হোয়াইট হাউসে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেই দুষছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। বৈঠকে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে জেলেনস্কি যে কথা তুলেছিলেন, তা নিয়ে পরে আলোচনা করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তারপরও বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে জোরাজুরি করেছিলেন জেলেনস্কি।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি সম্পর্কে জানাশোনা আছে—এমন ব্যক্তিরা এ তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, সেদিন বৈঠকের আগে ইউক্রেনের কমকর্তাদের মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, চলতি সপ্তাহেই মন্ত্রী পর্যায়ে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তিতে সই করতে চান ট্রাম্প। এ সময় দুই পক্ষের সহকারীরা ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিয়ে বিস্তারিত কাজ করবেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ সম্পদ চুক্তিকে দুই দেশের বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের প্রথম ধাপ হিসেবে দেখছিলেন ট্রাম্প। তিনি সহকারীদের বলেছিলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে কার্যকরভাবে প্রতিশ্রুতি দিতে যাচ্ছে, তা ওই চুক্তির মাধ্যমে পরিষ্কার হবে। কারণ, ওই চুক্তির ফলে ইউক্রেনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ সৃষ্টি হবে।

মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, ট্রাম্পের এই কথাগুলো ইউক্রেনকে জানানো হয়েছিল। শুক্রবার বৈঠকের দিন সকালেও মার্কিন সিনেটররা ট্রাম্পের প্রশংসা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন জেলেনস্কিকে। একই সঙ্গে ট্রাম্পের সামনে যেন শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি নিয়ে জোরাজুরি না করা হয়, সে পরামর্শও তাঁকে দেওয়া হয়েছিল।

ট্রাম্পের সহকারীদের ধারণা, বৈঠকে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তি নিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের পরিকল্পনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ওই পরামর্শগুলো মাথায় রাখেননি জেলেনস্কি। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর যে ইতিহাস জেলেনস্কি জে ডি ভ্যান্সকে শুনিয়েছিলেন, সে সময়ও তিনি ওই পরামর্শগুলো নিয়ে চিন্তা করেননি।

বৈঠকে জে ডি ভ্যান্স কূটনীতি নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে জেলেনস্কি প্রশ্ন তোলার পরই মূলত বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। তখন জেলেনস্কিকে ভ্যান্স বলেন, ‘আপনার দেশে ধ্বংসযজ্ঞের সমাপ্তি টানার জন্য যে কূটনীতির প্রয়োজন, সেটি নিয়েই আমি কথা বলছি।’ কূটনীতি নিয়ে জেলেনস্কির মন্তব্যকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অপমানজনক’ বলে আখ্যা দেন।

গত সপ্তাহে জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক আখ্যা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ সম্পদ চুক্তি সইয়ের বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত হয়। তখন জেলেনস্কির বিষয়ে অনেকটাই সুর নরম করেছিলেন ট্রাম্প। তাঁকে স্বৈরশাসক আখ্যা প্রশ্নে তিনি সংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমি কি তা বলেছিলাম? বিশ্বাস হয় না, তা আমি বলেছিলাম।’

আরও পড়ুনজেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে কীভাবে বের করে দেওয়া হয়, জানালেন ট্রাম্পের উপদেষ্টা৩ ঘণ্টা আগে

হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির আগে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। সে সময় ট্রাম্পের প্রশংসা করেছিলেন তাঁরা। তবে জেলেনস্কি হেঁটেছিলেন ভিন্ন পথে। আর তাঁকে নিয়ে ভ্যান্স ব্যক্তিগতভাবে যে সংশয় পোষণ করছিলেন, নিজের অজান্তেই জেলেনস্কি হয়তো সে অনুযায়ী আচরণ করেছেন।

শুক্রবারের ওই বিতণ্ডার পর খনিজ সম্পদ চুক্তিটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এ বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন দুই ব্যক্তি জানিয়েছেন, এরপরও চুক্তিটি করার জন্য একটি চেষ্টা করেছিল ইউক্রেন। জেলেনস্কির সহকারীরা প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে উত্তেজনা কমানোর জন্য ট্রাম্প ও জেলেনস্কি যেন এককভাবে একটি বৈঠক করেন। তবে ট্রাম্পের কর্মকর্তারা ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

আরও পড়ুনআমেরিকার জন্য ভয়ংকর এক শুক্রবার৫ ঘণ্টা আগে

শুক্রবারের বৈঠকের পর ট্রাম্পের ধারণা ছিল, জেলেনস্কির সঙ্গে আরও আলোচনায় বসা ফলদায়ক হবে না। কারণ, তাঁর মতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তিচুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে আগ্রহী নন জেলেনস্কি।

শুক্রবারের ঘটনার সমাপ্তি হয় দলবল নিয়ে জেলেনস্কির হোয়াইট হাউস ত্যাগের মধ্য দিয়ে। এর আগে তাঁরা হোয়াইট হাউসের রুজভেল্ট রুমে অপেক্ষা করছিলেন। তখন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাঁদের চলে যেতে বলেন। এরপরই কালো একটি গাড়িতে করে ওভাল অফিস ছাড়েন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

আরও পড়ুনজেলেনস্কির প্রতি কেন এত মারমুখী ছিলেন ভ্যান্স৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র ক ন কর মকর ত কর মকর ত র ইউক র ন র কর ছ ল ন ন শ চয়ত র জন য বল ছ ল সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া জোড়া ব্রিজ এলাকা থেকে থানা থেকে লুট হওয়া দুটি অস্ত্র ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আজ বুধবার (২ এপ্রিল) সকালে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার অস্ত্রের মধ্যে একটি রিভলবার, একটি ওয়ান শ্যুটারগান রয়েছে। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় আড়াইহাজার থানা থেকে অস্ত্র দুটি লুট করা হয়।

আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, অস্ত্র ও গুলি পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে সকালে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়। অস্ত্রগুলো ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট হওয়া বলে নিশ্চিত করে তিনি।
 

আরো পড়ুন:

দিনাজপুরে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার  

বাবাকে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি, পরে উদ্ধার

ঢাকা/অনিক/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ