে মনোভাব জানতে চাইলে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন বিশ্বাস করে যে, সর্বোত্তম নিরাপত্তা নিশ্চয়তা একটি শক্তিশালী ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী নিশ্চিত করবে। আমি নিশ্চিত, স্যার কিয়ার স্টারমারও (যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী) এটা জানেন।’

এদিকে লন্ডনে সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে কিয়ার স্টারমার বলেন, ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য নতুন চুক্তি অবশ্যই জোরালো হতে হবে। সব দেশকে নিজেদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং নিজেদের দায়িত্বও বাড়াতে হবে।

আরও পড়ুনইউক্রেন নিয়ে লন্ডন সম্মেলনের ওপর নজর রাখছে মস্কো৬ ঘণ্টা আগে

কিয়ার স্টারমারের ভাষ্য অনুযায়ী, সম্মেলনে ঐকমত্য হওয়ার চারটি পদক্ষেপ হলো—যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে হবে; স্থায়ী শান্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং যেকোনো শান্তি আলোচনার টেবিলে ইউক্রেনকে অবশ্যই রাখতে হবে; শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে কাজ করতে হবে ইউরোপের নেতাদের; ইউক্রেনের সুরক্ষার জন্য একটি জোট গঠন করতে হবে এবং দেশটিতে শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে ১৬০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিয়ার স্টারমার। যুক্তরাজ্যের দেওয়া এই অর্থ খরচ করে ইউক্রেনের জন্য পাঁচ হাজারের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে।

আরও পড়ুনইউক্রেন নিয়ে লন্ডনে সম্মেলন শুরু, যোগ দিয়েছেন ইউরোপের নেতারা৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত ইউক র ন র র জন য ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা ১৭৭৭৭ জনের টাকা ফেরতের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ

সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরও মালোয়েশিয়া যেতে না পারা ১৭ হাজার ৭৭৭ জনের টাকা ফেরত দেওয়া এবং তাদের মালোয়েশিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। 

বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেন। এর আগে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে ১৭ হাজার ৭৭৭ জনের মালোয়েশিয়ায় যেতে না পারার দায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।

মালয়েশিয়ায় যেতে সব প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত ছাড়পত্র নিয়েও গত বছরের মে মাসে ১৭ হাজার ৭৭৭ জন কর্মী যেতে পারেননি। এর মধ্যে একাংশ উড়োজাহাজের টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি এবং অন্য অংশ মালয়েশিয়া থেকে নিয়োগকর্তার চূড়ান্ত সম্মতি পাননি। নিয়োগকর্তারা বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রহণ করার নিশ্চয়তা পাঠায়নি। কর্মীদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার শেষ সময় ছিল ৩১ মে।

পরে জনস্বার্থে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত ও মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ফেরতের দাবিতে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। ওই রিটের শুনানি নিয়ে গত বছরের ২৪ জুন হাইকোর্ট মালয়েশিয়া শ্রমিক পাঠানোর ঘটনায় ভুক্তভোগী কর্মীদের জীবন ধ্বংসের জন্য কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও খামখেয়ালিপনাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ১৭ হাজার ৭৭৭ জন শ্রমিকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ সুদসহ ফেরত দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না—তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। পাশাপাশি, হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষকে প্রতি তিন মাস অন্তর উক্ত ঘটনার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের কাছ থেকে নেওয়া সমুদয় অর্থ ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কর্মী প্রেরণে ব্যর্থতা এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের অভিযোগের আইনানুগ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমার সঙ্গে সংগতি রেখে চাহিদাপত্র ও ভিসা ইস্যুর তারিখ নির্ধারণ করার সিদ্ধান্তও হয়েছে।

প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন, যাতে চাহিদাপত্র ইস্যু থেকে শুরু করে কর্মী বিদেশগমন ও পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যন্ত তদারকি করা যায়। এই ব্যবস্থাপনায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ, বিদেশস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ এবং রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সংযুক্ত থাকবে।

মন্ত্রণালয় হতে নিয়োগানুমতি গ্রহণের পর বিএমইটি’র ক্লিয়ারেন্স কার্ড গ্রহণ এবং কর্মী প্রেরণ নির্দিষ্ট করার সুপারিশও করা হয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্তৃক অভিবাসী কর্মীদের কাছ থেকে ব্যয় গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ই-ভিসা প্রাপ্ত কিন্তু মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ কর্মীদের বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ