বিগত কয়েক মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সহিত পাল্লা দিয়া সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা যে ভয়ংকররূপে বৃদ্ধি পাইয়াছে– উহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই। রবিবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ সদরদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করিয়া দেখা গিয়াছে, গত জানুয়ারিতে সমগ্র দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়াছে ৭১টি। পূর্বের বৎসর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ডাকাতির সংখ্যা ছিল ২৯। অর্থাৎ পুলিশের হিসাবেই ডাকাতি হইয়াছে দ্বিগুণের অধিক। এই কথাও বলা প্রয়োজন, পুলিশের পরিসংখ্যান দিয়া অপরাধ বা ডাকাতির সঠিক সংখ্যা জানা কঠিন। কারণ, অনেক ঘটনায় ভুক্তভোগী বহুবিধ কারণে মামলা করিতে উৎসাহ পান না। অনেক ঘটনায় পুলিশও সহজে মামলা গ্রহণ করে না। এদিকে, শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশেই গত দুই মাসে চারটি ডাকাতি হইয়াছে, যে সকল ঘটনায় ভুক্তভোগীর অর্থকড়ি ও স্বর্ণালংকার, এমনকি চাউলের বস্তাভর্তি ট্রাকও লুণ্ঠিত হইয়াছে। ইহার পূর্বে ঢাকা হইতে রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় চলিয়াছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হইতে ঘরমুখী প্রবাসী, ব্যবসায়ী, পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের শিকার হইতেছে। যানজটে আটকে পড়া মোটরসাইকেলের যাত্রীরাও একই পরিস্থিতির শিকার। গত শুক্রবার পাবনার সাঁথিয়ায় রাত্রির মধ্যভাগে সড়কের উপর বৃক্ষ ফেলিয়া ট্রাক, মাইক্রোবাস, অটোরিকশায় ডাকাতি হইয়াছে। অভিযোগ, সড়কে পরিবহন চালকরা নিরাপত্তার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করিয়াও কাঙ্ক্ষিত প্রতিকার পাইতেছে না। এহেন পরিস্থিতি জানমালের নিরাপত্তা লইয়া নাগরিকদের মধ্যে শুধু উদ্বেগই বাড়াইতেছে না, বিশেষত ব্যবসায়ীদের মধ্যেও নানাবিধ শঙ্কার জন্ম দিয়াছে। এহেন ডাকাতির ঘটনা বিদেশেও যে দেশের ভাবমূর্তিকে দারুণ মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করিবে, যাহার নেতিবাচক প্রভাব পড়িবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের উপর, যাহা বলাই বাহুল্য।
এই কথা সত্য, সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা নূতন নহে। দীর্ঘদিন যাবৎ এই সমস্যা সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারকারীদের শিরঃপীড়ার কারণ হইয়া আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সমস্যাটি সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট এক প্রকার মূর্তিমান আতঙ্করূপে দেখা দিয়াছে।
হাইওয়ে পুলিশপ্রধান বলিয়াছেন, প্রয়োজনের তুলনায় তাহাদের জনবল কম। মহাসড়কের নিরাপত্তায় সমগ্র দেশে হাইওয়ে পুলিশ নিয়োজিত দুই সহস্র আট শত মাত্র। উপরন্তু, তালিকাভুক্ত ডাকাত অনেকে গ্রেপ্তার হইবার পর জামিনপ্রাপ্ত হইয়া পুনরায় উক্ত অপরাধে সংশ্লিষ্ট হইবার বিষয়ও আমরা জানি। তৎসহিত ৫ আগস্ট-পরবর্তী বিশেষত পুলিশের উপর বিবিধ হামলার ঘটনা বিষয়কে জটিল করিয়া তুলিয়াছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সাত মাস অতিক্রান্তের পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত প্রধান বাহিনীটি দায়িত্ব পালনে সক্ষম না হইবার ঘটনা দুঃখজনক। আরও অভিযোগ, পূর্বের ন্যায় বাহিনীর একাংশের মধ্যে অদ্যাবধি বিবিধ অসাধু পন্থার চর্চা বহাল, যাহা অপরাধীদের সহজে জামিনপ্রাপ্তির পশ্চাতে অন্যতম কারণ বলিয়া পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও চালকদের ধারণা।
তবে আশার বিষয়, প্রতিবেদনে যদ্রূপ বলা হইয়াছে, ডাকাত ধরিতে হাইওয়ে পুলিশ ইতোমধ্যে উহাদিগের একটা তালিকা সম্পন্ন করিয়াছে, যথায় প্রায় দেড় সহস্র অপরাধীর নাম সংযুক্ত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও থানাকে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় জানাইয়া দিয়াছে হাইওয়ে পুলিশ। কেন্দ্র হইতে নজরদারিরও ব্যবস্থা হইয়াছে। সম্প্রতি ডাকাতি প্রতিরোধে মহাসড়কের কতিপয় এলাকায় যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের ভিডিও এবং ছবি তুলিয়া রাখিতেছে পুলিশ। দায়িত্বে অবহেলার জন্য কিছু ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও গৃহীত হইয়াছে। তবে ফল পাইতে হইলে এই সকল পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা রক্ষা করিতে হইবে। হাইওয়ে পুলিশপ্রধান দেলোয়ার হোসেন মিঞা বলিয়াছেন, ডাকাতি ঘটিলেই মামলা গৃহীত হইতেছে; জড়িতদের শনাক্তপূর্বক আইনি বেষ্টনীতে আনয়ন করা হইতেছে। জনজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকিবে– ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন হ ইওয় সড়ক র ঘটন য় অপর ধ হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা
সিলেটে সকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার পর বিকাল ও সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার এবং ছাত্রলীগের এক নেতারা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।
বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলেটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় বিকালে হামলা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায়ও হামলা চালানো হয়েছে।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীতে বিনোদনকেন্দ্রে হামলা, পুলিশসহ আহত ৭
রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.লীগ নেতার মৃত্যু
হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।
সিলেট নগরীর শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর (নাদেল) বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়ে’ হামলা চালায় একদল মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে তার বাসায় ঢুকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন।
মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের একটি দল। সন্ধ্যা সাতটায় রুহেলের বাসায় হামলার সময় তাঁর মা ও বোন বাসায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অবশ্য এসব হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বুধবার সকাল থেকে সিলেট নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। তারা ভিডিওতে দেখা যাওয়া চার-পাঁচজন মিছিলকারীকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।
এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, মিছিলকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।